আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দর্শকের চাওয়াটাই যেন মেটালেন স্যামিরা

সিরিজ শুরুর আগে ‘হেন করেঙ্গা, তেন করেঙ্গা’ কত হুংকার! অথচ এখন প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ কি খেলতে এসেছে না শচীন টেন্ডুলকারকে বিদায়ী উপহার দিতে!
কলকাতায় তিন দিনেই খেলা শেষ এবং এই প্রথম এমন সহজ জয়ের পরও ভারতজুড়ে হাহুতাশ! ওই জয়ের সাধ্য কি শচীন টেন্ডুলকারের আরেকটি ইনিংস দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ার দুঃখ ঘুচিয়ে দেয়!
কলকাতার পর মুম্বাই এবং এখানেও প্রথম দিন চা-বিরতির আগেই মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেল, টেন্ডুলকার একটা ইনিংসই পাচ্ছেন। প্রেসবক্সে বসে কোনো এক টিভি চ্যানেলকে ফোনে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে কলকাতার সাংবাদিকের ক্ষুব্ধ কণ্ঠ শোনা যাচ্ছিল, ‘এর থেকে বাংলাদেশকে আনলেও তো খেলাটা জমত। বাড়তি পাওয়া যেত বাংলাদেশের কয়েক হাজার দর্শককেও।
ওয়াংখেড়ের প্রথম দিনের দর্শকেরা একমত হবেন বলে মনে হয় না। ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে টিকিটের জন্য অমন দৌড়ঝাঁপের কষ্টকে পুরোপুরি উশুল করে দিল! টসে জিতে মহেন্দ্র সিং ধোনির ফিল্ডিং নেওয়ার সিদ্ধান্তে যাঁরা যারপরনাই হতাশ হয়েছিলেন।

আরে, আমরা কি ভারতের বোলিং দেখতে এসেছি নাকি! যেটির জন্য সকালে সাপের মতো এঁকেবেঁকে যাওয়া লাইনে দাঁড়িয়ে পুলিশের তল্লাশির হয়রানি সয়ে মাঠে এলাম, সেই টেন্ডুলকারের ব্যাটিং আর দেখা হলো না।
ড্যারেন স্যামি বড় সদাশয় মানুষ। কারও সঙ্গে কখনো দুর্ব্যবহার করেছেন বলে শোনা যায়নি। বরং সব সময়ই হাসিমুখ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আশ্চর্য এক ব্যতিক্রম।

তাই বলে দর্শকদের প্রত্যাশা মেটানোটাকেও দায়িত্বজ্ঞান করাটাকে একটু বাড়াবাড়িই বলতে হবে। তাঁর দল তো তাই করল এবং ‘যোগ্য’ অধিনায়কের মতো তিনি সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিলেন।
আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে সবিস্তারে ব্যাটিংয়ে ধৈর্যের মাহাত্ম্য বুঝিয়েছেন। প্রথম ইনিংসে কমপক্ষে ১২০ ওভার ব্যাটিং করার লক্ষ্যের কথাও জানিয়ে দিয়েছেন। এর অর্ধেক করতে পারলেও হতো! ব্যাটসম্যানদের কিছু বলার মুখও তো নেই।

লাঞ্চের সময় ২ উইকেটে ৯৩ রানের স্বস্তি তৃতীয় উইকেট পড়ার সময়ও বর্তমান। রান তখন ১৪০। সেখান থেকে দ্রুতই উইকেটের ঘরে ‘৬’ হয়ে যাওয়ার পর নেমে দ্বিতীয় বলে অশ্বিনকে উড়িয়ে মারতে গেলেন। অধিনায়ক ড্যারেন স্যামির এপিটাফও বোধ হয় লেখা হয়ে গেল তাতে।
রবিচন্দ্রন অশ্বিনের দুর্ভাগ্যই বলতে হবে, এমন এক দিনে তাঁর অসাধারণ এক অর্জন যেটি একেবারেই অন্ধকারে ঢাকা পড়ে গেল টেন্ডুলকার-আলোয়।

স্যামিকে আউট করেই শততম উইকেট এবং সেটি মাত্র ১৮তম টেস্টে। টেস্ট ইতিহাসে যা তৃতীয় দ্রুততম। জর্জ লোহম্যান ১৬ টেস্টে এই মাইলফলক ছুঁয়েছিলেন। চার্লি টার্নার, সিডনি বার্নস ও ক্ল্যারি গ্রিমেট ১৭ টেস্টে। এই নামগুলোই জানিয়ে দিচ্ছে টেস্ট ইতিহাসে কত বড় একটা ঝাঁকুনি দিয়েছেন এই অফ স্পিনার।

এঁদের মধ্যে সাম্প্রতিকতম ক্ল্যারি গ্রিমেটও শেষ টেস্টটা খেলেছেন প্রায় পৌনে এক শতাব্দী আগে।
টেন্ডুলকার-উন্মাদনায় হারিয়ে গেলেন এক সেশনেই ৫ উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে শেষ করে দেওয়া প্রজ্ঞান ওঝাও। প্রাপ্তি বলতে দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে আসা। সেখানে একটা লাইনই সব সাংবাদিককে নোট নিতে দেখা গেল—‘এই ৫ উইকেট আমি শচীন পাজিকে উৎসর্গ করছি। ’
আর একবারই শুধু সাংবাদিকদের আগ্রহী দেখা গেল, যখন ‘শচীন পাজি’ ব্যাটিং করতে নামার সময় ড্রেসিংরুমের আবহটা বর্ণনা করছিলেন ওঝা।

যিনি চেয়ার ছেড়ে ওঠার আগেই ভারতীয় বোর্ডের মিডিয়া ম্যানেজার জানিয়ে দিলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের কেউ আজ সংবাদ সম্মেলনে আসছেন না। বোঝাই যাচ্ছে, এই পারফরম্যান্সের পর কেউ আর সাংবাদিক সমক্ষে আসতে রাজি হননি।
প্রথম দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের একমাত্র ‘কৃতিত্ব’ বলতে শচীন টেন্ডুলকারকে ব্যাটিং করতে নামানো। নামলেনও অদ্ভুত একটা সময়ে। ক্রিকেট-বিধাতারই খেলা বলতে হবে।

তিনিই বন্দোবস্ত করে দিলেন, টেস্টে শেষবারের (‘হয়তো’ শব্দটা কি রাখার প্রয়োজন আছে কোনো!) মতো কখন ব্যাট করতে নেমেছিলেন, সেটি যেন সবাই মনে রাখতে পারে। ঘড়ির কাঁটাতে তখন তিনটা তিন। তিনটা বেজে তেত্রিশ মিনিট।
প্রথম সেশনেই বল টার্ন করছিল। ভারতের ব্যাটিংয়ের সময় তো ব্যাটসম্যানের বুটের ঘষায় ধুলো উড়তেও দেখা গেল।

কলকাতায় মোহাম্মদ সামির মতো কেউ রিভার্স সুইংয়ের জাদু না দেখালে এই টেস্টে স্পিনার-রাজই চলবে। টেন্ডুলকারের মনশ্চক্ষে আঁকা দ্বিতীয় দিনের ব্যাটিংয়ের ছবিতেও নিশ্চয়ই শিলিংফোর্ডই উঁকি দিয়ে যাবেন। সেঞ্চুরির রাজার সেঞ্চুরি দিয়ে শেষ করার পথে কাঁটা ছড়ালে এই অফ স্পিনারই ছড়াবেন। অশ্বিনের মতো তিনিও বাড়তি বাউন্স পাচ্ছেন। যা দিয়ে টেন্ডুলকারকে বার দুয়েক একটু অস্বস্তিতেও ফেললেন।


তবে সেটি টেন্ডুলকারের যাবার আগে রাঙিয়ে দিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিতে এমন কোনো ছায়া ফেলতে পারেনি। শেষ টেস্টে সেঞ্চুরির কথা উঠলে কেন যেন প্রথমেই মনে পড়ে গ্রেগ চ্যাপেলের কথা। চ্যাপেলদের মেজো ভাই আবার উপলক্ষটা খুব ভালো বুঝতেন। টেস্ট অভিষেকে সেঞ্চুরি, অধিনায়ক হিসেবে অভিষেকেও এবং শেষ টেস্টে ১৮২। টেন্ডুলকার বলেই শেষ টেস্টে সেঞ্চুরি এমন আলোচনায় বিষয়ে পরিণত।

নইলে এটি এমন বিরল কোনো ব্যাপার নয়। ভারতীয়দের মধ্যেই বিজয় মার্চেন্ট, বিজয় মাঞ্জরেকার ও মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের তা আছে। জ্যাক রাসেল নামে ইংল্যান্ডের এক ব্যাটসম্যান তো শেষ টেস্টের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করার অবিশ্বাস্য বিদায়লিপিও লিখে রেখেছেন। উইকেটকিপার জ্যাক রাসেলের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলবেন না। এটা অন্য জ্যাক রাসেল, যাঁর শেষ চমক সেই ১৯২৩ সালে।


টেস্টের গতিপ্রকৃতি এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মৃতপ্রায় চেহারায় এটুকু অন্তত নিশ্চিত, টেন্ডুলকার ‘জ্যাক রাসেল’ হতে পারবেন না। সেটি নিয়ে কেই-বা আক্ষেপ করতে যাবে! ক্যারিয়ারে যাঁর হাজার হাজার রান, সেই টেন্ডুলকারের চাওয়া এখন খুবই সামান্য—আর মাত্র ৬২টা রান!
ক্রিকেটকে এত কিছু দিয়েছেন, শেষবেলায় ক্রিকেটও কি ভরিয়ে দেবে তাঁর দুই হাত?

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.