প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি তীক্ষ্ন নজরদারি করছে সরকার। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার গঠনের পর সচিবালয়ে সরকারবিরোধী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তৎপরতা দৃশ্যমান হওয়ার পর থেকেই এমন তীক্ষ্ন নজরদারি চলছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। মূলত প্রশাসনে কেউ যাতে কোনোরকম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারেন সে জন্যই নজরদারির মাত্রা বাড়ানো হয়েছে।
দীর্ঘ দিন ধরে প্রশাসনে পদোন্নতি ও পদায়ন নিয়ে একধরনের চাপা অসন্তোষ চলছে। বিশেষ করে বার বার পদোন্নতি ও পছন্দের কর্মস্থলে পদায়ন থেকে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্যে এ অসন্তোষ বিরাজ করছে। মহাজোট সরকারের শেষ দিকে বঞ্চিত কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছেন। এমনকি পদোন্নতি ও পদায়নের জন্য তদবির করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন সচিবের কাছে। কিন্তু তাদের এসব তদবির খুব একটা আমলে নেননি সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা। ফলে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্যে ওই সময় থেকেই রীতিমতো হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সূত্র জানায়, ১৮ নভেম্বর নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনের পর থেকেই তৎপর হয়ে ওঠেন প্রশাসনের বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা নিজেদের মধ্যে একাধিক বৈঠকও করেন। এরপর ২৭ নভেম্বর একজন ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) সচিবের নেতৃত্বে প্রায় অর্ধশত বঞ্চিত কর্মকর্তা দেখা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা ও জনপ্রশাসন সচিব আবদুস সোবহান সিকদারের সঙ্গে। এ সময় তারা তাদের পদায়ন ও পদোন্নতির বিষয়ে দুই শীর্ষ আমলার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
অন্যদিকে, বর্তমান সরকারের সময় সুবিধা পাওয়া যুগ্ম-সচিবদের একটি প্রতিনিধি দল রবিবার মন্ত্রিপরিষদ ও জনপ্রশাসন সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারাও নিজেদের আরও সুবিধা দাবি করেন। দাবি জানান, দ্রুত পদোন্নতি দেওয়ার। সব মিলিয়ে সরকারবিরোধী তো বটেই, সরকারের সুবিধাভোগী কর্মকর্তারা পর্যন্ত এখন দাবি-দাওয়া আদায়ে তৎপর হয়ে উঠেছেন। এ কারণে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সচিবালয়ে কর্মরত একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তারা যাতে কোনোরকম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারেন সে জন্য কঠোর নজরদারি রাখা হয়েছে। বিশেষ করে সরকারবিরোধী এবং পদোন্নতি ও পদায়নবঞ্চিত কর্মকর্তাদের বিষয়ে নজরদারি তুলনামূলক বেশি। তারা কখন, কোথায় কী করছেন, কার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন; এক কথায় তাদের সামগ্রিক কর্মকাণ্ড নজরদারি করা হচ্ছে। অন্য একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, প্রশাসনে নজরদারি আগেও ছিল, এখনো আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। তবে এ সমটায় নজরদারির পরিমাণ আগের তুলনায় একটু বেশি। এর কারণ ব্যাখ্যা করে ওই কর্মকর্তা বলেন, সরকার সিভিল প্রশাসনের বর্তমান কাঠামোয় কোনোরকম বিশৃঙ্খলা বা অরাজকতা সৃষ্টি করতে দেবে না। কেউ যদি এমন চেষ্টা করেন তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শুধু প্রশসানের কর্মকর্তাদের বিষয়েই গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়নি। এর পাশাপাশি সচিবালয়কেন্দ্রিক যেসব কর্মচারী সংগঠন রয়েছে সেগুলোর কর্মকাণ্ডেরও ওপরও কড়া নজরদারি চলছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।