জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা সাংবিধানিকভাবে সরকার চলছে কিনা, রাষ্ট্র চলছে কিনা, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন- পদত্যাগী মন্ত্রীদের নিয়ে মন্ত্রিপরিষদের সভা আহ্বান সাংবিধানিক নয় অথচ তা আহ্বান করা হয়েছে। এতে দেশ আজ রাজনৈতিক সংকটের পাশাপাশি সাংবিধানিক সংকটে পড়েছে। পার্লামেন্ট রেখে নির্বাচন নজিরবিহীন সাংঘর্ষিক বিধান। সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী এনে তা-ই করা হয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর সরকার নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতাহীন আজ্ঞাবহ পকেট প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। এভাবে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয় না। বক্তারা নির্বাচনকালীন সংকট সমাধানের জন্য চলমান জাতীয় সংসদে আইন প্রণয়ন করে উচ্চকক্ষ গঠনের মাধ্যমে সেখান থেকে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা করে সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আহ্বান জানান।
রাজধানীর স্থানীয় একটি হোটেলে গতকাল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) আয়োজিত 'উত্তরোত্তর রাজনৈতিক সংকট ও নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা' শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী প্রমুখ। মূল প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন। দেশে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে গভীর সংকট চলছে উল্লেখ করে সাবেক রাষ্ট্রপতি বি চৌধুরী বলেন, সংবিধান সংশোধন করে সরকার এ সংকট তৈরি করেছে। সুতরাং সংকট সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার বেশি দায়িত্ব সরকারি দলের। আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধান না হলে শুধু নির্বাচনের আগেই নয়, পরেও সংঘাত হতে পারে।
সংঘাতের সৃষ্টি হলে দেশ মানবিক ও রাজনৈতিক বিপর্যয়ে পড়বে। তিনি বলেন, এর মধ্যে নির্বাচন কমিশন তাদের নানা আচরণের মাধ্যমে নির্বাচনবিধি লংঘন করে গণতন্ত্রের অবমাননা করে চলেছে। আরপিও সংশোধন করে দুর্নীতিবাজদের নির্বাচন করার এবং রাজনীতিতে হট্টগোল পাকানোর সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
বি. চৌধুরী বলেন, সংঘাত বন্ধ করতে এগিয়ে আসতে হবে। না হলে দেশ কোথায় যাবে বুঝতে হবে। সংবিধান আপনাকে (প্রধানমন্ত্রী) একচ্ছত্র ক্ষমতা দিয়েছে। আলোচনা করে সংকটের সমাধান করুন। জনগণের মধ্যে ঘৃণা বাড়ানোর চেষ্টা করবেন না। ঘৃণা করে বড় হওয়া যায় না।
মন্ত্রীদের পদত্যাগ নিয়ে সরকারের অবস্থানের সমালোচনা করে বি. চৌধুরী বলেন, নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন_ সংবিধান থেকে এক চুলও নড়বেন না, কিন্তু মন্ত্রীদের পদত্যাগ বিষয়ে সংবিধানের ৫৮ ক ধারা না মেনে তিনি সংবিধান থেকে পুরোটাই নড়ে গেছেন। আসলে সংবিধান মানা হচ্ছে না। মানলে কারও মন্ত্রিত্ব নেই। প্রধানমন্ত্রী কি অস্বীকার করতে পারবেন, তিনি মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেননি? এ অবস্থায় মন্ত্রীদের কার্যক্রম, পতাকা ব্যবহার, পিএস, এপিএস এবং তাদের জন্য পুলিশ প্রটেকশন সম্পূর্ণ অবৈধ হয়ে গেছে। এর জন্য যেসব টাকা খরচ হবে, তা পকেট থেকে দিতে হবে। এখন না হলেও ভবিষ্যতে এসব খরচ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত দিতে বাধ্য থাকবেন।
খুব শীঘ্রই নতুন জোটের ঘোষণা আসবে জানিয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, ১৪ দল আজ ভাঙনের মুখে। যে কোনো মুহূর্তেই এরশাদ জোট ছাড়ার ঘোষণা দেবেন। আমরা তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। কারণ দুই জোট জনগণকে জিম্মি করে ফেরেছে। আ স ম আবদুর রব বলেন, সাংবিধানিকভাবে সরকার চলছে কিনা, রাষ্ট্র চলছে কিনা, আজ এটা একটা বিরাট প্রশ্ন। দেশ আজ রাজনৈতিক এবং সাংবিধানিক সংকটে পড়েছে। পদত্যাগী মন্ত্রীদের নিয়ে মন্ত্রিপরিষদের সভা আহ্বান সাংবিধানিক নয়। প্রধানমন্ত্রী ছাড়া মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করায় মন্ত্রীদের পদ শূন্য হয়ে গেছে। রাষ্ট্র কোনো নাটকের স্থান নয়, প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন, তারপর নানা অজুহাত দেবেন_ এভাবে দেশ চলতে পারে না। তিনি আরও বলেন, আদালতের রায়ের আগেই পঞ্চদশ সংশোধনীর নামে সংবিধানকে যেভাবে কাটছাঁট করা হয়েছে এখন শুধু সংবিধানে চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় রাখার একটি লাইন সংযোগ করা বাকি আছে।
গোলটেবিল আলোচনার মূল প্রস্তাবে বলা হয়, সংসদ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা থাকলেও সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়নি।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।