ছবিঃ Nirupam Mustafi
এতদিন সবাই আমার হাবিজাবি লেখা খুব কষ্ট করে পড়েছেন তার জন্য আমি সবার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ। আজ আমি নিজের কোন লেখা পোস্ট করি নি। আমার স্বামী বিয়ের পরে আমার জন্য একটা লেখা পোস্ট করেছিলো। লেখাটা পড়ে আমার অনেক ভালো লেগেছিল। সেই ভালোলাগা আপনাদের সাথে শেয়ার করার জন্য পোস্ট টা এখানে দিলাম।
পড়ে জানাবেন কেমন লাগলোঃ
কখন অঘ্রান রাত শেষ হ’ল- পৌষ গেল চ’লে
যাহারে পাইনি রোমে বেবিলনে, সে এসেছে ব’লে।
আমার মনে হয়, জীবনসঙ্গী খুঁজে পেতে গেলে তিনটি গোলকধাঁধার সমাধান করার প্রয়োজন পড়ে। প্রথমটি হলো নিজেকে জানার ধাঁধা। এটি যখন সমাধান করা যাবে তখন সামনে আসবে দ্বিতীয়টি। আর এটি হলো নিজের সঙ্গে মিলিয়ে জীবনসঙ্গী কেমন হবে তা ঠিক করা।
আর এটিও যদি ঠিকমত সমাধান করা হয়ে যায় তবে আসবে শেষ ধাঁধাটি। এবার আগের ধাঁধার সমাধানে জীবনসঙ্গীর যে যে বৈশিষ্ট্যগুলো ঠিক করা হযেছে সে অনুসারে তাকে এই গোলকধামে সন্ধান করা। যদি পেয়ে যাই তবে তো কথাই নেই! বাস্তবে আমাদের প্রায় সকলেরই সমগ্র জীবনটি পার হয়ে যায় প্রথম ধাঁধাটির সমাধান করতে, বাকীগুলো না হয় বাদই দিলাম! সে এক দীর্ঘ, ক্লান্তিকর এবং অনিশ্চিত অনুসন্ধান!
যাই হোক, জীবনকে পূর্ণতা দিতেই আমাদের সকল প্রয়াস। বিয়েতে নাকি মানুষের জীবনে পূর্ণতা্ আসে। জানি না, হয়তো! আমার নানা জল্পনা-কল্পনা, শংকা, আতঙ্ক, ভীতি, সন্দেহ, উৎকন্ঠা ঝেড়ে ফেলে আজ একজনের হাতে আংটি পরালাম।
সে এক অন্যরকম অনুভূতি। মুহূর্তের জন্য মনে হলো, আমি বোধহয় তারই অপেক্ষায় ছিলাম এতটা দিন। আমার জন্মে আমার কোন হাত ছিল না, আর জীবিতকালে মরতেও চাইব্ না কোনদিন...তারপরও মৃত্যু অবধারিত। কেবল জীবনসঙ্গিনী খুঁজে নেবার কিছুটা আপাত সুযোগ বিধাতা দিয়েছেন। আজ যাকে নিজের বলে ভাবতে শুরু করলাম, তাকে আমি দেখিনি কোন দিন, তার কথাও কোন দিন শুনি নি, তার ষ্পর্শও অনুভব করিনি কখনো।
তারপরও, বাকীটা জীবনের জন্য সে আমার বলে নির্ধারিত, আমিও তার জন্য তাই। আর এখানেই অদ্ভুত লাগাটা!
অনেকটা ওই গানটার মত:
কাভি কাভি মেরে দিল মে খেয়াল আতা হ্যায়
কে য্যায়সে তুঝকো বানায়া গ্যায়া হ্যায় মেরে লিয়ে
তু আবসে পেহেলে সিতারো মে বাস রাহি থি কাহি
তুঝে জামিন পে বুলায়া গ্যায়া হ্যায় মেরে লিয়ে।
আজ জীবনের নতুন একটা অধ্যায় শুরুর প্রথমধাপে পা রাখলাম। পেরিয়ে এসছি বহুটা পথ। সামনে যেতে হবে আরও বেশ কিছুটা...যদি বিধাতা সহায় হন।
এতদিন যাঁদের সাথে বৃত্তাবদ্ধ ছিলাম তাঁরা এ জগতের সবচেয়ে কাছের। আজ আরও একটি নতুন বৃত্তে পা রাখালাম। এখানে সবই নতুন, অপরিচিত, অজানা, তবে তা সাময়িক। এই পথটা একজনকে সাথে নিয়েই পার হতে হবে। আজ যার হাতের ক্ষণিক ছোঁয়ায় সমগ্র চেতনায় দোল খেয়ে গেল...সে ই হবে এই অচেনা পথের নতুন সঙ্গী।
আমি জানিনা সে কেমন, সেও জানেনা আমাকে। অথচ আমরা দু'জনের জন্য নির্ধারিত হলাম। কি অদ্ভুত!
ভাবি, সামনের পহেলা ফাল্গুনের রঙ্গিন সকালে চারুকলার চত্বরে কিংবা পহেলা বৈশাখের রৌদ্রজ্জ্বল দিবসের মঙ্গল শোভাযাত্রায় কেউ থাকবে আমার সাথে, ঠিক যেমনটি আমি চেয়েছিলাম...বহুকাল আগে!ভাবি, কাউকে নিয়ে স্বপ্ন বোনা যাবে ভবিষ্যতের, ঠিক যেমনটি আমি বুনেছিলাম...বহুকাল আগে!ভাবি, সেও কি ভেবেছিল, ঠিক যেমনটি আমি ভেবেছিলাম...বহুকাল আগে?
জীবনান্দ দাশের একটা কবিতার কথা মনে পড়ে গেল:
হয়তো হাজার হাজার বছর পরে
মাঘের নীল আকাশে
সমুদ্রের দিকে যখন উড়ে যাবো
আমাদের মনে হবে
হাজার হাজার বছর আগে আমরা এমন উড়ে যেতে চেয়েছিলাম।
সেও কি আমারই অপেক্ষায় ছিল এতটা কাল, ঠিক যেমনটি আমি ছিলাম? হয়তো, হয়তোবা নয়। হয়তোবা শুধুই কাকতালীয়।
অনেক প্রশ্ন, অনেক কৌতুহল। তারপরও...পৃথিবীর ৬০০ কোটি মানুষের খেকে কেবল দু'জনের আলাদা হয়ে যাওয়াটা, সমগ্র চেতনা জুড়ে কেবল একজনকেই অনুভব করাটা, সৃষ্টিকর্তার দেয়া আশ্চর্য এক রসায়ন। হয়তো হাজার কোটি বছর আগে সপ্ত-আসমানের ওপারে পরম করুনাময় নির্ধারিত করেছিলেন আমাদের...আজ আমাদের দেখা হলো। উনি যদি সহায় হন, তবে একসাথেই ফিরে যাব সেথায়।
অতি নশ্বর এই পৃথিবীর সবাই ধীরে ধীরে দূরে সরে যায়, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়।
সেই সময়টাতে প্রয়োজন হয় কাউকে আঁকড়ে ধরার। আর তাই বোধহয় মানব মনের ঘর বাঁধার এত আকুতি। আর অর্ধেকটা জীবনের সকল চাওয়া পাওয়া, স্বপ্নের অপূর্ণ ভান্ডার কেবলই একজনের হাতে তুলে দেয়াটা বোধকরি খুব একটা সহজ কাজও নয়। জানি না, মনে হয় সম্পর্কের এই অদ্ভুত রসায়নটা টিকে থাকে, একে অপরের স্বপ্ন-পূরণের মধ্য দিয়ে। আর মানবমনের এই চাওয়া পাওয়ার সমন্বয় করাটাই জীবনের সবচেয়ে দুরুহ কাজ হয়ে দাঁড়ায়।
ক্ষুদ্র এই জীবনে সময়ের গতিময়তা বোঝা যায় গতকালের দিকে ফিরে তাকালে। আজ বর্তমানের যে আমি, তা উঠে এসেছি অতীত থেকেই আর ভবিষ্যতে যাবো বর্তমানকে অতীত করেই। আর তাই আমার অতীতের সবাইকে কোন না কোনভাবে আমি ধারণ করি। হয়তো, ভাবনা হিসেবে বা হয়তো ঘুমন্ত স্মৃতি হিসেবে। আর তাই, মাঘের কোন এক শীতল রাত্তিরে কিংবা নীল মেঘের দুপুরে তোমাদের নিমন্ত্রন জানাবো।
আসো আর নাই বা আসো, আমি এবং আমরা জানবো তোমরা ঠিকই আছো আমাদের মাঝে...ঠিক যেমনটি ছিলে এতকাল ধরে।
( Nirupam Mustafi on Thursday, December 13, 2012) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।