" বনেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে " ছোটবেলা থেকে আমার এক আজব চিজের প্রতি আগ্রহ ছিল, (হাইসেন না আবার) সেটা ব্যাঙ । কি মজা পাইলেন?? আসলে হয়েছে কি, আমার বাড়ির পাশে ছিল বড় একখান ডোবা, হাজারো ব্যাঙ সারাদিন ডাকাডাকি করতো। সেই থেকে ব্যাঙ প্রীতি।
এটা ক্লাস থ্রি এর বর্ষাকালের ঘটনা। বর্ষাকালে ব্যাঙ এর ডাকাডাকি বেড়ে যেত।
সেটা শুনে আমার মনে এক প্রশ্ন জেগেছিল সারাবছর এরা এত ডাকাডাকি না করলেও বর্ষাকালে ঘেঙর ঘেঙর বেড়ে যায় কেন?? বাপজান হইল আমার বন্ধুর মত। তারে গিয়া প্রশ্নটা জিগাইলাম। বাপজান কেমন যেন একটু ভরকাইয়া গেল! তবু শান্ত হইয়া আমারে কইল, “বর্ষার নতুন পানি দেখে তাদের মনে বহুত আনন্দ জাগে, তাই মনের আনন্দে গান গায়” :`> । আমি একটু বন্য টাইপের ছিলাম তো এই এক উত্তরে মন ভরছিলো না।
পরের দিন গেলাম বিচ্ছু বাহিনীর(আমি যার সাধারন সদস্য ছিলাম) লিডার কামাল ভাইয়ের কাছে।
কামাল ভাইরেও একই জিনিস জিগাইলাম আর বাপজান কি কইছে তা বললাম। এরপর তিনি শোনাইলেন পুরাই অন্য কথা। কইলেন, “এই সময় পুরুষ ব্যাঙ স্ত্রী ব্যাঙকে আকৃষ্ট করার জন্য ডাকে”
আমি বদ পোলার লাখান জিগাইলাম, “কেন এইরকম করে”?
“এই সময় মানুষের মত এরাও বিয়া করে”
তাই নাকি? অনেক মজার তো। ।
ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়া বোল্টের লাখান দৌড় দিয়া বাড়িত আসলাম।
সারাবিকাল ডোবার পাশে বসে থাকলাম, মজা করে ব্যাঙের ডাক শুনলাম। আমার চিন্তার রাজ্য তখন শুধু ব্যাঙময় । এর মাঝে আমার মাথায় এক নতুন চিন্তার উদয় হল। ব্যাঙের বিয়ে দেয়ার ভাবনা। কেমনে কি করা যায় তাই নিয়া ভাব্বার লাগলাম।
অনেক ভাবার পর একদিন বিকাল বেলা বাপজানের কাছে গেলাম। বাপজানে বিড়ি ফুকাইতেছিল , আর কি যেন চিন্তা করতেছিল। আমি যাওয়াতে সেটাতে ছেদ পড়ল, তয় বাপজান হাসিমুখে কইল ... কিছু কইবি?? আমি বাপজানের কোলে গিয়া বইসা কইলাম, বাপজান একটা কথা কমু রাগ করবা না তো?...... ক না কি কবি?
বাপজান আমি দুইটা ব্যাঙের বিয়া দিবার চাই । আমার বাপজান আমার মত পাগল কিসিমের দেইখ্যা এককথায় রাজি হইয়্যা গেল। বাপজানের সাথে কথা কইয়্যা সামনের শুক্কুরবার দিন ঠিক করলাম।
আমি আমার সব বন্ধুগো শুক্কুরবার দাওয়াত দিলাম, বাপজান মায়েরে বুঝাইয়্যা সব কিছু ঠিক কইরা ফেলাইল(তয় এই নিয়া বাপ-মায়ের মধ্যে ভালোই ঢিসুম ঢিসুম হইছিল / / )।
আমি ব্যাঙ জোগার করে ফেললাম দুইটা। অনেক অনেক যত্ন নিতে লাগলাম। কপালে টিপ দিলাম কারো যেন নজর না লাগে। এই ভাবে কয়েকটা দিন ভালোই কেটে গেল।
শুক্কুরবার সব বন্ধু যথাসময়ে এসে পড়ল। ওরা জানতো না যে আমি কেন ওদের দাওয়াত দিছি। তয় ব্যাঙের বিয়া দেয়া দেখে ওরা অনেক মজা পাইল। অনেক মজা করল, গান করল, নাচলো, সব শেষে দাওয়াত খাইয়্যা বিদায় নিল। আমি তখন নয়া দম্পতি নিয়া মহা ব্যস্ত।
অনেক হই-হুল্লুর করে, বাপের সাথে মজায় দিনটা কাটালাম। তয় মায়ে অনেক রাইগা ছিল। বাপজানের জন্য কিচ্ছু কইবার পায় নাই।
পরের দিন স্কুলে গিয়া পরলাম মহা বিপত্তিতে :-* , গেট দিয়া ধোকার সাথে সাথে হগলে আমারে ব্যাঙবাবা বইলা ডাকা শুরু করলো। আমি তো মহা খেপে গেলাম ( ।
খেপে কোন লাভ হল না, সময়ের সাথে সাথে আমি হয়ে উঠলাম ব্যাঙবাবা। কিছুদিনের মধ্যে সবাই আমারে ব্যাঙবাবা বলে ডাকতে লাগল। এমন কি বড়- ছোট সব ক্লাসের মেয়ে ছেলেরা আমারে ব্যাঙবাবা বলেই ডাকত, আর চিনত। আমিও এটাতে পরে অনেক মজা পেতাম,ভালো লাগত ব্যাঙবাবা নামে কেউ ডাকলে।
উৎসর্গঃ চেয়ারম্যান০০৭ কে, যিনি এই অলস পোলাডারে গল্প লেখতে অনেক উৎসাহ দিয়েছেন।
ধন্যবাদ চেয়াম্যান সাব। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।