আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অবরুদ্ধ শহরে সুরের মূর্ছনা

সেই যে কবি টি এস এলিয়ট তাঁর বিখ্যাত ‘দ্য লাভ সং অব আলফ্রেড জে প্রুফরক’ কবিতায় লিখেছিলেন, ‘সন্ধ্যা যেন ইথারে অজ্ঞান রোগীর মতো শুয়ে আছে আকাশে। ’

ঢাকা শহরের অবস্থাও যেন তেমনি। জীবনযাত্রার স্বাভাবিক স্পন্দন নেই। প্রায় অচল, অচেতন হয়ে আছে অবরোধে। জীবিকার দায় এড়ানো মুশকিল।

সেই তাগিদেই নগরবাসী পথে নামছেন আতঙ্ক-উৎকণ্ঠাকে সঙ্গী করে। ব্যতিক্রম বনানীর আর্মি স্টেডিয়াম। উদ্বিগ্ন দিনের শেষে সেখানে সন্ধ্যা ঘনিয়েছিল মানব চিত্তের সুকুমার বৃত্তির অনন্য সৃজনসম্ভার সাজিয়ে। সব প্রতিকূলতার মধ্যেও মানবহূদয়ের এ অপার মহিমা কখনো ম্লান হবে না, ধ্বংসস্তূপের ওপর বুনে দেবে সৃজনের বীজ—যেন সেই চিরন্তন সত্যকেই প্রকাশ করে তুলেছিল শুদ্ধ সুরের মূর্ছনা। সেই সুরের আহ্বানে সাড়া দিয়ে গতকালও প্রচুর দর্শক সমাগম ঘটেছিল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবে।



আর্মি স্টেডিয়ামে গত ২৮ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের তৃতীয় দিন ছিল গতকাল শনিবার। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত এ উৎসবের সহযোগী কলকাতার সংগীত রিসার্চ একাডেমি (এসআরএ)। এতে সার্বিক সহযোগিতা দিচ্ছে প্রথম আলো। সহযোগিতায় রয়েছে দ্য ডেইলি স্টার ও এবিসি রেডিও। সম্প্রচার সহযোগিতায় মাছরাঙা টেলিভিশন।

আজ রোববার অনুষ্ঠানের সমাপনী। বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে ভোর পর্যন্ত চলছে গান-বাজনা ও নৃত্যের পরিবেশনা।

তৃতীয় দিনের অনুষ্ঠান উৎসর্গ করা হয় বাংলাদেশের আধুনিক নৃত্যকলার পথিকৃৎ বুলবুল চৌধুরীকে। প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী প্রধান অতিথি হিসেবে অধিবেশনের উদ্বোধন করেন। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন যদি উচ্চাঙ্গসংগীত একাডেমি করতে চায়, তবে তাতে সরকারি সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

বিশেষ অতিথি ছিলেন দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। আলোচনা করেন এসআরএর নির্বাহী পরিচালক রবি মাথুর ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবুল খায়ের।


গানে-বাজনায়
: শ্যামকল্যাণ রাগে সন্ধ্যার স্তব্ধতাকে সরোদের ঝংকারে মুখর করে তুলে রাজরূপা চৌধুরী শুরু করেছিলেন তৃতীয় দিনের অধিবেশন। সঙ্গে তবলায় ছিলেন পণ্ডিত যোগেশ শামসি। পরে ছিল কুমার মারদুরের কণ্ঠসংগীত।

এরপর তিনি একটি কবিরের ভজন পরিবেশন করেন। রাত নয়টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা সন্তুরে ঝিঞ্চট রাগে আলাপ, জোড়, ঝালা, ঝাপতাল ও তিনতাল বাজিয়ে শোনান।

তৃতীয় দিনের পরিবেশনার মধ্যে আরও ছিল পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকরের কণ্ঠসংগীত। তবলা লহরা পরিবেশন করেন পণ্ডিত স্বপন চৌধুরী। বাংলাদেশের শিল্পী রিনাত ফোওজিয়া পরিবেশন করেন সেতারবাদন।

এরপর কণ্ঠসংগীত ছিল বিদুষী পদ্মা তালওয়ালকরের। শেষে পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার বাঁশির সুর।


আগের রাতে: শুক্রবার
মধ্যরাতে দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনে বিদুষী বম্বে জয়শ্রী পরিবেশন করেন রাগ কাফি। এ ছাড়া তিনি ছোট ছোট কয়েকটি কর্ণাটকি সংগীত পরিবেশন করেন। মৃদঙ্গম ও বেহালার বাদনের সঙ্গে তাঁর পরিবেশনা অনবদ্য হয়ে উঠেছিল।

পরে পূর্বায়ন চট্টোপাধ্যায় সেতারে রাগদরবারি কানাড়া ও পরে একটি লোকসংগীতের সুর বাজিয়ে শোনান। বাংলাদেশের অসিত দে পরিবেশন করেন রাগ কুরিয়া কল্যাণ। পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী শুরু করেন রাগমালকোশ দিয়ে। বন্দিস ছিল ‘মরজি খোদা কি’। পরে তিনি পরিবেশন করেন ‘আজব তেরি দুনিয়া আল্লামিয়া’, এরপর পরিবেশন করেন একটি তারানা।

এরপর ছিল ভৈরবীরাগের একটি ঠুমরি। শেষ করেছিলেন যোগিয়া রাগাশ্রয়ী বাংলা গান ‘যামিনী হলো যে ভোর গেয়ে’। রাত শেষ হয়েছিল চারুকেশী রাগে ওস্তাদ রইস খানের সেতারের সুর মূর্ছনায়।

আজকের অনুষ্ঠান: সমাপনী দিনের অনুষ্ঠান শুরু হবে তামান্না রহমানের মণিপুরি নাচ দিয়ে। আরও রয়েছে কণ্ঠসংগীত সুচিশ্রী রায়, সন্তুর রাহুল শর্মা, কণ্ঠসংগীত পণ্ডিত উলহাস কাশালকার, রুদ্রবীণা ওস্তাদ বাহাউদ্দিন ডাগর, কণ্ঠসংগীত ওস্তাদ রশীদ খান ও বেগম পারভিন সুলতানা।

 

 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।