ট্রুথ নট সেইড টুডে, কুড টার্ন টু আ লাই টুমোরো
গতকাল ববির 'দেহরক্ষী' ছবিটা দেখলাম। বেশ দূর্দান্ত। প্রচুর নাচ-গান আছে, একশন আছে, তবে গভীরতা কম। বাণিজ্যিক ছবিরও একটা গভীরতা থাকে। এটার গভীরতা হাটু পানি।
এর বেশি ডুবাইতে হইলে হাটু ভাঁজ করা লাগবে। নায়ক নায়িকার কখন কোলাকুলি হবে সেইটা দেখার জন্য দর্শকের একটা আগ্রহ জন্মাইতে হবে। কিন্তু ছবির শুরু থিকাই এমন অবস্থা দাঁড় করাইছেন পরিচালক যে ভিলেনের সাথেই বিয়া দিতে চাইবো দর্শক। তবে আশার কথা, ববি একেবারে আন্তর্জাতিক মানের ফিগারের নায়িকা। ভিলেন চরিত্রে মিলন জব্বর অভিনয় করছেন।
আর মাঠে মাইরা দিছে নায়ক তীব্র হাসান। শানদার গরম নাম দিতে গিয়া হাসানের নামের সামনে 'তীব্র' দিলেও তার অভিনয় হইছে মাইল্ড, গলার স্বর কোচিং এর ভাইয়াদের মতো নরম। বিদেশি ছবি থিকা কপি করতে গেলে বা কাহিনী অবলম্বন করতে গেলে বা হালের 'ইন্সপায়ারড' হইতে গেলে কিছু কৌশল লইতে পারেন উনারা। এতে দর্শক মনে করবে আসলেই কাহিনীটা নতুন-
১. নায়ক-নায়িকার রোল চেঞ্জ কইরা দেন। ধরেন 'দেহরক্ষী' ছবিতে বডিগার্ড নায়কের সাথে নায়িকার প্রেম একটা ভেড়ামারা পুরান কাহিনী।
এইটারে উল্টায়ে দিলে মহিলা বডিগার্ড ববির সাথে নায়ক লুতুপুতু হাসানের প্রেম দিতেন- একদম মাইন্ড ব্লোয়িং হইতো। মাইরপিট সব ববি করবে আর নায়ক হাসান 'আহা, উহু' করবে।
২. একশন দৃশ্যে অভিনব অস্ত্রের ব্যবহার শুরু করেন। গ্রেনেড, বন্দুক, রাইফেল- এইসব পুরান হইয়া গেছে। বেইসবল ব্যাট, (গোল্ড প্লেট) দা, (স্পাইকওয়ালা)লগি, (মাথায় ছুরি ওয়ালা)বৈঠা, রকেট লাঞ্চার, ড্রোন এইসব নিয়া আসেন।
হয় হাতাহাতি একশন, নাইলে দূরপাল্লার ডিস্কাও। মাঝামাঝি কিছু নাই।
৩. নায়করে আরো ভালনারেবল করতে হবে। নায়কের শরীর হবে টানটান। কিন্তু হৃদয় হবে লুজ, নরম, ভালোবাসার জন্য ব্যাকুল মরুভূমি।
নায়কের বাপ-মারে মাইরা ফেলেন, তারে এতিম বানায়া দেন। ধরেন নায়কের বাবা মা চিকিৎসা করাইতে ঢাকায় আসছেন। উনাদের বাসে আগুন ধরায়া দিল। উনারা ৯৫%বার্ন। স্পট ডেড।
পাবলিকের দিল সফট সোডিয়াম হইয়া যাবে। নায়করে কোন ইনজাস্টিসের ভুক্তভোগী দেখান। ধরেন ভালো রেজাল্ট স্বত্ত্বেও বিসিএস পরীক্ষায় কোটাসুবিধা বঞ্চিত কইরা বেকার বানাইলেন, অথবা বড়লোক দেখাইতে চাইলে (আজকাল কেন জানি কেউ গরীব নায়ক পছন্দ করে না, সবার পছন্দ বুক শেভ করা অনন্ত জলীল মার্কা বড়লোক, প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কার পাইলে আরো ভালো) তারে প্রথমে বড়লোক দেখায়া এরপরে শেয়ার মার্কেটে ফতুর কইরা দেন। বাস্তবের সাথে অবাস্তবের একটা মিলমিশ কইরা দেন।
ডিরেক্টরদের জন্য আমার সামান্য টিপস কাজে লাগতে পারে ভাইবা এতকথা লেখলাম।
কবি কামরুজ্জামান কামুর 'দ্য ডিরেক্টর' ছবিটা সেন্সরবোর্ড আটক করছে। পরিচালকের সাথে চ্যাট হইলো। আমি উনারে জিগাইলাম, ছবি আটকাইছে কেন? উনি বললেন 'উনাদের পছন্দ হয় নাই'। আমি আরো কিউরিয়াস হইলাম। আবার জিগাইলাম 'খারাপ সিন আছে?' কয় 'না'।
তারপরে কইলাম 'মুক্তিযুদ্ধ নিয়া কোন এক্সপেরিমেন্ট আছে', কয় 'না'। বড়ই মুসিবত। আবার জিগাইলাম 'তাইলে কি খারাপ ডায়ালগ আছে?'। এরপরে উনি খোলাসা করলেন। মনে হয় এই এক কথা বলতে বলতে উনি ত্যক্ত।
সেন্সরবোর্ড বলতেছে ছবিতে ডিরেক্টরদের চরিত্র খারাপ দেখানো হইছে। পুলিশ, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, ডাক্তার, হুজুর সবার চরিত্র খারাপ দেখানো যাবে, কিন্তু বিশেষ সাংস্কৃতিক পেশার গোষ্ঠীকে(ডিরেক্টরদের) দেখাইতে হবে সিরাতুল মুস্তাকিম। অভিযোগনামা এইরকম-
'চলচ্চিত্রটিতে মূল কাহিনী অপর্যাপ্ত, অশ্লীল সংলাপের ব্যবহার, বিশেষ সাংস্কৃতিক পেশার গোষ্ঠীকে হেয়ভাবে উপস্থাপন, চলচ্চিত্রশিল্পের প্রতি সাধারণ মানুষের ঘৃণা জন্মায় এমনভাবে কাহিনীর চিত্রায়ণসহ আগ্নেয়াস্ত্রের যথেচ্ছ ব্যবহার আছে। এছাড়া আছে নির্বিচারে মানুষ হত্যা, আইনহীনতা ও লাম্পট্য। '
কামরুজ্জামান সাহেব বলতেছেন ছবি কাহিনীতে ঠাসাঠাসি অবস্থা।
তারচেয়ে বড় প্রশ্ন জাগলো, কাহিনী কম বা বেশির ইউনিট কি? ধরেন, এক 'টাইটানিক' পরিমান কাহিনী থাকতে হবে এইরকম কোন বিধান আছে? অশ্লীল ডায়ালগ কমবেশি সব ছবিতেই আছে। সাধুভাষায় মাঝে মাঝেই কিছু ডায়ালগ লেখা হয় যেগুলা শুনলে মনে হয় বঙ্গিম পাঠের আসর বসছে। এরপরের অভিযোগ আগ্নেয়াস্ত্র। আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়া ভিলেনের সাথে মারামারি করবো ক্যামনে? দেহরক্ষীতে দেখলাম গ্রেনেড মারতেছে। আমিতো কই রকেট প্রপেল্ড গ্রেনেড মার।
নির্বিচারে মানুষ হত্যার কথা যদি বলেন তাইলে কিলবিল, র্যাম্বো মুভিগুলা দেখতে পারেন। যে হারে মানুষ মারে তারা, তাতে মনে হয় আজকেই দুনিয়ার জনসংখ্যা ডাবল ডিজিটে নিয়া আসবে। প্রশ্ন হইতেছে এমন সংবেদনশীল সেন্সরবোর্ড দিয়া আমরা কি করবো?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।