সততায় বিশ্বাসী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হল ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরির কারখানা। এগুলো থেকেই বের হয়ে আসবে জাতির ভবিষ্যৎ মেধাবী সন্তানরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থী সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশকে বিশ্বের নিকটে উচু করে তুলে ধরবে এটাই জাতির প্রত্যাশা। কিন্তু সাম্প্রতিককালে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে নোংরা শিক্ষক ও ছাত্ররাজনীতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে এ আশা এখন গুড়েবালি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন সন্ত্রাসি তৈরির কারখানা বললেও অতিরিক্ত কিছু বলা হবেনা বরং এটি চরম সত্য।
কেননা এখন শিক্ষার্থীরা স্কুল কলেজে ভালো থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে হয়ে যায় মাস্তান। অবশ্য এর জন্য শুধু যে শিক্ষার্থীরাই দায়ি তা বলা যায়না বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ, নোংরা রাজনীতি, শিক্ষকদের স্বার্থবাদী কর্মকান্ড অনেকাংশে দায়ি। সাম্প্রতিক সময়ে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের প্রতি এসিড নিক্ষেপ ও ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উপর ছাত্রলীগের হামলার যে ঘটনা ঘটে তা ক্যাম্পাসে অপরাজনীতির সর্বশেষ উদাহরণ।
দীর্ঘদিন যাবত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আবদুল জলিল মিয়ার বিরুদ্ধে নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ শোনা যাচ্ছিল। এর জন্য উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনেকের মনে চাপা ক্ষোভ কাজ করছিল।
বিশেষত ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরি দানের ক্ষেত্রে ব্যাপক আত্মীয়করণের অভিযোগটি কেউ মেনে নিতে পারেনি। এর বিরুদ্ধে ছাত্র ও শিক্ষকরা সোচ্চার ছিল অনেক আগে থেকেই। কিন্তু গত ৬ জানুয়ারি থেকে এই আন্দোলন তীব্রতর হয়ে ওঠে। তৈরি হয় দুর্নীতিবিরোধী মঞ্চ। সেখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অনশন করে আসছিলেন বেশ কয়েকদিন যাবৎ।
আন্দোলনের এক পর্যায়ে গত ১০ জানুয়ারি আন্দোলনরত শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের নামে স্লোগান দিতে দিতে মুখোশ পড়া একদল যুবক হামলা চালায়। তারা একপর্যায়ে মাইকের ব্যাটারির এসিড ছুড়ে মারে শিক্ষকদের উপর। এতে দুজন শিক্ষকের চোখে এসিড পড়ে তারা হসপিটালাইজড হন।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েই ছাত্র-শিক্ষকরা বিভিন্ন দাবি নিয়ে নানা সময় আন্দোলন করে থাকেন। এর পূর্বে জাহাঙ্গীরনগর এবং বুয়েট ছাত্র-শিক্ষকদের আন্দোলনে প্রায় অচল হয়ে গিয়েছিল।
সেখানে শিক্ষকরা একে অপরের বিরুদ্ধে হাতাহাতি পর্যন্ত করেছিল। কিন্তু শিশুপ্রায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যেটা ঘটল সেটা রীতিমত বাংলাদেশে ইতিহাস সৃষ্টিকারী কোন ঘটনা। ভিসির ভাড়াটিয়া গুন্ডা বাহিনী শিক্ষকদের উপর ছুড়ে মারল এসিড। যা এর পূর্বে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটেছে বলে আমার মনে হয়না। আবার ভাড়াটিয়া গুন্ডা বাহিনী দিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষকদের উপর হামলা চালানোর নজিরও মনে হয় দেশে এই প্রথম।
না জানি শিক্ষকদের অপরাজনীতির কারণে আরও নতুন কত কিছু আমাদের দেখতে হয়।
আগে জানতাম শিক্ষকরা ছাত্রছাত্রীদের নিকট থেকে পড়া আদায় করে নেয়ার জন্য বেত্রাঘাত করতেন (আমি নিজেও অনেক মার খেয়েছি শিক্ষকদের হাতে)। কিন্তু এখন দেখছি দিন বদলে গেছে। এখন শিক্ষকরা মার খায় ছাত্রদের হাতে, তাও আবার দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদেরকে দরজা ভেঙ্গে যেভাবে তাদের হেনস্তা করেছে ছাত্রলীগ তাতে আমার মনে হচ্ছে শিক্ষকদের হাতে ছাত্রদের মার খাওয়ার দিন শেষ।
এখন শিক্ষকদেরই ছাত্রদের হাতে মার খাওয়ার পালা শুরু।
আমাদের দেশে শিক্ষকরা নিজের স্বার্থ হাসিল করার জন্য যেভাবে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করছেন তাতে অদুর ভবিষ্যতে আরও অনেক কিছুই অপেক্ষা করছে শিক্ষকদের জন্য। প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনকে ব্যবহার করে উপাচার্যরা আন্দোলন দমনে মনোযোগী হচ্ছেন। কিন্তু তারা কি একবারও চিন্তা করেছেন ক্ষমতা স্থায়ী কোন বিষয় নয়। আজকে যে ছাত্রদেরকে ব্যবহার করা হচ্ছে নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য সেই ছাত্র একদিন তাদের উপরও চড়াও হতে পারে।
শিক্ষকদের নৈতিক অবক্ষয় এবং স্বার্থবাদী চিন্তা ভাবনার জন্যই আজ তারা সমাজ হতে প্রাপ্য মর্যাদা ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছেন। শিক্ষকদের নৈতিক অবক্ষয় এখন এতটাই নীচে নেমে গেছে যে তারা ছাত্রদেরকে মদদ দিচ্ছে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর জন্য। আবার ভিখারুননেসার মত স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিমলরা যেভাবে ছাত্রীদের সাথে অবৈধ যৌন সম্পর্ক স্থাপনে সচেষ্ট হচ্ছেন তাতে জাতি রাতারাতিই শিক্ষকদের উপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলবে বলে আমার মনে হয়। পত্রিকা খুললেই আজ চোখে পড়ে শিক্ষকদের দ্বারা ছাত্রীর শ্লীলতাহানি। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে অভিভাবকরা কিভাবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবেন? সন্তানকে সুশিক্ষিত করার আশায় যে শিক্ষকের হাতে তাকে অর্পণ করা হল সেই শিক্ষকই যখন তার দিকে কামনার দৃষ্টি দেয় তখন আর করার কি থাকে অভিভাবকদের।
বাধ্য হয়ে মেনে নিতে হয় প্রচলিত সিস্টেমকে।
বিভিন্ন কারনেই শিক্ষকরা আজ তাদের নৈতিক অবস্থান হারিয়ে ফেলছেন। এর সাথে রাজনীতির সংযোগ ঘটিয়ে কেউ কেউ হয়েছেন অসংহত। শিক্ষক রাজনীতির অপছায়া আর ক্ষমতার লোভে অনেক শিক্ষকই আজ শিক্ষকসুলভ আচরণ করছেননা। তবে সব শিক্ষককে একই নিক্তি দিয়ে ওজন করলে তা তাদের বিরুদ্ধে শুধু অপপ্রচার চালানোই হবে।
ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি শিক্ষক সমাজ এখনও আমাদের আদর্শের প্রতীক। এখনও তারা জাতির সঠিক পথপ্রদর্শক। জাতির উচিৎ তাদের প্রতি এখনও যথাযথ সম্মান জানানো। প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকরা তাদের দাবি আদায় করতে গিয়ে যেভাবে পুলিশের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাতে আমরা মর্মাহত। শিক্ষকদের উপর মরিচের গুড়া মিশ্রিত গরম পানি নিক্ষেপের ঘটনায় আমরা সত্যিই লজ্জ্বিত।
আমরা চাই শিক্ষকরা আর নির্যাতনের শিকার না হোক কোন মানুষের দ্বারা। শিক্ষকদের মধ্যে যে অপরাজনীতির লড়াই চলছে (বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয়ে) তা অচিরেই বন্ধ হোক। এবং আবার শিক্ষকরা জাতির এগিয়ে যাওয়ার পথে নেতৃত্ব দিক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।