আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজকুমারী ওলগার গোপন প্রনয়

কঠোর অনুশাসনে বন্দী রাজকীয় জীবনের মোড়কে প্রেমের গল্পগুলো চিরকালই রহস্য হয়ে আছে জনসাধারণের কাছে। রুশ ইতিহাসেও রাজকুমারী ওলগার গোপন প্রেম তেমনই এক আকর্ষণীয় রহস্য হয়ে আছে আজও। রাশিয়ার রাজতন্ত্রের ইতিহাসে এ ধরনের জনপ্রিয় প্রেমকাহিনী খুব কমই আছে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতেই রাজকুমারী ওলগার গোপন প্রেমকাহিনী ছড়িয়ে যায় জনসাধারণের মাঝে। প্রেম যেখানে রাজকীয় পরিচিতি পায় সেখানে হয়তো অনেকেই ভ্রান্ত ধারণা রাখে।

রাজকুমারীর অবাধ প্রেমের গল্প নিশ্চয়ই রোমাঞ্চকর হবে। কিন্তু বাস্তবে এদের প্রেমেও ছিল প্রাসাদের বিধি-নিষেধের শৃঙ্খলা। তাই বর্ণাঢ্য প্রাসাদগুলোর প্রাচীরের ওপারের প্রেমের পরিণতি ছিল মর্মান্তিক। রাজকুমারী ওলগা, পাভেল ভেরোনভের প্রেমে মশগুল হয়ে রাজার অবাধ্যই শুধু হননি। ট্র্যাজিক প্রেমের অনন্য দৃষ্টান্তও রেখে গেছেন।

এই প্রেমের উপাখ্যানের সন্ধান মেলে ১৯১৭ সালের পর। বিপ্লব শেষে জনসম্মুখে আসে এই রাজপরিবারের সেই মূল্যবান ডায়রিটি। এ ডায়রি থেকেই জানা যায়, শেষ রুশ সম্রাট দ্বিতীয় নিকোলাইয়ের অন্যতম কন্যা ওলগা মত্ত ছিলেন গোপন প্রেমে। জারের কন্যাদের ভাগ্য নির্ধারিত হতো রাজতন্ত্রের কঠোর নিয়ম মেনেই। এমনকি সমাজের অন্য স্তরের ব্যক্তির সঙ্গে তাদের বিয়ে দেওয়া হতো না।

কিন্তু প্রেমের কাছে পরাজিত হয় এই কঠোর বিধিনিষেধ। ১৯১১ সাল থেকে রাজকুমারী ওলগার ডায়রিগুলোতে লিপিবদ্ধ হয় তার এই প্রেমের সব অনুভূতি। পুরো ডায়রিজুড়ে ছিল রাজকুমারীর প্রথম ভালোবাসার মানুষকে ঘিরে সব ঘটনা আর ভালো লাগার বৃত্তান্ত। তার বর্ণনার সূত্র ধরে গবেষকরা সেই পুরুষের নাম বের করেছেন। তিনি আর কেউ নন পাভেল ভোরোনভ।

তিনি ছিলেন জারের নিজস্ব বিলাসবহুল জাহাজের অন্যতম অফিসার। অভিজাত বংশের সন্তান পাভেল নেভি ক্যাডেট কর্পাস থেকে পাস করে যুদ্ধজাহাজ 'অ্যাডমিরাল মাকারভে' কাজ করতে ঢুকেছিলেন। এ জুটির মন দেওয়া-নেওয়ার পেছনের ঘটনাটিও রীতিমতো অবাক করে দেয়। ১৯০৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর ইতালির সিসিলি দ্বীপে প্রবল ভূমিকম্প হয়। এ দুর্যোগে মারাত্দকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শহর মেসিনা।

প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া এই শহরে হাজার হাজার জীবন্ত মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েন। 'অ্যাডমিরাল মাকারভ' জাহাজটি তখন মেসিনার বন্দরে নোঙ্র করা ছিল। স্বাভাবিকভাবেই রুশ নাবিকরা তখনই সাহায্যার্থে ছুটে যান। মানবিক এ পদক্ষেপে কৃতজ্ঞ ইতালি রুশি ভাইদের পদকে ভূষিত করে। তখনই সেই নায়কদের তালিকায় নাম লেখান পাভেল, তাকেও একটি পদকে সম্মানিত করা হয়।

এর পরই নানা ঘটনাপ্রবাহে রাজকুমারীর চোখে তিনি প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেন। পাভেল ভোরোনভকে সবাই পছন্দ করতেন। এমনকি টেনিস খেলায় তিনি জার দ্বিতীয় নিকোলাইয়ের জুটি ছিলেন। বড় রাজকুমারীদের নৃত্যসঙ্গী হয়ে উঠেন। ধীরে ধীরে সম্রাটের পরিবারের সঙ্গে তার অন্তরঙ্গতা বৃদ্ধি পায়।

রাজকুমারী ও জাহাজের অফিসারদের মধ্যে আলাপ-আলোচনায় হালকা রসিকতার আড়ালেই রাজকুমারী ও দুঃসাহসী লেফটেন্যান্ট পরস্পরের প্রতি অত্যন্ত আকৃষ্ট হয়ে উঠেন। বিশেষ করে নাচের সময় পাভেল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ওলগাকে আমন্ত্রণ জানাতেন। এভাবেই তাদের ভালো লাগার বহিঃপ্রকাশ ঘটতে থাকে। এসব কারণেই পরিবার ও রাজদরবারের লোকেরা খেয়াল করেছিলেন, রাজকুমারী ওলগার ১৮ বছর বয়স পূর্ণ হওয়া উপলক্ষে বিলাসবহুল জাহাজে আয়োজিত বলনাচের আসরে ওলগা বারবার উচ্ছ্বাসে পাভেলকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছিল নাচের সঙ্গী হওয়ার জন্য। ওলগার এসব বর্ণনায় বারবার উঠে আসে তার প্রেমে পড়ার বিভিন্ন অনুষঙ্গ।

ডায়রি পড়ে বোঝা যায়, প্রেমিক পাভেলের সঙ্গে নিভৃতে সময় কাটানোর বাসনাও স্পষ্ট উল্লেখ পায়। ওলগার আকর্ষণের অন্যতম দৃষ্টান্ত মেলে প্রিয়তমকে ঘন ঘন দেখার ব্যাকুলতায়। সব সময় পাভেলের সানি্নধ্যে থাকার তাগিদে পরিণত হচ্ছিল তার। কিন্তু উভয়েই, বিশেষ করে ভোরোনভ বুঝতে পারছিল এই প্রেমের অস্থিরতা খুব একটা ভালো ফল বয়ে আনবে না। এ ঘটনায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত সম্রাজ্ঞী আলেক্সজেন্দ্রা থেকে বেরোনোর পথ খুঁজছেন।

ভোরোনভকে আকারে-ইঙ্গিতে রাজপরিবার বুঝিয়ে দেয়, তার বিয়ে করা দরকার। বিশেষ করে এ জন্যই রাজপরিবারের তাগিদে তার বিয়ের আয়োজন চলতে থাকে। অন্যদিকে রাজকুমারী তার গোপন প্রেমের আগুনে নিভৃতে জ্বলতে থাকেন। তবুও কষ্ট বুকে চেপে ভেরোনভের বিবাহে স্বয়ং জার সপরিবারে সঙ্গে এসেছিলেন ওলগা। তার সব অব্যক্ত কথা নিজের পরম নৈরাশ্য শুধু তার ডায়রির পাতায় প্রকাশ হতো।

তার প্রেমের এই অতৃপ্ত অংশ এভাবেই পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়। এরপর রাশিয়ার জন্য শুরু হলো কঠিন সময়। শুরু হলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। প্রেমের গল্প ছাপিয়ে ওঠে দেশ রক্ষার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এদিকে জারের অন্য কন্যাদের মতোই নিজে ওলগা যুদ্ধের সময় নার্সের কাজ করত।

হাসপাতালে আহতদের সেবা শুশ্রূষা করত। ১৯১৭ সালে শুরু হলো বিপ্লব। যা রাষ্ট্র, রাজতন্ত্র সব কিছু ধ্বংস করে দিল। রাজকুমারী ওলগা ২৩ বছর বয়সে পরিবারের অন্য সবার সঙ্গে বলশেভিকদের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। পাভেল ভেরোনভ পুরো সময়টাতে অফিসারের মর্যাদা রক্ষা করে গেছেন গৃহযুদ্ধের সময়।

আমেরিকায় ১৯৬৪ সালে ৭৮ বছর বয়সে তিনি পরলোকগমন করেন।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।