শিল্প ও প্রাতিষ্ঠানিক মনোবিজ্ঞান হচ্ছে মূলত কর্মচারী, কর্মক্ষেত্র, এবং প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত অধ্যয়ন। শিল্প মনোবিজ্ঞানীরা একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের দক্ষতা, সন্তুষ্টি, নিরাপত্তা এবং কল্যাণ নিয়ে কাজ করেন। তারা কর্মীর আচরণ বা মনোভাব কিভাবে অনুশীলন, প্রশিক্ষণ, মতামত এবং পরিচালন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উন্নয়ন করতে পারে মূলত এর উপরে গবেষণা করে থাকেন। এছাড়াও শিল্প মনোবিজ্ঞানীরা সময়ের সাথে-সাথে প্রতিষ্ঠানের প্রভূত উন্নয়নে ভূমিকা রেখে আসছেন।
ইতিহাস:
যদিও শিল্প মনোবিজ্ঞান মূল বিকাশ ঘটেছে বিশ শতকের দিকে তবু মনোবিজ্ঞান হিসেবে শিল্প মনোবিজ্ঞানের প্রথম প্রয়োগ দেখতে পাওয়া যায় উনিশ-শতকের গোঁড়ার দিকে ; এই সময়ে শিকাগো শহরের ওয়াল্টার ডিল স্কট (ScottScott) বেশ কিছুদিন ধরেই বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত গবেষণা করছিলেন এর সূত্র ধরে ১৯০৩ সালে তার লেখা “theory of advertising” প্রকাশিত হয়।
এদিকে, হুগো মুন্সটারবার্গ ( Hugo Munsterberg) কর্মী নির্বাচনে এপটিটুড এবং ওয়ার্ক স্যাম্পল টেস্ট এর উপযোগিতা বিষয়ক গবেষণা পরিচালনা করে আসছিলেন যার ফলস্বরূপ ১৯১৩ সালে তার “Munsterbergs Psychology And Industrial Effeciancy” নামক বইটি প্রকাশিত হয়। যেহেতু এরা দুইজনই ছিলেন প্রসিদ্ধ পরীক্ষণ মনোবিজ্ঞানী (Experimental Psychologist) এ কারণেই শিল্প মনোবিজ্ঞানের বিকাশে পরীক্ষণ মনোবিজ্ঞানীদের ভূমিকাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
ইঞ্জিনিয়ারদের অবদান:
মোটামুটি ১৯ শতক থেকে ২০ শতকের দিকে, Frederick Winslow Taylor নামক একজন আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ার কর্মী উৎপাদন নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। তিনি বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার (scientific management) বিকাশে বিশেষ অবদান রেখেছেন।
টেইলরের (১৯১১) বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনায় তিনি বলেন যে;
১।
প্রতিটি কাজ সাবধানে বিশ্লেষণ করা উচিত যাতে কাজ করার অনুকূল উপায়সমূহ নির্দিষ্ট করা যায়।
২। কর্মী নির্বাচনে কর্মক্ষমতার সাথে সম্পর্কিত বৈশিষ্ট্য গুলোর প্রতি যোর দিতে হবে। বর্তমান কর্মীদের উপর ভিত্তি করে ব্যবস্থাপককে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য গুলো নির্বাচন করতে হবে।
৩।
কর্মীদের সাবধানে প্রশিক্ষণ দিতে হবে যাতে করে তারা সুস্পষ্টভাবে কর্মসম্পাদন করতে সক্ষম হয়।
৪। কর্মীদের তাদের উৎপাদন মুখি কাজের জন্য পুরস্কৃত করতে হবে যাতে করে কর্মক্ষমতার সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়।
এছাড়াও ইঞ্জিনিয়ার ফ্রাঙ্ক এবং মনোবিজ্ঞানী লিলিয়ান গিলব্রেথ “Time and motion” সম্পর্কিত গবেষণা করেন যেখানে তারা অপেক্ষাকৃত দক্ষ কর্ম-পদ্ধতির বিকাশ সাধনের লক্ষে মানুষের কাজের সময় এবং গতি পরিমাপ করতেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ:
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দিকে আমেরিকার সামরিক বাহিনীতে শিল্প মনোবিজ্ঞানের ব্যবহার শুরু হয়।
১৯১৭ সালে যখন আমেরিকা প্রথমবারের মত এই বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেয়, মনোবিজ্ঞানী রবার্ট ইয়ার্ক্স(Robert Yerkes) এর অধীনে বেশ কয়েকজন মনোবিজ্ঞানী সেনাবাহিনীর চাকরিতে অংশ নেন। এই সময়ে মানসিক ক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য army alpha এবং army beta group test আবিষ্কার ছিলো তাদের সবচাইতে বড় অবদান। এরপর প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ মাঝা মাঝি সময়ে শিল্প মনোবিজ্ঞান অনেক ক্ষেত্রেই প্রসারণ লাভ করে।
১৯২১ সালে , Carnegie Institute Of Technology কর্তৃক প্রথম পি এইচ ডি ড্রিগী প্রদান করা শুরু করে। সে বছরই James McKeen Cattell কর্তৃক Psychological Corporation গঠিত হয়।
এছাড়াও ১৯২৪ থেকে শুরু করে প্রায় দশ বছর ধরে ওয়েস্টার্ন ইলেকট্রিক কোম্পানি কর্মীদের উপর “Hawthorne studies” নামে একটি গবেষণা পরিচালিত হয়। এই গবেষণার পূর্বে যেখানে শিল্প মনোবিজ্ঞানের উদ্দেশ্য ছিলো শুধুমাত্র কর্মী উৎপাদনশীলতা, সাংগঠনিক দক্ষতা নির্ধারণ, কর্মীর ক্ষমতার মূল্যায়ন এবং কর্ম-নকশা প্রণয়ন করা সেখানে কর্মীর আচরণে; কর্মদক্ষতায় অথবা প্রাতিষ্ঠানিক জীবনযাত্রায় সামাজিক প্রভাবকগুলো নির্ধারণের উপর গুরুত্ব দেয়া শুরু হলো।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় শিল্প মনোবিজ্ঞানের প্রভূত উন্নয়ন হতে থাকে। এ সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রের মনোবিজ্ঞানীরা যুদ্ধে অবদান রাখতে শুরু করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যে নতুন সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছিলো তা শিল্প মনোবিজ্ঞানের উন্নয়নে অবদান রেখেছিলো।
যুদ্ধ ক্ষমতা পরীক্ষা, নৈতিক ও যুদ্ধে শিল্প শ্রমিকদের অবসাদ-দুর, মূল্যায়ন কেন্দ্র প্রবর্তন (Assessment Center) এবং সামরিক বুদ্ধিমত্তা (Military Intelligence) যাচাই করা প্রয়োজনীয় ছিলো।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বছরগুলো ছিলো শিল্পের জন্য একটি প্রস্ফুটন-কাল। এই সময় বিভিন্ন চাকরিতে দ্রুত যোগ্য নিয়োগ দেয়া এবং প্রার্থীদের পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে I/O মনোবিজ্ঞানীরা অবদান রাখা শুরু করেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৬৫ সালের সিভিল রাইট আইনটি I/O মনোবিজ্ঞানের ক্ষেত্র কে আরো বিস্তৃত করেছে। এই আইনের ফলে একটি প্রতিষ্ঠান কর্মী নির্বাচন এবং তাদের সাথে কেমন আচরণ করতে হবে তা প্রবল ভাবে প্রভাবিত হয়।
সংখ্যালঘু এবং নারীদের প্রতি বৈষম্য অনৈতিক বিবেচিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানকে এক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন আনতে হয়েছিলো। এক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করার সমসাময়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর শিল্প মনোবিজ্ঞানের সাহায্য দরকার হয়েছিলো।
১৯৭০ সালে APA ( American Psychological Association) কর্তৃক Industrial and Organizational Psychology নামটি গৃহীত হয় এবং আলাদা একটি শাখার সৃষ্টি হয়।
এছাড়াও ১৯৯০ সালে আমেরিকায় ডিস-অ্যাবিলিটি আইন পাশ হলে সেক্ষেত্রে নতুন নিয়ম নির্ধারণে ক্ষেত্রে আবার শিল্প মনোবিজ্ঞানীর দরকার হয়।
রেফারেন্সঃ
en.wikipedia.org/wiki/Industrial_and_organizational_psychology
Industrial Psychology by Paul E. Spector
Sazzad chowdhury
Email:
Facebook : https://www.facebook.com/ThePrimeSaZZAd
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।