আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তদবির করে শহরের কলেজে শিক্ষকরা, গ্রামাঞ্চলে ফাঁকা

শহরের সরকারি কলেজগুলোতে অতিরিক্ত শিক্ষক সংযুক্তিতে থাকায় গ্রামাঞ্চলের কলেজ ফাঁকা। রাজনৈতিক তদবির করে শিক্ষকরা নগরমুখী হওয়ায় এসব কলেজে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। তাছাড়া দেশের ২৫৩টি সরকারি কলেজে ১৪ হাজার শিক্ষক পদের মধ্যে চার হাজারই শূন্য থাকায় পরিস্থিতি আরও সংকটপূর্ণ হয়ে উঠেছে। শিক্ষক না থাকায় গ্রামাঞ্চলের অনেক কলেজে ইংরেজি, গণিতের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও ক্লাস হয় না মাসের পর মাস। এক বিষয়ের শিক্ষক অন্য বিষয়ের শিক্ষার্থীদের দিকনির্দেশনা দেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তদবির আর রাজনৈতিক বিবেচনায় অধিকাংশ শিক্ষক শহরাঞ্চলের ভালো কলেজে বদলি ও সংযুক্তিতে থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শুধু রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের দর্শন বিভাগে ১০ জনের বিপরীতে ২৫ জন শিক্ষক সংযুক্তিতে রয়েছেন। অনেক বিভাগে তিন গুণ বেশি শিক্ষক সংযুক্তিতে থেকে কাজ না করেই বেতন নেন। এসব শিক্ষককে কোনো কলেজে বদলি করলে উপর থেকে চাপ আসে। তাই এ নিয়ে উদ্যোগ নিতে রাজি নন দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) সরকারি কলেজ শাখা থেকে জানা গেছে, গ্রামাঞ্চলের কলেজগুলোতে শিক্ষকরা থাকতে চান না। বিশেষ করে ইংরেজি, গণিত, অর্থনীতি, রসায়ন, পদার্থ বিষয় পড়ানোর মতো শিক্ষক নেই। সেইসঙ্গে রয়েছে আসবাবপত্র, ল্যাব ও প্রয়োজনীয় উপকরণের সংকট। সূত্র জানায়, ঝিনাইদহে শৈলকূপা সরকারি কলেজের বাংলা ও গণিত বিভাগে চার বছর ধরে কোনো শিক্ষক নেই। দীর্ঘদিন ধরে উদ্ভিদবিদ্যা, ইসলামের ইতিহাস ও ইসলাম শিক্ষা এবং দর্শন বিভাগও শিক্ষকশূন্য।

কলেজটিতে একাদশ শ্রেণী থেকে স্নাতক পর্যন্ত ৬৫০ জন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক মাত্র নয়জন। শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রতি মাসেই মাউশি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র দেওয়া হলেও কাজ কিছুই হচ্ছে না। একই অবস্থা দিনাজপুরের ফুলবাড়িয়া সরকারি কলেজে। এক হাজার ৪৫০ শিক্ষার্থীর জন্য ৫২টি শিক্ষক পদের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ১৭ জন। সেখানে গণিত, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনাসহ কয়েকটি বিভাগ শিক্ষকশূন্য।

ফেনীর সোনাগাজী সরকারি কলেজ ও ছাগলনাইয়া কলেজ, পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া সরকারি কলেজ, বরগুনা মহিলা কলেজ, হবিগঞ্জ সরকারি কলেজ ও খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজে চরম শিক্ষক সংকট রয়েছে। ৮৭টি কলেজে শিক্ষক সংকট নিরসনে গত ২৮ জানুয়ারি মাউশি একটি প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিলেও সাড়া মেলেনি। তবে ড. মো. সাদিক নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয় থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সচিব হিসেবে যোগ দেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে তার নিজ এলাকা সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের জন্য জরুরিভিত্তিতে শিক্ষক দিতে মাউশিকে নির্দেশ দেন। দ্রুত ওই কলেজে পাঁচজন শিক্ষককে বদলি করা হলে শিক্ষা ক্যাডারে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। জানা গেছে, বর্তমানে শিক্ষা ক্যাডারে বিষয়ভিত্তিক অধ্যাপকের পদ ৪৮৬টি।

অধ্যক্ষ ২৬১টি। অধ্যাপক পদমর্যাদার উপাধ্যক্ষ পদ ৪২টি। মাউশির উপপরিচালক পদ পাঁচ ও ডিআইএ দুটি। আর ১০ শতাংশ রিজার্ভ কোটায় ৭৯টিসহ মোট ৮৭৫টি অধ্যাপক পদমর্যাদার পদ রয়েছে। সরকারি কলেজ শাখার তথ্যানুযায়ী, প্রভাষকের সাত হাজার ৪৩২টি পদের মধ্যে দুই হাজার ২০০টি খালি।

চার হাজার ৩৭টি সহকারী অধ্যাপক পদের মধ্যে ৪৯০টি খালি। দুই হাজার ৩৩১টি সহযোগী অধ্যাপক পদের মধ্যে ২৮৯টি খালি। আর ৭৯০টি অধ্যাপক পদের মধ্যে ৭২টি খালি। শিক্ষকদের অভিযোগ, প্রশাসন ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হলেও নানা জটিলতা তৈরি করে শিক্ষা ক্যাডারে এক যুগেও পদোন্নতি দেওয়া হয় না। পদোন্নতির ফাইল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের গড়িমসিতে আটকে যায়।

ফলে ২১ বছরেও সহযোগী অধ্যাপক হওয়া যায় না। ভুক্তভোগী শিক্ষকরা জানান, দেশে ২৫৩টি সরকারি কলেজসহ প্রায় তিনশ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান রয়েছে। নূ্যনতম শিক্ষক পদায়নের জন্য ৮৭টি কলেজের অধ্যক্ষ মাউশি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊধর্্বতন কর্মকর্তাদের কাছে দীর্ঘদিন ধরে ধরনা দিয়ে এলেও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিক্ষক মিলছে না। সূত্র জানায়, রাজধানীর নয়টি ছাড়াও বিভাগীয় শহরে বিশেষ করে বরিশাল বিএম কলেজ, পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ, রংপুরের কারমাইকেল কলেজ, ফরিদপুরের রাজেন্দ্র সরকারি কলেজ, রাজশাহী সরকারি কলেজ ও একই জেলার নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজ, ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ, বগুড়ার আযিযুল হক কলেজ, সিলেটের এমসি কলেজ এবং কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজে পদের চেয়ে শিক্ষকের সংখ্যা বেশি।

প্রভাবশালীদের তদবিরে এসব কলেজের বিভিন্ন বিভাগে বিপুল সংখ্যক শিক্ষক সংযুক্তিতে আছেন।

জানতে চাইলে মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক আতাউর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'গ্রামাঞ্চলে শিক্ষক সংকট আছে। তবে বিজ্ঞান, ইংরেজি ও গণিতের কোনো শিক্ষক নেই। শহরের কলেজগুলোতে একের অধিক সংযুক্তি থাকায় শিক্ষক পাওয়া যায় না। ' মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন বলেন, 'মফস্বল এলাকায় শিক্ষকরা থাকতে চান না। আর বিসিএস পরীক্ষা দিলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক মিলছে না।

পাস করেন কম। ফলে শিক্ষক নিয়োগ দিলেও শূন্যতা থাকছে। '

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.