আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শঙ্কিত নির্বাচন কমিশন আগেই সেনাবাহিনী চায়

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাঠপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কিত নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ অবস্থায় তারা আগেভাগে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে চায়।

গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবিষয়ক বৈঠকে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের কাছে এমনই প্রস্তাব দিয়েছে ইসি।

 বৈঠকে উপস্থিত সূত্র জানায়, ইসির প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ১ ডিসেম্বর থেকে সেনাবাহিনীর শীতকালীন মহড়া শুরু হবে। ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে এ মহড়া শেষ হবে।

এরপর মাঠপর্যায়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা যাবে।

তবে কমিশন কবে থেকে সেনাবাহিনী চায়, সে বিষয়ে তারা সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেনি। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ থেকে কমিশনকে সুনির্দিষ্ট তারিখ জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে।

কমিশন সচিবালয় সূত্র জানায়, সশস্ত্র বাহিনী যে প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে সেনাবাহিনীকে ১০-১২ দিনের বেশি মাঠপর্যায়ে পাওয়া যাবে না। কারণ, তফসিল অনুযায়ী ৫ জানুয়ারি ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

কমিশন সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালের নির্বাচনে ১২ দিনের জন্য সেনা মোতায়েন হয়েছিল।

গতকাল সকালে নির্বাচন কমিশনের সভাকক্ষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে এ সভা হয়। সভার শুরুতে সিইসি বলেন, রাজনৈতিক সমঝোতা না হলেও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী নির্বাচন করতেই হবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে মাঠে ভোটারদের মধ্যে ভীতি কাজ করছে। তাঁদের মনোবল চাঙা করার জন্য অতীতের নির্বাচনে যে সময়ে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে, এবার তার চেয়ে একটু আগে মোতায়েনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

সভায় একজন নির্বাচন কমিশনার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় থেকে সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রস্তাব দেন। সিইসি বলেন, শীতকালীন মহড়ার পর সেনা মোতায়েন হলে নির্বাচনী কাজে কাঙ্ক্ষিত সহযোগিতায় অনেকটা দেরি হয়ে যাবে।

নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, গতবারের মতো এবারও প্রতিটি জেলায় এক ব্যাটালিয়ন সেনাসদস্য থাকবেন। প্রতিটি উপজেলায় টহল দেবে দুই থেকে চারটি করে প্লাটুন।

সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনী জেলা সদরে অবস্থান করে সেখান থেকে উপজেলায় টহল দেবে।

কমিশন উপজেলা পর্যায়ে সেনাক্যাম্প স্থাপনের বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ বলেছে, অতিমাত্রায় ব্যয়ের কারণে তা সম্ভব না-ও হতে পারে। বৈঠক সূত্র জানায়, সভায় একটি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে জানানো হয়েছে, এবারের নির্বাচন প্রতিরোধে বিএনপি জোরালোভাবে মাঠে নামবে না। তবে জামায়াত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নাশকতা চালাতে পারে। রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড চালাতে পারে।

তাদের মূল লক্ষ্য স্থানীয় নির্বাচন অফিস, নির্বাচনী মালামাল ও নির্বাচন কর্মকর্তা। এর অংশ হিসেবে তারা প্রায় আড়াই হাজার কেন্দ্রে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে।

র‌্যাব জানায়, নির্বাচনবিরোধীরা সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে আক্রমণ করে তা টেলিভিশনে প্রচারের মাধ্যমে আতঙ্ক ছড়াতে চায়। সে জন্য শুধু রাস্তা নয়, পাড়া-মহল্লায় টহল বাড়াতে হবে।

বিজিবি জানিয়েছে, এবার তাদের ১০ হাজার সদস্য মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।

আগের নির্বাচনে তাদের সাত হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

আর অবৈধ প্রচার উপকরণ অপসারণ প্রশ্নে পুলিশ জানিয়েছে, এসব উপকরণ অপসারণের মতো জনবল ও টাকা তাদের নেই। তবে কমিশন বলেছে, যেকোনো উপায়ে অবৈধ উপকরণ অপসারণ করতে হবে।

সভা শেষে সিইসি কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনে নিয়মিত বাহিনী থাকবে। তবে এক দিনে নির্বাচন হবে বিধায় নিয়মিত বাহিনীর পক্ষে পরিবেশ সুষ্ঠু রাখা সম্ভব না-ও হতে পারে।

তাই অতীতে যেমন সেনাবাহিনী মোতায়েন হয়েছে, এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।

সিইসি জানান, কবে সেনা মোতায়েন হবে, তা রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে ঠিক করা হবে। তার আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিচ্ছে। পুলিশ তাদের আশ্বস্ত করেছে, কয়েক দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি উন্নত হবে।

তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৩ ডিসেম্বর।

নিয়ম অনুযায়ী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দু-চার দিন পর রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়। এ হিসেবে কমিশন সেনা মোতায়েনের ব্যাপারে তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানাবে ১৩ ডিসেম্বরের পরে।

একতরফা নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিতর্কিত হবে কি না, জানতে চাইলে সিইসি বলেন, এখানে বিতর্কের কিছু নেই। সেনাবাহিনী বলেছে, কমিশন যেভাবে চাইবে, তারা সেভাবে সহায়তা করতে প্রস্তুত।

২০০৯ সালে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের মাধ্যমে সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞা থেকে ‘সশস্ত্র বাহিনী’ শব্দটি বাদ দেয়।

সম্প্রতি আবার আরপিও সংশোধনের সময় বিএনপি সশস্ত্র বাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করে। কিন্তু তা আমলে নেওয়া হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এর আগে একাধিকবার বলেছেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করা হবে না। ২০১১ সালে কমিশন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ও পৌর নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি জানালেও সরকার তা আমলে নেয়নি।

ইতিমধ্যে নাগরিক সমাজের কেউ কেউ কমিশনের এবারের সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, একতরফা নির্বাচনে ব্যবহার করা হলে সেনাবাহিনী বিতর্কিত হবে।

সিইসি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পরের দিনই তফসিল ঘোষণার কথা ছিল। আমরা তা করিনি। বরং আমাদের পরামর্শে রাষ্ট্রপতি সমঝোতার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তাতে সাড়া দিয়ে কেউ কেউ আলোচনাও করেছেন।

বিএনপি না এলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে কি না, জানতে চাইলে সিইসি বলেন, নির্বাচন স্বচ্ছ হবে। গ্রহণযোগ্য হবে কি হবে না, সেটা তাঁরা দেখতে পাবেন।

সিইসি ছাড়াও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক, আবু হাফিজ, জাবেদ আলী ও মো. শাহ নেওয়াজ, স্বরাষ্ট্রসচিব সি কিউ কে মুশতাক আহমেদ, কমিশন সচিব মোহাম্মদ সাদিক, সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার বেলাল শফিউল হক, এনএসআইয়ের মহাপরিচালক মনজুর আহমেদ, আনসারের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল নাজিম উদ্দিন, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ, কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল কাজী সারোয়ার হোসেন, সশস্ত্র বাহিনী গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সিরাজুল ইসলাম সিকদার, র‌্যাবের মহাপরিচালক মোখলেসুর রহমান প্রমুখ।

বিদেশি পর্যবেক্ষক: গতকাল বিকেলে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের পর্যবেক্ষণ-সম্পর্কিত বৈঠক শেষে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, বিগত দিনে যারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছে, তাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। অন্য কেউ পর্যবেক্ষণ করতে চাইলে তাদের আবেদন করতে হবে।

কমিশন সচিবালয় সূত্র জানায়, দেশি পর্যবেক্ষকদের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ৪০টি প্রতিষ্ঠানের ১৬ হাজার পর্যবেক্ষকের আবেদন পাওয়া গেছে। বর্তমানে ইসির নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থার সংখ্যা ১২০টি।

 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.