আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংবাদের দৃশ্য-প্রতিমা

প্রতিদিন ভোরে সংবাদপত্র পাঠের মধ্য দিয়ে একজন নাগরিকের দিনের শুরু হয়। খাদ্য না হলে যেমন জীবনধারণ সম্ভব নয়, তেমনি সংবাদ ছাড়াও আধুনিক নগর-জীবন অচল। সভ্যতার এই আদি উপকরণটি কখনো পাঠকের মনোজগৎ নির্মাণ করে, কখনো বা পাঠকের ইচ্ছে অনুযায়ী নিজেও পরিবর্তিত হয়। ওয়াকিলুর রহমানের দৃশ্যশিল্প খবরখাদ্য যেন পাঠক ও সংবাদমাধ্যমের এই জটিল সম্পর্কেরই বয়ান।
গত ২৯ নভেম্বর শুক্রবার চট্টগ্রামের শিল্পকলা একাডেমীর গ্যালারিতে উদ্বোধন হলো এই দৃশ্যশিল্পের প্রদর্শনী।

কাল সোমবার প্রদর্শনীর শেষ দিন।
শিল্পকলার দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার গ্যালারিজুড়ে চলছে এই প্রদর্শনী। প্রদর্শনী কক্ষ এমনকি সিঁড়ি ও বারান্দায় সর্বত্র কেবল সংবাদ ও ছবি। প্রথম আলোয় প্রকাশিত গত ১৫ বছরের উল্লেখযোগ্য সংবাদকে প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেয়াল, মেঝে ও ছাদের নানা তলে ফেলা হয়েছে। সংবাদপত্রের প্রকট ও প্রবল দৃশ্যগ্রাহ্য রূপ তো আছেই, এর পাশাপাশি প্রজেক্টরের ছুটে আসা আলো দর্শকদের গায়ে পড়ে তৈরি করছিল সংবাদভাস্কর্য।

গ্যালারিতে পা দিতেই সংবাদের জগতে হুট করে ঢুকে পড়ছিলেন দর্শক। আর নিজের শরীরটাকে চিত্রিত সংবাদপত্রে রূপ নিতে দেখে চমকেও উঠেছিলেন।
প্রাথমিক এই চমক ভেঙে গেলে ক্ষণে ক্ষণে নানা স্রোতে ঘুরপাক খেতে থাকে দর্শকের স্মৃতি। কোথাও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার দৃশ্যপট, কোথাও রানা প্লাজা ভবন ধসে পড়ার চিত্র—একের পর এক হাজির হচ্ছিল চোখের সামনে। আর দর্শককে নিয়ে যাচ্ছিল ঘটনার কেন্দ্রে ও তীব্রতর বিন্দুতে।


বিহ্বল দর্শক যখন অস্বস্তি নিয়ে ফিরে দাঁড়ায় তখনই হয়তো চোখ পড়ে শনিবারের বিশেষ প্রতিবেদনের দিকে। সাফল্যের খবরও তো এ দেশে নেহাত কম নয়! বাংলাদেশের পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে ধরা সাকিবরাও বুঝি উঁকি দিয়ে যায়।
ওয়াকিলুর রহমান বলেন, ‘সব মিলিয়ে গত ১৫ বছরের বাংলাদেশকে একটি সংবাদপত্রের মাধ্যমে হাজির করা হয়েছে। প্রথম আলো এখানে উপলক্ষ্য মাত্র। আমি মিডিয়ার সঙ্গে পাঠকদের সম্পর্কটাকে খুলে দেখাতে চেয়েছি।


১৪টি প্রজেক্টরের মাধ্যমে প্রথম আলোর নির্বাচিত ছবি ও খবর তুলে ধরা হয় প্রদর্শনীতে। আর এর সঙ্গে যোগ করা হয় ছাপাখানা ও সড়কের যান চলাচলের শব্দ। সব মিলিয়ে আবহ শব্দ দারুণ এক সাসপেন্স তৈরি করে দর্শকের মনে।
প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ওয়াকিলুর রহমানের দীর্ঘদিনের সহযোগী ও বন্ধু শিল্পী ঢালী আল মামুন। পাঁচ বছর আগে প্রথম আলোর ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে কাগজের ছায়া নামের একটি যৌথ স্থাপনাকর্ম করেছিলেন তিনি ওয়াকিলুর রহমানের সঙ্গে।

সেই যৌথ স্থাপনা প্রদর্শনীটিও দর্শকনন্দিত হয়েছিল।
কাগজের ছায়ার পর সংবাদমাধ্যম নিয়ে ওয়াকিলুর রহমানের এই নতুন দৃশ্যশিল্পকে কীভাবে মূল্যায়ন করছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে ঢালী আল মামুন বলেন, ‘আমি এবং ওয়াকিল দীর্ঘদিন ধরে এক সঙ্গে কাজ করেছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে জানি তিনি সব সময় সমসাময়িক বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে চান। পাশাপাশি শিল্পের ভাষা নিয়েও প্রচুর নিরীক্ষা করেন। এই দৃশ্যশিল্পেও সেটাই দেখা গেছে।

সংবাদের মনস্তত্ত্ব এবং জনমানুষের ওপর তার প্রভাব খুলে দেখাতে চেয়েছেন তিনি। পাশাপাশি দর্শককে বিভিন্ন সময়ের মধ্য দিয়েও তিনি পরিভ্রমণ করিয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা দর্শকেরাও এই দৃশ্যশিল্পের উপাদান হয়ে পড়ে। এ ধরনের শিল্পভাষ্য নির্মাণ এক কথায় অভাবনীয়। ’
প্রদর্শনীর প্রথম তিন দিন সংবাদপত্রবিষয়ক পারফরম্যান্স আর্ট প্রদর্শন করেন চট্টগ্রামের শিল্পীরা।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.