আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাম্রাজ্যবাদ : জুলুমবাজির পারফেক্ট সংস্করণ

কি যেন খুজি নিজেই জানিনা

ভিন্ন আঙ্গিকে লেখার একটা ধাঁচ যেন তিনি তৈরি করেছেন । চিকিৎসা বিজ্ঞানে পড়েও তিনি চোখ বুলিয়েছেন আর্থ সামাজিক প্রক্ষাপট বিবেচনায় গ্লোবাল রাজনীতির অস্থির মাঠেও । দেখিয়েছেন সাম্রাজ্যবাদের কোপানলে পড়ে কিভাবে চোখের সামনে ধ্বংস হচ্ছে সভ্যতা, মানবতার ফাঁকা বুলি ডুকরে কেদে উঠে আহবান জানায় মুক্তিকামী সৈনিকদেরকে । ফাহ-মিদ- উর রহমান তার ‘সাম্রাজ্যবাদ’ বইটিতে এমনি কিছু তুলে ধরেছেন । দিশেহারা চোখের কোনা দিয়ে তাকানোর একটুখানি সলজ্জ্য প্রবণতা ! এই আর কি ! তিনটি অধ্যায়ে বিভক্ত বইটি ১।

বক্কক ২। ইসলাম ও সাম্রাজ্যবাদ ৩। ইতিহাস ও সাম্রাজ্যবাদ ১ম অধ্যায়ে ২১টি আর্টিকেল আছে যেখানে তিনি তুলে ধরেছেন আগ্রাসী চরিত্রের কিছু নমুনা । সভ্যতার নামে অসভ্যতার বীজ ছড়িয়ে দিতে ওস্তাদ পশ্চিমা শক্তির মুখোশটাও উন্মোচন করেছেন সাথে সাথে । দেখিয়েছেন ইম্পেরিএলিজম,কলনিয়ালিজম কিভাবে এক কাতারে অবস্থান করে ।

গত চারশ’ বছর ধরে পশ্চিমাদের লুণ্ঠন, বানিজ্যের অবৈধ বিস্তার , পরদেশ দখলের সীমাহীন প্রচেষ্টা আর কথায় কথায় ইসলাম ফোবিয়ার নামে বিদ্বেসাত্তক মনোভাবের প্রদর্শনী । তুর্কী প্রেসিডেন্ট এরদোগান যেটাকে বলেছেন “ইসলাম ফোবিয়া হচ্ছে বর্নবাদের মত” । হাজার বছরের সভ্যতা ধ্বংসের প্রাক্কালে বুশ বলেছিলেন “এ যুদ্ধ গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য” । পররাষ্ট্র দখলের জন্য সাম্রাজ্যবাদ কিছু কমন বুলি তোলে । যেমন ‘ব্যর্থ রাষ্ট্র’ , ‘অকার্জকর রাষ্ট্র’ , ‘মৌলবাদ’ কিংবা ‘জঙ্গিবাদের জিগির’।

গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে পুজির বিস্তার, শোষণ , দালাল সৃষ্টি বা আর্থিক বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান তৈরির মাধ্যমে কিভাবে রক্ত শুষে খাচ্ছে তাও তিনি দেখিয়েছেন । কর্পোরেট শোষণের একটা ডকুমেন্ট পাওয়া যাবে একসময়ের কর্পোরেট পারসোনালিটি perkins এর বই “Confessions of an economic hit man” , “The Secret History of American Empire” , “Hoodwinked” এ । Corporate সাম্রাজ্যবাদের নির্মম শিকার ইকুয়েডরের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইমে রোলদোস এর একটা প্রিয় বচন ছিল “ The missile is not invented that can kill an idea” যা তার দেশপ্রেম কে ইঙ্গিত করে । অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদের ধ্বজাধারী IMF,WB,WTO,WIPO,UN সহ বহুবিধ সংস্থা আছে যেগুলোর কাজ মুলতঃ ১। বহুজাতিক কোম্পানির পক্ষে কাজ করা ২।

জবাবদিহিতা ছাড়াই আমাদের মত দেশে অবারিত ক্ষমতা ,সুযোগ ভোগ করা ৩। পাশ্চ্যাতের লবি হিসেবে কাজ করা আর এদের উচ্ছিস্ট ভোগী হল স্থানীয় শাসক ও এলিটরা । বিশ্ব আজ সাংঘাতিক ভাবে আক্রান্তের শিকার যার মাধ্যমে সেটি হল ‘মিডিয়া সাম্রাজ্যবাদ’। মিডিয়াগুলো ইস্যু খুঁজে কিংবা বানিয়ে তাদের milestone হিসেবে কাজ করে । ইরাকে হামলার আগে এটা ঠিক কার দায়িত্ব “মিডিয়ার (cnn)নাকি বুশ প্রসাসনের” তা বুঝতে একটু কষ্টই হচ্ছিল ।

একটা জাতিকে ধ্বংস করার মোক্ষম হাতিয়ার হল তার সংস্কৃতি ধ্বংস করা । ওরা ঠিক তাই করছে । দেশে দেশে সাংস্কৃতিক ছোবল মেরে জাতিকে মেরুদণ্ডহীন করার আপ্রান চেস্টাই তারা চালিয়ে যাচ্ছে । সাংস্কৃতিক বিভাজন , নতুনের আমদানি , অবৈধ ও অশ্লীল সাহিত্য, সিনেমা তার একটি অংশ মাত্র । পরিবেশ বিদ্ধংসী সব কাজ তারা করছে ।

পারমানবিক বোমার বিস্ফোরণ , আরেক দেশে অনুমতি ছাড়াই বজ্র নিক্ষেপ , ecosystem devastating power plant, chemical plant, oil কিংবা নানা রকম ফ্যাক্টরি তারা করছে আর তার নির্মম শিকার হচ্ছে পানি, বায়ু, মাটি আর প্রকৃতি । বর্তমানে সাম্রাজবাদের কর্তা USA আজ দায়িত্ব নিয়েছে দেশে দেশে গনতন্ত্র , স্বাধীনতা , মানবাধিকারের ফেরিগিরির । এজন্য তারা আছে চীন (১৯৪৪-১৯৪৬), কোরিয়া (১৯৫০-৫৩), গুয়েতেমালা (১৯৫৪), ইন্দোনেশিয়া (১৯৫৮) থেকে হাল আমলের ইরাক , আফগান কিংবা মিসর ও সিরিয়াতেও । চায়না সাম্রাজবাদের স্পষ্ট উদাহরণ হল উইঘুরদের উপর নির্মম নির্জাতন । তাদের নেত্রী রাবেয়া কাদরি আজ নির্বাসনে ।

আমাদের subcontinent এ দাদাগিরি দেখাচ্ছে আরেক উঠতি শক্তি । ‘নেব কিন্তু দেবনা’ নীতিতে অটল তারা । বাংলাদেশ সহ অন্যদেশে তাদের আধিপত্যবাদি উগ্র মেজাজের কবলে হারিয়ে গেছে হায়দ্রাবাদের ইতিহাস , সিকিমের ললাট , জ্বলছে কাশ্মীর , নেপাল –ভুটানে অশান্তি আবার কখনো শ্রীলংকাতে সামরিক “জয়যাত্রা”। মগজ ধোলাইয়ের মাধ্যমে দেশে দেশে educated দালাল সৃষ্টি তাদের লক্ষ্য । scholarship এর লোভে অনেকেই চর্চা করেন “made history”. এরাই আবার আধুনিকতার নামে বুলি কপচায় , ইনসাফের গান গায় , ঘোষণা করে “war on terrorism” ।

Civil society নামক পরগাছা সৃষ্টি করে মতামত সৃষ্টি, প্রভাবিত করা সহ অনেক কিছুই তারা করে যা আমরা দেখতে পাই American ভিন্নমতাবলম্বী Noam chomsky’s ‘Manfacturing Consent’ বইটিতে । পছন্দ না হলে ‘অকার্যকর রাষ্ট্রে’র তকমা দিয়ে তারা মুখে ফেনা তোলে । ‘আকবর মার্কা’ মুসলমান হলে ভাল , নইলে মন্দ বলতেও ছাড়ে না তারা। Bill clinton’s ‘My life’, Obama’s ‘Audacity of Hope’ কিংবা টনির ‘The journey’ সাম্রাজ্যবাদী তারকাদের ঢেকুর তোলা আত্তকথনের এক পসরা মাত্র । সংস্কৃতির ভাঙ্গা সেতুতে আজ বিশ্বসভ্যতার খাদক প্রতিযোগীরা ।

যেমনটি লেখক বলেছেন “ উপনিবেশিকতা আমাদের দিয়েছিল সেকুলার মন , বিশ্বায়ন আমাদের দিচ্ছে কঞ্জুমারিস্ট মন”। তিনি আরও বলেছেন বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর দার্শনিক সন্তান আল্লামা ইকবাল সম্পর্কেও যিনি ছিলেন উপনিবেশিক শক্তির কাব্যিক ত্রাশ । ইকবালের ধারনায় – “ইম্পেরিয়ালিজমের দেহটা প্রকাণ্ড, হৃদয়টা অন্ধকার”। সাম্রাজ্যবাদের কোপানলে আমাদের বিদ্দত সমাজ আজ ছন্ন ছাড়া । মার্ক্স বাদীরাও দিশেহারা ।

চে গুয়েভারা স্বপ্নের আন্দোলন সফল হওয়ার পর তারই বন্ধু আজকের কিংবদন্তী ফিদেল ক্যাস্ত্রোর হাতে বিতারিত হয়েছিলেন কেন? এদেশে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বন্ধু তাজউদ্দীন কে সরিয়ে মোস্তাক কে বুকে টেনে নেয়া হয়েছিল কার ইশারায় ? সাড়া জাগানো উইকিলিক্সের কারনে মানুষ জানছে ভণ্ডদের কারবার । দেশে বিদেশে গুপ্তচরবৃত্তি , উস্কানি দেয়া , অশান্তি সৃষ্টি, ক্যু ঘটানো থেকে হেন কাজ নেই যা তারা করে না । সাম্রাজ্যবাদের শিকার আজ ইসলাম। HUNTINGTON দের ফর্মুলা apply করতে গিয়ে আজ পাশ্চাত্য আরও হিংস্র । এইসব Thinktank দের প্রভাবে জিহাদ আর ফতোয়ার অপব্যবহার হচ্ছে ।

conservatism, liberalism ,nationalism এর আলোকে ইসলাম কে দ্যাখার প্রবণতা তৈরির অপচেষ্টা চলছে । Terrorism এর সাথে মিলিয়ে ফেলা হচ্ছে ইসলাম কে । সবদিক থেকে মুসলিমদের dominated করার প্রস্ততি আজ প্রকাশ্য । communalism এর সীমানা এড়িয়ে আজ মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের একাংশ দাড়িয়ে গেছে । কুতুব, মউদুদি, মুরসি ,বান্নার উত্তরসূরিরা আজ জেগেছে ।

Islamic political party গুলোর প্রতি নাক ছিটকানিটা তাদের স্বভাব । হামাস, রাফা, জামায়াত, ইখওয়ান তাই তাদের চক্ষুশূল । ইতিহাস কে বিকৃত ভাবে , মনমত করে উপস্থাপন আরেক ধরনের নীচতা । ঘসেটি , শওকত জং , মীরজাফররা তাদের প্রিয়ভাজন। সংগ্রামী আন্দোলন গুলোকে undermine করার প্রচেস্টা তারা চালিয়ে যাবেই ।

পলাশী , ১৮৫৭ এর যুদ্ধ,দশকে দশকে মুসলমানদের আজাদি আন্দোলন , মজলুমের মুক্তির লড়াই , ফিলিস্তিনিদের কঙ্কর নিক্ষেপের কারন ও টেনেছেন লেখক । শহীদের প্রেরনা ‘ওমর মুখতারের’ সানুসি আন্দলনের উপরও একটি প্রবন্ধ আছে বইটিতে । দেওবন্দের ওলামা , হায়দ্রাবাদের সূর্য ডুবে যাওয়া ও গত শতকের ফারায়েজি আন্দোলন ও বিধৃত হয়েছে তার লেখাগুলোয়। এসব লেখা আজ নতুন করে ভাবতে শেখায় । আরিফুর রহমান সাকী শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় mail:


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.