বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া 'গৃহবন্দী' না 'মুক্ত' তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার ঝড় চলাকালে গতকাল সন্ধ্যায় তার বাসভবনের সামনে পর পর চারটি বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে এ ঘটনার সময় তিনি বাসার ভেতরেই অবস্থান করছিলেন। তবে দুষ্কৃতকারী কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
বিএনপি নেতারা বলছেন, বেগম জিয়া কার্যত গৃহবন্দী। তাকে বাসায় অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সরকারের এজেন্টরাই বাসভবনের সামনে বোমাবাজি করেছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বেগম জিয়া মুক্ত। তার নিরাপত্তার স্বার্থেই গুলশানের বাসভবনের সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য অবস্থান নিয়েছে। পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে বিএনপি নেতারাই বাসভবনের সামনে বোমাবাজির ঘটনা ঘটিয়েছেন।
সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যেও কীভাবে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল- এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের গুলশান জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার নূর আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'ঘটনাস্থল ৭০ নম্বর সড়কটি অপেক্ষাকৃত অন্ধকার। সেখানে একটি পার্কও আছে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই পার্ক থেকেই দুর্বৃত্তরা বোমাগুলো নিক্ষেপ করেছে। এ অবস্থায় বিরোধীদলীয় নেতার নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদারের চিন্তাভাবনা চলছে। ' খালেদা জিয়া গৃহবন্দী কি না তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা জানতে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক।
বিরোধী দলের একটি সংসদীয় প্রতিনিধি দল গতকাল এ নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করেন। বিষয়টি নিয়ে আজ বিকাল ৪টায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল।
জানা গেছে, বিরোধী দলের এমপিদের সঙ্গে বৈঠকের পর স্পিকার এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু তাকে জানিয়েছেন, বিরোধীদলীয় নেতা অন্তরীণ, আটক বা গৃহবন্দী নন। তার নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েই বাসভবনের সামনে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
একইভাবে স্পিকার পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকারের সঙ্গেও কথা বলেন। তিনিও জানিয়েছেন, বিরোধীদলীয় নেতার নিরাপত্তার বিষয়টি আপেক্ষিক। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে নিরাপত্তার স্বার্থেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। স্পিকারও আইজিপিকে বলেন, 'নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা যাতে কোনো ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন না হন, তা বিবেচনায় রাখতে হবে। ' খালেদা জিয়া গৃহবন্দী কি না তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হলেও জনমনে 'বিভ্রান্তি' কাটাতে সরকার কোনো প্রেসনোট জারি করেনি।
সর্বশেষ ২০০৭ সালের ওয়ান-ইলেভেনের পর গৃহবন্দী হন খালেদা জিয়া। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, বেগম জিয়াকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, 'বিরোধীদলীয় নেতা ঘর থেকে বেরোতে পারছেন না। তার বাসভবনে কোনো নেতা-কর্মীকে ঢুকতেও দেওয়া হচ্ছে না। নেতা-কর্মীরা বাসার সামনে গেলেই গ্রেফতার করা হচ্ছে।
দুই পাশে বালুভর্তি ট্রাকসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মূল গেটে অবস্থান করছেন। এটাকে গৃহবন্দী ছাড়া আর কী সংজ্ঞা দেওয়া যেতে পারে তা বোধগম্য নয়। ' তবে জাসদ সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, 'খালেদা জিয়া গৃহে অন্তরীণ নন। কাউকে গৃহবন্দী করতে হলে প্রজ্ঞাপন (জিও) জারি করতে হয়। যেহেতু কোনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি, তাই তিনি মুক্ত।
'
আজ বঙ্গভবনে যাচ্ছেন বিএনপির প্রতিনিধি দল : বিরোধীদলীয় নেতার বাড়ির সামনে পুলিশি কড়াকড়ির বিষয়ে স্পিকারের হস্তক্ষেপ চাওয়ার পর আজ বিকালে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, 'আমরা রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎ চেয়েছি। তার সামরিক সচিব জানিয়েছেন, কাল (শুক্রবার) বিকাল ৪টায় সাক্ষাতের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। ' বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। স্পিকারকে স্মারকলিপি : জয়নুল আবদিন ফারুকের নেতৃত্বে সকালে আট সদস্যের সংসদীয় প্রতিনিধি দলটি জাতীয় সংসদ ভবনে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং এ বিষয়ে একটি স্মারকলিপি দেন।
১০ মিনিটের সংক্ষিপ্ত সাক্ষাতের পর সংসদ ভবনের মিডিয়া সেন্টারে স্মারকলিপি সাংবাদিকদেরও পড়ে শোনান ফারুক। তিনি বলেন, 'সংসদ এখনো বহাল। বিরোধীদলীয় নেতা এখনো পদে বহাল। অথচ তার বাসভবন অবরুদ্ধ করে বাড়ির চারপাশে প্লাটুনের পর প্লাটুন পুলিশ এবং বালুভর্তি ট্রাক দিয়ে বাড়ির দুই ধার বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এমনকি গণমাধ্যম কর্মীদেরও বাড়ির আশপাশে অবস্থান ও প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
তাই খালেদা জিয়া গৃহবন্দী কি না, জাতি তা জানতে চায়। আমরা স্পিকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছি। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলবেন। ' বিএনপির সংসদ সদস্য এ বি এম আশরাফ উদ্দিন নিজান, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, হারুনুর রশিদ, নিলোফার চৌধুরী মণি, রেহানা আক্তার রানু, সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া ও রাশেদা বেগম হীরা প্রতিনিধি দলে ছিলেন। এখনো অবরুদ্ধ খালেদা জিয়া : মার্চ ফর ডেমোক্রেসি বা গণতন্ত্রের অভিযাত্রা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শুক্রবার থেকেই খালেদা জিয়ার গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের 'ফিরোজা' নামের বাসভবন অবরুদ্ধ করে রাখেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
সপ্তাহব্যাপী অবরুদ্ধ বাসভবনে গতকাল সকালের দিকে নিরাপত্তা কিছুটা শিথিল করা হয়। সন্ধ্যায় অবশ্য আবার তা জোরদার করা হয়েছে। সেখানে পূর্ব ও পশ্চিম পাশের রাস্তায় চারটি ট্রাক আড়াআড়িভাবে রাখা হয়। পশ্চিম পাশের রাস্তায় রাখা হয় একটি বালুভর্তি এবং একটি খালি ট্রাক। একইভাবে র্যাব, পুলিশ ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে।
পুবপাশে নিরাপত্তা জোরদার করতে বাঁশের দুটি ব্যারিকেড দেওয়া। সন্ধ্যায় পশ্চিমপাশে চারটি বোমা বিস্ফোরণের পর ট্রাক দুটি সরিয়ে সেখানে একটি জলকামান রাখা হয়। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্যের উপস্থিতিতে কীভাবে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয় ও নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ও অবরুদ্ধ করে রেখেছে পুলিশ। চেয়ারপারসনের এক ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, 'কে বা কারা বোমা হামলা করেছে, তা আমরা জানি না।
তবে অবরোধে বিরোধীদলীয় নেতা বাসা থেকে কোথাও বের হন না। কেউ বাসায় এলে তার সঙ্গে কথা বলেন। তিনি গত দুই দিন গুলশানের কার্যালয়েও যাওয়ার চেষ্টা করেননি। যত দিন অবরোধ থাকবে তত দিন বেগম জিয়া বাসায়ই থাকবেন। '
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।