আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্ম ও রাজনীতি : ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ও নারী নেতৃত্ব প্রসঙ্গ

মুসাফির। হাঁটছি পৃথিবীর পথে পথে, অনিশ্চিত গন্তব্যে। কাগজের নৌকা দিয়ে সাগর পাড়ি দেবার দুরন্ত প্রয়াস।

অর্থনীতিতে সরাসরি অবদান রাখে না কিন্তু জীবন ও সমাজের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত- এমন অনুৎপাদনশীল কোনো বিষয় বা কর্ম যখন পেশাগত স্বীকৃতি পায়, তখন বুঝতে হবে সেগুলো আর তার আসল অবস্থায় নেই। মানবজাতির এমনই দুটি মৌলিক বিষয় ধর্ম ও রাজনীতি।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, পৃথিবীতে আগমনকারী প্রথম মানুষটির জীবন থেকেই ধর্মের অস্তিত্ব লক্ষণীয়। অপরদিকে রাজনীতি শুরু হয়েছে সমাজ বিকাশের পর। তবে প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতি ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছে সে ব্যাপারে ইতিহাস সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারে না। আর ‘পেশাগত’ রাজনীতি শুরু হয়েছে ‘আধুনিক’ জাতি-রাষ্ট্র ধারণার উৎপত্তির পর, যে রাজনীতির সঙ্গে সাধারণত আমরা পরিচিত। বর্তমানে ধর্মও যেহেতু পেশাগত কাজ হিসেবে ব্যাপকতা পেয়েছে, তাই মানবজাতির পূর্ব-আধুনিক এমনকি প্রাগৈতিহাসিক ইতিহাস অনুসন্ধান ও চর্চা ছাড়া এ দু’টি বিষয় অর্থাৎ ধর্ম ও রাজনীতি বুঝা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।

আধুনিক ‘জাতিরাষ্ট্র’ ধারণার উদ্ভব ও বিকাশের পর এর দ্বারা ধর্ম যেমন প্রভাবিত হতে শুরু করেছে, তেমনি মানবকল্যাণকামী রাজনীতিও নিজ লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হতে বিচ্যুত হয়েছে। তাই উত্তরাধুনিক কালের বিশেষ কোনো স্থান-কাল-পাত্রের ধর্ম ও রাজনীতি দিয়ে মানবজীবনকে বুঝা ও বিশ্লেষণ করা যাবে না। বরং ‘মানবজীবন’ দিয়ে ধর্ম ও রাজনীতিকে বুঝতে হবে। রাজতন্ত্র তো নয়ই, গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র দিয়েও মানুষের মৌলিক চাহিদা, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও গতি-প্রকৃতি ব্যাখ্যা করা যাবে না। কেননা পৃথিবীর সময় যতই গড়াচ্ছে, রাজনীতি ততই নোংরা থেকে নোংরাতর হচ্ছে।

আমাদের যুবসমাজও বিষয়টা উপলব্ধি করে না এমন নয়। তার প্রমাণ- জীবন সম্পর্কে তাদের ‘একবুক’ হতাশা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা; যদিও তারা প্রায় প্রত্যেকেই কোনো না কোনো রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর ধর্মও দিন দিন সমাজ ও রাজনীতির প্রভাববলয়ে চলে আসায় ধর্মের প্রকৃত সংজ্ঞা, আদর্শ, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রচুর ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হচ্ছে। উল্লেখ্য যে, মানুষের ‘মৌলিক চাহিদা’ পূরণের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ প্রকৃত রাজনীতি থেকে দূরে সরে গিয়ে পাশ্চাত্য বুদ্ধিজীবীরা আধুনিক ‘রাষ্ট্র’ ও ‘জাতির’ যে ধারণা পেশ করেছেন, এসব ধারণার মধ্যেই বৈশ্বিক অপরাপর জাতি ও রাষ্ট্রসমূহের পারস্পরিক স্থায়ী দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও যুদ্ধের বীজ লুকায়িত। রাষ্ট্র এবং ধর্ম অথবা ধর্ম ও রাষ্ট্রের পরস্পরবিরোধী অবস্থানের উৎসও সেখানেই।

বর্তমান বিশ্বের প্রধান তিনটি ধর্ম বিশেষত ইসলাম ধর্মের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখব, শুরুতে সেটি পেশাগত ছিল না। এমনকি রাষ্ট্র ও ক্ষমতার সঙ্গেও এর কোনো সম্পর্ক ছিল না। কারণ ইসলাম ধর্ম যেহেতু সর্বশেষ ও সর্বজনীন, তাই এটি সংকীর্ণ রাজনৈতিক পরিসরে আবদ্ধ থাকা বা রাজনীতিনির্ভর হওয়ার অবকাশ নেই। সঙ্গত কারণেই এটি পুরোপুরি মানবিক। আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বিশ্বজনীন মানবতার প্রচার-প্রসার ও প্রয়োগে প্রচলিত রাজনীতি একান্তই অক্ষম, অপারগ, সংকীর্ণ।

যেহেতু আধুনিক বিশ্ব কখনও কোনো একক জাতি বা রাষ্ট্রের অধীনে শাসিত হবে না, অন্তত ইমাম মাহদি (আঃ)-এর আগমনের পূর্বে, এমনকি কোনো একটা দেশ বা রাষ্ট্রও কোনো একক রাজনৈতিক দলের পক্ষে শাসন করা সম্ভব হবে না, সেহেতু ধর্মকে রাজনীতি থেকে আলাদা করার বা ‘ধর্মভিত্তিক রাজনীতি’ নিষিদ্ধের পায়তারা ধর্মের জন্য অবমাননাকর নয়। বরং সর্বদা সংঘাতমুখর কথিত ‘রাজনীতি’ থেকে ধর্মের দূরে থাকাই উত্তম। তবে তার আগে ‘রাজনীতিভিত্তিক ধর্মও’ নিষিদ্ধ করতে হবে। অর্থাৎ প্রচলিত রাজনৈতিক দলসমূহের ধর্মীয় অঙ্গসংগঠনগুলো বিলুপ্ত করতে হবে। তা না হলে ধর্ম তার প্রকৃত বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাবে না।

ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ও রাজনীতিভিত্তিক ধর্ম- উভয়ই স্রষ্টাপ্রদত্ত ধর্মের বিকৃতি ঘটায়। ধর্মের মধ্যে যে রাজনীতি নিহিত আছে তা আধুনিক জাতি-রাষ্ট্রের ধারণাপ্রসূত ‘দ্বান্দ্বিক’ রাজনীতি থেকে ভিন্ন। ম্যাকেয়াভেলি চরিত্রের প্রচলিত রাজনীতিকে ইসলাম সমর্থন করে না। অতএব এ রাজনীতিতে কেবল নারী নেতৃত্ব নয়, পুরুষ নেতৃত্বও হারাম। কিন্তু ইসলামি রাজনীতিতে পুরুষ নেতৃত্ব তো অবশ্যই, এমনকি ‘নারীনেতৃত্বের’ বিষয়টি সম্ভবত অন্যভাবে ভাবতে হবে।

হযরত আয়েশা (রাঃ) একটি বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একটি মুসলিম অংশের জনমতের নেতৃত্ব দিয়েছেন। জেহাদের ময়দানেও নেতৃত্ব দিয়েছেন। জ্ঞান ও মাসআলার জগতে তো নেতৃত্ব দিয়েছেনই। তাছাড়া একজন ঘরকোণো নারীকেও মহান আল্লাহ তা’আলা কোরআন পাঠের অনুমতি দিয়েছেন, কোরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করতে আদেশ করেছেন। এর মানে কি? যেহেতু কোরআন বিশ্বজনীন? আজকের রাজনীতি- দ্বান্দ্বিক দেশ-জাতি ও ব্যক্তিস্বার্থের সঙ্কীর্ণ গণ্ডিতে বন্দি।

অথচ মানুষমাত্রই বিশ্বজনীন, তিনি নারী হোন কি পুরুষই হোন। বিশেষ করে বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় প্রতিটি মানুষেরই দায়িত্ব-কর্তব্য বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত। তাহলে নারীদের এ দায়িত্ব পালনের পথ কি, ইসলাম কি বলে? তবে এ বিষয়ে অবশ্যই আমি কোনো সিদ্ধান্ত দেবার কেউ না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.