তুমি আমি আমরা ...... আজ কবিতা লিখা হবে । উপাদান হিসেবে লাগবে --
(১) ঝনঝনে রুপোলী জোছনা ( এই জোছনা যখন ঝড়ে পড়ে তখন ঝনঝন শব্দ হয় )
(২)কালো কালির বলপেন
(৩) ধবধবে সাদা এক দিস্তা কাগজ
(৪) ফ্লাক্স ভরা চা ( দুধ চা , কৌটার ) এবং
(৫) মোবাইলে ঈশিতাকে কানেক্ট করা
১ নাম্বার শর্ত পূরণ হয়েছে । আজ দুনিয়া উপচানো জোছনা । এই জোছনায় নির্দ্বিধায় বিদ্যুৎ বিভাগ নাকে সরিষা ক্ষেত বুনে ঘুম দিতে পারে । আজ রাতে বিদ্যুতের প্রয়োজন নেই ।
আজ প্রয়োজন নীরবতার ।
পকেটে টাকা না থাকা সর্তেও দুই এবং তিন নাম্বার শর্তও পূরণ হয়ে গেছে । গলির শেষ মাথায়‘ তারিক জেনারেল স্টোর ‘ থেকে কাগজ বলপেন জোগাড় হয়েছে । তারিক মামা বাকিতে দিয়েছেন । সেইসাথে চাপাতা আর একটা ডেনিশের কৌটাও দিয়েছেন ।
ফ্লাক্স ভরা চাইয়ের মুখে লাগাম পড়িয়ে টেবিলের উপর রাখলাম ।
এখন রইল বাকি এক । পাঁচ নাম্বার পয়েন্ট । সেই পাঁচ এখন পুরো পরিকল্পনা ভেস্তে দিচ্ছে । ঈশিতাকে মোবাইলে পাওয়া যাচ্ছে না ।
তার ফোন সুইচ অফ। এইটাই স্বাভাবিক । তার এখন এইচএসসি পরীক্ষা চলছে । এই সময়ে আকিব নিজেই তাকে ফোন সুইচ অফ করে বেশুমার পড়াশুনা করতে বলেছে । ফোন খোলা পেলেই কেবল কথা বলতে ইচ্ছা করে ।
মনে হয় জাস্ট ২ মিনিট । ফোন করে শুধুমাত্র জিজ্ঞাস করবো - ঈশ , কেমন আছো তাড়াতাড়ি বোলো
ঈশিতা বলবে – ঈশ ভালো আছে ।
আমি বলবো – কি করছো তাড়াতাড়ি বোলো
ঈশ বলবে – জারন বিজারন পড়ছি । আর তখনই তার এক্সামের কথা মনে হবে । সে খট করে ফোন কেটে দিবে।
মামলা ডিসমিস ।
কিন্তু সমস্যা হল এতো সহজে মামলা ডিসমিস হয় না । মামলা হাত পা গজিয়ে ‘ ট্রান্সফর্মার ‘ মুভির মতো দানব হয়ে উঠে ।
- ঈশ কি করো তাড়াতাড়ি বোলো ?
- ঈশ অস্থির , সে পায়চারী করছিলাম । তুমি এতো দেরীতে ফোন দিলা কেন ?
ব্যাস – মামলা হাত ছাড়া হয়ে গেল মাননীয় আদালত ।
এইবার কথা চলতে থাকবে । ফিসফিসে কথা গুটিসুটি হয়ে পথ পাড়ি দেয় । একসময় সে পূর্ব দিক থেকে লাল একটাসূর্যকে টেনে বসিয়ে দেয় আর’কে মিশন রোডের খোলা মাঠে ।
কিন্তু না । এইভাবে সূর্য টানাটানি করলে এই মেয়ের আর জিন্দিগিতে এইচএসসি পাশ করা হবে না ।
একরাতে আম দিয়ে ডাল খেয়ে তাদের সন্তান বলবে --
বাবা – সব দোষ তোমার !
আকিব আমের আঁঠি চুষতে চুষতে বলবে – ‘ আমি আবার কি করলাম ! ‘
তাদের সন্তান বলবে - আমার মাকে কেন তুমি পরীক্ষায় ফোন দিয়েছিলে ? মা সারারাত ফোনে কথা বলতো তাই এক্সামের আগে পড়াশুনা করতে পারে নাই । এইচএসসিতে মারলো গোল্ডেন ডাব্বা । তুমি কি জানো জুনায়েদের মা ঐ যে ঐ বদরাগী মহিলাটা DU থেকে বোটানিতে এম এ ! আর তোমার জন্য আম্মা আজ আন্ডার ইন্টার ! ভাবা যায় ? সব দোষ তোমার !
গুরুতর অপবাদ ! সন্তানের কাছে এতো কঠিন অপবাদের মুখোমুখি আকিব হতে চায় না । এর চেয়ে রাতে ফোন না করলেই হল । আদালত খুশি ।
মামলা এনডিং ।
সমস্যা হয়েছে আজকে । আজ আকিবের কবিতা লিখতে ইচ্ছা করছে । ইচ্ছার পরিমান ভয়াবহ । তার ইচ্ছা পুরনের জন্য আজ জোছনা পুড়িয়ে দিচ্ছে লোকালয় ।
কঞ্জুস তারিক মামা বিনা মেঘে ঘূর্ণিঝড়ের মতো বাকিতে বলপেন কাগজ চাপাতা ডেনিশের কৌটা সাথে মোবাইলের কার্ড দিয়ে দিছে ! এখন শুধুমাত্র ঈশিতার জন্য সব সিস্টেম আটকা !
কথা হচ্ছে , কেন রে ভাই ... কবিতা লিখতে ঈশিতা লাগবে কেন ? সে কি তোমাকে লাইন বলে দিবে নাকি ছন্দ ধরে দিবে ?
না , ঈশ এর কোনটাই করবে না । ঈশিতা ফোনের অপরপ্রান্তে কিছুক্ষন পর ভারী নিঃশ্বাস ছেড়ে কেবলমাত্র জানান দিবে সে আছে । আকিবের পাশে ঈশ আছে । এইটুকুই ।
ঈশিতা ছাড়া আকিব কবিতা লিখতে অনেক চেষ্টা করেছে ।
নো ফয়দা ! আকিব পারে না । এইটা আইনেস্টাইন সাহেবের ভর – শক্তি সমীকরণের মতোই সত্য । ফোনের এক প্রান্তে অবশ্যই ঈশিতাকে থাকতেই হবে । তার ভারী নিঃশ্বাসে শব্দ আকিব এই প্রান্ত থেকে অনুভব করেই হবে আর এইভাবেই সাদা কাগজ ভর্তি কবিতা ফুটে উঠবে ।
রাত গভীর থেকে আরও গভীরে ডুকে যাচ্ছে ।
আকিব আর’কে মিশন রোডের খোলা মাঠে বসে আছে । তার ডান দিকে একটু দূরে মাঠের দক্ষিন পার্শে বসে আছে জ্বলজ্বলে চোখ নিয়ে এক কুকুর । সেও কি কাউকে আশা করছে , আকিবের মতো ?
ছাপ্পান বার ফোন ডায়াল করা হয়েছে । ঈশিতার ফোন সুইচ অফ । স্বাভাবিক , ছাপ্পান কোটি বার ফোন দিলেও ফোন সুইচ অফ পাওয়া যাবে ।
একসময় মোবাইলের চার্জ ই শেষ হয়ে যাবে । ঈশিতাকে কানেক্ট করা যাবে না ।
আকিব মাথার পিছনে হাত রেখে খোলা মাঠে শুয়ে পড়লো । ফ্যাক্সে চা আছে । খেতে ইচ্ছা করছে না ।
এমনকি এমন ঝনঝনিয়ে ঝড়ে পড়া জোছনাও ভালো লাগছে না । ঝনঝন শব্দ এখন মগজে আঘাত করছে । দ্রিম দ্রিম দ্রিম । যেন বলছে – ‘ ঈশ ফোন ধরো ... দ্রিম ... ঈশ ফোন ধরছো না কেন ... দ্রিম ... দ্রিম ... ঈশ ... ‘
বিরক্তি লাগছে চারিদিকে এতো বিরক্তি কেন ?
আকিব সাদা কাগজ কুটি কুটি করে ছিঁড়ছে । কুটি কুটি করা কাগজ গুলো সে জোছনার দিকে ছুড়ে দিবে ।
একটা ভয়াবহ সংঘর্ষ হোক । ভেঙ্গে পড়ুক ঐ চাঁদ ! চাঁদ ভাঙ্গার শব্দে ঈশিতার ঘুম ভেঙ্গে যাবে । সে ভয় পেয়ে ফোন সুইচ অন করবে , আকিবকে ফোন করবে । আকিবের এখন আর কবিতা লিখবার ইচ্ছা নেই । একবার মাত্র ঈশিতার একটুখানি কথা শুনতে পাবার ইচ্ছা ।
আকিব ছেঁড়া কাগজের টুকরো দু হাত ভরে নিল ।
ডান পাশে ঝিমানো কুকুরটা দেখলো - মাঠের মাঝখানে দাড়িয়ে এক যুবক আসমানের দিকে সাদা মুক্তোর মতো কিছু জিনিস ছুড়ে দিল । একটা যান্ত্রিক শব্দ তার কানে আসচ্ছে । ছোট ঐ যন্ত্র থেকে । যন্ত্রটাকে মোবাইল বলে ।
যন্ত্রটা জ্বলছে । নিভছে ।
হ্যালো ...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।