একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১ ও ২ এ পর্যন্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ৫ জন নেতার বিরুদ্ধে ফাঁসির দ-াদেশ ও ১ জনকে ৯০ বছরের কারাদ- প্রদান করেন। সর্বশেষ ১ অক্টোবর ফাঁসির দ-াদেশ দেওয়া হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে। জামায়াতের ৬ নেতার ফাঁসির আদেশ ও কারাদ-াদেশের বিরুদ্ধে বিএনপি বড় ধরনের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। জামায়াতের ৬ নেতার দ-াদেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ জামায়াতকে একাই হরতাল ভাঙচুরসহ ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে। বিএনপি কিছু রুটিন বক্তব্য দিলেও জামায়াত নেতাদের অনুরোধেও তাদের হরতালে কোনোরূপ সমর্থন দেয়নি বিএনপি।
যদিও জামায়াত ১৮ দলীয় জোটের অন্যতম অংশীদার। অবাক করা বিষয় হলো সাকা চৌধুরী বিএনপির অন্যতম নেতা হলেও তার ফাঁসির আদেশের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো হরতালের ডাক দেয়নি বিএনপি। যদিও চট্টগ্রাম বিএনপি রায়ের পরদিন ২ অক্টোবর বন্দরনগরীসহ রাঙামাটি ও বান্দরবানে সাকার ফাঁসির আদেশের বিরুদ্ধে হরতালের ডাক দেয়; কিন্তু সে হরতাল ছিল ঢিলেঢালা। চট্টগ্রাম বিএনপির মুক্তিযুদ্ধপন্থি অনেক নেতাকেই হরতালে সাড়া দিতে দেখা যায়নি।
সাকা চৌধুরীর ক্ষেত্রে হরতালের ডাক না দিয়ে ৩ অক্টোবর বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি তাদের দলের এ নেতার পক্ষেও জামায়াতের নেতাদের মতোই আচরণ করেছে।
এতে প্রতীয়মান হয় যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে চরম সিদ্ধান্তহীনতায় আছে বিএনপি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোকÑএটা দেশের প্রায় ২ কোটি তরুণ ভোটারের প্রাণের দাবি। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষাবলম্বন করলে বিএনপিও বোঝে এই বিপুল তরুণ ভোটারের ভোট তারা পাবে না। যার ফলশ্রুতিতে বিএনপি তাদের শরিক জামায়াত নেতাদের দ-াদেশের বিরুদ্ধে কোনো সক্রিয় প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। এমনকি তাদের দলের একজনের ফাঁসির আদেশের বিরুদ্ধেও বিএনপি সক্রিয়তা দেখায়নি।
সাকা চৌধুরীর ফাঁসির আদেশ হওয়ার একদিন পর তারা সংবাদ সম্মেলন করে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। যেখানে জামায়াত তাদের নেতাদের রায়ের দিন এবং রায় ঘোষণার পর টানা একাধিক দিন হরতাল করেছে।
এক্ষেত্রে বোঝা যায় যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে বিএনপি। তারা তরুণ সমাজের ভোটও চায়। আবার জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গও চায়।
এক্ষেত্রে বিএনপির মুক্তিযুদ্ধপন্থি ও প্রগতিশীল নেতারা চায় বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গ ত্যাগ করুক; আবার প্রভাবশালী একটি অংশ চায় যুদ্ধাপরাধীরা যে যুদ্ধাপরাধী নয়, এই ইস্যুতে বিএনপি জোরালো ভূমিকা নিক। যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে রাখলে তরুণ ভোটারদের ভোট হারাতে হয়; আর সম্পর্ক ত্যাগ করলে জামায়াতে ইসলামীর ভোট হারাতে হয়Ñএই ইস্যুতে বিএনপির মধ্যে এখন শ্যাম রাখি না কূল রাখি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি এখন জামায়াত তথা যুদ্ধাপরাধীদের গিলতেও পারছে না আবার উগড়ে দিতেও পারছে না। আসলে যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে উভয় সংকটে এখন বিএনপি।
আগামী নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাবে উদ্বিগ্ন নেতা-কর্মীরা
যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে আগামী নির্বাচনে বিএনপির ভোট ব্যাংকে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে তা উপলব্ধিতে আছে বিএনপির প্রায় সব নেতা-কর্মীর মধ্যেই।
এ নিয়ে তারা প্রবলভাবে উদ্বিগ্ন। কারণ একেকজন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দ-াদেশ হওয়ার পর তরুণ সমাজ যে উচ্ছ্বাস ও প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেÑএই দ- আওয়ামী লীগ কার্যকর করতে পারলে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হিসাব-নিকাশ যে পুরোপুরি ইউটার্ন নেবে তা বিএনপির নেতা-কর্মীরা বোঝে বলেই তারা এখন চরম উদ্বিগ্ন। আর এ উদ্বিগ্নতার কারণেই বিএনপির প্রভাবশালী একটি অংশ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে না যাওয়ার জন্য খালেদা জিয়াকে প্রভাবিত করার চেষ্টায় রত। এই অংশটি চাচ্ছে আওয়ামী লীগকে দিয়ে একটি একতরফা নির্বাচন আয়োজন করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে তুলতে। যাতে পরবর্তীতে আন্দোলনের মুখে যুদ্ধাপরাধ ইস্যু চাপা পড়ে যায়; নির্বাচন ইস্যু সামনে চলে আসে।
বিএনপির জামায়াতপন্থি এই প্রভাবশালী অংশটি মনে-প্রাণে চাচ্ছে বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রেখে, আওয়ামী লীগকে একতরফা নির্বাচনের দিকে ঠেলে দিতে। এতে তাদের ধারণা একতরফা নির্বাচন আন্দোলনের মুখে ভেস্তে দিয়ে নতুন নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করবে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া থামিয়ে দিতে পারবে। এতে এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাবে।
বিএনপির একটি পক্ষ এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইলেও মুক্তিযুদ্ধপন্থি বিএনপি নেতারা উদ্বিগ্ন এজন্য যে, আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলে আওয়ামী লীগ অন্যান্য দলকে নিয়ে যে নির্বাচন আয়োজন করবে, তার ফলাফলের ভিত্তিতে দলটি আবারো পুরো পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় বসে যেতে পারবে। এ অংশটির ধারণা আওয়ামী লীগ আরেক টার্ম ক্ষমতায় থাকতে পারলে যুদ্ধাপরাধী প্রত্যেকের বিচার হবে, জামায়াত নিশ্চিন্ন হয়ে যাবে এবং দুই-তিন টুকরা হয়ে বিএনপিও নখদন্তহীন একটি দলে পরিণত হবে।
তখন বিএনপির আম-ছালা দুটোই যাবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।