আমি একজন সফল আর্কিটেক্ট হতে চাই
এই উপন্যাসের ১ম পার্টঃ
তখনও ঈশ্বর নিজ স্বত্তা ছাড়া কোন কিছুই সৃষ্টি করেন নি। কেবল মাত্র সৃষ্টি করেন একটি সজিব-নুরের পর্দা। আরশের আজিমে ঈশ্বর বসে বসে নুরে মহাম্মদি কে অবলকন করতেছেন। পাশে একটা নুরের ঝর্ণা প্রবাহমান। ঝর্ণা টিরও সৃজন বস্তুর প্রারম্ভিক অংশ ছিল এই নুরে মহাম্মদি।
ঈশ্বর পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন এই নুরে মহাম্মদি থেকে তাঁর প্রিয় বন্ধু মুহাম্মদ কে তৈরি করিবেন। এজন্য নুরের বস্তুতে তিনি সজিবতা দিয়েছিলেন।
কিছুক্ষণ অবলম্বন করার পর ঈশ্বর স্ফীত আলোক বস্তু নুরে মহাম্মদের খুব ঘনিষ্ঠ হলেন। নুরে মুহাম্মাদের মধ্যে প্রানের অনুরণন দিলেন। কিছুটা নুর সেখান থেকে নিয়ে কলম সৃষ্টি করলেন, লিখলেন, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু “ আর নুরে মহাম্মাদের সেই অপূর্ণ সজিবতাকে পূর্ণতা দিলেন নির্দেশ দিলেন পড়তে।
নুরে মহাম্মাদের পঠন শেষে ঈশ্বর সেখান থেকে আরও কিছুটা নুর নিয়ে, কিঞ্চিত ফুঁৎকার দিলেন আর মুখে বললেন, “কুন” অর্থাৎ হয়ে যাও। অমনি বিকট শব্দে আরশে আজিম কেপে কেপে উঠলো কয়েকবার। সাথে সাথে ঈশ্বরের পরিকল্পনা মত সাত আসমান জমিন পাতাল হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো। একটা জমিন ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে তৈরি হল অসংখ্য গ্রহ নক্ষত্র এবং অসংখ্য ছায়াপথ। তীব্র গতিতে ছুটে যেতে লাগলো একটি থেকে একটি, আবার আরেকটার সাথে ধাক্কা খেয়ে গোলাকার পথ তৈরি করে কিছু কিছু বস্তু পিণ্ড ঘুরতে লাগলো আরেক টিকে কেন্দ্র করে।
কিছু কিছু বিশাল বড় বড় বস্তু পিণ্ড নুরের আলো নিয়ে ছুটে অসংখ্য গ্যাসের সৃষ্টি করলো। [আধুনিক বিজ্ঞান এটিকে বিগ ব্যাং থিওরি বলে]
ঈশ্বর এবার মুহাম্মাদ এর দিকে তাকালেন তাঁর কেমন ভাবান্তর টা জানার জন্য।
মুহাম্মাদঃ হে মহান স্রষ্টা আপনি কি মন্সথাপন করেছেন।
ঈশ্বরঃ হে আমার প্রিয় সৃষ্টি, আমি আমার সৃষ্টি কে বর্ধিত করতে তোমার এই নুর মোবারক সৃষ্টি করেছিলাম। সে অনন্তকাল তুমি পেরিয়ে এসেছ যা তুমি নিজেও জানো না।
আমার সকল কিছু সৃষ্টির অধিকার তোমার এই নুর মোবারকের। যাকে আমি অনাদি কাল হতে রেখেছি আমার মাঝে। এখন সময় এসেছে এই নুর মোবারক কে বিস্তৃতি করবার। , বস্তুত তোমার এই নুর মোবারক থেকেই আমি এত কিছু সৃষ্টি করেছি। সেসব সৃষ্টি কে আমি অজস্র গুন বর্ধিতও করেছি।
তোমার এই নুর সৃষ্টি না করলে আমি কিছুই সৃষ্টি করতাম না। এখন তোমার থেকে আমি আঠারো হাজার মাখলুকাত সৃষ্টি করবো একে একে অসংখ্য কাল ধরে।
মুহাম্মাদঃ হে মহান একক স্বত্বা যা আপনি আমাকে জানিয়েছেন তাহা ব্যাতিত আমি কিছুই জানি না। আপনি যা জানেন তাহা আমার জানার সাধ্য নাই।
মুহাম্মাদের এই ভক্তি এবং নুর ত্যাগ থেকে আল্লাহ মুহাম্মাদ কে শ্রেষ্ঠ মর্যাদা দিলেন।
ঈশ্বরের পবিত্র কালামের পাশেই মুহাম্মাদের নাম টি যোগ করে দিলেন। এবং নুরে মুহাম্মাদি বস্তু কে পরিপূর্ণতা দিলেন মানুষ রুপে। তাকে রেখে দিলেন জান্নাতে ফেরদাউসে। সেখানে মোহাম্মাদ অনন্তকাল থেকে গেলেন। সেখানে মুহাম্মাদ ঘুরতে ঘুরেত এক জায়গায় দেখলেন “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ”।
এবার মুহাম্মাদ ইস্বরের দরবারে আরজ করলেন উক্ত আয়াতটার অর্থ জানার জন্য।
ঈশ্বরের সৃষ্ট কলম দিয়ে জ্ঞান দান করলেন মুহাম্মাদ কে। সমস্ত জ্ঞান কে একত্র করে একটি মহাসাগরের মত করে টা থেকে যেমন একটি পাথি এক ফোটা পানি নিলে যতটুকু যায়, সেই টুকু কে আবার এক কোটি গুন ভাআগে ভাগ করে সমস্ত সৃষ্টি জগত কে এক ভাগ দিলেন আর বাকি টুকু দিলেন মুহাম্মাদ কে। আর সমস্ত কিছুই রেখে দিলেন ঈশ্বর তাঁর নিজের জন্য।
এরপরেই ঈশ্বর জিব্রাইল (আ) কে সৃষ্টি করলেন।
তারপরেই ঈশ্বর মুহাম্মাদ কে দেখিয়ে দিয়ে বলল, ওহে জিব্রাইল সাক্ষ্য দাও আমার একাত্ববাদ কে সাক্ষ্য দাও শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মুহাম্মাদ কে। ঈশ্বর জিব্রাইল কে কালিমা তইয়িবা পাঠ করতে বললেন এবং সিজদায় যেতে বললেন।
-জিব্রাইল সাথে সাথে কালিমা পাঠ করলেন এবং ঈশ্বরের একাত্ব বাদে ঘোষণা দিয়ে সিজদায়ে লুতিয়ে পড়লেন। জিব্রাইলের সেই সিজাদা অনন্ত কাল পেরিয়ে গেলো। কোটি কোটি আলোক বর্ষ সময় পেরিয়ে গেলে ঈশ্বর জিব্রাইলের প্রতি খুবই সন্তুষ্ট হলেন।
জিব্রাইল কে নিয়ে আসলেন আরশে আজিমের কাছাকাছি। তারপর ঈশ্বর আরও দুজন ফেরেশতা তৈরি করলেন। তাদের নির্দেশ দিলেন তারা নিজেদের কে এভাবে রুপান্তর করতে। আর জিব্রাইল কে ওখানে দাড় করিয়ে রাখলেন, যে তোমাকে আমি যেকোনো মুহূর্তে আমি ডাকতে পারি। এভাবে আরও হাজার হাজার কোটি যুগ পেরিয়ে গেলো।
জিব্রাইল তাঁর হুকুমের আশায় ওখানে ঠায় দাড়িয়ে রইলেন। এখানে সেই দুজন ফেরেশতারা চোখের পলকে হাজার লক্ষ কোটি ফেরেশতা তৈরি করতেছে, এবং তাদের হুকুম দিচ্ছে, তারাও যেন এভাবে রুপান্তর ঘটায়। এভাবে এক সময় আসমান জমিন ফেরেশতাতে ভরে গেলো। ফেরশ্তাদেরে আল্লাহ আকবর ধ্বনিতে আরশ মুখরিত হয়ে গেলো।
আবার ঈশ্বর জিব্রাইলের কাছে এসে বললেন, সকল সৃষ্টি কে ডাকও।
সকল ফেরশ্তা হাজির হলে ঈশ্বর বলল,
হে ফেরেশতা মণ্ডলী আমি তোমাদের আরাধনায় খুবই খুশি। তোমরা যে সামান্য সময়ের জন্যও আমার নাম ভুলে যাও নি তাতে আমি খুশি। তাই আজ আমি আমার সামনের এই অগ্নি শিক্ষা থেকে তোমাদের মতই একটা জাতি আমার প্রতিনিধি হিসাবে সৃষ্টি করবো। দেখি তারা তোমাদের মত আমাকে স্মরণ করে কিনা। এবার জিব্রাইলের দিকে তাকিয়ে ঈশ্বর প্রশ্ন করেন, বল জিব্রাইল আমি কি মনস্থাপন করেছি যা তোমাকে বলতে বলছি।
জিব্রাইলঃ সকল জ্ঞান তো কেবল আপনার অধিকার। বস্তুত আপনি যা জানেন আমরা তাঁর বিশয়ে নিতান্ত মূর্খ।
তারপর ঈশ্বর জিন জাতি কে সৃষ্টি করলেন জ্বলন্ত অগ্নি শিখা থেকে। জিনের প্রজাতির অনেক গুলো ক্ষমতা দিলেন। তাদের গতি আলোর গতির চেয়েই পাচ লাখ কোটি গুন বেশি এজন্য জিনেরা আমাদের সামনে দিয়ে সর্বদা যাতায়াত করে কিন্তু আমরা দেখতে পাই না, কারণ মানব চক্ষু ০.০১ সেকেন্ড সময়ে বস্তুর আপাত পরিবর্তন পর্যন্ত ধরতে পারে, কিন্তু জিনের আপাত হবে ০।
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০১ কোটি ভাগ তাহলে জিন দের মানব চোখে দেখা অসম্ভব।
যাইহউক জিন দের আদি দুজন হলেন হইলদেতাং এবং আসুকাতং। এরা সৃষ্টি হলে ঈশ্বর তাদের কে ঈশ্বরের কিভাবে বন্দনা করতে হবে ইত্যাদি বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিতে বললেন। জিন জাতি এবার খুব তাড়াতাড়ি নিজেরা সংখ্যায় বৃদ্ধি পেলো। অল্পকাল পরেই ঈশ্বরের আদেশ নির্দেশ ভুলে নিজেরা নিজেদের মধ্যে কলহ সৃষ্টি করলো।
ঈশ্বরের বিরোধিতা শুরু করলো এই বলে যে তারা কেন ফেরেশতাদের সম পর্যায়ের মর্যাদা পায়না। ঈশ্বর তাদের কে ফিরিয়ে আনতে তাঁর বন্দনায়। ঈশ্বর অসংখ্য শান্তির দুত পাঠাল জিন জাতির মধ্যে যারা তাদের শিক্ষা দিতে চাইল ঈশ্বর কে কিভাবে স্মরন করতে হবে, কিভাবে মানতে হবে। কিন্তু মূর্খ জিনেরা তাদের সেসব দুতের কথা না শুনে তাঁদের মেরে ফেলতে লাগলো। তারা নিজেরা নিজেদের মধ্যে কলহ প্রকট আকারে ধারণ করলো।
ঈশ্বর জিনদের মধ্যে যারা ভাল তাঁদের কে পুরস্কৃত করার ঘোষণা দিলেন, তাঁদের জন্য উপযুক্ত শাস্তির স্থান হিসাবে নরক প্রস্তুত করলেন। সাত সাত টা ভয়ঙ্কর নরকাবাস সৃষ্টি করলেন। আর যারা ঈশ্বর কে অবমাননা করেছে তাঁদের খুব শিঘ্রই শাস্তি পৌঁছাবে বলে ঘোষণা দিলেন।
কিছুকাল পরেই ইস্রাফিলের সামনে একটা বড় সিঙ্গা এনে রাখলেন একজন ফিরিশতা। ঈশ্বর ইস্রাফিল (আ) কে নির্দেশ দিলেন, সিঙ্গায় ফুঁৎকার দিতে, যাতে দুষ্ট জিন জাতি সমুলে ধ্বংস হয়।
ইস্রাফিলের ফুঁৎকারে আকাশ পাতাল এর পানি এক হয়ে গেলো। বিকট শব্দে আবারো ঈশ্বরের সৃষ্ট জগতে কাপুনি ধরে গেলো। একটা গ্রহ আরেকটা গ্রহের সাথে ধাক্কা খেতে লাগলো। সকল দুষ্ট জিনের অবশান হল। আসমান পথে বিরাট পরিবর্তন আসলো।
সম্ভবত এই বিকট শব্দের ফলেই বিশাল বিশাল গ্রহের ধাক্কা লাগে। এবং তাতে থেকে সৃষ্ট অংশ আকাশে ঘুরতে থাকে। আর এভাবেই পৃথিবীর সৃষ্টি হয়। সৃষ্টির সময় পৃথিবী খুব উত্তপ্ত ছিল, কারণ ধাক্কার ফলে পদার্থের বিভিন্ন অংশ যেমন ইলেকট্রন, প্রোটন, গ্রাভিটন, একাস্থিত হয়ে পড়ে একটার পর একটা পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘোটতে থাকে। [দি ফার্স্ট থ্রি মিনিটস বইয়ে এই মহাবিশ্বের দ্বিতীয় ধাক্কার কথা উল্লেখ আছে।
]
সকল দুষ্ট জিন জাতির অবসান ঘটলে জান্নাত কে ফেরেশতারা আবার পুনসজ্জিত করতে গেলে ইবলিশের সন্ধান মেলে। ইবলিশ সেই প্রাথমিক মুহূর্তে অনেক কালো চেহারার ছিল। জিব্রাইল জিন শিশুটার প্রতি খুব মায়া অনুভব করলে উনি জিন শিশু কে ঈশ্বরের কাছে। ঈশ্বর জিন শিশু কে একজন ফেরেশতার কাছে সমর্পণ করলেন। ইবলিশ সেই থেকে ইশ্বরের অনুগ্রহে আস্তে আস্তে শক্তিশালি হল।
একসময় ঈশ্বর তাকে ফেরেশতা পরযায়ে উন্নিত করলেন।
ইবলিশ আসমান জমিনের এবং আঁটটা জান্নাতের এমন কোন জায়গা নেই যেখানে ইবলিশ সিজদা করেন নি। এভাবে আরও কয়েক কোটি বছর পার হলে ঈশ্বর আবার সেই জান্নাতুল ফেরদাউসের মধ্যে মুহাম্মাদের নিকট পত্যাবরতন করিলেন। সাথে ছিলেন জিব্রাইল (আ)। নুরে মুহাম্মাদির দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে ছিলেন ভাবতেছিলেন ঈশ্বরের পরবর্তী সৃষ্টি বিষয়ে।
ইতিমধ্যে ঈশ্বর অসংখ্য সৃষ্টি কে রুপ দিয়েছেন বিভিন্ন ভাবে, তাঁর কোনটাই ঈশ্বরের পরিপূর্ণতা পায়নি।
তাই এবার নুরে মুহাম্মাদি কে নিয়ে ঈশ্বর সুদূরপ্রসারী চিন্তা করলেন।
জিব্রাইল বলল, হে মহা জ্ঞানি, আপনি কি নুরে মুহাম্মাদি থেকে আরও নুর আলাদা করবেন এবং আবার আরও কোন প্রজাতি সৃষ্টি করবেন কি?
ঈশ্বর বললেন, হে জিব্রাইল তোমার ভাবনাগুলো ঠিক আছে, আমি অন্য একটা জাতি সৃষ্টি করবো যারা কোন পর্যায়ে আমার অস্তিত্ব অস্বীকার করবে না। যেটা আমি আগেই সৃষ্টি করেছি সেটাই করবো। কিন্তু যার শুরু আমি নুরে মুহাম্মাদি থেকে করবো না।
কোন কোন মাধ্যম থেকে করবো। এবং এইটা আমার সৃষ্ট সৃষ্টির সেরা নিদর্শন। যে জীব কে আমি শ্রেষ্ঠ মর্যাদা দিবো। আমি তাকে সৃষ্টি করবো ওই পচা মৃত্তিকা থেকে। তুমি সকল ফেরেশতা কে জোড় কর।
জিব্রাইল প্রস্তান করলে ঈশ্বর ইবলিশ কে সাথে করে এক পচা মৃত্তিকা দেশে আসলেন। ইবলিশ কে নির্দেশ দিলেন, যাও পচা মৃত্তিকা থেকে একটি মূর্তি অবয়ব তৈরি করো।
ইবলিশ ঈশ্বর নির্দেশিত হয়ে পচা মৃত্তিকা দ্বারা মূর্তি অবয়ব তৈরি করলেন। ঈশ্বর মূর্তিটির মুখায়ব নিজ হাতে তৈরি করলেন খুব যত্ন সহকারে। তারপর তাতে জ্ঞান দিলেন আসমান জমিনের সকল বিষয়ে, তারপর ১০ শে মহরমের দিন সকল ফেরেশতা কে দেখে বললেন, হে আমার আজ্ঞাবাহি ফেরেশতাকুল,
"আমি প্রথিবীতে আমার প্রতিনিধি সৃষ্টি করতে চাই।
"
ফেরেশ্তাগণ ঈশ্বরের এই কথা শুনে যাহা উত্তর করিল, আপনি কি সৃষ্টি করবেন পৃথিবীতে, এমন লোক যাহারা সেখানে কলহ বিবাদ করবি এবং রক্তারক্তি করবে, আমরাই তো আপনার গুণ-কীর্তন ও পবিত্রতার বর্ণনা করছি।
আল্লাহ্ তাআলা ফেরেশ্তাগণের এই উক্তিতে যাহা বলেছিলেন তাহাও নিশ্চিয় আমি যাহা জানি তোমরা তাহা জান না ।
তার পর আল্লাহু তাআলা তাহার সংকল্পিত বস্তু সৃষ্টি বস্তুর নাম রাখলেন অ্যাডাম। তখন হতে আল্লাহুর সৃষ্টি জগতে শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হল এই মানব জাতি। 'কর্দমকে-ছাঁচে আকার দিয়ে, শব্দকারী মাটি হতে আদমকে সৃষ্টি করা হল।
' অতঃপর ঈশ্বর অ্যাডামের শরীরে জীবন দান করে তাঁহার ভাষা ও যাবতীয় বস্তু সম্বন্ধে শিক্ষা দিয়ে ফেরেশ্তাগণের সম্মুখে উপস্থিত করলেন। আল্লাহু তাআলা ফেরেশ্তা ও জ্বীনগণকে বস্তুর বিশেষ বিশেষ গুণাবলীর বর্ণনা করতে আদেশ করলেন। জ্বীন ও ফেরেশ্তাগণ ঐ সকল বস্তুর নাম ও গুণাবলী বর্ণনা করতে পারল না। তাহারা ঈশ্বরকে বললেন, 'আপনি তো পরম পবিত্র আমাদের জ্ঞান নাই। যাহা আপনি আমাদেরকে দান করেছেন উহাই; নিশ্চয়ই আপনি মহা জ্ঞাণী।
'
ফেরেশ্তা ও জ্বীনগণ নাম বর্ণনা করতে অক্ষম হওয়ায় আল্লাহু তৎক্ষনাৎ হযরত আদম (আঃ)-কে ঐ সকল বস্তুর নাম ও গুণাবলী বর্ণনা করতে আদেশ করলেন। হে আদম! তুমি বলিয়া দাও তাদেরকে ঐ বস্তুগুলির নাম। " মহান ঈশ্বরের আদেশ পাওয়া মাত্র অ্যাডাম ঐ সমস্ত নাম ও গুণাবলী বর্ণনা করলেন। অতঃপর যখন অ্যাডাম বলিয়া দিলেন তাদেরকে ঐ সমস্ত বস্তুগুলির নাম। তখন অ্যাডাম ফেরেশতা ও জ্বীন এই দুই জাতির চেয়ে যে অধিক জ্ঞানী তাহা প্রমাণিত হয়ে গেল।
তার পর ঈশ্বর ফেরেশ্তা ও জ্বীন উভয়কেই অ্যাডাম কে সম্মান প্রর্দশন হেতু সেজদা করতে আদেশ করলেন।
হুকুম পাওয়া মাত্র ইবলিস ব্যতীত আর সকলেই বিনা বাক্য ব্যয়ে হযরত আদম (আঃ)-কে সেজদা করল। ইবলিস ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করিয়া অ্যাডাম কে সেজদা করিল না সে হুকুম তামিল করিল না ও অহংকারের গর্বিত
হইল এবং সে পরিগণিত হইল কাফেরদের মধ্যে। "
ঈশ্বর ইবলিসকে জিজ্ঞাসা করলেন-"তুমি কেন আদমকে সেজদা করলে না?"
ইবলিস গর্বভরে বলিল-'আমি অ্যাডাম হতে শ্রেষ্ঠ; আমাকে তুমি জ্যোতির্ময় অগ্নি দ্বারা পয়দা করেছ আর অ্যাডামকে সৃষ্টি করেছ ঘৃণিত মৃত্তিকা দ্বারা। সুতরাং আমি অ্যাডাম হতে শ্রেষ্ঠ, আমি কেন যাব অ্যাডামকে সেজদা করতে?'
ঈশ্বর ইবলিসের এইসব নাফরমানী ও আত্মৎগরিমার ধৃষ্টতা দেখিয়া বলিলেন, রে বেঈমান! তুই আজ থেকে আমার নিকট চির ঘৃণিত ও বিতাড়িত হইলি।
তুই আমার সম্মুখ হতে দুরহ্। কেয়ামত পর্যন্ত তোর প্রতি আমার অভিশাপ বর্ষিত হবে।
ইবলিস আল্লাহুর দরবার হতে বিতাড়িত হয়ে আরয করলঃ হে প্রভু! তুমি আমাকে কিয়ামত পর্যন্ত অবকাশ দান কর?"
আল্লাহু বললেন তোমাকে অবকাশ দেওয়া হল। "
ইবলিস শয়তান রূপে পরিগনিত হয়ে নিজেই ভাল হতে মন্দে পরিণত হল। বলা বাহুল্য, তদবধি সে তাহার নিজের প্রসার লাভ হেতুই আল্লাহুর প্রিয় বান্দা আদমকে কু-পথে/ বিপথে নেওয়ার জন্য সংকল্প বদ্ধ হল।
সে আল্লাহু কে বলিল -'আমি তোমার বান্দাদের উপর কেয়ামত পর্যন্ত আক্রমণ চালাব, তাদের সম্মুখে ,পশ্চাৎ, ডান, বাম দিক হতে। তুমি কিছুতেই তাদের অধিকাংশকে তোমার স্বমতে পাইবে না। '
আল্লাহু বললেন-"হ্যাঁ, তুই আক্রমণ চালাস, কিন্তু যাহারা আমার খাঁটি বান্দা তাদেরকে কিছুই করিতে পারবি না। দুনিয়াতে যারা তোর অনুগত হয়ে কিংবা তোর ধোঁকায় ভুলিবে, তাহারাও তোরই সঙ্গে নরকে গমণ করবে। "
ঈশ্বর বললেন, নিশ্চয়ই আমি নরক পরিপূর্ণ করব তোমার দ্বারা এবং যারা তোমার অনুগামী তাদের প্রত্যেকের দ্বারা।
তারপর শয়তান ইবলিশ তাঁর সম্রাজ্জ বাড়াতে থাকলো,
শয়তান এক রোমাঞ্চকর ভীতি জনক ধর্মীয় চরিত্র। যার সরব উপস্থিতির কেন্দ্র বিন্দু আসমানী কিতাবের পাতায় ও কিতাব বিশ্বাসীদের আবদ্ধ মনে সীমাবদ্ধ। ধর্ম বোদ্ধাদের কাছে শয়তান সব রকম মন্দ কাজের প্রতীক। বেহেস্ত থেকে মনুষ্যকুলকে বিতারিত করার চক্রান্তকারী, ভাল মানুষকে করে বিপথগামী, নরক রাজ্যে মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যার উৎস, এক কথায় ঈশ্বর ও মানুষের মাঝে বিদ্যমান সম্পর্কের ফাটল ধরাতে দিন রাত্রি বিরামহীন গতিতে কাজ করে যাওয়া যেন শয়তান এক মাত্র পেশা।
শয়তান শব্দটি এসেছে হিব্রু শব্দ স্যা-টান(sa-tan) থেকে যার আভিধানিক অর্থ “শত্রু।
আদম ও ঈভকে “জ্ঞান বৃক্ষের” ফল খাওয়ানোর অপরাধে স্বর্গ থেকে বিতাড়নের পর তার নাম হয় “স্যাটান”(satan)। Old testament থেকে New testament যুগে এসে শয়তান সম্পর্কিত ধারনা ও শয়তানি ক্ষমতার ব্যাপক রদবদল হয়েছে। Old testament উৎপত্তি হয়েছে খ্রীষ্ট পূর্ব ১৫০০-৪০০ বছর আগে প্রায় ৩৯ টি বইয়ের সমন্বয়ে যা লিখিত হয়েছে মূলত হিব্রু ভাষায় এবং কিছু আরামায়িক(Aramaic) ভাষায়। প্যালেষ্টাইন অঞ্চলের আমজনতার ভাষা ছিল এই Aramaic। অপর দিকে গ্রীক ভাষায় New testament লিখিত হয়েছে ২৭ টি বইয়ের সমন্বয়ে।
ইহুদি দার্শনিক আলেকজেন্ড্রারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বহু খাটা খাটুনি করে আনুমানিক খ্রীষ্ট পূর্ব ২৫০ বছর আগে ৭০ মতান্তরে ৭২ জন অনূবাদক ১২ দলে ভাগ হয়ে OT হিব্রু থেকে গ্রীক ভাষায় অনুবাদ করেন। অনুবাদের কাজটি করতে গিয়ে OT কে তারা Historical, Poetic এবং Prophetic এই তিন ভাগে করে এতে অনেক কিছু সংযোজন বিযোজন করেন অত্যন্ত সর্তকতার সাথে। হিব্রু থেকে গ্রীক ভাষায় অনুবাদ করতে গিয়ে এখানে শয়তান অবর্তিন হয়েছে Devil রূপে। Devil শব্দটির উৎপত্তি গ্রীক শব্দ Diabolos থেকে। অর্থ “শত্রু” বা “প্রতিপক্ষ” হলেও অর্থ গত দিক থেকে Satan অপেক্ষা Devil অনেক ওজনদার অর্থাৎ বেশী মন্দ ধারনার অধিকারী।
Devil সরাসরি ঈশ্বরের অবাধ্য ঈশ্বরের প্রতি চ্যালেঞ্জ সৃষ্টিকারি ও মানুষের শত্রুরূপে বিবেচিত। এছাড়াও শয়তান কে ডাকা হয় অরো অনেক নামে যেমনঃ- Lucifer, Dragon, Serpent, Beelzebub, Abaddon ইত্যাদি। ইসলামে শয়তানের নাম রাখা হয়েছে “ইবলিশ”,ইসলামে “ইবলিশ” চিত্রিত হয়েছে ঈশ্বরের পরে সব চেয়ে বেশী শক্তিশালী ক্ষমতাধর ব্যক্তি চরিত্রে।
এই শয়তানের সাথে মানুষের পরিচয় কিভাবে হল সে ইতিহাস জানতে হলে ঐতিহাসিকদের মতে আমাদের পিছাতে হবে খ্রীষ্টের জন্মেরও অনুমানিক ২০০০ বছর আগে। যখন প্রাচীন ইরান আক্রান্ত হয়েছিল ইন্দো-ইউরোপিয়ান “কুরগান”(kurgan) জাতি দ্বারা।
এদের আবাস স্থল ছিল রাশিয়ার দক্ষিন কোনে। খাদ্য ও উন্নত জীবন জীবিকার খোজে বিপুল সংখ্যক কুরগান জাতি মধ্য প্রাচ্য ও ইউরোপে ক্রমাগত বসত গড়ে নিজেদের অবস্থান মজবুত করে নেয়। “কুরগানরা” ছিল বহুদেবতায় বিশ্বাসী। তাদের আচরিত ধর্মীয় গ্রন্থ ছিল “ভেদাস”।
পশ্চিম ইউরোপে জুড়ে যে কুরগানরা বসতি স্থাপন করেছিল কালক্রমে পরিবর্তনের হাওয়ায় তারা পরিচিতি পায় সেল্টিক (Celtic) জন গোষ্ঠি নামে।
স্থানীয়দের সাথে মিলে মিশে একাকার হওয়ায় নীরবে তাদের ধর্মে আসে ব্যাপক পরিবর্তন। নতুন ধর্মীয় মত হয় “ড্রুয়িডিজম” (Druidism)।
আর যে সব “কুরগান” মধ্য প্রাচ্যে বসতি গড়ে তুলেছিল প্রবাহমান সময়ের স্রোতে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে ঘটে যায় যুগান্তকারী নাটকিয় পরিবর্তন। যুক্ত হয় মানুষ মড়ার পরে মৃত ব্যক্তির আত্মার “পাপ মোচন” ও “নরক দন্ড” ভোগের নব দুই ধারা। এই বিশ্বাস মতে প্রত্যেক মৃত ব্যক্তির আত্মাকে অবশ্যই ঘোড়ায় চড়ে পার হতে হবে একটি খুবই সরু সাঁকোর উপর দিয়ে।
তাদের দেবতা “রাশু” (Rashu) দাঁড়িয়ে থেকে তদারকি করবেন প্রত্যেক আত্মার সাঁকো পার হওয়ার চলমান ও কম্পমান পতনের দৃশ্য। পুন্যআত্মারা সাঁকো অনায়াসে পার হয়ে স্বর্গে পৌঁছতে পারলেও পাপী আত্মারা সাঁকো থেকে পিছলে পড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন ভয়ানক দুর্গন্ধযুক্ত জলন্ত অগ্নি কুন্ডে(নরকে)।
ইতিহাসবিদদের দাবি, এরাই প্রথম কৃত কর্মের ফল অনুসারে প্রত্যেক মৃত ব্যক্তির আত্মা নামক এক পরম সত্বার স্বর্গ-নরক গমন ধারনার ধর্মীয় দিগন্তের সূচনা করে। তাদের বিশ্বাস দেবতা “রাশু” শুভ শক্তি। তাঁর পক্ষে মানু্ষকে কোন প্রকার অন্যায় বা পাপ কাজে সহযোগীতা করা সম্ভব নয়।
তাহলে কেন মানুষ অন্যায় বা পাপ কাজ করে? কে ভালো মানুষকে প্রলুব্ধ করে পাপ বা অন্যায়ের পথে টেনে নিয়ে যায়? এর জন্য দায়ী কে বা কোন অদৃশ্য শক্তি? এই আপাত দুরূহ প্রশ্ন গুলোর একটি গ্রহনযোগ্য সমাধান খুজতেই ধীরে ধীরে কল্পতিত হতে শুরু করে মন্দ বা পাপের প্রতীক কোন এক বিশেষ শক্তির। কিন্তু তখনো শয়তান চরিত্রটি আজকের মত এত শক্তিশালী পূর্নাঙ্গ চরিত্র নিয়ে জন্ম লাভ করেনি।
আনুমানিক ৬২৮ থেকে ৫৫১ খৃস্টপুর্বে পারস্যে বর্তমান ইরানে জন্ম লাভ করা পয়গম্বর জরোয়াস্টার (Zoroaster)শয়তানের ধারনাটিকে আরেকটু স্বচ্ছ অবয়ব দান করার চেষ্টা করেন। তাঁর প্রচারিত মতবাদটি পরিচিতি পায় মাজদাবাদ (Mazdaism)নামে। তিনি তাঁর প্রচারিত ধর্মে আধাত্মিকতা বাদে অনেক নতুন ধারা সংযোজিত করেন।
ধর্মীয় ইতিহাসে প্রথম এক ঈশ্বরবাদী ধার্মের প্রবক্তা হিসাবেও তাকে বিবেচিত করেন ইতিহাসবিদরা। তৎকালীন সমাজে পূজিত বরুণ, মিত্রা ও ইন্দ্রকে পূজা করতে অস্বীকার করে পরিবর্তে শুরু করেন তাঁর সৃষ্ট সর্ব ক্ষমতার অধিকারী, স্বর্গ মর্ত্যের সৃষ্টিকারী আহুরা মাজদা (Ahura Mazda) )নামে এক শুভ পুরুষ দেবতার পূজা। জরোয়াষ্টারের মতে আহুরা মাজদার আরেক জমজ ভাই হল আহরিমান (Ahriman)। যিনি হলেন মন্দের দেবতা। পৃথিবীতে যত খারাপি আছে সব কিছুর স্রষ্টা এই আহরিমান।
আহুরা মাজদা ও আহরিমানের মধ্যে আদর্শিক দ্বন্দ্ব প্রতিষ্ঠায় শুরু হয় বিরোধ। বিরোধ গড়ায় যুদ্ধে। জরোয়াষ্টার বিশ্বাস করতেন তাদের এই যুদ্ধ ক্রমাগত চলতেই থাকবে যতক্ষন পর্যন্ত না খারাপ দেবতা আহরিমান পরাজিত না হয়। মাজদাবাদে আছে শেষ বিচার নামে এক বিচার ব্যবস্থা যেখানে মৃত মানুষদের আত্মাকে কর্ম অনুযায়ি দুই ভাগে ভাগ করা হবে। যারা ভাল কাজ করবে তাদের প্রাপ্তি স্বর্গ আর যারা খারাপ কাজ করবে তারা ভোগ করবে অনন্তকাল নরক যন্ত্রনা ।
ইতিহাসবিদ দের ভাষ্য মতে মাজদাবাদের লেজ ধরেই এক ঈশ্বরবাদী ইহুদি, খ্রিষ্টান ও পরিশেষে ইসলামের জন্ম।
জি মেসান্ডির (G.Messande) মতে খৃষ্ট পুর্ব ৫ম শতাব্দি থেকে খৃষ্ট পুর্ব ৫৩ সনের মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে ইহুদিরা মাজদাবাদের অনেক কিছু আত্মসাৎ করে। তার মধ্যে আত্মা অবিনশ্বর, স্বর্গীয় দেবতা ও শয়তানের ধারনা অন্যতম।
প্রাচীন ইস্রাইলে প্রথম দিকে গড়ে ওঠা হিব্রু ধর্মীয় মতানুসারে ভালো ও মন্দ উভয় কাজ সব্যসাচী রূপে পরিচালনা করতেন তাদের ঈশ্বর জেহোবাহ (Jehovah)নিজেই। শয়তানকে তখনো ঈশ্বরের প্রতিপক্ষ রূপে উপস্থাপনের কোন চেষ্টা না করে বরং সর্ব ক্ষমতা ও একক সিদ্ধান্তের অধিকারী ঈশ্বর জেহোবার ইচ্ছানুসারে সব কিছু ঘটত বলে বিশ্বাস করা হত।
Isaiah 45:6-7
I am the LORD and there is none else. I from the light and create darkness. I make peace and create evil. I the Lord do all things. (KJV)
Lamentations 3:37-38
Who has commanded and it came to pass, unless the Lord has ordained it? It is not from the mouth of the Most High that good and evil come?
প্রমাণ হিসাবে আরো উল্লেখ করা যায় সমগ্র পৃথিবী ব্যাপী প্রলয়ংকরি বন্যায় নোয়ার নৌকা ভাসানোর হিব্রু গল্প। বন্যায় জান, মাল ও সম্পদের যত ধ্বংস ও ক্ষয় ক্ষতি হয়েছিল সবটাই ঘটেছিল ঈশ্বরের ইচ্ছাতে।
Old testament যুগের প্রারম্ভিক দিকেও ধর্মে শয়তানের কোন ভুমিকা নেই। এখানে ঈশ্বরই সর্বেসর্বা অর্থাৎ কর্তার ইচ্ছা কর্ম। সে যুগের মানুষের চেষ্টা ছিল ঈশ্বরকে ইনিয়ে বিনিয়ে সব সময় তুষ্ট রাখার অপ্রাণ চেষ্টা করা।
ঈশ্বর প্রসন্ন থাকলেই দেশ সমাজ ও ব্যক্তি জীবনে কেবল ভালো বা শুভ পরিস্থিতি বিরাজ করবে আর কোন কারনে ঈশ্বর অসন্তুষ্ট হলেই মানুষের উপর ঈশ্বরের অভিশাপ ধেয়ে আসে এটাই ছিল সে যুগের প্রচলিত বিশ্বাস। OT পঞ্চম খন্ডকে বলা হয় “ডিউটারনমি” (Deuteronomy)। এখানে ঈশ্বরের নিষ্ঠুরতার কিছু নমুনা বর্নিত আছে-
The LORD will send on you curses, confusion and rebuke in everything you put your hand to, until you are destroyed and come to sudden ruin because of the evil you have done in forsaking him. The LORD will plague you with diseases until he has destroyed you from the land you are entering to possess. The LORD will strike you with wasting disease, with fever and inflammation, with scorching heat and drought, with blight and mildew, which will plague you until you perish.(Deuteronomy 28:20-23)
মানুষকে শারীরিক মানসিক নির্যাতন চালাতেই যেন ঈশ্বরের যত আনন্দ। অথচ ঈশ্বর সব সময় কল্পিত হয়ে এসেছে শুভ প্রতীক রূপে মানুষের রক্ষাকর্তার ভূমিকায়। OT তে ঈশ্বরের বর্ননা দেখে মনে হয় শয়তান এখানে ঈশ্বরের চেয়ে ঢের ভালো।
অসহায় মানুষের উপর শয়তান কখনো এত বর্বরতার সুযোগ নেয় নি।
হিব্রু বাইবেলের সংকলিত কয়েকটি বইয়ের মধ্যে “জব” (Job) অন্যতম। জব কখন কোথায় লিখিত হয়েছিল সে সম্পর্কে রয়েছে প্রচুর মতানৈক্য। লেখকের নামও অজানা। তারপরেও হিব্রু বাইবেলে জবকে একটি শিক্ষনীয় ও পবিত্র বই হিসাবে গন্য করা হয়।
হিব্রু বাইবাল মতে পূর্ব প্যালেইষ্টাইনে জন্ম গ্রহন করা জব ছিলেন ধনশালী, ন্যায় নিষ্ঠ, সত্যবান, পরোপকারী, পরিশ্রমী, মোটের উপর একজন আদর্শ পুরুষ। যিনি সারা জীবন ঈশ্বরকে ভক্তি শ্রদ্ধা ও স্মরন করে গেছেন অবলীলায়। তাই জব পরিগনিত হয়ে গেলেন ঈশ্বরের প্রিয় পাত্র হিসাবে। কিন্তু জবের ঈশ্বর প্রীতি শয়তানের একদম সহ্য হল না। কুটিল শয়তান চক্রান্ত করে ঈশ্বরকে পরার্মশ দিল জব ঈশ্বরকে আদৌ সত্যিকার অর্থে কোন ভক্তি শ্রদ্ধা করে কিনা তা একবার বাজিয়ে দেখার।
শয়তানের কথা ঈশ্বরের মনে ধরল, শুরু করলেন নির্দয় কঠিন পরীক্ষা। ঈশ্বর শয়তান কে আদেশ করলেন প্রথমে তার ছেলেমেয়েদের হত্যা করার, তার সমস্ত ধন সম্পদ ধ্বংস করার, শেষে জব কে দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত করার। অসীম মানসিক নির্যাতনে নিস্পেষিত ও অনেক দুঃখ কষ্ট ভোগের পরেও জব ঈশ্বরের প্রতি কোনরূপ গালমন্দ বা দোষারোপ করলেন না। তার ঈশ্বর ভক্তিতে সামান্য ফাটল দেখা গেল না কোথাও। পরীক্ষায় পাস করলেন জব।
খুশি হলেন ঈশ্বর। এই হল জবের কাহীনি। যা দীর্ঘ পদ্য আকারে লেখা আছে হিব্রু বাইবেলে। এই গল্পের নৈতিক শিক্ষা হল শত প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও প্রতিটি মানুষের কর্তব্য ঈশ্বরের প্রতি আস্থা রাখা কারন ঈশ্বর সব সময় আপনার পরীক্ষা নিচ্ছেন।
“One day the divine beings presented themselves before the LORD, and the satan (Heb: ha-satan) came along with them. The LORD said to the Adversary, ‘Where have you been?’ Satan answered the LORD, ‘I have been roaming all over the earth.’ The LORD said to Satan, “Have you noticed my servant Job?” – Job 1:6-8
জবে শয়তানের অনুঃপ্রবেশ ঘটলেও আমাদের কাছে দিবা লোকের মত পরিষ্কার ঈশ্বরের অনুমতি ছাড়া অর্থব শয়তানের শয়তানি করার বিন্দু মাত্র ক্ষমতা ছিল না।
অনান্য দেবতার মত সেও ছিল অত্যন্ত উচ্চ পদ সম্পন্ন একজন ঈশ্বরের আজ্ঞাবহ বাধ্য দেবতা। যে ঈশ্বরের ঈশারা ছাড়া একক সিদ্ধান্তে কোন খারাপ কাজে পা বাড়ানোর অধিকার রাখত না।
একদা ইবলিস বলেছিল,
হে পরওয়ারদিগার, আমাকে আদমের কারণে জান্নাত থেকে বহিষ্কার করেছেন, আপনি যদি আমাকে ক্ষমতা দান না করেন তাহলে আমি তার শত্রুতা ও ক্ষতিসাধন করতে পারবোনা। আল্লাহ তায়ালা বললেন, ‘ আমি তোকে ক্ষমতা দান করলাম। ’ তবে আদম সন্তানদের মধ্যে আম্বিয়াগণ যেহেতু মাসুম ও নিষ্পাপ সেহেতু তাঁদের উপর ইবলিসের ক্ষমতা চলবেনা।
ইবলিস বললো, ‘ আমাকে আরো অধিক ক্ষমতা দান করুন। ’ আল্লাহ পাক বললেন, ‘ এক একজন আদম সন্তানের শত্রুতার জন্য তোর দুই দুইটি সন্তান জন্ম নিবে। ‘ সে বললো, ‘আরো অধিক করে দিন। ’ আল্লাহ পাক বললেন, ‘তাদের বক্ষদেশে তোর আবাসস্হল হবে এবং তাদের শিরায় শিরায় তোর চলার ক্ষমতা থাকবে। ’ সে বললো, ‘ আরো অধিক করে দিন।
’ আল্লাহ পাক বললেন, ‘ আদম সন্তানের বিরুদ্ধে তোর অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী নিয়ে মেতে উঠ। তোর সর্ববিধ সহযোগীদের নিয়ে তাদের ক্ষতি সাধনে মত্ত হয়ে যা, তাদের ধন-সম্পদ উপার্জনে, জীবিকা নির্বাহে হারাম ও ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত করার প্রয়াস চালিয়ে যা। তাদের সন্তান-সন্ততির ব্যাপারে হারাম উপায় তথা ঋতুকালিন সময়ে স্ত্রী গমনে উদ্বুদ্ধকরণ, সন্তান-সন্ততির শিরকি নাম রাখা ইত্যাদি ব্যাপারে প্রতারিত কর। অনুরূপ ভ্রান্ত ধর্ম ও মতবাদ পেশ করে গর্হিত ও কলুষিত বাক্য ও কার্যাবলীর দ্বারা তাদেরকে পথভ্রষ্ট কর। ’
অপর দিকে হযরত আদম (আঃ) আরজ করলেন,
‘ হে পরওয়ারদিগার! আপনি ইবলিসকে আমার আওলাদ ও সন্তান-সন্ততির ওপর ক্ষমতাবান করে দিয়েছেন; এখন আপনার তাওফিক ও সাহায্য ছাড়া তাদের ক্ষমা পাওয়ার কোনো উপায় নেই।
‘ আল্লাহ পাক বললেন, ‘ তোমার প্রতিটি সন্তানের সাথে একজন করে সংরক্ষক ও তত্বাবধায়ক ফিরিশতা নিয়োজিত থাকবে। ‘ আদম (আঃ) বললেন, ‘ ইয়া আল্লাহ! আমাদের আরো অধিক সাহায্য করুন। ‘ আল্লাহ পাক বললেন, ‘ যতক্ষণ পর্যন্ত আদম সন্তানের দেহে প্রাণ থাকবে, ততোক্ষন পর্যন্ত তাদের জন্য তওবার দরজা খোলা থাকবে। ‘ হযরত আদম (আঃ) বললেন, ‘ আরো সাহায্য করুন। ‘ আল্লাহ পাক বললেন, ‘ আমি আদম সন্তানকে ক্ষমা করতে থাকবো, তারা যত গুনাহই করুক না কেন, আমি কোন পরওয়া করবোনা।
‘ হযরত আদম (আঃ) বললেন এখন যথেষ্ট হয়েছে।
এরপর ইবলিশ জান্নাত থেকে বিতাড়িত হল আর ঈশ্বর অ্যাডাম কে হুকুম করলাম যে, তুমি আজ থেকে এই জান্নাতে বসবাস করতে থাক। এভাবে অনন্তকাল চলতে লাগলে একসময় অ্যাডামের মন খারাপ করতে লাগলো একা একা।
তখন এখন ঈশ্বর অ্যাডাম কে ডেকে ঘুম পারিয়ে দিলেন এবং অ্যাডামের পাজরের একটা ছোট হাড় হতে অ্যাডামের সঙ্গিনী সৃষ্টি করলেন তাঁর নাম রাখলেন ঈভ। তারপর অ্যাডাম এবং ঈভ কে ডেকে বললেন, জান্নাতে বসবাস করতে থাক এবং একটি গাছ দেখিয়ে সাবধান করে দিলেন, এ গাছের নিকটবর্তী হয়ো না।
এছাড়া ওখানে যা চাও, যেখান থেকে চাও, পরিতৃপ্তিসহ খেতে থাক, শুধু মাত্র ওই গন্ধম গাছ টার কাছে যাবে না তাতে থেকে কোন ফল ছিঁড়বে না, অন্যথায় তোমরা যালিমদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে পড়বে।
কিন্তু বিতাড়িত শয়তান তাঁদের কে নানা ভাবে প্রলভন দেখাতে লাগলো। বিভিন্ন রুপে অ্যাডামের কাছে এসে কুমন্ত্রণা দিতে থাকলো। অনন্তর শয়তান তাদের উভয়কে ওখান থেকে পদস্খলিত করেছিল। শয়তান তাকে কুমন্ত্রনা দিল, বললঃ হে আদম, আমি কি তোমাকে বলে দিব অনন্তকাল জীবিত থাকার বৃক্ষের কথা এবং অবিনশ্বর রাজত্বের কথা? সে বললঃ তোমাদের পালনকর্তা তোমাদেরকে এ বৃক্ষ থেকে নিষেধ করেননি; তবে তা এ কারণে যে, তোমরা না আবার ফেরেশতা হয়ে যাও-কিংবা হয়ে যাও চিরকাল বসবাসকারী।
সে তাদের কাছে কসম খেয়ে বললঃ আমি অবশ্যই তোমাদের হিতাকাঙ্খী। অতঃপর তারা উভয়েই এর ফল ভক্ষণ করল, তখন তাদের সামনে তাদের লজ্জাস্থান খুলে গেল যা তাঁদের উভয়ের কাছে গপন ছিল। তারা তাঁদের লজ্জাস্থান ঢাকতে জান্নাতের বৃক্ষ-পত্র দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত করতে শুরু করল।
তাদের প্রতিপালক তাদেরকে ডেকে বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে এ বৃক্ষ থেকে নিষেধ করিনি এবং বলিনি যে, শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
তারা উভয়ে বললঃ হে আমাদের পালনকর্তা আমরা নিজেদের প্রতি জুলম করেছি।
যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন, তবে আমরা অবশ্যই অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যাব।
আল্লাহ বললেনঃ তোমরা নেমে যাও। তোমরা এক অপরের শত্রু। তোমাদের জন্যে পৃথিবীতে বাসস্থান আছে এবং একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত ফল ভোগ আছে। বললেনঃ তোমরা সেখানেই জীবিত থাকবে, সেখানেই মৃত্যুবরন করবে এবং সেখান থেকেই পুনরুঙ্খিত হবে।
যে জান্নাতে তারা যে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ছিল তা থেকে ঈশ্বর তাদেরকে বের করে দিল।
অতঃপর অ্যাডাম স্বীয় পালনকর্তার কাছ থেকে কয়েকটি কথা শিখে নিলেন, [বলুনঃ হে আমার পালনকর্তা! আমি শয়তানের প্ররোচনা থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি, এবং হে আমার পালনকর্তা! আমার নিকট তাদের উপস্থিতি থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি]
অতঃপর ঈশ্বর তাঁর প্রতি (করুণাভরে) লক্ষ্য করলেন। নিশ্চয়ই তিনি মহা-ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালু। ঈশ্বর হুকুম করলেন, তোমরা সবাই নীচে নেমে যাও। অতঃপর যদি তোমাদের নিকট আমার পক্ষ থেকে কোন হেদায়েত পৌঁছে, তবে যে ব্যক্তি আমার সে হেদায়েত অনুসারে চলবে, তার উপর না কোন ভয় আসবে, না (কোন কারণে) তারা চিন্তাগ্রস্ত ও সন্তপ্ত হবে।
ঈশ্বর অ্যাডাম কে শিখিয়ে দিলেন কিছু বানী,
যদি শয়তানের পক্ষ থেকে আপনি কিছু কুমন্ত্রণা অনুভব করেন, তবে আল্লাহর শরণাপন্ন হোন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। [সূরা হা-মীম সেজদাহ্ঃ ৩৬]
বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করিতেছি মানুষের পালনকর্তার, মানুষের অধিপতির, মানষের মাবুদের, তার অনিষ্ট থেকে, যে কুমন্ত্রণা দেয় ও আত্নগোপন করে, যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে, জ্বিনের মধ্য থেকে অথবা মানুষের মধ্য থেকে। [সূরা আন-নাসঃ ১-৬]
অতএব, যখন আপনি কোরআন পাঠ করেন তখন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করুন। [সূরা আন-নাহলঃ ৯৮]
আর যদি শয়তানের প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে, তাহলে আল্লাহর শরণাপন্ন হও তিনিই শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।
[সূরা আল-আ'রাফঃ ২০০]
এরপর অ্যাডাম কে এবং ঈভ কে আলাগা করে দেওয়া হয়, কিছুদিন দুনিয়াতে কষ্ট অনুভব করানোর জন্য।
যখন যখন অ্যাডাম কে জান্নাত থেকে পৃথিবিতে নামিয়ে দেওয়া হয় না'মান নামক উপত্যকায়, যা পরবতিকালে 'আরাফাত'- এর ময়দান নামে পরিচিত হয়েছে। আর হাওয়া কে নামানো হয় মারওয়া প।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।