সবুজের বুকে লাল, সেতো উড়বেই চিরকাল লেখাটা অন্য নোটে শুরু করছি। কিছুদিন আগে জাতিয়বাদিদের জন্য দুটি পোস্ট দিয়েছিলাম। আশা করি সেখান থেকে সমমনারা কিছু গ্রহন করতে পেরেছেন। জাতিয়তাবাদি দুই জন শক্তিশালি ব্লগারের লেখা পড়ুন নীচের লিংকে।
প্রথম লেখা
দ্বিতীয় লেখা
তৃতীয় লেখা
সবার সাথে চলার ক্ষমতাটুকু বিধাতা দিয়েছেন বিধায় সব মত পথের মানুষের সাথে চলাফেরার সৌভাগ্য হয়েছে।
সেই অভিজ্ঞতা থেকেই এই লেখাটি লেখার সাহস পেয়েছি।
সেলিম, সবার কাছে মাক্কু সেলিম। মানে মাকুন্দা। পেশায় সবার চোখের মণী। ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে করে মুল ধারার রাজনীতি সবার কছেই ওর কদর অনেক।
- বুঝলি মন্টু ! হালার ঝি কত হাতে পায়ে ধরছিল। আমারে কয় ভাই আমি আপ্নের বইন। আমার ইজ্জত নষ্ট কইরেন্না। আমার হালা বুঝছোস, মাথায় মাল উইঠ্যা রইছিলো। কান দেই নাই।
ইচ্ছামত লাগাইছি মাগিরে।
- মাগার সেইল্লা, তুই যে ফকিরন্নিরে রেপ করলি, তোর মান ইজ্জত তো সব শ্যাষ ! মাইনষ্যে তোরে ফকিরন্নিচোদা সেলিম কইবো না?
- ওই মাঙ্গের পোলা, আমি যদি হুনছি এই কথা কেউ কইছে, তাইলে তোর খবর আছে। কারণ এই কতা তোরে ছাড়া আর কেউরে কই নাই।
যে মেয়েটি ধর্ষনের শিকার হলো, সে ছিল একটা ভিখারি।
তাকে ধর্ষন কি শুধু সেলিম করেছিল? উহু ! ধর্ষন ছিল তার নিয়তি।
কখনো ভিক্ষার লোভ দেখিয়ে কখনও ভয় দেখিয়ে, কখনো আশ্রয় দেবার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে, কখনো আবার জঠর জ্বালা মেটানোর আশ্বাস দিয়ে।
এর পরেও ওই মেয়েটি বার বার নিজের সম্ভ্রম আকড়ে ধরে রাখতে চেয়েছে।
হ্যা সম্ভ্রম ! মেয়েরা যে বিষয়টিকে অনেক পবিত্র বলে জ্ঞান করে। সেটা পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে যে বর্ণের নারীই হোক না কেন। এমন কি বারবনীতারাও এই সম্ভ্রম লালন করে থাকে।
সেলিমের ধর্ষনের প্রয়োজন ছিল না। সব দলের কাছে সমান আদরনীয় এই সন্ত্রাসি ক্যাডার ইচ্ছা করলেই ঢাকার শত শত বেশ্যা বাড়ির একটিতে গিয়ে কাম লালসা চরিতার্থ করতে পারতো। তা না করে শ্রেফ রাস্তায় ভিক্ষা করা একটা মেয়েকে লালসার শিকার কেন বানালো?
কারণটা ইগো ! হ্যা ইগো। যা ক্ষমতাবান মানুষকে এমন উচ্চতায় নিয়ে যায়, যেখান থেকে তার মনে হয়, সে এক অদ্বিতীয়। বাকিরা তার প্রজা।
সেদিন সেই ইগোতে বলিয়ান সেলিম, রাস্তার ভিখারি একটা মেয়ের কাছ থেকে না শুনতে রাজি ছিল না। গায়ের জোরে ক্ষমতার জোরে সে তার অধিকার প্রয়োগ করে আত্মতুস্টি পেতে চেয়েছিলো।
যুদ্ধক্ষেত্রে বিজয়ি সৈনিকদের ধর্ষনোৎসবও ঘটে একই কারণে। আমাদের দেশের ১৯৭১ সালে আমাদের মা বোনদের উপর যে পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছিল, তার মুলেও ছিল পাকিস্থানি হানাদারদের সেই ইগো। অস্র হাতে আছে, ক্ষমতা আছে,তাহলে বাঙালির বাচ্চাদের দেখিয়ে দেবো ! এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাবে।
২০০১ সালে নির্বাচনোত্তর যে নারী নির্যাতন হয়েছিল, জাবির মানিক যে কারণে সেঞ্চুরি করেছিল, ইদানিং ছাত্রলিগ যা করছে, তার সব মুলেই হলো, সেই অসীম ক্ষমতাধর বলে মনে করা ইগোর কারণে।
ধর্ষন বিরোধী একটা ক্রেজ ব্লগে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বেশ কিছু লেখা হয়েছে। তর্ক বিতর্ক চলছে। এটা শুভ লক্ষণ।
তবে নারীদের পোষাক নির্বাচনের সাথে ধর্ষণের যে যোগ সুত্র অনেকে আবিস্কার করেছেন, তার সাথে বেশ দ্বিমতই আছে আমার।
বাংলা চলচিত্রের এক জন নায়িকা, পর্দায় বেশ খোলামেলাভাবে নিজেকে উপস্থাপিত করার ফলে, একটা বাজে ইমেজ তৈরি হয়েছিল। পাড়ার উঠতি যৌবনধারি কিছু মাস্তান তার কাছে গেলেও , ধরা না দেয়াতে, অস্রের ভয় দেখিয়ে সেই নায়িকাকে ধর্ষন করা হয়েছিল।
সেই সুত্র ধরে সেই পাড়ার জুনিয়ার সিনিয়ার অনেকেরই লালসার শিকার এই নায়িকাটিকে হতে হয়েছিল। তাই সেই নায়িকা বেশিদিন সেই পাড়ায় টিকতে পারেনি।
পর্দায় বেসামাল কাপড় পড়ার খেসারত, এভাবেই দিতে হয়েছিল সেই নায়িকাটিকে। যদি ভুল না করে থাকি, তাহলে এভাবেই প্রতি নিয়ত পর্দায় স্বল্প বসনা অনেক নায়িকা মডেলকে এভাবেই বেচে থাকতে হচ্ছে।
অশ্লিল পোষাক পড়ার সাথে ধর্ষনের সম্পর্ক সেইটুকুতেই সীমাবদ্ধ।
যারা স্বেচ্ছায় অশ্লিল কাপড় পড়ে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে, তাদেরকে ধর্ষনের প্রয়োজন হয় না। উপযুক্ত স্বার্থ হাসিল করতে পারলে তাদেরকে খুব সহজেই ভোগ করা যায়।
এবং সেটাই তারা চান। ফেলো কড়ি মাখো তেল, আমি কি তোমার পর?
একারণেই বারবনিতা না হলেও, শ্রেফ তারকা হবার লোভে তাদের এই স্খলন।
বাংলাদেশে যারা ধর্ষনের শিকার হচ্ছেন, অন্তত যাদের খবর পত্রিকায় আসছে, সেটি সমাজের নীচ তলার মানুষের খবর। কারণ তাদের মান সম্মান নিয়ে সমাজ চিন্তিত নয়।
তাই যৌন পিপাসু পাঠকদের যৌন সুরসুরি দেবার বাসনা থেকেই অনেক পত্রিকাই বেশ রগ রগে করে ঘটনাটি ছাপায়।
এরপর? কোন ফলোআপ নেই। আবার নতুন ঘটনা। আবার নতুন করে লেখা। এক অদ্ভুত চক্কর !
পর্ণ একটি ফ্যাক্টর হতে পারে?
হ্যা হতে পারে। কারণ প্রতিটা মানুষের মনে বাস করে একটি পশু।
শিক্ষা, সামাজিক নিয়ন্ত্রন, ধর্ম , বিবেক ইত্যাদি নানা শেকলে সেই পশুটা বন্দি থাকে। উপযুক্ত পরিবেশ পেলে সেই পশুটা বুঝিয়ে দেয় সে কত ভয়ংকর হতে পারে।
এজন্য পর্ণ দেখে বিকৃত যৌন কামনার উদ্রেক হলে, অনেকের মনের পশুই বাধ ভেঙ্গে বেড়িয়ে আসে। ঘরে বৌ বা প্রেমিকাকে দিয়ে সেই ফ্যান্টাসি পুরণ না হলে, সে জ্বলতে থাকে। বেশহ্যা পাড়ায় যাবার মত কড়ি নেই, কিংবা সামাজিক লাজ লজ্জার ভয়ে যেতে পারে না,এমন কেউ সুযোগ পেলে কোন নিরীহ মেয়ের উপর সেই কামনা চরিতার্থে ঝাপিয়ে পড়ে।
দল বেধে যে ধর্ষন উৎসব চলে, সেটি সেই বিকৃত কামনারই বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
আবার অনেক মেয়েরাই বিকৃত কামনা চরিতার্থের জন্য আপন প্রেমিক বা স্বামীর বাইরেও এক বা একাধিক প্রেমিকের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে। সেটি ধর্ষন নয়, অনাচার।
ব্লগে ধর্ষকদের শাস্তি বিধান করে কার্যকর করার তীব্র দাবিই উঠেছে। বিশ্বাস করুন অথবা না করুন, শিশু ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর আইন ইতিমধ্যেই প্রণিত হয়েছে।
সমস্যাটা হচ্ছে তার প্রয়োগে। আমাদের দেশে মুখ চিনে অপরাধীর সামাজিক অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক সংক্লিস্টতার বিবেচনা করে এর পর আইন প্রয়োগ করা হয়।
নইলে পরিমল জয়ধরের মত চিহ্নিত ধর্ষককে এখনো কেন মৃত্যুদন্ড দেয়া হলো না?
আচ্ছা পরিমল না হয় আওয়ামি লিগের খাস লোক। কিন্ত ২০০১ সালে নির্বাচনের পর যারা নির্যাতনের জড়িত ছিল, তাদের কেন এই সরকার বিচারের আওতায় আনলো না?
কেন জানেন? যাতে সরকার পরিবর্তন হলেও, এ পাপে জড়িত আওয়ামি ক্যাডাররা শাস্তির বাইরে থাকতে পারে।
যদি বিচারের বানী এমন নিভৃতে কাদে, তাহলে বিচার চাইবো কার কাছে? আমরা ব্লগে বসে চিল্লাচিল্লি করতে পারি, দাবি জানাতে পারি, বড় জোর একটা মানব বন্ধন করতে পারি।
এর বাইরে কিছু করা কি আমাদের পক্ষ্যে সম্ভব?
আর ধর্ষককে যেখানে পাওয়া যাবে, সেখানেই মেরে ফেলার মত আইন বিরোধী দাবি করলে, দেশদ্রোহিতার অভিযোগে পড়তে হবে। আর এই ধারার শাস্তি প্রয়োগে কত জন ব্লগার এগিয়ে আসার সাহস করতে পারবেন সেটিও প্রশ্ন।
তাহলে উপায় কি? উপায় একটাই। মানুষের মাঝে বাস করা পশুকে বেড়িয়ে আসতে উৎসাহ দিতে পারে এমন ছিদ্রগুলি বন্ধ করা।
শেষ - যে উদাহারণ দুটি তুলে ধরা হয়েছে, সেগুলি অলিক নয়, জীবন থেকে নেয়া।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।