ডিপ্লোমা বনাম বিএসসি নিয়ে দেশে বেশ মাতামাতি চলছে । আসলে ডিপ্লোমাদের এই আন্দোলনগুলো উঠে আসার একমাত্র কারণ হচ্ছে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি গুলো। যেখানে বিএসসিদের মান নিয়ে একটু তারতম্য রয়ে গেছে।
এসব জিনিসের পারস্পরিক তুলনা করার জন্য আমরা এদের অবদানগুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারি। সে ক্ষেত্রে প্রাইভেট ডিগ্রি গুলোও গণনায় আনা যেতে পারে।
মূলত প্রকৌশল বিদ্যা উদ্ভাবনের সঙ্গে জড়িত। আমাদের বাংলাদেশটি আসলে তৃতীয় বিশ্বের দেশ। এখানে মানুষ বলতে-বুঝতে শিখেনি কোনটা ইঞ্জিনিয়ারিং আর কোনটা ঝালাই আর কাঠমিস্ত্রি।
ইংরেজি প্রতিশব্দ engineer এসেছে লাতিন ingenium থেকে, যার অর্থ “চালাকি”।
ইঞ্জিনিয়ারিং টা হল আসলে ফলিত বিজ্ঞান (Applied Science). যা পিউর সায়েন্স এর optimal প্রয়োগ নিশ্চিত করে।
তাই এই বিদ্যায় কারো বিজ্ঞানী হওয়ার কোন সুযোগ নেই। এখান থেকে অগণিত গবেষক (researcher) তৈরি হয় । হ্যাঁ, যদি কেউ বিজ্ঞানী হতে চায়, তবে তাকে পিউর সায়েন্স-এ contribute করে তবেই বিজ্ঞানী হতে হবে।
আমাদের চুয়েট-এরই একজন ছাত্র আছেন যিনি এই applied-এ থেকেও pure Science-এ অবদান রেখে সারা বিশ্বের ১০০ জন বিজ্ঞানীর তালিকাভুক্ত হতে পেরেছেন।
আসলে Applied-এর কোন কিছুই ইউনিভার্সিটি হয় না, সেই গুলো সবসময় ইন্সটিটিউট ।
কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের দেশ হওয়াই সমকক্ষতা বুঝাতে আমরা ইন্সটিটিউট কে ইউনিভার্সিটি ঘোষণা করেছি । উদাহরণঃ MIT সারা বিশ্বের সেরা ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সিটিউট; কিন্তু বাঙ্গালী এটাও বুঝতে অবুঝ যে এই ইন্সিটিউটগুলোর (BUET, CUET, KUET, RUET যেগুলোকে আমরা ইউনিভার্সিটি বলি)মূল্য, সাধারণ ইউনিভার্সিটিগুলোর চেয়ে অনেকাংশে বেশি। কারণ দেশের সেরা ছাত্রগুলোই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তেই আসে। সেই ক্ষেত্রে পলিটেকনিকগুলো ইন্সিটিউট, তাই নামেই তারা সেরা হয়ে গেল। স্যালুট তাদের নামে।
কিন্তু পলিটেকনিক শব্দটিতে শব্দের অসম ব্যবহার থেকে যায়।
নাম তো গেল, এবার কাজে আসি । আমি আগেই বলেছি প্রকৌশলবিদ্যা উদ্ভাবনের সঙ্গে জড়িত। আমাদের দেশের ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি গুলো সেই দিকেই ধাবমান, অন্য দিকে পলিটেকনিক ইন্সিটিউটগুলোতে এক্সিস্টিং সিস্টেমগুলো গলধকরন করা হয়। সেখানে উদ্ভাবনটা মৃয়মান।
ডিপ্লোমা ভাইএরা আমার কথা গুলো হয়ত বিশ্বাস করতে চাইবেন না। কেন বিশ্বাস করবেন প্রমান ছাড়া??
ব্যাপারটা বুঝার জন্য আপনাদেরকেই বলি- আপনাদের ডিপ্লোমাদের কয়টি রিসার্চ পেপার আছে? কয়টি জার্নাল পেপার আছে যার মাধ্যমে আপনি আপনার উদ্ভাবনকে বিশ্বের মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন? কয়টা কনফারেন্স পেপার আছে? কয়টা থিসিস পেপার আছে? যেই কাজগুলো প্রতিনিয়ত এই ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি সহ প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি এর ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরগুলো করে যাচ্ছে।
কাউকে জার্নালের নাম জিজ্ঞেস করে লজ্জা দিতে চাই না।
এই উদ্ভাবনগুলোই কিন্তু পরে বিভিন্ন নতুন সিস্টেম-এ দিলে সেগুলো নতুন সিস্টেম থেকে এক্সিস্টিং সিস্টেম এ রূপান্তরিত হয়। আমি আগেই বলেছি পলিটেকনিক ইন্সিটিউটগুলোতে এক্সিস্টিং সিস্টেম গুলো ই গলাধকরণ করা হয় ।
এখন যদি কেউ একটি মেশিন এর নাটবল্টু ঘুরানো শিখে রাস্তার পাশে দোকান দিয়ে বসে লিখে অমুক হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, অমুক ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ ইত্যাদি, তাহলে আমি মনে করি যে একজন রিসার্চার তাঁর নামের আগে ইঞ্জিনিয়ার পদবী বসানো মুর্খতা, তাঁর গবেষণার সাথে প্রতারণা।
এবার আসি উন্নত দেশ গুলোর ডিপ্লোমা বনাম বিএসসি প্রসঙ্গে। বাংলাদেশ বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের মান দিতে পারেনি, তাই আমরা দেখি প্রতিবছর অনেক ইঞ্জিনিয়ার ডিগ্রি নিয়ে বিদেশে চলে যায়, আর আসতে চায় না। কারণ যেভাবে অযৌক্তিক সব আন্দোলন হচ্ছে, তাতে থাকার আর উপায় আছে?
বেসিক্যালি উন্নত দেশে একজন ইঞ্জিনিয়ার এর কাজ হচ্ছে ডিজাইন বেসিস। তিনি গবেষণা করে বের করে আনবেন কিভাবে এক্সিস্টিং সিস্টেমকে আরও optimal করা যায় কাজে, খরচে আর সমসাময়িকতায়; তিনি কখনোয় নাট বল্টু ঘুরাবেন না।
ওনার বেসিক কাজটা Simulated environment-এ। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারেরা পরে simulated data use করে বাস্তব রূপটা দিয়ে থাকেন সেই রিসার্চার-এর নির্দেশনা অনুযায়ী। সেই ক্ষেত্রে ডিপ্লোমাদের অবদান-ও কিন্তু কম না!
লিখাটা অনেক বড় করে ফেললাম। ডিপ্লোমাদের দাবি ও সমসাময়িক অযৌক্তিক সব প্রশ্নের আলোকে এই লিখাটা।
একটি কথা বলেই শেষ করছি।
আপনারা ডিপ্লোমারা যেই দিন উল্লিখিত Requirement গুলো পূরণ করবেন সেই দিন আপনাদের নামের আগে ইঞ্জিনিয়ার ট্যাগ আর কে ঠেকায়? আমরাই আপনাদের আমাদের কাতারে নিয়ে আসতে গর্ববোধ করবো!
[মূল লিখাঃ আকীব আলম]
(সংকলিত ও সংশোধিত)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।