পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের লাগোয়া শহরতলি চক শেহজাদে পোড়ামাটি রঙের বিশাল বাড়ি। বাড়িটি ঘিরে রয়েছে বিভিন্ন ফলের গাছে শোভিত বিশাল বাগান। পাশে বিস্তৃত গমখেত। অবকাশযাপন বা সাহিত্যচর্চার উপযুক্ত জায়গা বলেই মনে হবে যে কারও। এ রকম একটি বাড়ি ঘিরে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সশস্ত্র অবস্থান সে কারণেই একেবারে বেমানান।
কিন্তু এটি আর দশটা বাড়ির মতো সাধারণ নয়। এটি সরকারঘোষিত ‘সাব-জেল’ বা উপকারাগার। হ্যাঁ, পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সেনাপ্রধান পারভেজ মোশাররফেরই বাড়ি এটি। তাঁকেই গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে সেখানে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো হত্যাকাণ্ডসহ কয়েকটি মামলায় বিচারের সম্মুখীন তিনি।
সেনা ও পুলিশের ৩০০ সদস্যের পাহারায় বন্দী থাকলেও কার্যত বন্দিদশা উপভোগই করছেন মোশাররফ। আরেকটি স্মৃতিকথা লেখা শুরু করেছেন। নিয়মিত ব্যায়াম করছেন, খাচ্ছেন ব্যক্তিগত বাবুর্চির রান্না।
বিশাল বাড়িটির নকশা করেছেন স্থপতি হাম্মাদ হুসাইন। তিনি জানান, মোশাররফ স্বেচ্ছা-নির্বাসনে বিদেশে যাওয়ার আগেই বাড়িটির ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়।
তবে নির্বাসন থেকে ফেরার পর চলতি বছরই প্রথমবারের মতো এই বাড়িতে একটি রাত কাটিয়েছিলেন তিনি। সাব-জেল ঘোষণার পর এপ্রিল থেকে সেখানেই থাকছেন মোশাররফ। স্থপতি হাম্মাদ জানান, বাড়িটির বিভিন্ন দেয়ালে মোশাররফের পেশাগত জীবনের বিভিন্ন সময়ের গল্পই ফুটে উঠেছে। সেখানে রয়েছে বিশ্বনেতাদের ছবি, তরবারি, বন্দুক—একজন সামরিক নেতা যেমনটা পছন্দ করেন। মোশাররফের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা জানান, ৭০ বছর বয়সী সাবেক এ সেনাশাসক শরীর ঠিক রাখতে নিয়মিত ৭৫ মিনিট ব্যায়াম করেন।
পাশাপাশি লেখালেখি ও পড়াশোনা করে মন প্রফুল্ল রাখেন।
মোশাররফের মুখপাত্র রাজা বোখারি বলেন, ‘তিনি বই লিখছেন। আমি তাঁর লেখা দেখেছি। এতে ২০০৬ সালে প্রকাশিত তাঁর স্মৃতিকথা ইন দ্য লাইন অব ফায়ার-এর পরের বিষয়গুলো জানা যাবে। ’
১৯৯৯ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের ক্ষমতায় ছিলেন মোশাররফ।
রক্তপাতহীন এক অভ্যুত্থানে নওয়াজ শরিফের তখনকার সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন তিনি। এর পেছনে ছিল দুজনের মধ্যে কিছুদিন ধরে চলা ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। পরবর্তী সময়ে স্বেচ্ছা-নির্বাসনে দেশ ত্যাগ করতে হয় একদা পরাক্রান্ত এ শাসককে। দুবাই ও লন্ডনে কয়েক বছর থাকার পর গত পার্লামেন্ট নির্বাচনের আগে দেশে ফেরেন।
দেশে ফেরার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো হত্যাকাণ্ডসহ কয়েকটি মামলায় বিচারের মুখোমুখি করা হয় তাঁকে।
আইনি জটিলতার কারণে নির্বাচনে অংশও নিতে পারেননি তিনি। এএফপি।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।