‘বাংলাদেশের কাছে কে হারতে চায়?’ অকল্যান্ড থেকে প্রকাশিত ‘নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডে’ টাইগারদের কাছে ‘ধবলধোলাই’ হওয়ার সংবাদের নিচে একজন পাঠক এমনই মন্তব্য করেছেন। বাংলাদেশের কাছে টানা দুই সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার দুঃখটাকে ক্ষোভে পরিণত করে ওই পাঠক লিখেছেন, ‘আগামী তিন বছর ক্রিকেটের পেছনে যাবতীয় বিনিয়োগ বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এ দেশে ক্রিকেটের চেয়ে রোয়িংয়ের পেছনে বিনিয়োগ অনেক বেশি লাভজনক। ’
এ পর্যন্ত ঠিকই ছিল। কিন্তু ওই পাঠক মন্তব্যের শেষপ্রান্তে এসে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি হারিয়েছেন।
তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, বাংলাদেশ, ইথিওপিয়ার মতো দেশগুলোর কাছে হারের পর আমাদের ভাগ্যে আর কী অপেক্ষা করছে! তার মানে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ধোলাই হলে ঠিকই ছিল, যত সমস্যা বাংলাদেশের মতো একটা দেশের কাছে হারে! হায়, ক্রিকেটের এলিট শ্রেণী!!
ওই একই পত্রিকায় নিউজিল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার মার্ক রিচার্ডসনের একটি কলাম পড়ে মনে হলো দেমাগ এখনো যায়নি। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড সিরিজের গুরুত্ব নিয়ে! তাঁর লেখায় একটি সুখ-পাঠ্য অবতরণিকাও ফেঁদেছেন তিনি, ‘বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচটি দেখতে টিভি খুলেছি। স্ত্রী এসে বলল, “কার খেলা?” বললাম, ব্ল্যাকক্যাপসরা বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলছে। সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রীর উত্তর, “ব্ল্যাকক্যাপসরা খেলছে! জানি না তো!!”’
অবতরণিকাটি দিয়ে তিনি বাংলাদেশের বিপক্ষে টানা দুটো হোয়াইটওয়াশের লজ্জা কিছুটা কমিয়ে দেখাতে চেয়েছেন—এটা বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু তাই বলে বাংলাদেশের আন্তরিক প্রশংসা তিনি করবেন না! এটা কী বাংলাদেশের কোনো সাফল্য নয়! লেখার পরের অংশে খুব কষ্ট করে তিনি বাংলাদেশের প্রশংসা অবশ্য কিছুটা করেছেন, তবে বাক্য-ব্যয়ে তাঁর কার্পণ্য দেখে যে কেউ ভাবতে বাধ্য, নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটারদের ব্যর্থতাই বাংলাদেশকে এই জয় পেতে সহায়তা করেছে! রিচার্ডসন অনেক অজুহাত খুঁজেছেন।
সেগুলো তাঁর লেখায় খুব যত্ন করে উপস্থাপনও করেছেন। অজুহাতগুলোর একটি হলো, এই দলে নাকি ড্যানিয়েল ভেট্টরি, মার্টিন গাপটিল, জেসি রাইডারের মতো খেলোয়াড়েরা ছিলেন না। কেন উইলিয়ামসনের হঠাত্ আহত হওয়াও নাকি হারের একটা বড় কারণ।
রিচার্ডসনের এই অজুহাতের জবাব আসলে দিয়ে দিয়েছেন নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডের ক্রিকেট প্রতিবেদকই, ‘নিউজিল্যান্ড বাংলাদেশের যে দলটির কাছে তৃতীয় ম্যাচটিও হারল, সেটা তো বাংলাদেশের সেরা একাদশও নয়। সাকিব আল হাসান তো প্রথম থেকেই ছিলেন না, ফতুল্লার শেষ ম্যাচে বসিয়ে রাখা হয়েছিল তারকা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবালকেও।
ব্ল্যাকক্যাপসরা হেরে গেল শামসুর রহমান নামের এক অখ্যাত তরুণের কাছে, যাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার মাত্র দুই ম্যাচের। ’ নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড তাও ‘ধবলধোলাই’ হওয়ার সংবাদটি দিয়ে দায়িত্ব সেরেছে।
কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিভিন্ন শহর থেকে প্রকাশিত গোটা পাঁচেক সংবাদপত্রের অনলাইন সংস্করণ ঘেঁটেও যখন হোয়াটওয়াশ হওয়ার কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া গেল না, তখন এটা নিশ্চিত, এই হার নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের নিরন্তর এক লজ্জার কাহিনি। নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডের আরেক পাঠকের মন্তব্য দিয়ে এবার শেষ করা যাক। দেশের হারে ক্ষুব্ধ-ব্যথিত ওই পাঠক প্রশ্ন তুলেছেন, নিউজিল্যান্ড জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা জাতীয় দলে খেলে আদৌ গর্ব অনুভব করেন কি না! বাংলাদেশের উদাহরণ টেনে তাঁর মন্তব্য, ‘চেয়ে দেখুন ওই দলটির দিকে, দেশের হয়ে খেলার গর্বে যেন উত্তুঙ্গ প্রত্যেক খেলোয়াড়।
অথচ, এই দলটাকে ‘মিনোস’ বলে কতই না উপহাস করা হয়। ব্ল্যাকক্যাপসদের টানা সাত ম্যাচে হারিয়ে ওই ‘মিনোস’রাই প্রমাণ করে দিল, ক্রিকেট বিশ্বে সত্যিকারের ‘মিনোস’ আসলে কারা!
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।