সবাই লেখে হাতে। কিন্তু ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার জসীম লেখে পায়ে। কারণ, জন্মগতভাবে তার হাত দুটি নেই। গতকাল বুধবার থেকে শুরু হওয়া প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিএসসি) পরীক্ষায় পা দিয়ে লিখতে দেখা গেছে তাকে। উপজেলার কদমতলী গ্রামের মো. হানিফ মাতুব্বর ও তাছিরন বেগম দম্পতির বড় ছেলে জসীম মাতুব্বর।
তারা চার ভাই ও এক বোন। ছোট ভাই মো. রশিদ ও আবুল খায়ের চতুর্থ শ্রেণীতে, মো. লিমন (৬) প্রথম শ্রেণী এবং বোন হালিমা (৭) দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ছে।
এলাকার অনেকে জানান, জসীম দরিদ্র পরিবারের ছেলে। সম্পত্তি বলতে তাদের শুধু একখণ্ড জমি আছে। বাবা হানিফ মাতুব্বর অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করে কোনো রকমে সংসার চালান।
মা তছিরন বলেন, ‘আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই লেখাপড়া জানি না। তাই অভাব-অনটনের মধ্যেও সন্তানদের লেখাপড়া করাচ্ছি। ’ তিনি জানান, জসীম সব কাজ নিজেই করতে চায়। ফুটবল খেলতে পারে। মুঠোফোনে কল রিসিভ ও কল করতে পারে।
কায়দা করে মাছও ধরতে পারে।
কদমতলী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘২০০৮ সালে জসীম আমার স্কুলে ভর্তি হয়। তখন থেকেই পড়াশোনার প্রতি ওর আগ্রহ দেখে আশ্চর্য হয়ে যাই। দেখলাম সে পড়াশোনায় ভালো। স্মরণশক্তি প্রখর।
তাই ভাবলাম, পড়ায় ভালো হলে কেন লিখতে পারবে না? তাই ওর ডান পায়ের আঙুলের ফাঁকে চক আটকিয়ে লেখার তালিম দিই। দুই-তিন মাসের মধ্যেই সে লিখতে সক্ষম হয়। তার লেখার প্রতিটি শব্দ স্পষ্ট বোঝা যায়। ’
জসীম বলে, বড় হয়ে সে শিক্ষক হবে। এলাকার ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করে তুলতে সহায়তা করবে।
ফলে তারা নিজেরাই জীবিকা অর্জন করতে পারবে। কেউ তাদের ঠকাতে পারবে না। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, ফরিদপুরে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় মোট ৪০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে। তবে কারও অবস্থাই জসীমের মতো নাজুক নয়। দুটি হাত না থাকা সত্ত্বেও লেখাপড়ার প্রতি জসীমের অদম্য স্পৃহা সবাইকে মুগ্ধ করেছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।