আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাড়াবাড়ি কাড়াকাড়ি

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক লোকাল পণ্ডিত বলেছেন, ভাড়াবাড়ি এবং বাড়াবাড়ি_কোনোটাই ভালো না। ভাড়াবাড়িতে পোহাতে হয় অতিরিক্ত ভাড়ার যন্ত্রণা, আর বাড়াবাড়িতে পোহাতে হয় কিল-ঘুষির যন্ত্রণা। সে দিন ফার্মগেট থেকে রিকশায় চড়ে বাসায় ফিরছিলাম। রিকশার গতি খুব দ্রুত ছিল। তাই মোড় নেওয়ার সময় অসাবধানতাবশত আরেকটা রিকশার গায়ে একটু লেগে গেল।

কেন লাগল, এটা নিয়ে ওই রিকশাওয়ালা এত বেশি বাড়াবাড়ি করল যে, একদম কিল-ঘুষি নিয়ে তেড়ে আসতে লাগল। রিকশাওয়ালার এই মারমুখী অবস্থা দেখে আমি বিচলিত হয়ে পড়লেও যার দিকে কিল-ঘুষি নিয়ে তেড়ে আসছে, তার মধ্যে বিচলিত হওয়ার কোনো লক্ষণই দেখা গেল না। ওই রিকশাওয়ালা চলে গেলে আমি আমার রিকশাওয়ালাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলাম। রিকশাওয়ালা বলল, "আমি চুপচাপ আছিলাম দুইটা কারণে। এক নম্বর কারণ হইল, তার বাড়ি এই এলাকায়।

হেয় যতই বাড়াবাড়ি করুক, আমি যদি কিছু বলতে যাই, তাইলে হের লোকজন আইসা আমারে ঠ্যাঙ্গাইব। দুই নম্বর কারণ হইল, আইজ হোক আর কাইল হোক, সে আমার এলাকায় যাইব। তখন আমি শোধটা নিমু। আমিও তখন হেবি্ব বাড়াবাড়ি করুম। " ঈশপের গল্পে যেমন একটা শিক্ষণীয় বিষয় থাকে, উলি্লখিত ঘটনারও তেমন একটা শিক্ষণীয় দিক আছে।

সেটা হচ্ছে, মানুষ তার নিজের সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী বাড়াবাড়ি করে। আর বাড়াবাড়ি করার সময় চিন্তা করে না, যার সঙ্গে বাড়াবাড়িটা করা হচ্ছে, আগামীতে তারও সুদিন আসতে পারে। কথা কি বেশি ভারি হয়ে যাচ্ছে? ভারি কথার জ্বালাতন থেকে মুক্তি দিতেই এখন হালকা ধাঁচের একটা গল্প বলব। অবশ্যই বাড়াবাড়ি নিয়ে। এক লোক তার এক ব্যবসায়ী বন্ধুর কাছে নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করল, আমার বউ আজকাল খুবই বাড়াবাড়ি করছে।

কিছুদিন আগেও সে মুখে বকাঝকা করত। এখন হাতের কাছে যা পায়, ছুড়ে মারে। গতকালও আমার দিকে চেয়ার ছুড়ে মারল। ব্যবসায়ী বন্ধু মক্কেল ধরতে পারার আনন্দে আনন্দিত হয়ে বলল, ভাবীর এই বাড়াবাড়ির হাত থেকে তুই যদি সুরক্ষিত থাকতে চাস, তাহলে কালই আমার দোকানে চলে আয়। আমি প্লাস্টিকের জিনিসপত্রের দোকান দিয়েছি।

তুই প্লাস্টিকের চেয়ার, থালা-বাটি নিয়ে যাবি। মনে রাখবি, কাঠ বা টিনের জিনিস গায়ে লাগলে যত ব্যথা পাওয়া যায়, প্লাস্টিকের জিনিস গায়ে লাগলে কিন্তু তত ব্যথা পাওয়া যায় না। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। তবে ইদানীং বাড়াবাড়ি রকমের মারামারির সূত্র ধরে একটা খেলা চালু হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। জানেন সেই খেলাটা কী? রেসলিং।

সে দিন মাছবাজারে গিয়ে মাছওয়ালাদের বাড়াবাড়ি চোখে পড়ল। এক কাস্টমারের সঙ্গে এক মাছওয়ালার কথা কাটাকাটি হওয়ার পরপরই সব মাছওয়ালা এই কাস্টমারের দিকে তেড়ে আসে মারার জন্য। তারা যখন তাকে তাড়া করতে করতে রাস্তা পর্যন্ত চলে আসে, তখন বাজার কমিটি তাদের ফেরায় এবং মাছবাজারে ফেরত পাঠায়। একটু পরেই বাজার থেকে ভেসে আসতে লাগল ব্যাপক চেঁচামেচির শব্দ। কী ব্যাপার? গিয়ে দেখি বেশির ভাগ মাছওয়ালা মাটিতে বসে কপাল চাপড়াচ্ছে আর আহাজারি করছে।

স্বল্প সময়ের তদন্তে জানা গেল, তারা যখন সদলবলে কাস্টমারকে ধাওয়া করতে যায়, এই চান্সে বাজারে বসবাসরত বেওয়ারিশ কুকুররা এসে ডজন ডজন মাছ মুখে নিয়ে চম্পট দিয়েছে। উপরোক্ত ঘটনা থেকে আমরা এই শিক্ষা পেলাম যে, বাড়াবাড়ির ফল খুব একটা সুবিধার হয় না।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.