আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কশাঘাত কর্মসংস্থানে

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার আঘাত লেগেছে কর্মসংস্থানে। বিনিয়োগে স্থবিরতায় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি যেমন কমে গেছে, তেমনি ইতোমধ্যে যাদের কর্মসংস্থান হয়েছে, তাদের মধ্যে কারও কারও বেকার হওয়ারও আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।

তথ্যমতে, জনশক্তি রপ্তানির পরিমাণ কমেছে ৩৬ শতাংশ। ফলে বৈদেশিক বাজারে জনশক্তি রপ্তানি করে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও হোঁচট খাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন অভ্যন্তরীণ সমস্যা চলছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচের দেশগুলোতে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করায় সাম্প্রতিক সময়ে জনশক্তি রপ্তানি কমেছে।

দেশের চলমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কর্মসংস্থানে কী প্রভাব ফেলছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এমসিসিআই) সভাপতি রোকেয়া আফজাল রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে গেলে খুবই ক্ষতি হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য না হলে ব্যবসায়ীরা তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাঁটাই করতে পারেন।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক হিসেবে বাংলাদেশ দ্বিতীয় হওয়ার পর, এখন প্রথম হতে চায়। কিন্তু সেখানেও ক্ষতি হচ্ছে। ছোট ছোট দোকানদারের ক্ষতি হচ্ছে। পণ্য পরিবহন ঠিকমতো হচ্ছে না। ঋণের সুদ বাড়ছে। উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। ব্যবসায়ীদের জন্য আগে কোনো দিন এত খারাপ অবস্থা তৈরি হয়নি উল্লেখ করে এই নারী উদ্যোক্তা বলেন, এত দিন যে মহিলা উদ্যোক্তারা ভালোভাবে ব্যবসা করে আসছিলেন, তারাও এখন ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আশঙ্কা প্রকাশ করে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি কমে গেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- ইতোমধ্যে যাদের কর্মসংস্থান হয়েছে, তারা বেকারত্বের মুখোমুখি হবেন কিনা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, ২০০৬ সালের তুলনায় ২০১০ সালে দেশে বেকারের সংখ্যা দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। অর্থাৎ ২০১০ সালে শতকরা দুজন মানুষ নতুন করে বেকারের খাতায় নাম লিখিয়েছেন। তবে আলোচ্য সময়ে পুরুষের চেয়ে বেশি সংখ্যক নারীকে কর্মক্ষম হওয়ার তথ্য উঠে এসেছে সরকারি হিসাবে। ২০০৬ সালে নারী বেকারের সংখ্যা ছিল ৭ শতাংশ। আর ২০১০ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশে। অথচ একই সময়ে পুরুষদের বেলায় তা ৩ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪ দশমিক ১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যা রীতিমতো উদ্বেগজনক। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) থেকে প্রকাশিত স্টেট অব দ্য ইকোনমি শীর্ষক প্রতিবেদন ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০১১-২০১২ অর্থবছরে ২ লাখ ২৫ হাজার মানুষের নতুন করে কর্মসংস্থান হয়। আর ২০১২-১৩ অর্থবছরে এ সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯৫ হাজারে। অর্থাৎ এক বছরে ৩০ হাজার মানুষের কম কর্মসংস্থান হয়েছে। যারা বেকারের খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শুধু তাই নয়, দেশীয় ও বৈদেশিক উভয় খাতেই কর্মসংস্থান কমেছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে ৬৯ হাজার মানুষের বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছিল। অথচ ২০১৩ সালে মাত্র ৪৪ হাজার শ্রমিক বিদেশে কাজের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছেন। ফলে ইতোমধ্যে রেমিট্যান্স প্রবাহেও নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে। সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অর্থবছরে দেশে বিনিয়োগও কমেছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ হয়েছিল ২০ শতাংশ। আর ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা ১ শতাংশ কমে ১৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সরকারি খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ সামান্য বেড়েছে। এর জন্য রাজনৈতিক অস্থিরতা, গ্যাস বিদ্যুতের সংকট ও শিল্পোদ্যোক্তাদের আস্থাহীনতাকে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.