আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।
দলে কথিত সংস্কারপন্থীদের নিয়ে এখনো ভয় কাটেনি বিএনপির। সুবিধাবাদী নেতাদের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে আবারো ওয়ান-ইলেভেনের মতো দল বেকায়দায় পরতে পারে- এমন আশঙ্কা রয়েছে দলটিতে। তাই 'বিশ্বাসঘাতক' হিসেবে চিহ্নিত নেতারা আছেন কড়া নজরদারিতে। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, বিতর্কিত নেতারা কে কী করছেন, কাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন, নতুন করে ষড়যন্ত্র বা কারো সঙ্গে অাঁতাত করছেন কিনা গোপানে এসব মনিটরিং করছে দলের হাইকমান্ড।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার আস্থাভাজন কয়েকজন নেতা বেশ কিছুদিন ধরেই চেয়ারপারসনকে বলে আসছিলেন- ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য দলের কিছু সুবিধাবাদী নেতা সরকারের সঙ্গে অাঁতাত করার চেষ্টা করছেন। খালেদা জিয়া বিষয়টি প্রথমে তেমন আমলে না নিলেও সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ বিএনপি নেতাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার কথাটি ফাঁস করে দেয়ার পর তার টনক নড়ে। জিয়া পরিবারকে মাইনাস করার পুরনো ষড়যন্ত্রের কথা স্মরণ করে এখন আর বিষয়টি হালকাভাবে দেখছেন না তিনি। দলে ভাঙনের আশঙ্কায় প্রকাশ্যে কিছু বলতেও চান না সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা এই নেত্রী। তবে গোপনে তাদের ওপর নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
সূত্র মতে, ১/১১ প্রেক্ষাপটে সংস্কারপন্থী নামে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া নেতারা পরবর্তীতে দলে চালকের আসনে বসার বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে নেননি ত্যাগী নেতারা। আর সম্প্রতি নতুন ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ উঠেছে, ত্যাগী নেতারা সুকৌশলে তার দায় সংস্কারপন্থীদের ওপরই চাপাতে চাচ্ছেন। সংস্কারপন্থী কোন নেতা আওয়ামী লীগের সঙ্গে ব্যবসা করছেন, কোথায় প্রকাশ্যে ও গোপনে চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত, আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের অনুষ্ঠানে কোন বিএনপি নেতারা অংশ নিচ্ছেন ও আর্থিকভাবে সহায়তা দিচ্ছেন- অনেক ক্ষেত্রে ছবিসহ খালেদা জিয়ার সামনে সেসব প্রমাণ উপস্থাপন করা হচ্ছে। পাশাপাশি মনে করিয়ে দিচ্ছেন ১/১১ প্রেক্ষাপটে কারা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের তালা ভেঙেছিলেন, কে কাবিননামা বানিয়ে শীর্ষনেত্রীর চরিত্র হননের চেষ্টা করেছেন, বিএনপিকে ধ্বংস করতে কে তৎকালীন মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ারকে হত্যা করার হুমকি দিয়েছিলেন। এদিকে সৈয়দ আশরাফের পর মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনাও অনানুষ্ঠানিক সংলাপ হচ্ছে বলার পর বিএনপিতে সন্দেহ আরো বেড়েছে।
সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন সংস্কারপন্থী কয়েকজন শীর্ষনেতা। বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, ১/১১ প্রেক্ষাপটে সংস্কারপন্থী ভূমিকায় অবতীর্ন হয়ে যেসব নেতা খালেদা জিয়াসহ জিয়া পরিবারকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন, তারা সব সময়ই দলীয় প্রধানের সন্দেহের তালিকায় আছেন এবং থাকবেন। দল ক্ষমতায় নেই বলে তাদের বাহ্যিকভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে ক্ষমতায় এলে তাদের কৃতকর্মের ফল তারা পাবেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মান্নান ভূঁইয়ার মুত্যুর পর তার লাশ দেখতেও যাননি বিএনপি চেয়ারপারসন।
অন্যদিকে সংস্কারপন্থী এক নেতা জানান, ১/১১ প্রেক্ষাপট একটি ভিন্ন বিষয়। এখন সংস্কারপন্থী নেতারা খালেদা জিয়াকে মাইনাস করার কথা আর ভাবেন না। কূটনীতিকদের আমন্ত্রণে কোনো বৈঠকে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বসলেই ষড়যন্ত্র হয়ে যায় না। সৈয়দ আশরাফ ও ড্যান মজিনার অনানুষ্ঠানিক সংলাপের বিষয়ে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামসহ সিনিয়র নেতাদের বক্তব্য হচ্ছে- কাদের সঙ্গে সংলাপ হচ্ছে, তা তাদের জানা নেই। গোপনে ষড়যন্ত্র হতে পারে, সংলাপ নয়।
১/১১ এর মতো আবারো কোনো ষড়যন্ত্র হচ্ছে কিনা- জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন যায়যায়দিনকে জানান, রাজনীতিতে ষড়যন্ত্রের বিষয়কে উড়িয়ে দেয়া যাবে না। ষড়যন্ত্রকারীরা ষড়যন্ত্র করবে গোপনে। তাই কারা কি করছে বা আদৌ কেউ করছে কিনা- তা তিনি জানেন না। একই বিষয়ে অপর স্থায়ী কমিটির ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ বলেন, ১/১১ থেকে বিশ্বাসঘাতকদের শিক্ষা নেয়ার কথা। এরপরও যদি তাদের শিক্ষা না হয় এবং আবারো দল ও জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে কেউ যদি অবস্থান নেন, তাহলে এবার নেতাকর্মীরা তাদের ঝাড়ুপেটা করে দল থেকে বিতাড়িত করবে।
এদিকে দলের এক সমাবেশে আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, খালেদা জিয়া ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে কেউ আলোচনা করলে, তার সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, 'সরকারের সঙ্গে যে কোনো ধরনের আলোচনা থেকে বিরত থাকুন। আলোচনা করলে নেত্রী করবেন। যদি নেত্রীর অনুমতি ছাড়া কেউ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেন, তাহলে তাদের আর রক্ষা হবে না। ' প্রসঙ্গত, ওয়ান ইলেভেনের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ২০০৭ সালের ২৫ জুন বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে দলের একটি বড় অংশ খালেদা জিয়ার নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করেন।
সে বছরের ৩ সেপ্টেম্বর খাালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার আগে দলের চেইন অফ কমান্ড ভঙের অভিযোগে মান্নান ভঁূইয়াকে বহিষ্কার করে খোন্দকার দেলোয়ারকে মহাসচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া কারামুক্ত হন। এরপর সংস্কারপন্থী নেতারা ভোল পাল্টে খালেদাপন্থী হওয়ার চেষ্টা করেন এবং সফলও হন। ক্রমেই দলে শক্তিশালী হয়ে উঠেন তারা। আর মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ারের মৃত্যুর পর দলের সিংহভাগ কর্তৃত্বই চলে যায় তাদের হাতে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।