আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইসলামের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা সরকার

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

আসলে বাংলাদেশে ইসলামের প্রকৃত পরিচর্যাকারী ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তারই যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামের উন্নয়ন করে মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় কর্মকা-কে যথাযোগ্য মর্যাদায় আসীন করেছেন। ইসলাম ধর্মের প্রকৃত জ্ঞান অর্জনের জন্য মুসলিম সম্প্রদায়কে উৎসাহী করার কৃতিত্ব সম্পূর্ণ তার। উপরন্তু দেশের মধ্যে ধর্মীয় উগ্রবাদের জঙ্গিপনা নির্মূলের সাফল্যও তার সরকারের বড় অবদান।

ড. মিল্টন বিশ্বাস জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা-উত্তর তার শাসনকালেই বলেছিলেন, 'আমি ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলি, কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতা ধর্মবিরোধিতা নয়। আমি মুসলমান, আমি ইসলামকে ভালোবাসি। ' বাংলাদেশ টেলিভিশনে অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন শরিফের আওয়াজ শুনতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু, মুসলমানরা খুশি হলে মিলাদ পড়ানোর পরামর্শ দিয়ে গেছেন, আর মাদ্রাসা শিক্ষার বরাদ্দ কখনো বাতিল করেননি তিনি। এর আগে ১৯৭২ সালে ১৮ জানুয়ারি ডেভিড ফ্রস্টকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'আমি একজন মুসলমান এবং মুসলমান একবারই মাত্র মরে, দু'বার নয়। আমি মানুষ।

আমি মনুষ্যত্বকে ভালোবাসি। আমি আমার জাতির নেতা। আমি আমার দেশের মানুষকে ভালোবাসি। ' সম্প্রতি প্রকাশিত 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' পাঠ করে আমরা আরো অবগত হয়েছি, মুসলিম পরিবারের সন্তান হিসেবে বঙ্গবন্ধুর প্রিয় ধর্ম ছিল ইসলাম এবং হযরত মুহম্মদ (দ.) তার পরম শ্রদ্ধেয় মহামানব, পয়গম্বর ছিলেন। কিন্তু অন্য সব ধর্মের প্রতিও তার শ্রদ্ধা ছিল।

তিনি ছিলেন প্রকৃত প্রস্তাবে একজন একনিষ্ঠ মানব পূজারি। সব ধর্মই মানুষের কল্যাণ চায়_ সেই কল্যাণধর্মের তিনি ছিলেন উপাসক। একজন মুসলমান হয়েও এ কল্যাণধর্মের উপাসক হওয়া যায়_ এতে তার কোনো মানসিক বিরোধ ঘটেনি। কেননা তার মতে, ইসলাম মানব-কল্যাণ চেতনা সূর্যের মতোই উজ্জ্বল। এ কারণেই একজন যথার্থ বাঙালি এবং একজন মুসলমান হওয়ার পথে কোনোদিন তিনি কোনো বিরোধের সম্মুখীন হননি।

তিনি যে বাঙালি এ জন্য গর্বিত, আবার তিনি যে মুসলমান এ জন্যও তার গর্ব কম ছিল না। অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহাস ১৯৭০ সালের রমজান মাসে বঙ্গবন্ধুকে প্রতিদিন রোজা রাখতে দেখেছেন। 'যার যার ধর্ম তার তার' ধর্মনিরপেক্ষতার এই ব্যাখ্যা বঙ্গবন্ধুই প্রথম উপস্থাপন করেন। রাষ্ট্রীয় জীবন থেকে ধর্মকে পৃথক করে স্বাধীনতা দান করা দরকার। অবশ্য এই স্বাধীনতার অর্থ অন্য ধর্মের প্রতি হস্তক্ষেপের অধিকার নয় বা ধর্মের নামে ধর্মান্ধতা নয়।

ভারতবর্ষের দাঙ্গার অভিজ্ঞতা বঙ্গবন্ধুর ছিল। ধর্মের নামে হানাহানির ঘটনা দেখেছিলেন তিনি। পাকিস্তান আমলে ধর্মকে সামনে রেখেই পাকসেনারা বাঙালিকে শাসন ও শোষণ করেছে। এ জন্য সব ধর্মকে শ্রদ্ধা করলেও বঙ্গবন্ধু ধর্মান্ধতাকে ঘৃণা করতেন। উদারনৈতিক চিন্তাধারায় অভ্যস্ত হয়েছিলেন ইসলাম বিশ্বাসী বঙ্গবন্ধু।

সব ধর্মের সহাবস্থান নিশ্চিত করেছিলেন তিনি। ১৯৭২ সালের ১২ অক্টোবর খসড়া সংবিধান প্রসঙ্গে জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু যে ভাষণ দেন তাতে ছিল : আর হবে ধর্মনিরপেক্ষতা। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। হিন্দু তার ধর্ম পালন করবে; মুসলমান তার ধর্ম পালন করবে; খ্রিস্টান, বৌদ্ধ- যে যার ধর্ম পালন করবে। কেউ কারো ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না, বাংলার মানুষ ধর্মের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ চায় না।

রাজনৈতিক কারণে ধর্মকে ব্যবহার করা যাবে না। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ধর্মকে বাংলার বুকে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। যদি কেউ ব্যবহার করে, তাহলে বাংলার মানুষ যে তাকে প্রত্যাঘাত করবে, এ আমি বিশ্বাস করি। ' ১৯৭২ সালে ৪ নভেম্বর আবার বলেন : 'জনাব স্পিকার সাহেব, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের ধর্মকর্ম করার অধিকার থাকবে।

আমরা আইন করে ধর্মকে বন্ধ করতে চাই না এবং করবও না। ... ২৫ বছর আমরা দেখেছি, ধর্মের নামে জুয়াচুরি, ধর্মের নামে শোষণ, ধর্মের নামে বেইমানি, ধর্মের নামে খুন, ধর্মের নামে ব্যাভিচার_ এই বাংলাদেশের মাটিতে এসব চলেছে। ধর্ম অতি পবিত্র জিনিস। পবিত্র ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা চলবে না। যদি কেউ বলে যে ধর্মীয় অধিকার খর্ব করা হয়েছে, আমি বলব, ধর্মীয় অধিকার খর্ব করা হয়নি।

সাড়ে সাত কোটি মানুষের ধর্মীয় অধিকার রক্ষা করার ব্যবস্থা করেছি। ' বঙ্গবন্ধু যেমন বাঙালি মুসলমানের ধর্মীয় অধিকার রক্ষায় সংবিধানে ইসলামকে মহিমান্বিত করেছিলেন তেমনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ইসলামের একনিষ্ঠ উপাসক হিসেবে ধর্মপ্রাণ জনগণের আস্থা অর্জন করেছেন। বর্তমান সরকারের আমলেই মাধ্যমিক পর্যন্ত ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আলেম-ওলামাদের প্রায় ১ হাজার বছরের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দেশে একটি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অফিস স্থাপন চলছে।

দেশের বিভিন্ন মসজিদ ও মুসলিম ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে ৩৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সরকারি হজ ব্যবস্থাপনায় কেবল গত বছরই ১ লাখ ২০ হাজার হাজি হজে যেতে সক্ষম হয়েছেন। শেখ হাসিনা সরকার বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশন গঠন করেছে এবং কওমি আলেম-ওলামাদের ইমাম প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা নিজে জাতীয় উন্নয়নের ধারায় কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষিত আলেমদের সম্পৃক্ত করে তাদের কর্মক্ষেত্র সম্প্রসারণের জন্য সরকারি শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য পর্যায়ক্রমে কওমি মুরবি্বয়ানদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এরপর ১০ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে সরকারি এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থাপনা, শিক্ষাদানের বিষয় এবং কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা সনদের সরকারি স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষ্যে সুপারিশমালা প্রণয়নের জন্য বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়।

অন্যদিকে কওমি আলেম-ওলামাদের মধ্যে ১ লাখ ৭১ হাজার ইমামকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। দেশের 'ইমাম ও মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট' শেখ হাসিনার নিজের উদ্যোগে গঠিত হয়েছে। বর্তমানে এ ফান্ডে ২৮ কোটি টাকা জমা হয়েছে। তাছাড়া বর্তমান সরকারই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় (ইসলাম) শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে। এতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আলেম-ওলামার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

এছাড়া মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের বিভিন্ন প্রকল্পে বিপুল অর্থ বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। ইসলাম ধর্মের জন্য শেখ হাসিনা সরকারের আরো অনেক কর্মসূচি রয়েছে। এখানে কেবল কয়েকটি সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো। তবু ধর্মব্যবসায়ীরা এ দেশের অনেক নিরক্ষর, নিরন্ন মানুষকে ধর্মের কথা বলে ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের ইসলামের অনুসারী বলে প্রচার করে তাদের বাঁচানোর জন্য গুজব আর মিথ্যা কথা ছড়ানোকেই মূল কাজ হিসেবে বেছে নিয়েছে বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন।

কিছুদিন আগে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক হেফাজতে ইসলামী নামের সংগঠনটি মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে সারাদেশে ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও মাদ্রাসা ছাত্রদের খেপিয়ে তুলেছে। ৫ মে (২০১৩) ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির সময় হেফাজতে ইসলামীর কর্মীরা বায়তুল মোকাররম মসজিদে আগুন দিয়েছে, শত শত কোরআন শরিফ ও জায়নামাজ পুড়িয়েছে। একজন প্রকৃত মুসলমান কখনো এসব কাজ করতে পারে না। বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী দলের পক্ষ থেকে এমন অপপ্রচারও চালানো হয়েছে, ৫ মে রাতে ঢাকায় হেফাজতের কর্মসূচিতে দেশের সব ইমাম-মোয়াজ্জিনদের হত্যা করা হয়েছে। কোনো মসজিদে নাকি আর আজান হবে না! গত নির্বাচনের আগেও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়েছিল, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মসজিদে আজানের ধ্বনি শোনা যাবে না, উলুধ্বনি শোনা যাবে! কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশবাসী দেখেছে মসজিদে আজানই হয়েছে, অন্যকিছু হয়নি।

বরং বিএনপি ও জামায়াত পবিত্র রমজান মাসেও হরতাল দিয়ে জনজীবন বিঘি্নত করেছে। আসলে বাংলাদেশে ইসলামের প্রকৃত পরিচর্যাকারী ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তারই যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামের উন্নয়ন করে মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় কর্মকা-কে যথাযোগ্য মর্যাদায় আসীন করেছেন। ইসলাম ধর্মের প্রকৃত জ্ঞান অর্জনের জন্য মুসলিম সম্প্রদায়কে উৎসাহী করার কৃতিত্ব সম্পূর্ণ তার। উপরন্তু দেশের মধ্যে ধর্মীয় উগ্রবাদের জঙ্গিপনা নির্মূলের সাফল্যও তার সরকারের বড় অবদান।

Click This Link

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.