মুনার কেউ আর রইলো না। বাকের ভাইয়ের ফাঁসির রায় হলো। একসময়কার প্রেমিক মামুন তার ছাত্রিকে বিয়ে করেছে। ভাইবোনরাও একে একে সংসার ছাড়লো। মুনার মনে অনেক দুঃখ আর একাকিত্ব কেন বাকের ভাইকে অনেক আগেই ভালবাসার মালাখানি দিলনা?তাহলে আজ হয়তো বাকের ভাইয়ের এমন পরিস্থিতি হতো না।
অনেক কষ্ট বুকে নিয়ে সারাদিন বালিশে মুখ গুজে অঝোরে কান্না মুনার। বাকের ভাইয়ের প্রিয় মেরা লাল দুপাট্টা মলমল গানটা শুনছে। বাকের ভাইকে সে এত ভালবাসে বুঝতে পারেনি। আসলে মামুন বড় একটা চাকরী পেয়ে মুনাকে ছেড়ে চলে যাওয়ায় বাকের ছাড়া আর কেউ ছিলনা জীবন সঙ্গী করার মতন। সেও মামলায় জড়িয়ে ফাঁসিতে।
সারাজীবন একা থাকতে হবে। তার নাই মামা জীবনে বাকের ভাই ছিলেন কানা মামা।
রাস্তায় মনখারাপ করে হাটতে থাকে মুনা। হাটতে হাটতে একেবারে রমনা। সেখানে বেঞ্চ পাতা আছে হেটে ক্লান্ত মুনা বসে পড়ে।
পাশে ঝিল । ঝিলের পানিতে কেউ একজন ঢিল ছুড়ছে। আর পানিতে ঢেউ ওঠছে। মুনা খেয়াল করে দেখে আরে একজন যুবক। চেহারাটা চেনা চেনা।
মুখে বাকের ভাইয়ের মতই দাড়ী। চেনা চেনা মনে হয় তবু যেন চেনা নয়। যুবকটি মুনার কাছে এগিয়ে এল। এসে সুন্দরভাবে সালাম দিল। সালাম দিয়েই কথা বলা শুরু করল,
"আপনি মুনা।
আপনার মন খারাপ। আপনি অনেক একা। বাকের ভাইয়ের ফাঁসির রায় হয়েছে। আপনার কোথাও কেউ নেই। ভাববেন না ।
আমি আছি। "
মুনা: (বিস্মিত হয়ে বলল)আপনি কে? চেনা চেনা মনে হচ্ছে। কোথায় যেন দেখেছি?
অর্ক:আমাকে চিনবেন না। আমার চেহারাটা চেন চেনা ধরণের। আমি অর্ক ।
পুরো নাম আক্কেল আলী। নামটা বড্ড সেকেলে। তাই আমাকে আধুনিক লোকজন অর্ক বলে ডাকে। আমার দুইজন বিখ্যাত বন্ধু আছে। হিমু আর মিসির আলী।
হিমু আর মিসির আলী অলস হয়ে বসে আছে। হুমায়ূন আহমেদ মারা যাওয়ার পর তাদের পরিচালনা করার মত যোগ্য লোক নেই। ফলে তারা অলস বসে থাকতে থাকতে অকার্যকর হওয়ার উপক্রম। আমি একা আর কয়দিক সামলাবো বলুন? তিনজন মিলে মোটামুটি ছোট বড় অনেক ঝামেলার সমাধান করেছি। গায়ে লাগেনি।
এখন একা হয়ে যাওয়ায় নিজেকে ওভারলোডেড মনে হচ্ছে। আর পারি না। আমারও কোথাও কেউ নেই।
মুনা: হ্যা তাদের সম্পর্কে অনেক গল্প শুনেছি। আবার বইয়েও পড়েছি।
আমি দারুণ একাকিত্বে ভূগছি অর্ক। পৃথিবীতে আমার কেউ নেই। কোথাও কেউ নেই। বাকের ভাইয়ের ফাসি হয়ে যাবে। কোর্টে রায় হয়ে গেছে।
বদি প্রতারণা করেছে।
সে কোর্টে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে বাকের ভাইকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। নিজে মুক্ত হয়ে বিয়ে করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
অর্কঃ জানি সব জানি। কুত্তাওয়ালীর অবৈধ কাজে বাধা দিতে দিয়ে বাকের ভাই এই ঝামেলায় পড়েছে।
হিমু আর মিসির আলী সঙ্গে থাকলে সহজেই এর একটা বিহীত করা যেত। আমিও খুব একটা ভাল নেই।
মুনাঃ আপনার আই মিন তোমার আবার কি হলো। তোমাকে তুমি করেই বলি। যেহেতু বয়সে আমার ছোট হবে তুমি।
অর্কঃ আর আমার কথা বলে কি হবে। এমনিতেই আধামহাপুরুষ। এই শ্রেণীর লোকদের সাধাণরত সংসার হয় না। সংসার জীবন তাদের জন্য নিষিদ্ধ। তারপরও হিমু মিসির আলীদের ঘাড়ে ব্যাচেলর থাকার দায়িত্ব দিয়ে প্রেম করলাম নীরা নামের একটা মেয়ের সঙ্গে।
বিয়ের দিন ক্ষণ ঠিক হলো। গায়ে হলুদ হলো। নীরার সঙ্গে সান্নিধ্য ও হলো। কত দুষ্টুমী করলাম। বিধি বাম হলো।
নীরার বাবা মা আসলে তার নিজের নয়। অন্য হত দরিদ্র এক পরিবারের সন্তান সে। তার প্রকৃত মা দাওয়াত পায়নি বিয়ের অনুষ্ঠানে। নিজেই চলে এসেছে। নীরার মামী মূল ঝামেলা বাধিয়েছে।
আমারও কিছু দোষ ছিল। রাতের বেলা অনেকক্ষণ ধরে নীরাকে ফোনে ভালবাসার কথা শুনিয়েছি। রাতে দেরী করে ঘুমুতে যাবার সময় ওর বাবা মা আর মামীর কথোপকথনে থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসে। এত রাত না জাগলে নীরা ওগুলো জানতই না। ঝামেলাও বাধতো না।
তারপর নীরা আমাকে তার সব কাহিনী বলে । কিন্তু আমি, অনড় থাকি। এতদূর এগুনোর পর বিশেষ করে মেয়ের যেহেতু কোন দোষ নেই সবচেয়ে বড় কথা তার সঙ্গে আমার ভালবাসা হয়ে গেছে। ভালবাসাটাই সবচেয়ে বড় সত্য। তাই আমি বিয়েতে অনঢ় থাকি।
কিন্তু নীরা আর বিয়েটা করল না। আমাকে একাকিত্বের অনলে ফেলে তার পরবাসী মায়ের পিছনে ছুটলো। তাই আমার আর বিয়ে করা হলো না। আসলে আধামহাপুরুষদের এমনই হয়।
মুনাঃ সো স্যাড।
নিজের আধ্যাতিক ক্ষমতা দিয়ে নিজের সমস্যার সমাধান করতে পারলেনা । বাকের ভাইকে কিভাবে বাঁচাবে?
অর্ক এই প্রশ্ন পুরোপুরি এভয়েড করে । সাদামাটা মানুষের অপ্রয়োজনীয় কথা কানে নিতে নেই।
অর্ক: আচ্ছা আপু বিয়ের পর কি বাকের ভাইকে বাকের ভাই ডাকবেন?
মুনাঃ ওভাবে তো ভাবিনি। জটিল প্রশ্ন।
বাকের ভাই যাচ্ছে ফাঁসিতে আর তুমি চিন্তায় আছো বিয়ের পর কি নামে তাকে ডাকবো? তবে তাকে কখনও বাকের ভাই
ছাড়া অন্য নামে ডাকিনি।
অর্কঃ আপু হিমু সাহেবের কাছ থেকে কিছুটা আতলামী শিখেছি। ওটা অনেক কাজে দেয় মাঝে মাঝে। একটু আতলামী করলাম। বাকের ভাইয়ের ফাঁসি হবেনা।
কথা দিলাম। আমি আছি না। মিছির আলীর আর হিমুর সঙ্গে আমার আধ্যাত্বিক সম্পর্ক আছে । তাদের সঙ্গে পরার্মশ করে এগুতে হবে।
মুনাঃ নীরা সম্পর্কে কি ভাবছ?
অর্কঃ নীরাতো আম পবলিক।
সাধারণ মানুষ। ও স্রষ্টার নিয়মে কিছুটা ঝামেলা সৃষ্টি করবে বা করা প্রয়াস চালবে। হয় সবাইকে অবাক করে দিয়ে আমাকেই বিয়ে করবে। আমি সাধারণ মানুষে পরিণত হবো। আর না হয় গ্রামে কোন ছেলেকে বিয়ে করে একটা পর্যায়ে তার সেবদাসীতে পরিণত হবে।
যাই হোক ওর জন্য মায়া হয়। বিয়ে হয়নি তাতে কি প্রেম তো মরে না। ওটা থেকে যায় শেষ পর্যন্ত।
(মুনা অর্কর দুঃখ কাহিনী শুনে বিগলিত)
মুনাঃ যাই হোক তুমাকে পেয়ে ভালই হলো । অন্তত তুমি তো আছো।
এটলিস্ট চেষ্টা করে দেখা যায়। বাকের ভাইকে বাঁচানো যায় কিনা। একান্তই যদি না পারা যায়।
ফিসফিসিয়ে বলছেন" তাহলে তুমি আছোই। আমার আবার বয়সে ছোট মানুষের প্রতি একটু ফ্যসিনেশন আছে।
তাদের স্টামিনা বেশি। আর বুঝোই তো। "
অর্ক: অবাক হয়ে মুনার দিকে তাকায়। পাখির মতো ঠোট । ডাগর ডাগর চোখ।
সুন্দর ফ্যাশন করে চুল কাটা। চমৎকার হাইট। এবং পারফেক্ট ইন্টার নেশনাল ইয়েদের মতন সুন্দর। ফিগারও মাশাল্লাহ। নীরার চেয়ে সব দিক দিয়েই বেটার এমনকি বয়সও বেশি।
ভাল আবৃত্তিকার। শুধু গানটা গাইতে জানে না। তাতে কি নীরা এক গাদা রবীন্দ্র সংগীতের গানের সিডি ধরিয়ে দিয়েছে। ওগুলো নিয়ম করে প্রতিদিন শুনতে বলেছে। অভিনয়ে ঢঙে নীরাকে দশবার বিক্রি করার মতন মুনা।
সমস্যা হলো সংসার জীবন অর্কের মতন আধামহাপুরুষদের জন্য নয়।
মুনা আর অর্ক খুশী মনে মুনাদের বাড়ীতে চলে যায়। তারপর একসঙ্গে পরামর্শ কি করে বাকের ভাইকে বাঁচানো যায়। মুনার কাছে অর্ককে বাকের ভাইয়ের চেয়ে অনেক সুদর্শন ও কর্মঠ মনে হয়। তাছাড়া কত ইয়াং।
মনটা খুব সতেজ হয়ে ওঠে । সুন্দর ভবিষ্যেতের দৃশ্য তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। বাকের ভাই মারা গেলে অর্ককে নিয়ে তার একাকিত্ব ঘুচিয়ে সুখের জীবন রচনা করবে মুনা।
এর মধ্যে অর্ক হিমুর সঙ্গে একটা আধ্যাতিক যোগাযোগের প্রচেষ্টা চালায়। হিমুকে পেয়েও যায়।
হিমুর পরামর্শ কুত্তাওয়ালীর তিন কন্যার এক কণ্যাকে বশীকরণ বিদ্যা দিয়ে বশ করে তার কাছ থেকে আসল সত্য দালিলিক ইভিডেন্সসহ বের করা। আর পাহারাদার হানিফকে পটিয়ে রাজসাক্ষী বানানো। কিন্তু এতে যথেষ্ট আতলামী করা লাগবে। যেটি হিমু অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করতো। তাছাড়া হিমুর বান্ধবী রূপার বাবার ফোনের ভেলকীও তার পক্ষে থাকতো।
এখনতো সে সুযোগও নাই। আর নীরার ফোন ?যাও আগে তার পরিচয় ছিল প্রভাব শালী সমাজের গণ্যমান্য মানুষের মেয়ে এখন তো সেটিও নেই। অতি দরিদ্র এক গ্রামের বাড়ীর মানুষের মেয়ে। আর আবেগে সে সব ফেলে গ্রামে চলে গেছে। তার মায়ের কবরের পাশে একটা কবরও খুঁড়ে রেখেছে।
যখন মায়ের খুব কাছে যেতে ইচ্ছে হয় কবরে শুয়ে ওপরে মাটি দিয়ে নিথর হয়ে থাকে। জ্যোৎস্নারাতে এমনটি বেশি করতে দেখা যায়। এলাকায় সে পাগলী হিসেবেই স্বীকৃতি পেয়ে গেছে। সুতরাং কোন আশার আলো খুঁজে পাওয়া যায়না টানেলের শেষ প্রন্তেও। তারপরও অর্ক প্রচেষ্টা চালায়।
কুত্তাওয়ালীর সবচেয়ে বড় পালিত কন্যাকে পটাতে ব্যর্থ হয় অর্ক । কারণ তার মনে আছে নীরা। নীরার তুলনায় কুত্তাওয়ালীর মেয়ে অসুন্দর বলতেই হবে। আর মুনার সামনেতো কিছুই নয়। পটাতে ব্যর্থ হয়ে হিমু ফর্মূলা পুরোপুরি ফ্লপ হলো।
এতে অবশ্য মুনাও খুশি অর্কও খুশি।
বাকের ভাইকে বিয়ে করলেও মুনা তাকে বাকের ভাই বলে ডাকলে মানুষ বলবেটা কি? তার চেয়ে অর্ককে অর্কমনি বলে ডাকতেই মুনা বেশি কমর্ফোট ফিল করবে।
এভাবেই ব্যস্ততা আর সুখের অনুভূতি নিয়ে চমৎকার সঙ্গীমুখর দিন চলতে থাকে মুনার আর অর্কর। বদির বিয়ের অনুষ্ঠানে মুনার দাওয়াত । মুনা অর্ককে সঙ্গে নিয়ে দাওয়াত খেতে যায়।
অর্কের পরণে চিরাচরিত নীল শার্ট যেটি নীরা গায়ে দিয়ে দিয়েছিল। আর মুনার পরণে শাদা সুন্দর কাজকারা শাড়ি। মুনা আর অর্কের সুখের আলাপন দেখে বদীর গা জ্বলে যাচ্ছিল। বদীর মনে বার বার ইচ্ছা জাগছিল তখনই কোর্টে গিয়ে তার মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার কথাটি প্রকাশ করে বাকের ভাইকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসে। পরক্ষণেই ভাবে তাহলে তার নিজেরই কঠিন শাস্তি পাওয়ার চান্স।
তাই আর এগুয় না।
আজ পূর্ণিমা রাত। এই রাতে মিসির আলী সাহেবের সঙ্গে আধ্যাতিক যোগাযোগ সাধন করার সময় ঠিক করা অর্কের। মুনা কিছুটা আনমনা। মিসির আলী অভিজ্ঞ মানুষ ।
তিনি বোধ হয় আর ব্যর্থ হবেন না। তার মানে বাকের ভাই ছাড়া পেয়ে যাবেন। সারাজীবন বাকের ভাই এই আঙুলে চেইন ঘুড়ানো আর লাল দুপাট্টা মল শল গান ওফ। তবু নেই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল। এত সুন্দর জ্যোৎস্না রাত।
অর্কর হাত ধরে দূর বনে হাটতে ইচ্ছে করছে মুনার। ওখানে গিয়ে মুনা অর্ককে রবীঠাকুরের অঝোর কবিতা শুনাবে। পূর্ণিমা রাতে জ্যোৎস্না আলোর সঙ্গে কবিতা মিলে নতুন এক মুগ্ধতার দ্যুতনা সৃষ্টি করবে। অর্ককে বলার সঙ্গে সঙ্গে সে রাজী হয়ে যায়। অর্কর অনেক দিনের শখ ছিল নীরার সঙ্গে কোন এক জ্যোৎস্নারাতে দূরবনে যাবে সেখানে নীরার কণ্ঠে জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে গানটি শুনবে।
সেটি তো আর কপালে নাই। তবে কপালটা বেশ ভালই মনে হচ্ছে সুন্দরী মুনা তাকে কবিতা আবৃত্তি করে শুনাবে। হাতে হাত ধরে আকাশের তারা দেখাবে। হয়তো সারারাত তারা বনেই কাটাবে।
আজ রাতেই মিসির আলীর সঙ্গে প্লানচুয়েট করে কথা বলতে না পারলে আর কাজ হবে না।
কারণ পরবর্তী জ্যোৎস্না রাতের আগেই বাকের ভাইয়ের ফাঁসি হয়ে যাওয়ার চান্স। সময় ফুরিয়ে যায় দ্রুত। মাঝরাতে হঠাৎ বৃষ্টি। মুনা আর অর্ক বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বাসায় ফিরে আসে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও মিসির আলীর সঙ্গে অর্কের যোগাযোগ হয়ে যায়।
মুনা বুঝতে পারে। তার মনটা কিছুটা মেঘলা হয়ে ওঠে। বৃষ্টি এসেই এই বিপত্তি ঘটিয়েছে। মিসির আলী দারুণ একটি সমাধান দিয়ে দিয়েছেন। বাকের ভাই ছাড়া পওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।
কুত্তাওয়ালী ও তার তিন কন্যার সঙ্গে বৃদ্ধ উকিলের অনৈতিক কাজের ভিডিও সিডি করে রাখা আছে। সেই ভিডিওতে খুন হয়ে যাওয়ার ঘটনাটিও রেকর্ড হয়ে গেছে সবার অজ্ঞাতে সেটি কুত্তাওয়ালীর ড্রেসিং টেবিলের ডান সাইডের ড্রয়ারে রাখা আছে। কুত্তাওয়ালী বিষয়টা বেমালুম ভুলে গেছে। কাজেই অর্ক কুত্তাওয়ালীর বাসায় গিয়ে ভিডিও সিডিটি নিয়ে আসতে পারলেই কেল্লাফতে।
অর্ক মুনার কাছ থেকে বিদায় নেয়।
মুনা দুঃখমনে অর্ককে বিদায় দেয়। মুনার মনে অর্ককে হারানোর ভয় প্রবল হয়ে ওঠে। কত কিউটি একটা ছেলে অর্ক। অর্কও মনের অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এগুতে থাকে কুত্তাওয়ালীর বাড়ীর কাছে। এমন সময় বউ সমেত বদি বেড়াতে যাচ্ছে বোটানিকাল গার্ডেন।
অর্কর শশ্রু মন্ডিত চেহারা দেখে বাকের ভাইয়ের কথা মনে পরে যায় বদীর। বদী নাছোড় বান্দা আর্ককে তাদের সঙ্গে অবশ্যই বোটানিকাল গার্ডেন যেতে হবে। তাছাড়া বদি আর বদির বউয়ের কিছু অন্তরঙ্গ ছবি ওঠানোর জন্য অর্ককে যেতেই হবে। এভাবেই দিন কেটে যায়। বদি আর তার লালটুকটুকে শাড়ী পরা বউ দেখে নিজেকে আর মুনাকে ওভাবেই কল্পনা করতে থাকে ।
মিসির আলীর পরামর্শ ফেলে দিয়ে সে দ্রুত মুনার বাড়ীতে চলে যায়। আজই সে মুনাকে বিয়ের প্রস্তাব দিবে। এবং দ্রুত বিয়ে করে ফেলবে।
এদিক দিয়ে হয়েছে কি। নীরার কাছে মুনা আর অর্কের ভালবাসাবাসির খবর পৌছে গেছে।
নীরা আর যাই হোক অর্ককে বিয়ে করতে দিবে না। অর্ক শুধুমাত্র তার। অন্য কোন নারী তার দিকে চোখ দিলে তাকে মেরে ফেলতেও দ্বিধান্বিত হবে না। অর্ক তার মাকে অনেক ভালবোসে এতেই সে অর্কর মাকে হিংসা করে। এমনকি অনেক উল্টা পাল্টা আচরণও করে।
এখন নীরা সুস্থ হয়ে গেছে।
এবার ফোনে ফোনে একশন হবে। নীরা অর্ককে ফোন করে অর্ক ভাইয়া তুমি এই মুহুর্তে আমার কাছে চলে আসবে। আমাকে আহলাদ করার মতো এখানে কেউ নেই। কারো সঙ্গে ঢংও করতে পারিনা।
অর্ক ভাইয়ামনি তুমি ছাড়া আমার নারী জীবন অপূর্ণ। এখনই আমার কাছে চলে এসো।
অর্কর মুনার প্রতি ভালবাসা সৃষ্টি হয়েছে। মুনারও ঠিক তাই। কিন্তু অর্ক নীরাকে ভয়ও পায় ভালও বাসে ।
অর্ক মুনার বিয়ে হলে নীরা হয়তো এমন কিছু করে বসবে যাতে তিনজনই সমূহ বিপদে পড়বে। কারণ নীরা রেগে গেলে সে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। নির্বোধের মত কাজ করে । যেমন সে বিয়ের আসর থেকে বিয়ে না করে উত্তরবঙ্গের কোন এক মফিজ এলাকায় চলে গেছে। অর্ককে ফেলে।
কোন বিবেচক প্রাণীর ক্ষেত্রেই সেটি করা সম্ভব নয়।
আবারো রিং বেজে ওঠে । মোবাইল স্ক্রীনে নীরার নাম ভেসে ওঠে। মুনার প্রতি অর্কর ভালবাসা কর্পূরের মত উবে যায়। সেখানে ভয় ভর করে।
সে নম্বর কেটে দিয়ে সরসরি মহামান্য প্রেসিডেন্ট সাহেবকে ফোন করে । হ্যালো আমি অর্ক বলছি। প্রেসিডেন্ট সাহেবের চেহারা নীল হয়ে যায় আতঙ্কে। বলেন "কি হয়েছে অর্ক। " অর্ক বলে ওঠে "আপনি জানেন না?" বাকের ভাই আপনার দলে ক্যাডার।
তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা। তার মুক্তির দাবীতে রাস্তায় মিছিল হয়েছে। কত খুনীকে তো আপনি ক্ষমতাবলে সাধারণ ক্ষমা দিয়েছেন। বাকের ভাইকে দিচ্ছেন না কেন?সামনে নির্বাচন। বাকের ভাইয়ের ফাঁসি হলে নির্বাচনে আপনার দালের ভরাডুবী কনফার্ম।
"
প্রেসিডেন্ট : অর্ক ভুল হয়ে গেছে। এখনই বাকের ভাইয়ের মুক্তির ব্যবস্থা করছি। দলের সংগাঠনিক অবস্থা দূর্বল হয়ে পরবে এত জনপ্রিয় আর ভাল একজন সংগঠককে মুক্তি না দিলে।
বাকের ভাই মুক্ত হয়ে সোজা মুনার কাছে চলে আসে। দেখে মুনা ঠোট উল্টিয়ে রেখেছে।
তার ধারণা তার কারনেই এমনটি করেছে মুনা। আসলে তো অর্কের জন্য তার প্রাণ আনচান করছে। এর মধ্যে বাকের ভাইয়ের খায়েস তিনি আর মুনাও অর্কের সঙ্গে নীরার কাছে যাবে। অর্ক বাকের ভাইকে পাশে পেয়ে কিছুটা সাহস পায় ভরসা পায়। তারপরও ভীতু মনে মফিজ এলাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়।
জানটুসটা আজ কতদূরে কেমন আছে? কি করছে এসব ভাবনা তার মনে। কে বলে কোথায় কেউ নেই। দেখা যাচ্ছে সবাই সব খানে আছে। বাকের ভাই আছে, আছে মুনা, আছে অর্ক ,আছে নীরা আরে সবাইতো আছে নেই শুধু সে ঠা ঠা ঠা অট্টহাসি দেয়া সেই মানুষটা আর হিমু ,মিসির আলীর অমর শ্রষ্টা।
----------------------
শ্রদ্ধাঞ্জলী ..সুপ্রিয় হুমায়ূন আহমেদ।
আপনার আত্নার মাগফিরাত কামনা করছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।