আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বুকের মধ্যে প্রচন্ড জোরে বাতাস বইসে আর তার মধ্য থেকে কে যেন আকুল হয়ে ডাকছে "রাঙ্গা ভাই" "রাঙ্গা ভাই" বলে



"ঠাকুরমা" এর সাথে আমার ছোটবেলার কিছু কথা...কিছু সৃতি..... অমার "মা" খুব রাগী, অভিমানি এবং সুচিবায়ু টাইপের এক জন মানুষ । কাদা জলে মাছ ধরা, মাটিতে গরা গড়ী খাওয়া, অনেক সময় নিয়া গেসল করা, নতুন নতুন ফন্দি আবিস্কার করা ছিল আমার প্রিয় বিষয়। আমার মা এই বিষয় গুলা মোটেই মেনে নিতে পারত না। আমি ঠাকুরমার সাথে আমার গ্রামের বাড়ি থাকতে পছন্দ করতাম । করন সে আমার দুরন্ত পনা সহ্য করতে পরত খুব সহযেই, যে ক্ষমতা আমার মায়ের ছিল না ।

সে আমাকে খুসি করার জন্য যে কোন ধরনের ত্যাগ সিকার করতে রাজি থাকত । ঠাকুরমা অমাকে আল্লাদ করে "রাঙ্গা ভাই" বলে ডাকত । কিছু ঘটনা খুব মনে পরছে আজকে ............. ছোট বেলায় কাদা পানির মধ্যে মাছ ধরতাম বাড়ির পাশের খাল থেকে । মা সব সময়ই হুমকি দিত আজকে ওঠ, তার পর দেখ আমি তোর কি অবস্থা করি । কিন্তু ঠাকুরমা মাছ ধরা দেখত আর অনুরোদ করে কইতো রাঙ্গা ভাই তারা তারি নাইতে যাও, আমি সবান দিয়া দিমু হানে, আর নাইলে কিন্তু তোমার মায় মাইর দিব।

মাছ ধরা শেষে ঠাকুর মা অনেক যত্নের সাথে আমাকে গোছল দিয়া দিত । আমার শরীরের কাদা মাটি ধুয়ে দিত, যাতে মা না মারতে পারে । আমার ধরা পুটি মাছ, কই মাছ ও টাকি মাছ গুলা তার কাছে অনেক মুল্যবান ছিল । যা আমার মা এর কাছে একদমি মূলহিন ঠাকুরমা এই মাছ গুলা সুন্দর করে আমার জন্য আলাদা ভাবে রান্না করত এবং সবার কাছে গর্বের সাথে বলত অমার রাঙ্গা ভা্ই অনেক মাছ ধরছে। আমি খুবই খুসি হতাম।

সে আমাকে সকল বিষয়ে হেল্প করত। বাবা ,মা চাকরি করত যশোর সাহাপুরে । আমাদের গ্রামের বাড়িতে থাকতাম শুধু আমি ,দাদু ভাই আর ঠাকুরমা এরং কাজের মানুষ । ছোট বেলায় নারকেল এবং মিষ্টি গুড় আমার প্রিয় এবং কমন খাবার ছিল। প্রতিদিন আমার চাই।

কোন এক রাতে মিষ্টি শেষ হয়ে যাবার কারনে আমি কান্না কাটি করতে থাকি এবং ঠাকুরমাকে মারতে থাকি। আমার দাদু অন্ধ ছিল ঘড়ে আছে আর যুবতি কাজের মেয়ে সুমতি দিদি এবং সে ছিল অনেক ভিতু । কে যাবে এই অন্ধ কার রাতে বৃষ্টির মধ্যে মিষ্টি আনতে । অবশেষে ঠাকুরমা লেম হাতে নিয়ে ঐ সন্ধা রাতে ঘড় থেকে বের হয়ে যায় কাদা রাস্তায়। এবং কিছুক্ষন পর হাসি মুগে মিষ্টি নিয়া আসে আমার জন্য।

আমি দেখলা ঠাকুরমা সম্পুর্ন বৃষ্টিতে ভিযে গেছে এবং তার হাটু পা পরর্যন্ত কাদা মাখা । ফিরে আসার পর দাদু ঠাকুর মাকে বলল তুমি এই জ্বড় বিষ্টি এর মধ্যে না গেলেও পারতা । ঠাকুরমা দাদু ভাইকে বলেছিল , তইলে রাঙ্গা ভাই রাইতে না খাইয়া থাকতো। অমার ঠাকুরমার প্রিয় খাবার ছিল পান। অমার পরিস্কার মনে আছে বুধ বার দিন অমাদের বাজার করার লোক হজরত আলি কে বলতো, মিয়া আমার নাতির লইগা আহই মিডা (আখের গুর) কিনবা আগে, পান কিনবা পরে ।

দাদু ভাই আবার ঠাকুরমাকে সার্পোট দিয়া কইত হয় মিয়া দাদুর মিডার কতা ভুইলো না কিন্তু। তখন খুব ছোট , - ঘুড়ি বানাতে পারতাম না ঠিক মত । ঘুড়ি যে কোন যায়গায বিক্রি করত তাও যানতাম না তাই কিভাবে কিভাবে পলিথিন দিয়া একটা বানাইলাম এবং বেশ অকাশে উরত। আমি দুপুরের রোদের মধ্যে ঘুড়ি উরাইতে লাগলাম কিন্তু বদ শিবু দাদা সেই টা কাইরা নিল । কান্না করতে করতে ঠাকুরমার কাছে গিয়া নালিশ দিলাম ।

ঠাকুর মা সেই দুপুরের চরম রোদ এর মধ্যে হাটা সুরু করল। ঠাকুরমা হাটতে পারছিল না সোজা হয়ে, বার বার পরে যাচ্ছিল ফাটলের মধ্যে। কারন মাঠের মধ্যে চৈএ মাসের কড়া রোদ এর কারনে অনেক ফাটল ধরেছে । তারপর ও শিবু দাদার কাছে গিয়া আমার ঘুড়ি ফেরত নিয়া আসে। শুধু আমার হাসি মুখটির জন্য....... সব সৃতি গুলই এখন থেকে প্রায় বিশ বছরের আগের কিংবা তার বেশি ও হতে পারে ।

এই রকম আরো বহু ঘটনা আছে তার সাথে আমার। তখন বুজতে পারতাম না কিত্নু এখন খুব ভাল ভাবেই অনুধাবন করতে পারি ঠাকুরমা আমায় কত ভালবাসত। সে আমাকে শিখিয়েছে মানুষ কে কিভাবে ভালবাসতে হয়, কিভাবে গরীব মানুষ কে উপকার করতে হয়, সত্য বলার সাহস যোগায়। প্রতিবারই ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার সময় ঠাকুরমা এর জন্য তার প্রিয় খাবার গুল সঙ্গে নিয়ে যাই। এবং যখন শোনে আমার নিজের ইনকামের টাকায় কেনা সে খুশিতে অশ্রু সিক্ত নয়নে আমার দিকে তাকায় ।

হয়তো সে ভাবে আজ তার "রাংঙ্গা ভাই" বড় হ্ইসে সে এখন তার প্রিয় ঠাকুর মাকে কোলে করে স্নান করাতে পারে, খাওয়াতে পারে, ঠিক যেমন টি করে ছিল সে বহুদিন আগে । এ কোন প্রতিদান নয়, এ বিরাট এক ধরনের মমতার টান যা সুধু অনুমান করা যায় । অমার ঠাকুর মা এর সাত মেয়ে, তিন ছেলে এবং ৩০+ নাতি, নাত্নি ছিল। সব নাতি, নাত্নি কেই সে খুব ভাল বাসত কিন্তু আমি ছিলাম তার আদরের রাঙ্গা ভাই। আমার জন্য সে অনেক কিছু ত্যাগ করছে, অনেক কথা সুনছে সবার কাছ থেকে।

তার একটাই কথা রাঙ্গা ভাই এর হিসাব আলাদা । কিছু দিন আগে তার প্রিয় গলার চেইন টা আমার গলায় পরিয়ে দিয়েছিল। ঠাকুর মা আজ আর নেই । নিজ চোখের সামনে তার মিত্যু দেখেছি নিজ হাতে তার সমাধি দিয়েছি গতকাল। অনেক রাতে খুব কান্না পাচ্ছিল তাই সবার অগোচরে তার সমাধির পাশে গিয়ে কিছুক্ষন বসে ছিলাম ।

যদি একটি বার তাকে অমার অবচেতন মনের হ্যলোজিনেশাণের মাধ্যমে দেখতে পাই । বুকের মধ্যে প্রচন্ড জোরে বাতাস বইসে আর তার মধ্য থেকে কে যেন আকুল হয়ে ডাকছে "রাঙ্গা ভাই" "রাঙ্গা ভাই" বলে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।