সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে আওয়ামী লীগ-জামায়াত-শিবির দফায় দফায় সংঘর্ষে আলমগীর হোসেন (২৫) নামে এক শিবির কর্মী নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়। নিহত আলমগীর চরদুলগাগরাখালী হুটকিপাড়ার জসিম উদ্দিন বুদ্দুর ছেলে। বুধবার রাতে উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের চরদুলগাগরাখালী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ রুবেল ও আমিন নামে দুই আওয়ামী লীগ কর্মীকে আটক করেছে। ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগ ও জামায়াত একে অপরকে দায়ী করেছে। এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে জেলা জামায়াত শুক্রবার দোয়া দিবস ও রবিবার উপজেলায় আধাবেলা হরতাল ডেকেছে। ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় ঘোষণার পর বেলকুচি উপজেলার ধুকুরিয়া বেড়া ইউনিয়নের কল্যাণপুর, কান্দপাড়া, দৌলতপুর ইউনিয়নের চরদুলগাগরাখালী গ্রামে জামায়াত-বিএনপি-আওয়ামী লীগ সংঘর্ষে দুজন নিহত হয় এবং চরগাগরাখালী গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা ব্যাঙ মজিদসহ বেশ কয়েকটি বাড়িঘরও ভাঙচুর করা হয়। এ নিয়ে ওই এলাকায় জামায়াত-বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে চরম রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব শুরু হয়। সম্প্রতি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার সময় আওয়ামী লীগ নেতা ব্যাঙ মজিদকে শিবির কর্মী আলমগীরের নেতৃত্বে জামায়াত-শিবির কর্মীরা ভোটকেন্দ্র থেকে ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়। এ নিয়ে ব্যাঙ মজিদের সঙ্গে আলমগীরের পরিবারের মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। এ অবস্থায় বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে আওয়ামী লীগ নেতা ব্যাঙ মজিদ, তার ছেলে লিটন ও রিপনসহ ২০-৩০ জন আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আলমগীর ও তার মামা জামায়াত নেতা আকমলের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় জামায়াত ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের ওপর চড়াও হলে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা পিছু হটতে বাধ্য হয়। রাত দেড়টার দিকে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা শক্তি বৃদ্ধি করে আবারও হামলা চালালে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে শিবির কর্মী আলমগীর হোসেন, জুবায়ের, আবদুল হামিদ, কালু ও আওয়ামী লীগ কর্মী শামসুল আলম, লিটন, বেলাল ও শফিকুলসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়। শিবির কর্মী আলমগীর হোসেনকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায়। সংবাদ পেয়ে রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম ইউসুফজী খান জানান, জামায়াত-শিবির কর্মীরা ডাকাতি করার জন্য আমাদের লোকজনের বাড়িঘরের ওপর হামলা চালিয়ে মারধর করে। পরে আমাদের লোকজন একত্রিত হয়ে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুললে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা শাহীনুর আলম জানান, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা রাতে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে শিবির কর্মী আলমগীরকে হত্যা করেছে। এর প্রতিবাদে শুক্রবার দোয়া দিবস এবং রবিবার বেলকুচিতে আধাবেলা হরতাল পালন করা হবে। বেলকুচি থানার সেকেন্ড অফিসার আবদুস সবুর জানান, নিহত আলমগীরের শরীরে প্রায় ৮-১০টি দেশীয় অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। বুকের মাঝ বরাবর ড্যাগার দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। সকাল ৭টার দিকে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বওড়া গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের ছেলে রুবেল রানা ও চরদুলগাগরাখালী গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে আমিন উদ্দিনকে আটক করা হয়েছে। বেলকুচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল হাই সরকার জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পুনরায় সংঘর্ষের আশঙ্কায় এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে মামলা করবেন বলে ওসি জানিয়েছেন।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।