আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আইয়ুব বাচ্চুর ঘোর কাটছে না...

ঘোর কাটছে না আইয়ুব বাচ্চুর। শুধু আইয়ুবই বা বলি কেন, ঘোরে রয়েছেন স্বপন, মাসুদ, রোমেল, শামিমরাও। ওঁরা ঘোরে-ঘোরে ঘুরছেন, সাউন্ড ঠিক করছেন, গিটারের তারে টুংটাং শব্দ হাজার-লাখো গুণ তেজে ছড়িয়ে যাচ্ছে নয়াদিল্লির পুরোনা কেল্লার সবুজে মাখামাখি চড়াই-উতরাই ও খন্ডহরে। আইয়ুব বাচ্চুর ঠোঁটের কোণে তৃপ্তির ছিটে। স্বগতোক্তির মতো অবলীলায় বলছেন, ‘এত আদর, এত সম্মান, এত আপন করে নেওয়া, এত আন্তরিকতা আগে দেখিনি, আগে পাইনি।

রাতটুকু পুয়েছে সবে। আগের সন্ধ্যায় রাইসিনা হিলসে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে দেশ-বিদেশের অতিথিদের গান শুনিয়ে ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছেন আইয়ুব বাচ্চুরা। ইতিহাসই বটে। রাষ্ট্রপতি ভবনের আঙিনায় এত বছর ধরে গানবাজনার আসরে কখনোই যে রক-ব্যান্ডের ঝনঝনানি শোনা যায়নি! ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় চিরাচরিত গানবাজনার ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে ব্যান্ডকে জায়গা দেওয়ার দিনে ডেকে নিলেন বাংলাদেশের ‘এলআরবি’কে। এ কি যে সে কথা? ভারতের ‘অদ্বৈত’, পাকিস্তানের ‘স্ট্রিংস’-এর পাশে আইয়ুবদের ‘এলআরবি’! ঘোর না-কাটা প্রায় বাকহারা আইয়ুব বাচ্চু বারবার শুধু বলতেই থাকেন, ‘সুপার্ব, অবিশ্বাস্য, চমৎকার।

জীবন অনেক কিছুই দিয়েছে। কিন্তু মহামহিম রাষ্ট্রপতি যে ভালোবাসা ও সম্মান দেখালেন, তা কোনো দিন পাইনি। গলায় উত্তরীয় পরিয়ে দিলেন, বুকে টেনে নিলেন, পিঠে চাপড় মেরে উৎসাহিত করলেন। উফ, কেমন যেন স্বপ্ন-স্বপ্ন লাগছে এখনো। এ বাঙালিরই সম্মান।

ঘাড়-প্যাঁচানো রুপালি গিটারে টুংটাং করে আইয়ুব বাচ্চু বললেন, ‘বুঝলেন, এত বছরের সংগীতজীবনের অপ্রাপ্তি বোধ হয় এটুকুই ছিল। কাল রাতে সেটাও পেয়ে গেলাম। ’

সার্কের সদস্য আট দেশের সঙ্গে পর্যবেক্ষক দেশ হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়া। এই নয় দেশের ১৫টি ব্যান্ডের তিন দিনের এক রক উৎসবের ঠিক আগের দিন রাষ্ট্রপতি ভবনে আমন্ত্রণ পান আইয়ুবেরা। প্রত্যেকের জন্য বরাদ্দ আধঘণ্টা।

অনেক ভেবেচিন্তে আইয়ুবেরা চারটি গান বেছে নেন। ‘প্রথমে গাই “খুব সহজে দুঃখ দাও তুমি আমায়, খুব সহজে আপন করে নাও”, তারপর, “এখন অনেক রাত। ” তিন নম্বরে গাইলাম “গতকাল রাতে বিবেক আমার, স্বপ্নের কড়া নেড়ে করল জিজ্ঞেস, আমায় ছাড়া আর কত দিন রবে?” আর, চার নম্বরটা “সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে, সেই আমি কেন তোমাকে দুঃখ দিলেম...। ’’’

চারটাই তো প্রেম, ভালোবাসা ও আর্তির গান? অথচ আপনারা তো বাংলাদেশের সমসাময়িক ঘটনা নিয়েও গান বেঁধেছেন?

প্রশ্নটা লুফে নিলেন আইয়ুব বাচ্চু। ‘অবশ্যই।

হকার নিয়ে গান আছে, পেনশন নিয়ে গান আছে, বদলে যাওয়ার আহ্বান নিয়ে গান আছে, শাহবাগ নিয়ে আছে, প্রেম-ভালোবাসার আর্তিও আছে। কিন্তু অন্য কোথাও গান গাওয়া আর রাষ্ট্রপতির অতিথি হয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনে থেকে তাঁর সামনে গাওয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে। গাইবার আগে তাই অনেক ভাবতে হয়েছে কী গাওয়া যায় তা নিয়ে। ’

তাই ওই চারটে গান?

‘না না। আরও একটা গানের মুখরাটুকু শুধু গেয়েছি।

সেটাই শেষ গান। গুরুজির, ঠাকুরজির গান। ’

গুরুজি? ঠাকুরজি?

‘ওই স্রেফ মুখরাটুকু। “যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে। ’’’

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর! তা রবিঠাকুরের গান আপনারা গান না কেন? গাইতেই তো পারেন?

‘না।

গাই না। আমরা ফোকও গাই না। সে জন্য আমাদের কথাও শুনতে হয় অনেক। কিন্তু আমরা মনে করি, ফোকের সঙ্গে ফিউশন যায় না। ফোক হলো মাটির গান।

মাটিকে মাটিই রাখা ভালো। তা ছাড়া আমার চেয়ে অনেকেই অনেক ভালো ফোক গাইতে পারেন। সে জন্য ওদিকটা মাড়াই না। ’

রবীন্দ্রসংগীতও কি সেই জন্য গান না? আড়ষ্টতা?

‘বলতে পারেন। তবে এবার থেকে এই “একলা চলো” গানটা গাইবার চেষ্টা করব।

অমিতাভ বচ্চন যখন গেয়েছেন, তখন আমিও সাহসী হতে পারি। ’

দিল্লি তাহলে আপনাকে সম্মান ও অভিভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাহসীও করে তুলল?

শুনেই হা হা হাসলেন আইয়ুব বাচ্চু। ‘সে কথা বলতেই পারেন। এবারের দিল্লি সফর একটা ম্যাজিকের মতো। আমরা ম্যাডিসন স্কোয়ারে গেয়েছি, ওয়েম্বলিতে গেয়েছি।

কিন্তু রাষ্ট্রপতি ভবন ও এই দিল্লিতে গাওয়া, এ এক অন্য পৃথিবী। হিন্দিতে বলি, ইয়ে দিল্লি যো নেহি দেখা, সো দুনিয়া নেহি দেখা। ’

একটি স্মরণীয় সফর ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.