সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিন আগে, নাকি ৯০ দিন পরে নির্বাচন হবে, তা জানে না নির্বাচন কমিশন। সরকারের পক্ষ থেকে একবার বলা হয়েছিল, সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন হবে। এখন বলা হচ্ছে, সংসদ বহাল থাকবে। নির্বাচনের তারিখ জানতে কমিশন এখন সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সূত্র বলছে, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ না জানার কারণে কমিশনের প্রস্তুতিমূলক কাজ আশানুরূপ এগোচ্ছে না।
কমিশন বাধ্য হয়েই দুই ধরনের প্রস্তুতি রেখে দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ টি এম শামসুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের সময় নির্ধারণ আইনের মধ্যে আটকে থাকলে নির্বাচন কমিশনের অপেক্ষা করা ছাড়া ভিন্ন কোনো উপায় নেই। কিন্তু সেটা তো চলতে পারে না। নির্বাচন কখন হবে, সে বিষয়টি স্পষ্ট করার তাগিদ দিয়ে কমিশনের উচিত সরকারকে চিঠি দেওয়া। তাহলে সরকারের কাছ থেকে একটা দিকনির্দেশনা পাওয়া যেতে পারে।
সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে গেলে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিন এবং অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ অবস্থায় আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হলে সংসদ বহাল থাকবে এবং প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরাও স্বপদে বহাল থাকবেন। আর ৯০ দিন পরে নির্বাচন হলে সাংসদেরা স্বপদে থাকবেন না। তবে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর কাছে দায়িত্বভার হস্তান্তর করার আগ পর্যন্ত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী স্বপদে থাকবেন। নির্বাচনকালীন মন্ত্রিপরিষদ গঠন করতে হবে আগের সাংসদদের মধ্য থেকে।
তবে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, সংবিধান সংশোধন ছাড়া মেয়াদ পূরণের ঠিক আগে সংসদ ভেঙে দিয়ে এরপর ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করাটা সংবিধানের চেতনার পরিপন্থী।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি শুরু থেকেই জানিয়ে আসছে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তাতে তারা অংশ নেবে না। তাদের দাবি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতির পুনর্বহাল।
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, এই আশ্বাস দিয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বরে সংসদের ১৪তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, প্রয়োজনে ২৪ অক্টোবর সংসদ ভেঙে দেওয়া হবে। একই অধিবেশনের শুরুতে সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকেও প্রধানমন্ত্রী একই কথা বলেছিলেন।
গত ১২ সেপ্টেম্বর সংসদের চলতি অধিবেশনের প্রথম বৈঠকে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ২৫ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। একই দিন সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটিতে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত সংসদ চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কিন্তু বর্তমানে সরকারপক্ষ আগের অবস্থানে নেই। গত ২৪ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সচিব কমিটির বৈঠকে বলেন, সংসদ বহাল রেখে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার সরকারি দলের তোফায়েল আহমেদ ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্তসহ জ্যেষ্ঠ সাংসদেরা ২৪ অক্টোবরের পরও অধিবেশন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
স্পিকারও একই রকম আভাস দিয়েছেন। জানতে চাইলে গত শুক্রবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২৪ অক্টোবর অধিবেশন শেষ করা সম্ভব নয়। কারণ, আরপিও সংশোধন বিলসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিল পাস করতে হবে এ অধিবেশনে। সে জন্য সময়ের দরকার।
কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, সরকার বিষয়টি স্পষ্ট না করায় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে কমিশন।
আশা ছিল, প্রধান দুই দলের সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু এখন সেই আশা আর নেই।
নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ গত ৪ সেপ্টেম্বর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হবে। বিষয়টি চূড়ান্ত কি না বা এটা তাঁর শেষ কথা কি না, তা আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। সংসদ বহাল রেখে নাকি ভেঙে দিয়ে নির্বাচন হবে, তা আমরা জানি না।
তাই কমিশনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে। চার দিন পর ৮ সেপ্টেম্বর তিনি বলেন, সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করা দুরূহ ব্যাপার হবে।
কমিশন সচিবালয় সূত্র জানায়, সরকারের দুই রকম বক্তব্যের কারণে কমিশনের পক্ষে সঠিক কর্মপরিকল্পনা নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো ধরনের সংলাপ হবে কি না, সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কমিশনাররা বলছেন, প্রয়োজনে সংলাপ হবে।
কিন্তু সে রকম কোনো উদ্যোগ কমিশন সচিবালয়ে নেই।
এ ছাড়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন না হওয়ায় প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলের আচরণবিধি প্রণয়নের কাজ ঝুলে আছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের কর্মপরিধি কী হবে, সে বিষয়ে কোনো আইন না থাকার বিষয়টি নিয়েও কমিশনকে ভাবতে হচ্ছে। কারণ, আচরণবিধি দিয়ে মন্ত্রীদের কর্মপরিধি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ এ বিষয়ে বলেন, সংসদ ভাঙছে কি ভাঙছে না, সে বিষয়ে নিশ্চিত না হয়ে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা নির্ধারণ করা কঠিন।
তবে এখন পর্যন্ত যেহেতু ভাঙেনি, তাই ধরে নিতে হবে সংসদ বহাল রেখেই নির্বাচন হবে। সে অনুযায়ী কমিশন প্রস্তুতিমূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
অন্যান্য কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ না হলেও যথাসময়ে শেষ করা সম্ভব হবে বলে কমিশন সচিবালয় মনে করে। সূত্র জানায়, নির্বাচন পরিচালনা বিধির খসড়া যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ভোটার তালিকা ছাপার কাজ নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে শেষ হবে।
মনোনয়ন ফরমসহ বিভিন্ন ধরনের ফরম ছাপার জন্য পাঠানো হয়েছে। ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।