বার্সেলোনায় নেইমার, রিয়াল মাদ্রিদে গ্যারেথ বেল বা আর্সেনালে মেসুত ওজিলের অভিষেক নিয়ে তুমুল হইচই হয়েছে ফুটবল বিশ্বে। তারকাদের নিয়ে তো এমনটাই হওয়ার কথা। কিন্তু অভিষেকের পারফরম্যান্স বিচারে এই তারকাদের একেবারেই ম্লান করে দিয়েছেন অখ্যাত এক তরুণ। প্রথমবারের মতো প্রথম একাদশে সুযোগ পেয়েই করেছেন জোড়া গোল। তাঁর দল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডও ২-১ গোলের ঘামঝরানো জয় পেয়েছে এই দুই গোলের সুবাদেই।
ইউনাইটেডের জার্সি গায়ে এমন স্বপ্নীল অভিষেকই হয়েছে ১৮ বছর বয়সী আদনান জানুয়াজের। ফুটবল বিশ্বের নজর তো কেড়েছেনই, আগামী দিনেও যে অনেক দূর যাওয়ার সম্ভাবনা আছে, সেটাও বেশ ভালোমতোই বুঝিয়ে দিয়েছেন এই বেলজিয়ান বংশোদ্ভূত উইঙ্গার।
২০১১ সালের শুরুতে মাত্র ১৬ বছর বয়সে ওল্ড ট্রাফোর্ডে পা রেখেছিলেন আদনান। খেলা শুরু করেছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের অনূর্ধ্ব-১৮ দলে। কিন্তু ইনজুরির কারণে প্রথম বছরটা খুব একটা ভালো কাটেনি এই প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের।
এরপর অবশ্য ফিরেছিলেন খুব ভালোভাবেই। দ্রুতই খেলা শুরু করেছিলেন অনূর্ধ্ব-২১ দলে। সেখানেও নজর কেড়েছিলেন স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের। আরও নির্দিষ্ট করে বললে ফার্গুসন নাকি ভক্তই হয়ে পড়েছিলেন এই তরুণের। ফার্গি তাঁকে ‘চমত্কার’ খেলোয়াড়ের অভিধায় অভিহিত করেই থেমে থাকেননি।
বলেছিলেন, আদনানের নাকি শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে খেলার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে। তাঁর গতি ও কৌশল নিয়েও প্রশংসা ঝরেছিল স্যার ফার্গুসনের কণ্ঠে।
ফার্গুসনই আদনানের হাতে তুলে দিয়েছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ৪৪ নম্বর জার্সিটা। গত মৌসুমের শেষে ফার্গুসনের বিদায়ী ম্যাচটাতে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে মূল দলেও ঢুকে পড়েছিলেন এই তরুণ উইঙ্গার। সেই ম্যাচে মাঠে নামার সুযোগ না পেলেও রেড ডেভিলদের নতুন তারকা হিসেবে আবির্ভাবটা আটকে থাকেনি।
এবারের মৌসুমের শুরুতে প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে দারুণ খেলেছেন আদনান। গত ১১ আগস্ট কমিউনিটি শিল্ডের ম্যাচে উইগান অ্যাথলেটিকের বিপক্ষে তাঁর শুরুটা হয়েছিল বদলি হিসেবে। গত মাসে আদনান প্রিমিয়ার লিগেও প্রথম ম্যাচটা খেলেছিলেন বদলি হিসেবে। আর গতকাল মূল একাদশে সুযোগ পেয়েই করে ফেললেন বাজিমাত। সান্ডারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমে পিছিয়ে পড়ার পর জানুয়াজের জোড়া গোলে ভর করেই স্বস্তির জয় পেয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।
আশা করা যায়, এখন আর পেছনে তাকাতে হবে না বেলজিয়াম বংশোদ্ভূত এই ফুটবলারকে। নিজ গুণেই ইউনাইটেডে একটা শক্ত অবস্থান গড়ে নেবেন তিনি।
এখনো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদের কোনো চুক্তি হয়নি জানুয়েজের। শোনা যাচ্ছে, ম্যানচেস্টার সিটি, চেলসি, রিয়াল মাদ্রিদের মতো শীর্ষ সারির ক্লাবগুলোরও নাকি নজর পড়েছে এই উদীয়মান তারকাটির দিকে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডও হয়তো চাইবে দ্রুতই চুক্তি সইয়ের ব্যাপারটা সেরে ফেলতে।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে আদনানের অভিষেক এখনো হয়নি। আদনানের আন্তর্জাতিক দল নিয়েও আছে বিভ্রান্তি। ভবিষ্যতে তাঁকে কোন জাতীয় দলে খেলতে দেখা যাবে, সেটা কেউ জানে না। তরুণ খেলোয়াড়টিকে পেতে চাইবে বেলজিয়াম, আলবেনিয়া, কসোভো, তুরস্ক, সাইবেরিয়া এমনকি ইংল্যান্ডও! হ্যাঁ, এতগুলো দেশের যেকোনো একটির হয়েই খেলতে পারেন এই আদনান।
ব্যাপারটি একটু ব্যাখ্যার দাবি রাখে।
জন্মসূত্রে আদনান বেলজিয়ামের নাগরিক। কিন্তু তাঁর বাবার দেশ আলবেনিয়া আর মায়ের দেশ কসোভো। তাঁদের পরিবারের অনেকেই নাকি তুরস্ক আর সাইবেরিয়ার নাগরিক। তবে ইংল্যান্ডে বেড়ে ওঠা আর ফুটবলের হাতেখড়ির জন্য তাঁর ইংল্যান্ডের হয়েই খেলার বেশি সম্ভাবনা। খুব তাড়াতাড়িই ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন আদনানকে তাদের হয়ে খেলার প্রস্তাব দেবে বলে জানিয়েছেন ইউনাইটেড কোচ ডেভিড ময়েস।
বেলজিয়াম আর কসোভোর ফুটবলসংশ্লিষ্ট লোকজনও জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জানুয়েজকে তাঁদের জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য। এখন পুরো ব্যাপারটিই নির্ভর করছে আদনানের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ওপর।
কোনো সন্দেহ নেই যে রীতিমতো হইচই ফেলেই ফুটবল ক্যারিয়ারটা শুরু করেছেন জানুয়েজ। এখন ব্যাটন আদনানের হাতেই। তাঁকে নিয়ে এত হইচইয়ের মুখ রক্ষা যে তাঁকে করতে হবে পারফরম্যান্স দিয়েই! দেখা যাক, কত দূর কী করতে পারেন আদনান জানুয়াজ।
ওয়েবসাইট।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।