Never argue with idiots. They bring you down to their level and then beat you with experience
ঠিক ৫০ বছর আগে আজকের এই দিনেই থমকে গিয়েছিল সময়। আততায়ীর গুলিতে খুন হয়েছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী মানুষ বলে পরিচিত তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি। ডালাসের রাস্তায় প্রেসিডেন্ট কেনেডির হত্যা নিয়ে রহস্যের সমাধান মেলেনি আজও।
এরপর পার হয়ে গিয়েছে ৫০ বছর। মাঝের সময়ে প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডিকে খুন করা নিয়ে লেখা হয়েছে অন্তত ৪০ হাজার বই।
এরমধ্যে অনেকগুলোই রহস্য রাোমাঞ্চ কিংবা গোয়েন্দা বই। গিনেজ বুকের তথ্যানুযায়ী এটি একটি রেকর্ড।
এছাড়া মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত বসানো হয়েছে ছ'টা কমিশন। প্রেসিডেন্ট কেনেডির হত্যাস্থল ডালাসের এলম স্ট্রিট ও হিউস্টন স্ট্রিটের সংযোগস্থলে বুক ডিপোজিটরি স্টোরের উল্টো দিকে সেই দিনের মতো একই পরিস্থিতি তৈরি করে চলেছে পরীক্ষা। কিন্তু না, কিছুতেই উত্তর মেলেনি সেই প্রশ্নের।
প্রেসিডেন্ট জন কেনেডির হত্যাকাণ্ড কি একটা বিচ্ছিন্ন খুনের ঘটনা, না কি এর পিছনে রয়েছে গভীর ষড়যন্ত্র? যদি ষড়যন্ত্র হয়, তা হলে কারা থাকতে পারেন এর নেপথ্যে?
এর জবাবে অবশ্য চক্রান্ত তত্ত্বের প্রবক্তারা আঙুল তোলেন একাধিক দিকে। কখনও সোভিয়েত গুপ্তচর সংস্থা কেজিবি, কখনও কিউবার শাসক ফিদেল কাস্ত্রো, কখনও ইতালিয়ান মাফিয়া, কখনও বর্ণবিদ্বেষী রিপাবলিকান শিবির, এমনকি সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ নেই খোদ মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ-ও। যারা ষড়যন্ত্র তত্ত্বের সমর্থক এবং যারা এই তত্ত্বের বিরোধী, উভয় পক্ষই তাদের বক্তব্যের সমর্থনে পেশ করেন আব্রাহাম জাপ্রুডার নামে ডালাসের এক পোশাক প্রস্তুতকারীর তোলা ছবিকে।
১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ ডিলি প্লাজার ঠিক আগে ৮ মিলিমিটার ফিল্মের বেল অ্যান্ড হাওয়েল ক্যামেরার পিডি ৪১৪ মডেলের একটি মুভি ক্যামেরা নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন ৫৮ বছরের জাপ্রুডার। কেনেডির এই গোঁড়া সমর্থক এসেছিলেন তার ছবি তুলতে।
বুক ডিপোজিটরির সামনে দিয়ে প্রেসিডেন্টের কনভয় এলম স্ট্রিটের দিকে ঘুরতেই মাথার ওপর হাত তুলে ভিড় এড়িয়ে ছবি তোলা শুরু করেন আব্রাহাম। পরের ২৬.৬ সেকেন্ডে যে ৪৮৬টি ফ্রেম উঠেছিল তার ক্যামেরায়, এর জোরেই কেনেডি হত্যা মামলার সঙ্গে জড়িয়ে যায় তার নাম। প্রতিটি ফ্রেমে উঠে গিয়েছিল হত্যার পুঙ্খানুপুঙ্খ।
এমন কী ছিল ওই ছবিগুলিতে? প্রথমত, এমন এক ব্যক্তি যাঁর হাতে ছিল কালো ছাতা। প্রেসিডেন্টের লিমুজিন বাঁক নেওয়ার ঠিক আগ মুহুর্তে তিনি ছাতা খুলেছিলেন।
কেন? নভেম্বরের ঠান্ডা দুপুরে ছাতা খোলার কী দরকার ছিল? তবে কি ছাতা খুলে কাউকে কোনও ইঙ্গিত করা হয়েছিল?
প্রেসিডেন্টের হত্যা রহস্য নিয়ে তৈরি করা একাধিক হলিউডের মুভির মধ্যে অলিভার স্টোনের "জেএফকে" সিনেমায় বারবার দেখানো হয়েছে এমন একাধিক ছাতাওয়ালাকে। প্রেসিডেন্টের লিমুজিন একটা করে বাঁক নিচ্ছে আর ছাতা খুলে যেন সেই খবর দেওয়া হচ্ছে দূরের কাউকে।
পরবর্তীকালে মার্কিন পুলিশ খুঁজে বের করেছিল সেই রহস্যময় ছাতাধারীকে। জানা যায়, তার নাম লুইস উইট। ছাতা খুলে তিনি নাকি রাজনৈতিক প্রতিবাদ করছিলেন।
তবে তার বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সন্দেহের কারণ শুধু এই একটাই নয়। ছবিতে দেখা গিয়েছে, মাথার পিছন দিকে গুলি লাগার পর কেনেডির মাথা ঝুঁকে গিয়েছে পিছন দিকে। কিন্তু হওয়ার কথা এর উল্টোটাই। তা হলে কি আসলে গুলি এসেছিল সামনের দিকের ডিলি প্লাজা থেকে?
তবে কি শুধু একা একজন নন, আরও কাউকে রাখা হয়েছিল প্রেসিডেন্টকে খতম করার জন্য? সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায়নি।
একাধিক ছবিতে দেখা গিয়েছে ডিলি প্লাজায় দাঁড়িয়ে রয়েছে দীর্ঘকায় এক ব্যক্তি। বহু দূর থেকে তোলা ছবিতে মুখ স্পষ্ট নয়। হাতে ধরা জিনিসটা রাইফেল কি না, তা-ও বোঝা যায় না। কিন্তু আকারে মনে হয় রাইফেল হতেও পারে।
আবার হত্যার যে রাইফেল ব্যবহার করা হয়েছিল, সেই ম্যানলিকার-কারসানো আগ্নেয়াস্ত্র হিসেবে আদৌ উঁচুদরেরও নয়।
রাইফেলের পক্ষে ৭৫ গজ তেমন কোনও দূরত্ব না হলেও মাত্র ছয় সেকেন্ডের ব্যবধানে তিন বার গুলি ছোঁড়া এবং দু'বার নিশানায় আঘাত করা কতটা সম্ভব তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।
এই হত্যাকাণ্ডের পর আগ্নেয়াস্ত্রসহ সন্দেহভাজন অসওয়াল্ডকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু তাকে আদালতে পেশ করতে নিয়ে যাওয়ার সময় থানার মধ্যেই সকলের সামনে তাকে গুলি করে মারেন তার এক বন্ধু জ্যাক রুবি। অপরাধী হাই প্রোফাইল। একদিন আগেই খুন করেছেন স্বয়ং প্রেসিডেন্টকে।
বিনা তল্লাশিতে তার একেবারে সামনে গেলেন কী করে সশস্ত্র রুবি?
সংবাদমাধ্যমের বিপুল ভিড় ঠেলে সামনে এসে রিভলভার বের করে গুলি করা পর্যন্ত একজন পুলিশকর্মীও কেন আটকানোর চেষ্টা করলেন না রুবিকে? মেলেনি তারও জবাবও।
আসলে প্রেসিডেন্টের সেই ডালাস সফর শুরুর আগে থেকেই এই গণ্ডগোলের শুরু। দুনিয়ার কোথাও খবরের কাগজে প্রকাশিত হয় না প্রেসিডেন্টের কনভয়ের রুট। কিন্তু এ ক্ষেত্রে হয়েছিল। আরও আছে! পৃথিবীর কোনও দেশে কনভয়ের শুরুতে রাখা হয় না রাষ্ট্রপ্রধানকে।
এখানে তেমনটাই হয়েছিল।
বর্ণবাদবিরোধী সংস্কার আইন ঘোষণার পরই যখন খুন হন আরেক ডেমোক্র্যাট নেতা মেডগার এভার্স, তখনও সতর্ক হননি গোয়েন্দারা। এক বছর আগেই কিউবায় সোভিয়েত ক্ষেপণাস্ত্র নিয়োগ নিয়ে দেখা দিয়েছিল সঙ্কট। তবুও গাড়িতে অতিরিক্ত সুরক্ষা না নেওয়া নিয়ে কেনেডির জেদের কাছে হার মেনেছিলেন এফবিআই কর্তাব্যক্তিরা! একসঙ্গে এতগুলো ভ্রান্তি কি নিছকই কাকতালীয়? নাকি পরস্পরের মধ্যে রয়েছে ঘনিষ্ঠ সংযোগ? অর্ধশতাব্দী পার করেও এর জবাব মেলেনি।
এদিকে আবার প্রেসিডেন্ট হত্যার তিন বছরের মধ্যেই ১৮ জন সাক্ষীর রহস্যমৃত্যুরও কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি মার্কিন প্রশাসন।
নিহত ১৮ জনের মধ্যে ছ’জন খুন হন বন্দুকের গুলিতে, তিন জন মারা পড়েন গাড়ি দুর্ঘটনায়, আত্মহত্যা করেন দু’জন, একজনকে পাওয়া যায় গলা কাটা অবস্থায়। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ মারা যান তিন জন। ক্যারাটের মোক্ষম মারে ভেঙে দেওয়া হয় একজনের গলা। মাত্র দুজন নাকি স্বাভাবিকভাবে মারা গিয়েছিলেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, একই মামলার সঙ্গে যুক্ত ১৮ জন সাক্ষীর তিন বছরের মধ্যে মারা পড়ার সম্ভাবনা গাণিতিক ভাবে নেই বললেই চলে।
তাই সেই অভিশপ্ত দিনের পর ৫০ বছর পরেও জন ফিটজেরাল্ড কেনেডির হত্যা আজও প্রহেলিকা।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া ও দ্য গার্ডিয়ান
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।