চক্ষু মেলিয়া তাকানোর পর থেকে খালি বাঁদরামি করি যাহা দেখি সবই নয়া লাগে , , পাখির মতো মন হলেও,কলিজা বাঘের মতো , মানুষের মতো খালি দেখতে তে তে তে
রাঙ্গামাটি ঘুরে সকাল সকাল রউনা দিলাম খাগড়াছড়ির দিকে। আর কয়েকদিন থাকলে হয়তো মন্দ হতো না। এই পার্বত্য অঞ্চলে যতই ঘুরি কেবল সময় চলে যায় , চোখ ও মন অতৃপ্ত রয়ে যায় য় য় য় য় য় যাই হোক সিএনজি করে চলে এলাম শহরের দোয়েল চত্বরে এখানে নতুন বাস স্ট্যান্ড। এখান থেকে বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির বাস পাওয়া যাবে। বাসে উঠে বসতে পারলেও পা ও ব্যাগ নিয়ে বিড়ম্বনায় পরলাম, রাখার জায়গা পাচ্ছি না, মানুষের তো কচ্ছপের মত পা গুটানোর সুবিধা নেই বা কাঙ্গারুর মত থলে নেই, তাই কোন মতে বসলাম।
রাঙ্গামাটি ছাড়িয়ে খাগড়াছড়ির পথে এগিয়ে যাচ্ছি। কেন জানি মনে হচ্ছে চারপাশের গাছপালার সবুজ একটু রুক্ষ হয়ে যাচ্ছে, লোকাল বাস হওয়াতে ষ্টেশন ছাড়াই থেকে যায়। পাহাড়ি মানুষ জন উঠছে নামছে, ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে, ছেলেরা অবশ্য ভিতরের চেয়ে বাঁশের ছাদেই বেশ প্রফুল্ল।
ঢাকা থেকে কিভাবে যাবেনঃ ঢাকা থেকে আসার জন্য ফকিরের পুল , সায়দাবাদ , কলাবাগান থেকে অনেক নন এসি বাস আছে ভাড়াসহ বিস্তারিত
থাকা ও খাওয়াঃ পর্যটন মোটেল ৩০০ থেকে ৩০০০ টাকা
ফোন- ৮৮০-০৩৭১-৬২০৮৪,৮৮০-০৩৭১-৬২০৮৫
হোটেল শৈল সুবর্ণা সিঙ্গেল - ৩০০ থেকে ৬০০ ডাবল - ১০০০ টাকা এছাড়াও আরও কিছু থাকার জায়গা রয়েছে ।
খাগড়াছড়ি এসে সিস্টেম রেস্টুরেন্ট না খেয়ে গেলে ভ্রমণ অপূর্ণ থেকে যাবে।
এছাড়াও পাঙ্খাই পারাতে খাংময় এবং নিউজিল্যান্ড ক্যাফে আছে ভালো খাবারের জন্য ।
খাগড়াছড়ি জেলাঃ
২,৬৯৯.৫৬ বর্গ কি.মি এর এই জেলায় উপজেলা ০৮টি (খাগড়াছড়ি সদর, দীঘিনালা, পানছড়ি, মাটিরাঙ্গা, মানিকছড়ি, মহালছড়ি, লক্ষ্মীছড়িও রামগড়) থানা ০৯টি পৌরসভা ৩টি (খাগড়াছড়ি, রামগড় ও মাটিরাঙ্গা)। পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা, দক্ষিণ-পশ্চিম-চট্টগ্রাম জেলা,
পশ্চিমে-ফেণী নদী ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যএর অবস্থা। মোট জনসংখ্যার আদিবাসী ৫২% এদের মধ্যে চাকমা,মারমা , ত্রিপুরা বেশি।
এভাবেই চান্দের গাড়িতে করে কাজে যায় তারা
খাগড়াছড়ির স্কুল, ছবিটি দেয়ার কারন হল , দেয়াল পোস্টার টা
আলুটিলা গুহাঃ আলুটিলা যেতে হলে শহর থেকে লোকাল বাস আছে ।
আলুটিলা মাটিরাঙ্গাতে অবস্থিত, ব্যাটারির গাড়ি থাকলেও যে গুলোতে যাওয়া যায় না । আমরা রাঙ্গামাটি থেকে বাসে নামলাম এইখানে খাগড়াছড়ি ০ কিমি।
এখান থেকে সামনে সোজা শহর আর বাম দিকের রাস্তা চলে গেছে মাটিরাঙ্গার দিকে। ভালো করে খাওয়া দাওয়া ও প্রাকৃতিক কাজ সেরে বের হবেন কারন আলু টিলা ও রিসাং ঝর্নার আশেপাশে কোন ভাত খাবার দোকান নেই এবং কোন বাথরুম নেই। তবে হালকা খাবার পাওয়া যাবে, এবং হালকা বাথরুম করতে পারবেন বনে জঙ্গলে।
আলুটিলায় যেতে প্রবেশ ৫ টাকা করে এবং মশাল কিনতে হবে ১০ টাকা করে ।
আলুটিলায় প্রবেশ
তেমন দুঃসাহসিক কোন কাজ না তেমন , কারেন্ট গেলে ঢাকা শহরে অনেকের বাসা এমন গুহার মত হয়ে যায়। তবুও এটা আমাদের প্রথম গুহা ভ্রমণ ।
খাগড়াছড়ি
গুহাতে নামার পথ ২৬৬ টি সিঁড়ি সুন্দর করে বানিয়ে দিয়েছে, হাঁটবেন আর গুহা ভ্রমণ করবেন
গুহার প্রবেশ
এবার গুহার ভিতরের পর্যায়ক্রমিক কিছু ছবি , মশাল নিয়ে যাওয়াতে বেশ উত্তেজক লাগলেও গুহা নিয়ে অনেক জল্পনা কল্পনা থাকলেও ভিতরে চিপসের প্যাকেট জুস আর মশালের বাঁশ গুলো পুরো পরিবেশটাকে বদলিয়ে দিয়েছে। একটা ব্যাপার আমি ভেবে হয়রান চিপস আর জুস এখানে কেন, গুহাতে এর কাজ কি , ভিতরে চলাচলে সবসময় সতর্ক থাকতে হয়, মশাল এর এলো বেশি সময় থাকে না যে পিকনিক করা যাবে।
একদিকে প্রবেশ করে ২৮২ ফুট দৈর্ঘ্যের গুহা ভ্রমণ শেষে আরেকদিনে বের হবেন, গুহার ভিতরে কোন বিষাক্ত প্রানি নেই ( মানুষ আছে আর কিছু লাগে)
রিসাং ঝর্নাঃ
আলুটিলা ঘুরে গেটে এসে আবার দাঁড়িয়ে রইলাম লোকাল বাসের জন্য। ৫ টাকা ভাড়া দিয়ে পৌঁছে গেলাম রিসাং এর গেটে।
গেট থেকে ২.১০ কিমি হেটে যেতে হবে ঝর্না পর্যন্ত। কিন্তু হাঁটা পর মনে হল ৩ কিমি এর বেশি হবে আর পাহাড়ি পথে ৩ কিমি আর সময় কম থাকলে বেশ কষ্ট কর। গল্প করতে করতে হাঁটা দিলাম, কিন্তু পথ আর শেষ হয় না, কেবল নিচে নামছি আর ভাবছি ফেরার সময় হালুয়া টাইট হয়ে যাবে
অনেক হাঁটার পর ঝর্নার আওয়াজ পাচ্ছি ফাক ফোঁকরে দেখতেও পাই কিন্তু আমরা নিচে নামার পথ পাচ্ছি না , ইটের রাস্তাও শেষ, ঝর্না থেকে আমরা অনেক উপরে এখনও।
যেহেতু সরকারের ছত্রছায়ায় আছে নিচে নামার অবশ্যই সিঁড়ি বানিয়ে দিবে সামনে আরেকটু এগিয়ে এবার সিঁড়ি পেলাম।
সিঁড়িও কম না
ঝর্না দেখে মাথা পুরাই নষ্ট , স্লিপ খাওয়া ঝর্না এই প্রথম দেখলাম। এই ঢালু অংশ স্লিপ খাওয়ার জন্য পিছন দিয়ে ঝর্নায় উঠে স্লিপ খেয়ে নামা যায়। আর দেখতে কাছে মনে হলেও অনেক উঁচু। স্লিপ খাওয়ার ঢালু অংশ পুরু শ্যাওলাতে ঢাকা ।
খুবই পিচ্ছিল অনেকে শিরিশ কাগজ নিয়ে যায় উঠার পথ গুলো ঘষে নেই যেন না পরে যায়। আর স্লিপ খেতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই নিচে পানি কোমর পর্যন্ত যারা পিছন দিয়ে পাহাড় বেয়ে উঠতে পারবেন না তারা সামনে দিয়ে ঢালু দিয়ে উঠবেন , তবুও উঠে স্লিপ খাবেন, কারন এরকম ঝর্না সারা বান্দরবান ঘুরেও পাবেন না। সাথে একটা অতিরিক্ত প্যান্ট নিয়ে যাবেন। স্লিপ খেতে খেতে প্যান্ট পিছনে ফুত হয়ে যায়। ঝর্নার আসে পাশে অনেক ফুটো প্যান্ট পরে থাকে।
মানুষ এখানেই ফেলে যায় ।
ঝর্নায় প্রচুর পানি ছিল
শ্যাওলা ময় ঢালু অংশ। উপর থেকে পিছলা খাবেন ।
পানির স্রোতের সামনে দাঁড়ানোই যায় না
ঝর্নায় গোসলের এটা নৈসর্গিক সুখ আছে যা আর কোথাও পাওয়া যায় না। সুযোগ থাকলে প্রতি মাসেই ঝর্নায় যেতাম।
তবুও ফিরে আসতে হবে এই শহরে এটাই যে আমার আদিম ঠিকানা।
এছাড়াও ঘুরতে পারেন দুই টিলা ও তিন টিলা,তৈদুছড়া ঝরনা, শতায়ু বর্ষী বটগাছ,মানিকছড়ির রাজবাড়ি, দীঘিনালার বড়াদম দীঘি, রামগড়ের চা বাগান, তৎকালীন ইপিআর এর সূতিকাগার, পানছড়ির শান্তিপুর অরন্যকুটির
একদিনে ঘুরে আসতে পারেন ঢাকা থেকেঃ
রাতের সব শেষ বাসে উঠলে সকাল ৮ :৩০ টার দিকে পৌঁছে যাবেন খাগড়াছড়ি আলুটিলা গুহায়। খাগড়াছড়ি শহর পর্যন্ত যেতে হবে না। আপনি মাটিরাঙ্গা নামবেন। হেল্পার কে বলবেন আলুটিলার সামনে নামিয়ে দিতে যা খাগড়াছড়ি থেকে ৭ কিমি আগে।
আলুটিলা ঘুরে এবার রিসাং যাবেন। দুপুরের মধ্যে কাম শেষ। ঢাকায় আসার জন্য ২ টি পথ আছে। রিসাং এর গেটে থেকে লোকাল বাসে করে চট্টগ্রাম আসুন সেখান থেকে বিকেলের বাস পাবেন। ( খাগড়াছড়ি- চট্টগ্রাম আসতে ৪ ঘণ্টা লাগবে)।
আরেকটি হল রিসাং থেকে লোকাল বাসে করে শহরের এসে দুপুর ২ টায় সৌদিয়া সহ অনেক বাস আছে, যেগুলোতে রাত ১২ টায় ঢাকা পৌছাবেন।
পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখুন , , রেখে আসবেন পদচিহ্ন আর নিয়ে আসবেন শুধুই ফটোগ্রাফ।
=============================================
সাজিদ ঢাকা'র ভ্রমণ পোস্ট সংকলন
=============================================
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।