চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। ফলে নভেম্বর শেষে মূল্যস্ফীতির চাপ বেড়েছে। রাজনৈতিক ইস্যুর গ্রহণযোগ্য সমাধান না হলে আগামী কয়েক মাস মূল্যস্ফীতির ঊর্ধমুখী এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছর মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ০ শতাংশে ধরে রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সরকার। কিন্তু বছর শেষে এটি আবারও দুই অঙ্কে উঠে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগও বাড়তে শুরু করেছে। সঞ্চয়ের প্রবণতায়ও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। কেননা দুর্মূল্যের বাজারে মানুষকে সঞ্চয় ভেঙে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ব্যয় বহন করতে হচ্ছে। এতে মানুষের সঞ্চয় কমে আসতে শুরু করেছে। ফলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যে কৌশল বাজেট নেওয়া হয়েছিল তা ব্যর্থ হতে চলেছে বলে মনে করেন তারা।
সূত্র মতে, চলতি বাজেটের প্রাক্কলন অনুযায়ী বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের হার কমানো হয়। এতে মানুষের হাতে নগদ টাকার প্রবাহ কমানোর কৌশল নির্ধারণ করেন অর্থমন্ত্রী। পাশাপাশি দেশীয় ভাবে উৎপাদন বাড়িয়ে উৎপাদন খরচ কমানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু আমন মৌসুমে সে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসবে বলে মনে করে বিবিএস। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকও মুদ্রানীতি প্রণয়নকালে একই পন্থা অবলম্বন করেছিল।
কিন্তু রাজনৈতিক সংকটের কারণে এ কৌশল ব্যর্থ হতে চলেছে। কেননা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে এগিয়ে আসছেন না। অন্যদিকে শিল্প ও কৃষি উভয় খাতের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। ফলে ব্যাংক খাতে অলস টাকার পাহাড় জমছে। পাশাপাশি জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে প্রতিনিয়তই।
ফলে মানুষের নগদ টাকার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এতে বাজারের টাকার প্রবাহ বাড়ছে। যা মূল্যস্ফীতির ঊধর্্বগতিকে উসকে দেবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যমূল্য সহনীয় থাকায় মূল্যস্ফীতিও সহনীয় থাকবে। কিন্তু সম্প্রতি খাদ্যমূল্য বেড়েছে।
বিশেষ করে পাশর্্ববর্তী দেশ ভারতে পিয়াজের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দেশের বাজারে। যা প্রভাবে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। এ ছাড়া মধ্য মেয়াদে মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে বলে বাজেট বক্তৃতায় আশা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাস শেষে ৭ দশমিক ১৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যা এক মাসে আগে অর্থাৎ অক্টোবরে ছিল ৭ দশমিক ০৩ শতাংশ।
বিবিএসের তথ্য মতে, অক্টোবরে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। কিন্তু নভেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। খাদ্যবহিভর্ূত খাতেও মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। অক্টোবরে খাদ্যবহিভর্ূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ০২ শতাংশ। কিন্তু নভেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ০৮ শতাংশ।
বিশেষ করে পরিবহন ব্যবস্থার অবনতির কারণে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সাধারণত টাকার মান কমে গেলে মূল্যস্ফীতি ঘটে। অর্থাৎ জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ ও মধ্য বিত্তরা বলে মনে করেন তিনি। এ বছর রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মূল্যস্ফীতির লাগাম ধরে রাখা কঠিন হবে বলে মনে করেন তিনি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।