আমি মুদ্রাস্ফীতি বা মূল্যস্ফীতি সম্পর্কে আমার সবাই কম বেশি জানি। একটি অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব বিভিন্ন এবং একযোগে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক হতে পারে। এর সবচেয়ে নেতিবাচক প্রভাব হচ্ছে অর্থ ধারনের সুযোগব্যয় বৃদ্ধি যা একটি দেশের অর্থনীতির জন্য অনেক বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে কারণ এতে সঞ্চয়ের প্রবণতা কমে, যার প্রভাব পরে সামগ্রিক অর্থনীতির উপর।
২০০৫-০৬ অর্থবছরের তথ্যকে ভিত্তি ধরে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায় গত ডিসেম্বর মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ। নভেম্বরে এই হার ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ ছিল।
সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরের তথ্যকে ভিত্তি ধরে করা পুরনো হিসাবেও। নভেম্বরের ৭ দশমিক ৪১ শতাংশ থেকে বেড়ে ডিসেম্বরে হয়েছে ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ এই তথ্য প্রকাশ করেন পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক গোলাম মোস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, প্রধানত আটা, ডাল, মাছ, মাংস, মসলা, তেল ও দুধসহ অন্যান্য খাদ্য সমাগ্রীর মূল্য বাড়ায় খাদ্য মূল্যস্ফতি ঘটেছে। এ কারণে সার্বিক মূল্যস্ফীতিও কিছুটা বেড়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নতুন পদ্ধতিতে (২০০৫-০৬ অর্থবছরের তথ্যকে ভিত্তি ধরে) নভেম্বরে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ। ডিসেম্বরে তা বেড়ে ৫ দশমিক ২৮ শতাংশ হয়েছে।
আর পুরনো পদ্ধতিতে (১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরের তথ্যকে ভিত্তি ধরে) খাদ্য মূল্যস্ফীতি নভেম্বরের ৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
দুই হিসাবেই খাদ্য বহির্ভূত খাতের মূল্যস্ফীতি সামান্য কমে এসেছে। পুরনো হিসাবে নভেম্বরের ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ থেকে কমে ডিসেম্বরে হয়েছে ৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
আর নতুন পদ্ধতিতে হিসাব করলে এই হার ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ থেকে কমে ১০ দশমিক ০৩ শতাংশ হয়েছে।
এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, পরিধেয় বস্ত্র, অসবাবপত্র ও গৃহস্থালী, পরিবহন, শিক্ষা উপকরণসহ বিবিধ দ্রব্য ও সেবার মূল্যবৃদ্ধির কারণে খাদ্য বহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি ততোটা কমেনি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০০৫-০৬ ভিত্তি বছরের হিসাবে ২০১২ সালে গড় মূল্যস্ফীতি (১২ মাসের হিসাব) হয়েছে ৬ দশমিক ২২ শতাংশ। আর ২০১১ সালে এ হার ছিল ১১ দশমিক ৩ শতাংশ।
অর্বছরের (২০১১-১২) হিসাবে ২০১১ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পরযন্ত (৬ মাসের গড়) মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ১০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
আর চলতি অর্বছরের হিসাবে ২০১২ সালের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
অন্যদিকে ১৯৯৫-৯৬ ভিত্তি বছরের হিসাবে ২০১১ পঞ্জিকা বছরে গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ। ২০১২ সালে এর হার ছিল ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
অর্থবছরের হিসাবে গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পরযন্ত গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৬১ শতাংশ। ২০১১ সালের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে এ হার ছিল ১১ দশমিক ৩১ শতাংশ।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, নতুন হিসাবে ডিসেম্বরে গ্রামে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ, যা নভেম্বরে দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল।
ডিসেম্বরে গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে দশমিক ৩১ শতাংশ। আর খাদ্য বহির্ভূত খাতে ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
আর শহর এলাকায় ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ০৪ শতাংশ। খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতির হার যথাক্রমে ৭ দশমিক ৬৫ এবং ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ হয়েছে।
গত বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল (পুরনো হিসাবে) ১১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে তা কমে ১০ দশমিক ৪২ শতাংশে দাড়ায়। মার্চ মাসে তা আরও কমে ১০ দশমিক ১০ শতাংশ হয়। আর এপ্রিলে এ হার ছিল ৯ দশমিক ২ শতাংশ।
এভাবে গত ১০ মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমতে থাকলেও নভেম্বর মাস থেকে তা ফের বাড়তে শুরু করে।
২০০৫-০৬ অর্থবছরের তথ্যকে ভিত্তি ধরলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি অক্টোবরের ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ হয়। আর ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরের তথ্যকে ভিত্তি ধরে করা পুরনো হিসাবে ৭ দশমিক ২২ শতাংশ থেকে বেড়ে হয় ৭ দশমিক ৪১ শতাংশ।
গত ১৮ জুলাই পরিসংখ্যান ব্যুরোর টেকনিক্যাল কমিটির সভায় ২০০৫-০৬ ভিত্তি বছরের সিপিআই (ভোক্তার মূল্য সূচক) অনুমোদন দেয়া হয়। সে ভিত্তিতে ২০০৫-০৬ ভিত্তি বছরের পাশাপাশি ১৯৯৫-৯৬ ভিত্তিবছরের মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।