আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মূল্যস্ফীতি দেশে বিশেষ নীরব দুর্ভিক্ষের কথাই প্রকটভাবে প্রকাশ করে। সরকারকে অবিলম্বে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।



মূল্যস্ফীতির হার বাড়তে বাড়তে ডবল ডিজিট বা দুই অংকে পৌঁছে গেছে। বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে, মার্চ মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে অর্থাৎ আগের বছরের একই মাসের তুলনায় দেশে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ এর আগে সর্বশেষ ২০০৮ সালের জুলাই মাসে, ১৯৯৮ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে, ১৯৯৫ সালের জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতির হার দুই অংকের ঘরে পৌঁছেছিল। বিবিএসের হিসাব অনুসারে, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মার্চে সারাদেশে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতির হার ৪ দশমিক ৩২ শতাংশ। এই মাসে গ্রামে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১১ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

গ্রাম এলাকায় খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে ৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। শহরে খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে ৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। চলতি অর্থ বছরে মূল্যস্ফীতি আরো বাড়বে।

এমনকি আগামী অর্থ বছরেও (২০১১-১২) এ বৃদ্ধির প্রবণতা বহাল থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত খাদ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ১৪ শতাংশ এবং মোট মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির হার ১০ শতাংশ। ফলে প্রায় তিন বছর পর মূল্যস্ফীতির হার দুই অঙ্কের কোঠায় গিয়ে দাঁড়ালো। আগামী অর্থ বছরে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি রোধ করা। এক্ষেত্রে খাদ্য উৎপাদনে সরকারকে আরো গুরুত্ব দিতে হবে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে যাওয়াই চলতি বছরের মার্চ মাসে মূল্যস্ফীতির হার ডবল ডিজিটে পৌঁছার বড় একটি কারণ। আর এর ফল ভোগ করতে হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষকে। খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে ভাল নেই তারা। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, মুদ্রা ও রাজস্বনীতির সামঞ্জস্যহীনতা, সরকারের ঋণ গ্রহণ বৃদ্ধি, ডলারের দাম ও রেমিটেন্সের প্রভাব ইত্যাদি কারণও মূল্যস্ফীতির হার বাড়ার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো পদক্ষেপই কাজে আসছে না।

এ কারণে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিও থামছে না। জানা গেছে, টাকার অবমূল্যায়নজনিত কারণে আমদানিকৃত পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। যা উদীয়মান মূল্যস্ফীতিকে আরো উসকে দিচ্ছে। মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ বাড়ায় সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ আরো বেড়ে যাচ্ছে। জানা গেছে, দেশে বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ অবকাঠামো সুবিধা না থাকায় উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করতে পারছে না ব্যাংক।

এ কারণে মুনাফা ধরে রাখতে ব্যাংকগুলো পুঁিজবাজারে বিনিয়োগ শুরু করে। এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে বাজার থেকে নগদ টাকা তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় চাপে পড়ছে অধিকাংশ ব্যাংক। এমতাবস্থায় দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। নিত্যপণ্য চাল, আটা, ডালের আমদানিতে বিদ্যমান শূন্যশুল্ক অব্যাহত রাখতে হবে। এতে করে ওইসব পণ্য আমদানিতে খরচ কম এবং দাম সহনীয় হবে।

শূন্যশুল্কের পাশাপাশি ওইসব পণ্যে নির্ধারিত হারে শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়। ভোজ্যতেলের দাম সহনীয় রাখতে আমদানি পর্যায়ে বিদ্যমান ১০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করতে হবে। ভোক্তা মূল্যসূচকে প্রায় ৫শ’ সুনির্দিষ্ট পণ্য ও সেবা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ওইসব ভোগ্যপণ্য বা সেবার সর্বশেষ বাজারমূল্যকে ভিত্তি বছরের ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছর) সঙ্গে তুলনা করে প্রতি মাসের ভোক্তা মূল্যসূচক বা সিপিআই প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। কোন মাসের ভোক্তা মূল্যসূচক কতটুকু বৃদ্ধি পেল সেটার শতকরা হিসাবই মূল্যস্ফীতি।

আর আগের বছরের একই মাসের তুলনায় কতটুকু মূল্য বৃদ্ধি পেল সেটার শতকরা হিসাবই হল পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির হার। সাধারণত বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হ্রাস বৃদ্ধিতে চালসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের দাম বিশেষভাবে ভূমিকা রাখে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের সীমিত ও নি¤œআয়ের লোকদের আয় বাড়ছে না। চড়া মূল্যস্ফীতিতে তাদের আয় উপার্জন প্রচ- চাপের মধ্যে পড়ছে। অন্যদিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগও সেভাবে বাড়ছে না।

নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি নি¤œবিত্ত ও নি¤œ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষকে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় ফেলছে। আয় বৈষম্য প্রকট হচ্ছে। কারণ মূল্যস্ফীতি আয় বৈষম্য আরো বাড়িয়ে দেয়। তবে শুধু খাদ্য সরবরাহ করে এর চাপ কমানো যাবে না। পাশাপাশি নজর দিতে হবে কর্মসংস্থান ও আয়ের দিকে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের হাতে কোনো 'ম্যাজিক বুলেট' নেই। একক কোনো ব্যবস্থার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। সরকারকে একসঙ্গে বহুমুখী প্রচেষ্টা নিতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, ত্বরান্বিত করতে হবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি। তা না হলে মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে বাঁচা কঠিন হয়ে পড়বে।

আগামী বাজেটে কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের সহ্যসীমায় রাখতে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা জোরালো করতেই হবে। এডিপির মানসম্পন্ন বাস্তবায়ন নিশ্চিত করে চাঙ্গা করতে হবে বেসরকারি খাতকে। বাজেটের আওতায় সরকারকে সীমিত রাখতে হবে অনুৎপাদনশীল ব্যয়। এজন্য ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ যেন খুবই নিয়ন্ত্রণে থাকে।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.