আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাকের ভাইদের এর জন্য এলিজি (যত সব হারিয়ে যাওয়া – ১)

নিভৃতচারী মধ্যরাতের কবি ......

ছোটবেলায় সম্ভবত আমাদের সবার পাড়াতেই একজন বাকের ভাই থাকতেন । ঘরের খেয়ে বনের মহিষ তাড়ানো কথাটা তাদের সাথে খুব যায় । রাস্তার পাশে কোনও দোকানে কয়েকজন সাগরেদ নিয়ে সারাদিন তাদের চা খেতে দেখা যেতো । মাঝে মাঝে গলা ছেড়ে সুরে বেসুরে গেয়ে উঠতেন কোনও হিন্দি কিংবা বাজার চলতি বাংলা গান । তাদের আবশ্যিক নিয়ম ছিল, পাড়ার সবচেয়ে সুন্দরী আপুর প্রেমে পড়ে যাওয়া ।

কখনও সে আপুকে তাদের ভালো লাগার কথা বলতে পারতেন না, কিন্তু একটা নিয়ম ছিল আর কেউ সেই আপুর দিকে তাকাতে পারবে না । কেউ তো আপুকে ডিস্টার্ব করতোই না বরং আপুটি হতো পাড়ার অঘোষিত ফার্স্ট লেডী । তারপর একদিন হয়তো অন্য কোনও ছেলের সাথে আপুর বিয়ে হতো , আর আমাদের বাকের ভাইরা কিছুদিনের জন্য দেবদাস হয়ে যেতেন । শুধু তাই না,পাড়ার মান সম্মান রক্ষা ও নিরাপত্তার দায়িত্বও নিজ দায়িত্তে ঘাড়ে তুলে নিতেন আমাদের সময়ের বাকের ভাইরা । কোনও কোনও দিন পাড়ার থমথমে অবস্থা দেখলে বুঝতে পারতাম,আজ শান্তিবাগ অথবা টিকা পাড়ার সাথে মারপিট আছে , জায়গা মতো প্রস্তুত থাকতো চাইনিজ,নেপালি ! তবে অন্য পাড়াদের বাকের ভাইদের সাথে যেমনই আচরণ হউক, নিজ পাড়ায় তারা কখনও বেয়াদবি করেছে এমন ইতিহাস নেই ।

বরং বড়দের সম্মান দেওয়া, যে কারও বিপদে তারা এগিয়ে আসতো সবার আগে। এরপরেও তাদের ব্যাপারে ভয় তো আর খানিকটা থাকতোই । তাই তারা চাঁদা চাইলেই সবাই পকেট থেকে টাকা বের করে দিতো । যদিও টাকাটা খরচ হতো খেলাধূলা আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনে । হয়তো এসব কারনেই , তাদের ভিতরে থাকতো অন্যরকম একটা হিরইজম কিংবা ম্যানারিজম ।

যে হিরইজম এর প্রতি গোপন দুর্বলতা ছিলো আমাদের মতো দুর্বল ছেলেদের । অবশ্য সেইসব দিন গত হয়েছে বহু আগেই । এখনকার ছেলেদেরমাঝে আর কাউকে বাকের ভাই হওয়ার প্রবণতা দেখি না । আত্মকেন্দ্রিক এই প্রজন্মের পড়াশুনা আর ফেসবুকের পর অলস সময় কোথায় । আর যাদের অলস সময় আছে, তারা হয়ে যাচ্ছে নেশাগ্রস্ত ।

তাই আজ আর কেউ বড় আপুদের প্রেমে পড়ে দেবদাস হয়না বলে আপুরা শিকার হন ইভ টিজিং এর । এক পাড়ার সাথে আরেক পাড়ার মারামারি হয়না বহুদিন । বিপদে পড়লে বাকের ভাইরা নয় , মোবাইল নামক যন্ত্রটিই ভরসা । কমপিউটার গেমস খেলা ছেলেমেয়েরা বিস্কুট দৌড় কিংবা দড়ি টানাটানি খেলাতে গ্রাফিক্স কিংবা গতির মজা পায়না । যেমন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পাওয়া যায়না জি বাংলা কিংবা স্টার প্লাসের মজা ।

তাই সেসবও বন্ধ । আর কেমন আছে সেই পুরানো বাকের ভাইয়েরা ?? একজন শুনেছি চাকরি নিয়ে আরেক জেলায় , ঢাকায় গার্মেন্টস কর্মী আরেকজন । এক ভাই ছোটখাটো ঠিকাদার, একজন ব্যবসা দাড় করানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে । আর আমি যাকে দেখে এই লিখাটি শুরু করলাম সে একেক সময় একেক কাজে জীবন চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত । এইবার রাজশাহী এসে দেখি ইফতারির দোকান দিয়েছে কমিশনার অফিসের সামনে ।

কাল এক ছেলের সাথে দোকানে কি নিয়ে যেনও গণ্ডগোল, আমাদের বাকের ভাই তাকে ধমকাচ্ছেন, তুই চিনিস আমি কে তুই চিনিস আমি কে ?? এই পাড়ার নতুন অধিবাসী সেই ছেলের তার হুমকি ধামকিতে তেমন ভয় পেতে দেখা গেলো না । এক ইফতারি বিক্রেতাকে কেইবা পাত্তা দেয় । তাই খানিক চিল্লাফাল্লার পর আমাদের বাকের ভাই চুপসে গেলেন। তবে বিস্ময়কর ব্যাপার, সেটা দেখে আমার খুবই খারাপ লাগলো । এক সময়ে যাকে খানিকটা হলেও ভয় পেতাম তার এমন পতনে যতটা খুশি লাগার কথা ততটা লাগলো না ।

কারণটা কি শুধুই আমার অতীত প্রিয়তা নাকি এক রাজ্য হারানো সম্রাটের আত্মগর্ব রক্ষার শেষ চেষ্টাটি ব্যর্থ হতে দেখার করুনাবোধ ?? জানি না। ভাবছি, আমাদের পরের প্রজন্ম , যারা একদিন কোথাও কেউ নেই বইটি পড়বে , দেখবে কোথাও কেউ নেই নাটকটিও , জানবে, বাকের ভাই এর মুক্তির জন্য রাস্তায় নেমেছিল হাজার মানুষ , তাদের বিস্মিত চোখ কোনোদিনও কি বুঝবে,এইসব বাউন্ডুলে মানুষগুলোর জন্য কেনও আমরা এতো মমতা পুষে রাখতাম বুকের ভিতরে??

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.