আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের ১৯ জেলার ৬২টি উপজেলাকে 'ভয়ঙ্কর' হিসেবে দেখছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। এর বাইরে প্রায় শতাধিক এলাকা নিয়েও রয়েছে তাদের উৎকণ্ঠা। নির্বাচন সামনে রেখে এসব এলাকায় ভয়ানক তাণ্ডব চালাতে পারেন জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। তাদের সঙ্গে বিএনপিও সরাসরি যুক্ত হতে পারে। এরই মধ্যে যশোরে আওয়ামী লীগের একজন নেতাকে বোমা মেরে হত্যা এবং গাইবান্ধায় ছাত্রলীগ নেতাকে নৃশংসভাবে খুনের মধ্য দিয়ে এ আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দিয়েছে এই চক্র। স্থানীয় প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরাও আছেন উৎকণ্ঠায়। বিশেষ করে মনোনয়নপত্র কিনতে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতারা যখন ঢাকায় তখনই দুর্বৃত্তরা এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে বলে ধারণা করছেন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সাম্প্রতিক সময়ে দেওয়া প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করতে পারে। সরকারি দল ছাড়াও মাঠ পর্যায়ের নির্বাচনকর্মীরাও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ, তারিখ ঘোষণার পর জামায়াত-শিবির মরণ কামড় দেবে। বিএনপি যোগ হলে এর পরিণাম আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবিকে সার্বক্ষণিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলা হয়েছে। সতর্ক অবস্থানে রয়েছে র্যাব-পুলিশ। সরকার সব কিছুতে জিরো টলারেন্স অবস্থানে থাকবে বলেও এরই মধ্যে পরিষ্কার করেছে। পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক জানান, ওইসব এলাকায় দায়িত্বরত পুলিশকে প্রতিটি মুহূর্তে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জিরো টলারেন্স দেখাবে পুলিশ। কোনোভাবেই কোনো অনিয়ম বরদাশত করা হবে না।
জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত এলাকাগুলোর মধ্যে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে চার পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ওইদিনই সাতক্ষীরায় পায়রাডাঙ্গা গ্রামের ছাত্রলীগের শাহীন ও সাতক্ষীরা সিটি কলেজের সাবেক সভাপতি মামুনকে পিটিয়ে হত্যা করে জামায়াত-শিবির। একই দিন চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় পুলিশের ওপর নৃশংসভাবে চড়াও হয় জামায়াত-শিবির। নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে এক পুলিশ কনস্টেবলকে। এ ছাড়া হরতালসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে জামায়াত-শিবির তাদের নৃশংসতার চিত্র প্রদর্শন করেছে। গোয়েন্দাদের ধারণা, স্থানীয় নেতাদের এলাকায় অনুপস্থিতির সুযোগে বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে ছাত্রশিবির। কারণ এর মধ্যে খুনাখুনি ছাড়াও কিছু জেলায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীদের রগ কেটে দেওয়ারও ঘটনা ঘটছে। যশোর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বগুড়া, গাইবান্ধার অবস্থা থমথমে। সাম্প্রতিক অতীতে বিভিন্ন সময় জামায়াত-শিবির ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী ছাড়াও পুলিশ সদস্যদের ওপর নৃশংস হামলা চালিয়েছে। নৃশংস ঘটনাগুলোর পেছনে ছিল প্রতিপক্ষ জামায়াত-শিবির। এ ছাড়া নিজ দলের অভ্যন্তরীণ কারণেও কিছু ঘটনা ঘটছে। ১৪ নভেম্বর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে জামায়াত-শিবির অতর্কিত হামলা চালিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা খলিলুর রহমান মামুনকে নির্মমভাব হত্যা করে। ওই রাতেই যশোরের অভয়নগরের শুভরাঢ়া খেয়াঘাটের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলামকে অপহরণের পর হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এর আগে ৬ নভেম্বর রাতে খুলনা মহানগরীর বাসুপাড়ায় রেজোয়ান হোসেন সুমন নামে এক যুবলীগ কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে হরমুজ আলী ও রুহুল আমীন নিহত হন। ১২ নভেম্বর রাতে মুন্সীগঞ্জ সদর থানার পঞ্চসার ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগ সভাপতি সাদেক আলীকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের ওপর ভীতি ছড়াতেই জামায়াত-শিবির পুলিশের ওপর হামলা চালায়। একই সঙ্গে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা যখন এলাকা ছেড়ে রাজধানীতে তখন দুষ্কৃতিকারীরা হামলার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। পরিস্থিতি তখন আরও খারাপ হয়। বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ জানান, সীমান্ত পাহারা দেওয়াই মূলত আমাদের কাজ। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার স্বার্থে বেসামরিক প্রশাসন চাইলেই বিজিবি সদস্যরা মাঠে নামতে প্রস্তুত। এরই মধ্যে বিজিবি সদস্যরা মাঠে নেমে বেসামরিক প্রশাসনকে সহয়তাও করেছেন। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এ টি এম হাবিবুর রহমান জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এমন স্পর্শকাতর এলাকাগুলোর মধ্যে যেখানে র্যাবের ক্যাম্প ছিল না সেখানে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে টহলের সংখ্যাও। র্যাব সদস্যরা পোশাকে এবং সাদা পোশাকে প্রতিটি মুহূর্তের পরিস্থিতি মনিটরিং করছেন।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।