অযথা ঝগড়া বিবাদ ভাল লাগে না। শিক্ষা বলতে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নয়। সু শিক্ষা চাই সর্বত্র।
হিমেল হাওয়ায় শীত শীত অনুভব হলেও ঋতুর হিসেবে এখন হেমন্ত কাল। গাঢ় নীল আকাশের দিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো শুভ্র কাঁশফুলের ছড়াছড়ি।
যা দেখে মন চায় একটু দূরে, নিরিবিলিতে কিছুটা সময় কাটানোর। কিন্তু দেশের বর্তমান অবস্থার কথা ভেবে দূর ভ্রমনে মন টানে না অনেকের। তাই ঢাকার খুব কাছে সোনার গাঁ বেড়িয়ে আসতে পারেন অল্প সময়ে। এখানে ঈসা খাঁ’র রাজধানী, পানাম নগরী, বারদী’র শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রাহ্মচারীর আশ্রম ও পশ্চিম বঙ্গের দীর্ঘ দিনের মুখ্য মন্ত্রী সোনারগাঁয়ের সন্তান জ্যোতি বসুর আদি বাড়ি দেখতে পারেন।
সাধারনত রাজনৈতিক দলগুলো সরকারি ছুটির দিন কোন হরতাল দেয় না।
এমন একটি দিন বেছে নিয়ে রওয়ানা দিতে পারেন স্বপরিবারে অথবা বন্ধু-বান্ধবীযোগে।
ঢাকা থেকে বাসে করে সরাসরি বারদী যাওয়া যায়। বাস থেকে নেমেই সোজা ঢুকে যান উপমহাদেশের প্রখ্যাত আধ্মাতিক সাধক শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রমে।
ছায়া নিবিড় শান্ত পরিবেশে এখানে সমাহিত আছেন তিনি। ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ভক্তরা ছুটে আসে এখানে।
দূর দূরান্ত থেকে আসা ভক্ত ও পর্যটকদের জন্য আশ্রমের ভিতর থাকার ব্যবস্থা আছে।
এখান থেকে মাত্র ১ কিলো মিটার দূরে অবস্থিত পশ্চিম বঙ্গের মুখ্য মন্ত্রী প্রয়াত জ্যোতি বসুর পৈত্রিক বাড়ি। তবে বাড়িটি মূলত তার নানার বাড়ি। নানা শরৎ চন্দ্র দাস ও নানী খিরদা সুন্দরী একমাত্র সন্তান হেমলতা বসু ও ডা. নিশিকান্ত বসুর ঘরে জন্ম নেন জ্যোতি বসু। জন্মের আগেই স্বপরিবারে ভারত চলে যায় বসু পরিবার।
তবে পূজা পার্বনে তারা আসতেন এ বাড়িতে। বাড়ির আঙ্গিনায় ছুটাছুটি করতেন বালক জ্যোতি বসু। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ সফরকালে নিজের বাল্যকালের স্মৃতি ঘেরা এ বাড়িতে এসেছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত বাম নেতা জ্যোতি বসু।
বারদী ঘুরা শেষ করে সিএনজি নিয়ে চলে যান সুলতান গিয়াসউদ্দিন আযম শাহ, ঈসা খাঁসহ বার ভূঁইয়াদের স্মৃতি ঘেরা সোনারগাঁয়ে। মাত্র ১৫ টাকায় টিকেট কেটে গেইট দিয়ে ঢুকতেই আপনাকে ঘিরে ধরবে সবুজ গাছ গাছালি আর ইতিহাসের নানা কাহিনী।
প্রথমেই চোখে পড়বে ঐতিহাসিক একটি ভবন। যার এক পাশে পুকুর, বাঁধানো ঘাট, ঘাটের দুই পাশে দু’টি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ভাস্কর্য। এসব দেখতে দেখতে এগিয়ে গিয়ে ডান পাশে তাকালেই দেখবেন শিল্পচার্য জয়নুলের অমর কীর্তি গরুর গাড়ি’র ভাস্কর্যটি।
এখানে স¤প্রতি যোগ হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের একটি বিশালাকার ভাস্কর্য। সোজা নাক বরাবর হাটলেই চোখে পড়বে বাংলাদেশ লোক ও কারু শিল্প ফাউন্ডেশন।
ভিতরে ঢুকে দেখতে পারেন আঠারো শ’ ও ঊনবিংশ শতাব্দির অনেক জিনিসপত্র।
এখান থেকে বেড়িয়ে আপনি মিশে যান সবুজের সাথে। বিশাল সোনার গাঁ ঘুরতে গিয়ে আপনি ক্লান্ত হলে সমস্যা নেই। বসে যান কোন লেকের ধারে। দেখেন মৎস শিকারীদের ধৈর্যের নমূনা।
সোনার গাঁ পূর্ব অনুমোদন ও নির্দিষ্ট টাকায় টিকেট কেটে বড়শি দিয়ে মাছ শিকর করতে পারে যে কেউ। পুকুরে ঘুরতে রয়েছে নৌকা। তো হয়ে যাক পানির সাথে একটু আধতু ছোঁয়াছুঁয়ি।
এখানে আপনি তাঁতের পণ্য কিনতে পারবেন। অনেকগুলো তাঁত পণ্যের দোকান রয়েছে।
রয়েছে বাঁশ, কাঠের তৈরী নানা পণ্য। তবে সবচেয়ে বেশী মুগ্ধ করবে জামদানী শাড়ি। আপনি নিজেই দেখতে পারবেন কিভাবে জামদানী শাড়ি বুনা হয়। জামদানী কারিগর জানালো একটি শাড়ি বুনতে তাদের ১০/১২ দিন সময় লেগে যায়। ইচ্ছে করলে অর্ডার দিতে পারেন আবার দোকানে রাখা শাড়িও নগদে কিনতে পারেন।
এখান থেকে বেরিয়ে চলে যান পানাম নগরী দেখতে। বাংলাদেশ লোক ও কারু শিল্প ফাউন্ডেশনের গেইট থেকে খুব কাছে পানাম যেতে পারেন হেটেই। পানাম সোনারগাঁয়ের একটি প্রাচীন নগরী। এখানে হিন্দু ব্যবসায়ী ও জমিদাররা বাস করতেন। বাংলা ১৩০৫ সনের নাম ফলক লাগানো আছে একটি বাড়িতে।
বাড়িগুলোর কারুকার্জ দেখলে বুঝা যায় এক সময় খুব জৌলুস ও প্রাচুর্যে ভরা ছিল পানাম নগরী। একটি বাড়ির ভিতরে নাচঘরও রয়েছে।
১৯৬৫ এর হিন্দু মুসলিম দাঙ্গার সময়ে এ বাড়িঘরগুলোতে লুটপাট ও হামলা হয়। এক সময়ের কোলাহল পূর্ণ পানামনগরীতে এখন বিরাজ করে সুনসান নীরবতা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।