টাইফুন আক্রান্ত ফিলিপাইনে ত্রাণ তত্পরতা চালাতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির সঙ্গে নতুন সামরিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। গতকাল সোমবার ফিলিপাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, নতুন চুক্তির মধ্য দিয়ে সাবেক উপনিবেশটি থেকে যুক্তরাষ্ট্র বেশ কিছু সুবিধা আদায় করবে এবং সে দেশে আরও কয়েক বছর মার্কিন সেনারা অবস্থানের সুযোগ পাবে।
মধ্য ফিলিপাইনে টাইফুন হাইয়ানের আঘাতে বিধ্বস্ত অঞ্চলে মার্কিন সেনাবাহিনী জরুরি ত্রাণ বিতরণের কাজ করছে। তবে ফিলিপাইনের এমন দুর্বল মুহূর্তেও দেশটিকে কোনো ছাড় দিচ্ছে না মার্কিনরা।
রয়টার্স জানায়, যুক্তরাষ্ট্র বেশ কয়েক বছর ধরে ফিলিপাইনকে নতুন নিরাপত্তা চুক্তিতে আবদ্ধ করার চেষ্টা করে আসছিল।
এ চুক্তির লক্ষ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক উপনিবেশটিতে মার্কিন সেনাদের আরও বেশি করে এবং বেশি দিনের জন্য অবস্থানের আইনগত ভিত্তি তৈরি করা। নতুন চুক্তির বলে ফিলিপাইনের ভূখণ্ডে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে মানবিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বেশি মাত্রায় ত্রাণ এবং নৌ অভিযানের জন্য বেশি অস্ত্রশস্ত্র ও উপকরণ গুদামজাতের অধিকার লাভ করবে যুক্তরাষ্ট্র।
দেশ দুটি গত মাসে চারবার বৈঠকে বসলেও ফিলিপাইনের আইন ও সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার কারণে সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে দুই দেশের সরকারই চুক্তি করতে বদ্ধপরিকর ছিল। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ চুক্তির মধ্য দিয়ে এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ওবামা সরকারের দাপট আরও বৃদ্ধি পাবে।
ফিলিপাইনের পররাষ্ট্রসচিব আলবার্ট ডেল রোজারিও সাংবাদিকদের বলেন, ‘টাইফুনের আঘাতে মধ্য ফিলিপাইনে বিপুল ধ্বংসযজ্ঞ ঘটে যাওয়ায় আমাদের ত্রাণ, উদ্ধার তত্পরতার মতো যেসব সহযোগিতা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নিতে হচ্ছে, সেগুলো ঠিকঠাক মতো পেতেই আমাদের এ কাঠামোগত সহযোগিতা চুক্তিটি করতে হচ্ছে। ’
১৯৯০-এর দশকের শুরুতেও ফিলিপাইনে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি সামরিক ঘাঁটি ছিল। ওই ঘাঁটিগুলোকে আরও কয়েক বছর থাকতে দিতে ফিলিপাইন সরকারের ওপরে চাপ তৈরি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু সে সময় ফিলিপাইন সরকার যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে রাজি হয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সাবেক উপনিবেশটি ছাড়তে হয়।
ঝড় ও বন্ধুত্ব
৮ নভেম্বরের ঝড়টিতে ফিলিপাইনের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়, উদ্বাস্তু হয়ে যায় ৪৪ লাখ মানুষ এবং ফসল ও বাড়িঘরের ক্ষতি হয় প্রায় দুই হাজার ৪০০ কোটি পেসো (প্রায় চার হাজার ২৬২ কোটি টাকা)।
ঝড়ের পরেই দুর্গত এলাকায় খাবার, পানি ও অন্যান্য সহযোগিতা দিতে এবং সড়কপথ, নৌ ও বিমানবন্দর খুলে দেওয়ার কাজে হাত লাগাতে যুক্তরাষ্ট্র ৫০টি জাহাজ ও বেশ কিছু যুদ্ধ বিমান পাঠায়।
এ জন্য ওয়াশিংটন ম্যানিলাকে ত্রাণ ও আবাসন উপকরণ এবং অন্যান্য খাতে ব্যয়ের জন্য পাঁচ কোটি ২০ লাখ ডলার (৪০৩ কোটি টাকা) ঋণ দিয়েছে। অবশ্য এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের হাত দিয়ে প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় হবে তিন কোটি ডলার (২৩৩ কোটি টাকা)। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে দেশটিতে বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস জর্জ ওয়াশিংটন ও কয়েকটি উদ্ধারকারী জাহাজ পাঠিয়েছে।
ফিলিপাইনের পররাষ্ট্রসচিব আলবার্ট ডেল রোজারিওর সঙ্গে বৈঠকের পর নিউজার্সির কংগ্রেস সদস্য ক্রিস স্মিথ সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঝড়টি আমাদের সবাইকে আরও ঘনিষ্ঠ করেছে। ... আমরা বুঝতে পারছি, এটা বন্ধুত্বের সবচেয়ে মূল্যবান রত্ন। যেকোনো মূল্যে এটিকে রক্ষা করতে হবে। আমার মনে হয়, এর প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে অনেক দিন ধরে আটকে থাকা আরও বহু বিষয়ে আমরা দ্রুত সমঝোতায় পৌঁছাতে পারব। ’
জাতিসংঘের জনহিতকর দপ্তর বলছে, ফিলিপাইনে খাবার, পানি ও বাসস্থানের মতো জরুরি মানবিক ত্রাণ এখনো খুবই অপ্রতুল এবং এগুলোর দীর্ঘমেয়াদি সরবরাহের কোনো ব্যবস্থা আজও হয়নি।
দপ্তরটি বলছে, দেশজুড়ে ত্রাণ তত্পরতা চালানোর জন্য এ খুব দ্রুত ৩৪ কোটি ৮০ লাখ ডলারের (প্রায় দুই হাজার ৭০৩ কোটি টাকা) তহবিল প্রয়োজন।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।