রাজনৈতিকভাবে লবিংয়ের জন্য যুক্তরাজ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও আওয়ামী লীগের সেদিকে মনোযোগ নেই। এখানে তাদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বিএনপি। মন্ত্রী-এমপিদের লন্ডন সফরে মিডিয়া কাভারেজভিত্তিক ছোটখাটো অনুষ্ঠান আর দলীয় বিভিন্ন দিবসের কর্মসূচি পালনের মধ্যেই আওয়ামী লীগের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ। অন্যদিকে যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতারা নিয়মিত বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে প্রত্যেক সপ্তাহে লবিং-মিটিং করছেন। তারা প্রভাবশালী মন্ত্রী, এমপি, গবেষক, সাংবাদিকদের যুক্ত করে ইস্ট লন্ডন ও বিভিন্ন শহরে আয়োজন করে যাচ্ছেন নানা অনুষ্ঠান। এসব অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করা। আলোচিত হয় একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার, ইলিয়াস আলী গুমসহ বর্তমান সরকারের মন্ত্রীদের নানা দুর্নীতির বিষয়ও। কেন্দ্রীয় বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মুহিদুর রহমান এবং যুক্তরাজ্য বিএনপির উপদেষ্টা এম এ মালিক গত এক বছরে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষ হাউস অব কমন্স, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং বিভিন্ন এলাকার এমপিদের সঙ্গে ২২০টিরও বেশি বৈঠক করেছেন। মুহিদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'পদপদবির প্রত্যাশা না করে দলের জন্য সব সময়ই কাজ করেছি। বিবিসি, আল-জাজিরার মতো টেলিভিশন চ্যানেলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে সরাসরি নিউজ টকশোতে অংশ নিয়েছি।' যুক্তরাজ্য বিএনপির উপদেষ্টা এম এ মালিক বলেন, 'আমি ব্যক্তিগত ও দলীয় উদ্যোগে ১১৭ জন এমপির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। গণস্বাক্ষর নিয়ে (এক লাখ সিগনেচার) ইলিয়াস আলীর মুক্তির দাবির বিষয়টি হাউস অব কমন্সে তুলেছি।'
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান গত ২২ মে লন্ডনে এক কর্মিসভায় বলেন, আন্তর্জাতিক লবিংয়ে তার দল এখানে যেভাবে কাজ করছে তাতে তিনি সন্তুষ্ট। তারেক রহমান তখন ইঙ্গিত দেন, যুক্তরাজ্য বিএনপি কমিটির প্রধান কাজ হবে আন্তর্জাতিক লবিং মেনটেইন করা। এর পর জুনের প্রথম সপ্তাহে যুক্তরাজ্য বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। যদিও সেই কমিটি এখন পর্যন্ত প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে পারেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। কমিটির নেতারা অবশ্য ঘোষণা দিয়েছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি হাউস অব কমন্সে আলোচনায় আনার জন্য গণস্বাক্ষর কর্মসূচি নেওয়া হবে। যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম কয়সর আহমদ বলেন, 'গত রমজানের কারণে এ কর্মসূচি একটু ধীরগতিতে হলেও এখন আবার পুরোদমে চলছে।' বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক দৌড়ে ক্রমশই পিছিয়ে রয়েছে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ। পার্লামেন্টে বাংলাদেশ সরকার বা কোনো সংস্থার কোনো প্রোগ্রামে যদি মন্ত্রী বা এমপি অতিথি হয়ে আসেন তখনই যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতাদের দেখা যায়। এ ছাড়া মন্ত্রী-এমপি বা দলীয় নেতাদের নিয়ে ইস্ট লন্ডনে মিডিয়া কাভারেজভিত্তিক আলোচনা অনুষ্ঠান আর নেতাদের নিয়ে বাংলা টেলিভিশনের টকশোতে দৌড়ঝাঁপের মধ্যেই তাদের কার্যক্রম শেষ। তবে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শাহ শামীম আহমেদের দাবি, গত আড়াই বছরে অন্তত ১০০ জন ব্রিটিশ এমপির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। লবিং-মিটিং হয়েছে ২০০টিরও বেশি। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজেদুর রহমান ফারুক বলেন, 'মন্ত্রী-এমপি এলে প্রটোকল অনুযায়ী আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করি। তবে বিএনপি এখন যা করছে, তা আমাদের শেখানো পথ। আমরাই প্রথম এক লাখ সিগনেচার সংগ্রহ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে আর্লি ডে মোশন করেছি। এ ইস্যু ছাড়াও বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডবের বিরুদ্ধে শতাধিক এমপির সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।