www.theeconomist2011@yahoo.com
সাম্প্রতিক রাজনীতিতে ব্যাপক সহিংসতা ও আমোদ-প্রমোদের ব্যবস্থা করেছে দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল গুলো। আম্লীগের অধীনে নির্বাচনে গিয়ে নিশ্চিত জয়কে আক্কেল সেলামী হিসাবে বিএনপি ও তার জোট কোনোভাবেই মানতে পারেনা-তাই লাগাতার অবরোধ। অন্যদিকে নিজেদের অধীনে অবাধ ও আন্তঃনিরপেক্ষ(নিজ দলের সকলের প্রতি নিরপেক্ষ) নির্বাচনের মাধ্যমে আম্লীগ ও তার জোট ইতিমধ্যেই অনেকের জয় নিশ্চিত করেছে। বাকী কেবল জানুয়ারীর ৫ তারিখটি। সেদিনই নিশ্চিত বিজয় মিছিল করার দিবাস্বপ্নে বিভোর আম্লীগের স্বপ্নে যেন পেট্রল বোমা ছুঁড়ে মারে সাবেক পতিত স্বৈরাচার আম্লীগের ভাই ও দেশবাসীর বিনোদক হুসেইন মু এরশাদ।
দিশেহারা আম্লীগ সর্ষেফুল দেখে-নাটকের পর নাটকের অবতারণায় বৃদ্ধ এরশাদ নিজের অস্ত্রটি নিজের উপর ব্যবহার করার হুমকি দেন-তার বাড়ীর চারপাশে ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক’ সরকারের সুসভ্য আইনশৃংখলা বাহিনীর সরব উপস্থিতি দেখে। মূলত আজকের পোস্টটি দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী ও আম্লীগের সত্যিকার শুভাকাংখীদের জন্যই লেখা বাকীটা আমার সহব্লগারদের বিবেচনার উপর রইলো।
তের বাতিল পনের চালুর সংক্ষিপ্ত ইতিকথাঃ
নাটকীয় ভাবে মামলায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হয় মহামান্য প্রধান বিচারপতি জনাব খায়রুল হক সাহেবের হাত ধরে। যা আনতে দেশকে বহন করতে হয়েছিলো বহু বহু হরতাল ও সম্পদের মালিকানা। বিষয়টি ধান ভানতে শীবের গীত টাইপ হলেও-সত্য এবং তার দায় আজকের সঙ-বিধানপ্রেমীদের নিতে হবে, নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া উচিত।
জ্যেষ্ঠ বিচারককে ডিঙ্গিয়ে জুনিয়রকে আম্লীগ সরকার প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করেন খায়রুল হক সাহেবকে-এখানে যে কেউ নীলনক্সা, দুর্বিসন্ধি খুজঁতে পারেন। আম্লীগ বলতে পারে এর আগেও এরকম সুপারসিড হয়েছে-যা সত্য। এর আগে যারা কুকর্ম করে যে রকম পরিনতি ভোগ করেছে-সেটা আম্লীগকেও তাহলে মাথা পেতে নিতে হবে। সংবিধান সংশোধনের জন্য গঠিত কমিটির সামনে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি দল, সাধারন মানুষ, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক শিক্ষক-সবাই নিরপেক্ষ অন্তর্বতী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথাই বলেছিলো, এমনকি আম্লীগও বলেছিলো। এ্যামিকাস কিউরিগণও এই মত দেন।
কিন্তু কেন চেঞ্জ হলো, এর জবাবে সুজনের বদিউল আলম মজুমদার সাহেবের একটি উক্তি ‘‘এর জন্য কেবল একজন মাত্র ব্যক্তি দায়ী, যিনি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’’। আমার ব্যক্তিগত বিশ্লেষণ হলো শেখ হাসিনা যিনি নিজে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করলেন, আদায় করে ছাড়লেন, নিজে আজো পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী আছেন সেরকম সরকারের অধীনে নির্বাচন করেই। তাহলে তিনি কেন এখান থেকে ১৯৮৬ সালের মতো ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেলেন? আমার ধারণা এ বিষয়ে হয়তো কোনো দেশী-বিদেশী শক্তি আম্লীগের বন্ধু সেজে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলতে এরকম একটি অবাস্তব ফরমুলা প্রসব করে দেন ভবিষ্যত বাংলাদেশকে বিপদে ফেলার জন্য। ঐ অপশক্তি আম্লীগকে নির্লজ্জের মতো উলঙ্গ হয়ে সমর্থন দানের প্রতিশ্রুতি হয়তো দিয়েছিলেন-যা রক্ষার নজির অনুমিত হচ্ছে।
আম্লীগের মামা বাড়ীর আব্দার, অথচ দাদাদের ঘুম হারামঃ
বাংলাদেশের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আম্লীগের মামা বাড়ীর আব্দার আছে, জনগণ সেটা বিবেচনা করবে-কতটা পূরণ করা যায়-নাযায় তা বিবেচনা করবে।
আমাদের বন্ধু রাষ্ট্রগুলো, বিনিয়োগকারী রাষ্ট্রগুলো কিংবা আমাদের শুভাকাংখী বিভিন্ন দেশের উদ্বেগ উৎকণ্ঠাকে স্বাভাবিকভাবেই নিতে চাই। কিন্তু আমাদের নিকট প্রতিবেশী ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রীদের উক্তি, ভারতীয় কুটনীতিকের অতি তৎপরতা, সংবিধানের কথা বলে বিকৃত দলবৎ সংবিধানের অধীনে নির্বাচন করার তাগিদ দেওয়া, নির্বাচনোত্তর গ্রহনযোগ্যতা দেওয়া, নেপালের এক তরফা নির্বাচনের উদাহরণ হাজির করা, এরশাদকে বুঝিয়ে আম্লীগকে জয়ী ও এরশাদকে দ্বিতীয় দলের কান্ডারী বানানো, মৌলবাদী রাজনীতির দোহাই দিয়ে আম্লীগকে জয়ী করা-এভাবে ভারতের প্রতিবেশী দেশের জাতীয় নির্বাচনে জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে একটি দলকে নির্লজ্জ সমর্থন দেওয়াকে কোনো স্বাধীন দেশের দেশপ্রেমিক নাগরিক বন্ধুত্ব হিসাবে দেখতে পারেনা। দালালদের কাছে এসব তৎপরতাকে সুবিধাজনক মনে হলেও হতে পারে। আজ ভারতের এহেন কালো হস্তক্ষেপকে মেনে নিলে, কাল অন্যরা নতুন দালাল খুজেঁ তাদের মাধ্যমে বাংলাদেশকে নিয়ে খেলবে-যা খুবই বিপদজনক। দেশের নাগরিকরা যদি তাদের শাসককে নির্বাচিত করতে না পারে, মতলবী অন্যদেশ যদি তা ঠিক করার সুযোগ পায় তাহলে আমাদের ভবিষ্যত সিকিমের পথে রওনা হবে।
কারণ এখানে লেন্দুপ দর্জি আছে বাইডিফল্ট। জনগণকে ক্ষমতায়ন জরুরী, দালাল লেন্দুপ দর্জিদের ক্ষমতায়ন কখনোই নয়।
বন্ধু প্রতিবেশী ভারতকে যা বিবেচনা করতে হবেঃ
সত্যিকার বন্ধু বিপদে পাশে দাড়ায়, হতাশায় ভরসা দেয়, সুখের দিনে গলাগলিতে হাসে। বাংলাদেশ একটি অস্থির সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, দেশটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। মানুষ মরছে, মানুষ পুড়ছে, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অচল, চারদিকে আগুনের লেলিহান শিখা।
এই আগুনে এক ঘটি জল না দিয়ে যদি কেউ আলু পুড়া দিতে আসে-তাকে কি আমরা বন্ধু বলে ভাবতে পারি? এই বিবেচনার ভার আমি ভারতের সাধারণ নাগরিক, সুশীল সমাজ ও প্রকৃত মিডিয়ার কাছে দিতে চাই। উড়ে এসেই দৌড়ে গিয়ে হুসেইন মু এরশাদকে বুঝানো, মৌলবাদের ভয় দেখিয়ে একতরফা নির্বাচনে আনার চেষ্টাকে বুঝতে কমনসেন্সই যথেষ্ঠ। ভারতের সাথে বন্ধুত্ব হবে বাংলাদেশের, কোনো দলের কেন? এখানেই আমাদের হতাশা, ভয় এবং ক্ষোভ। ভারত কর্তৃক বহু অমিমাংসিত বিষয়ে আমাদের শত অনুরোধ-উপরোধ ভারত কখনোই কানে তুলেনা। অথচ বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এত তৎপরতা কেন? যে ভারত এখন এত তৎপরতা দেখাচ্ছে সেই ভারত আমাদের বর্তমান সরকারের কাছে এত কিছু পেয়েও শেখ হাসিনাকে এক ঘটি পানি দেয়নি মমতাকে অখুশী করে।
যে ভারত বাংলাদেশের বাহিনীকে ব্যবহার করে তাদের আসামী গ্রেফতার করে নিয়েছে, সেই ভারত কিভাবে বাংলাদেশের সাধারণ খেটে খাওয়া দরিদ্রের বুকে গুলি চালায়? সর্বোচ্চ দাবী পূরণ করার পরও শেখ হাসিনা ভারতের কাছে কিছুই পাননি,। ভারত কি শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের দেশের জনগণের কাছে ভারতের খেলার পুতুল বানাতে চায়? শেখ হাসিনা যদি ভারতের কাছ থেকে এক কিউসেক পানি না পান-তাহলে আমরা কি অনুমান করতে পারিনা যে, ভারত আমাদের কার জন্য কি করবে? তবুও ভারত আমাদের বন্ধু প্রতিবেশী, মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারত আমাদের যে সহায়তা সাহস শক্তি যুগিয়েছে-তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। সাহায্য করেছে সেটাই বিবেচনা করতে চাই, কেন করেছে-সেটা বিবেচনায় নিচ্ছিনা।
ভারতপ্রেমী দলকানাদের এখন করণীয়ঃ
ভারতের চাওয়া পাওয়াকে বাস্তবায়ন করেছেন শেখ হাসিনা, শেখ হাসিনা সরকার ভারতের কাছ থেকে কেবল মৌখিক প্রতিশ্রুতি ছাড়া আর কিছু পেয়েছেন বলে জানিনা। উপরন্ত শেখ হাসিনাকে বিব্রত করতে ভারত ফেলানীকে ঝুলিয়ে রেখেছে কাঁটাতারে, ফেলানীর মামলাটি নিয়ে করেছে সর্বোচ্চ তামাশা।
বাংলাদেশীদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণের জন্য তারা আনন্দে বর্বরোচিত উলঙ্গ অত্যাচার করে সেই অত্যাচারের ভিডিও উপহার দিয়েছে। আমরা এমন প্রতিবেশীকে কিভাবে সুহৃদ শুভাকাংখী ভাবতে পারি? পাক-চীন সীমান্তে গুলির ক্ষেত্রে ভারত যতটা সচেতন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ততটাই উদ্যত অবিবেচক। আজকে আম্লীগের যে কঠোর অনমনীয়তা দেশকে যে পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে তার পেছনে কারা, কিভাবে কাজ করছে তা দেশবাসী জানে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে যত প্রত্যক্ষ ভারতের হস্তক্ষেপ থাকবে এদেশের মানুষের কাছে আম্লীগের গ্রহনযোগ্যতা তত কমবে। ভারত যদি বাংলাদেশের মৌলবাদী রাজনীতির উত্থান নিয়ে মাথাব্যাথায় ভোগে এবং তার জন্য আম্লীগের কাছে দাওয়াই চায়, তাহলে খোদ দিল্লিতে মৌলবাদীরা নির্বাচনে জয়ী হলে তার দাওয়াই কি তারা আম্লীগের কাছ থেকে নিবে? মৌলবাদী রাজনীতির উত্থানে আমরা সবাই চিন্তিত-এর জন্য সমন্বিত সমাধান কাম্য, কোনো দলকে ভারতের হাতের পুলিশ হয়ে তার সমাধান করতে বলা হলে-তার সমাধানতো হবেই না বরং দলটি মৌলবাদীদের টার্গেটে পড়তে পারে-যা কাম্য নয়।
বাংলাদেশের বিদ্যমান সমস্যা বাংলাদেশের মানুষকেই তার সমাধান করতে হবে। আমাদের ঢোল ভারতের বাজানোর প্রয়োজনীয়তা নিশ্চয় আমাদের চেয়ে বেশী নয়।
চলমান সহিংসতা, বিরোধী জোটের দায় ও আম্লীগের শাখের করাত দশাঃ
নির্বাচন নিয়ে আম্লীগের মামাবাড়ীর আব্দার পূরণে বিরোধীদল সাড়া দেয়নি। বিরোধী দলের মনে পড়েছে কেএম হাসানের অধীনে যদি নির্বাচন করা না যায়, তাহলে স্বয়ং আম্লীগ প্রধানের অধীনে নির্বাচন তারা কোন বিবেচনায় মানতে পারে? কার্যত এরকম একটি পরিস্থিতি তৈরী করা হয়তো সরকারের লক্ষ্য ছিলো যে, যাতে প্রধান বিরোধীদল কোনোভাবেই নির্বাচনে না আসে। জয়ের ধারাবাহিকতা, জনমত সবই যখন বিএনপি জোটের পক্ষে-তখন একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কোনোভাবেই আ্ম্লীগের কাছে কাম্য হতে পারেনা।
ফলে তারা সে পথেই হেটেঁছে। কখনো কখনো বিএনপি-র মাজায় জোর নেই বলে বিএনপিকে রাস্তায় আমন্ত্রণ জানায় শাসক দল। যার কিছুটা প্রত্যক্ষ করছি এখন-এই সহিংসতা কোনো গণতন্ত্রে চলতে পারেনা, এমন আগুনকে সমর্থন করা যায়না-যে আগুন মানুষের জীবন ও সম্পদকে পুড়িয়ে দেয়। কারা করছে সেটা ধরাও শাসকের দায়িত্ব, জনতার সামনে প্রমানের দায়িত্বও শাসকের। বিশ্বাসযোগ্য উপস্থাপনার মাধ্যমে জনগনের জানার অধিকার আছে কারা করছে-এসব? কেউ কেউ বলেন পরিকল্পিতভাবে এসব করা হচ্ছে পশ্চিমা বিশ্বকে দেখানো যে, মৌলবাদীরা এসব করছে, যাতে বর্তমান শাসকদল পশ্চিমাদের কাছ থেকে সুবিধা পায়।
বাংলাদেশের যে ধর্মান্ধরা বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত হয়ে নিজেরা নিজেদের অমুসলিম ঘোষণা করছিল, নিজেদের শক্তিহীন করতো-তাদের সবাইকে বুঝে নাবুঝে বর্তমান শাসকদল এক কাতারে এনে তাদের শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছে-এটা নিশ্চয় পশ্চিমা বিশ্ব বুঝতে পারে। মৌলবাদীদের তান্ডব চললে ক্ষমতাসীন সরকার যে ব্যর্থ প্রমানিত হয়-সেটা মনে রাখা দরকার। সহিংসতা মৌলবাদীরা করুক বা গণতন্ত্রকামীরা করুক-তা কোনো বিবেচনাতেই কাম্য নয়। আরো কাম্য নয় বিরোধীমতকে মাটিচাপা দেওয়া, আন্ডারগ্রাউন্ডে পাঠানো। দলীয় অফিসে ভোররাতে মই বেয়ে গ্রিল কেটে যে করিৎকর্মরারা অসুস্থ্য নেতাকে গ্রেফতার করতে পারে, তারা সহিংসতা ছড়ানোদের গ্রেফতার করতে না পারলে আমাদের এই সন্দেহকেই প্রতিষ্ঠিত করে যে, এর পেছনে বড় কোনো মতলব থাকলেও থাকতে পারে।
এক্ষেত্রে জনগণকে দলনিরপেক্ষ হয়ে ভাবতে হবে, এর পরিনাম বাংলাদেশ রাষ্ট্রটিকে পিছিয়ে দিবে, বিপন্ন হবে আমাদের সকল স্বাধীনতা। চালাকীর খেলায় পুরানা খেলোয়ার আম্লীগ গোপনে দলভাঙ্গার নানান প্রলোভন বিলি করেছেন হয়তো, এতিম কয়েকটি দলকে লোভ দেখানো, তরিকতের মতো ভান্ডারী মৌলবাদীদের দুধকলা দিয়ে কোলে নেওয়া-এসব চালাতে থাকে শাসক দল। আম্লীগের ধারণা ছিলো এসব করে বিএনপিকে যে কোনো মূল্যে একা বানিয়ে নির্বাচন থেকে বিতাড়ন করা। তফশিল ঘোষণাও হয়ে গেলো। কিন্তু হায়! কাউকেই ক্রয় করা সম্ভব হলোনা, ১৮জোট থেকেও লোভ দেখিয়ে কাউকে আনা গেলোনা, কোনো ছোটদলও অংশ নিলোনা ।
আগের সরকার থেকেও আরো ছোট হয়ে পড়ে আম্লীগের জোট, কিন্তু ব্যাপক মন্ত্রীতে ভরে যায় জাতীয় পার্টি, জনগণ অবাক! এক সময় জাতীয় পাটিও নির্বাচন থেকে সরে যায়। স্বপ্নাতুর আম্লীগ যেন আকাশ থেকে পড়ে যায়, এক হাতে কোর্ট ফাইল অন্য হাতে তেলের শিশি নিয়ে কাছে ডাকে আম্লীগ। কিন্তু এরশাদ বেঁকে বসে-দরকষাকষির না মেলাতে। বাধ্য হয়ে সরকার এরশাদকে একই সাথে নানান লোভ ও ভয় দেখাতে থাকে । আম্লীগের চিপায় ও চাপায় পড়ে উপরন্ত এরশাদের রাজনীতি ও পাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়-কাজী জাফররা আলাদা হয়ে যায়।
এখানে আম্লীগ একটি অনৈতিক কাজ করেছে বলে মনে করি-যাতে পাঠক বুঝতে পারেন কেন এরশাদকে আত্মহত্যার হুমকি দিতে হয়? আপনি যদি কোনো পতিতার সাথেও কন্ট্রাক্টে যান-তাহলে আপনাকে আপনার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতেই হবে আপনি যদি সভ্য হন। নাকি আপনি দাবী করবেন, ‘‘পতিতার সঙ্গ নিয়েছি, কথা রাখবো মূল্য দিবো কেন? ওতো পতিতা, ওর চরিত্র নেই’’। কিন্তু সভ্যতা বলবে আপনি পতিতার চেয়েও খারাপ। এখানে আমি এরশাদকে পতিত হিসাবে বিবেচনা করলেও, তার সাথে কোনো চুক্তি থাকলে সেটা রক্ষা করাটাই সভ্যতা-যা আম্লীগ ভয় দেখিয়ে কিংবা লোভ দেখিয়ে দায় সারতে চায়। এরশাদকে এখন নির্বাচনে আনতে যারপরনাই তৎপর-সুযোগ বুঝে দলীয় নেতাকর্মীদের মনোভাবকে মূল্য দিয়ে এরশাদ এখন যে অবস্থান নিয়েছে তাতে আম্লীগের উলংগপনা প্রকাশিত হলেও জাতীয় পার্টির আয়ু বাড়বে-এটা প্রয়োজন গণতন্ত্রের স্বার্থে।
যেকোনো বিবেচনায় আম্লীগ এখন কার্যত চরম কাঁদার মধ্যে আছে।
সামনে কেবল একটি পথ, আম্লীগকে সেই পথটিই নিতে হবেঃ
ভুলপথে হাঁটা আম্লীগ এভাবে জনবিচ্ছিন্ন ও বন্ধুহীন হয়ে যাবে-তা আম্লীগ তো নয়ই-আমরাও কল্পনা করিনি। এখন আম্লীগ যদি নির্বাচন করে তাহলে সেটা গ্রহনযোগ্যতো হবেই না বরং তা দেশবাসী ও বিশ্ববাসির কাছে আম্লীগকে অগ্রহনযোগ্য করে দিবে। দ্রুতই হয়তো আবারো নির্বাচন করতে হবে-তখন অবশ্যই মাঠ আম্লীগের পক্ষে তো থাকবেই না বরং জনতার রোষ বাড়তে পারে, ভোটও কমবে। আর যদি আম্লীগকে বিরোধী জোট শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের মাধ্যমে বাধ্য করে কিংবা বিদেশীদের চাপে পড়ে শাসকদেরকে ইলেকশন করতে বাধ্য হতে হয়, তাহলেও আম্লীগের নৈতিক পরাজয় হবে নির্বাচনের আগেই।
উভয় সংকটে আম্লীগ এখন কেবল আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনের ভিতর দিয়ে নিজের অবস্থানকে ধরে রাখতে পারবে, জনগণের কাছে যেতে পারবে, ভোট চাইতে পারবে। অনেকেই বলেছেন হরতাল অবরোধে বিরোধীদলের ভোট কমছে, তাদের সাথে দ্বিমত করে বলতে চাই-সেটাই যদি সত্য হয় তাহলে ১৭৩দিন হরতাল করে কিভাবে আম্লীগ ক্ষমতায় এলো? লগি বৈঠার রক্ত দেখেও আম্লীগকে কিভাবে মানুষ ভোট দিলো? কারণ তৎকালীন শাসকের ব্যর্থতা। তাই আজকের আন্দোলন বরং শাসকের প্রতি মানুষের ঘৃণাকেই দ্বিগুন করবে। শাসকের একতরফা অগণতান্ত্রিক নির্বাচনী মতলবের প্রতি জনগণ সজাগ আছে, সুযোগ থাকলে ভোটের মাধ্যমে তার প্রমান আমরা দেখবো। গণতন্ত্রের স্বার্থে, দলীয় নেতাকর্মী শুভাকাংখীদের স্বার্থে, দেশের জনগণের স্বার্থে, উন্নয়নের স্বার্থে আম্লীগকে সকল দলের অংশগ্রহনের মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
ড. আকবর আলী খান, সুলতানা কামাল, শাহদীন মালিক, ড. কামাল কিংবা বদিউল আলম সাহেবরা বিএনপি করেন না-তাদের মতো সন্মানিত মানুষদের কথা, সাধারণ মানুষদের দাবী, শিক্ষক-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী-সাংবাদিক-সবার কথা বিবেচনায় নিন-একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন চাওয়ার ও পাওয়ার অধিকার এদেশের মানুষের আছে-সেটাকে মূল্য দিন। খেলায় আম্লীগ একটি পক্ষ, আবার রেফারীও থাকবে-সেই খেলায় জিততে পারে এমন খেলোয়ার পৃথিবীতে নেই। তাই নিজেদের অধীনে নয়, নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন-নিজেদের গ্রহনযোগ্যতাকে যাচাই করুন, গণতন্ত্রকে তার পথে হাটঁতে দিন। আম্লীগ একটি ঐতিহ্যবাহী দল-গণতন্ত্রের স্বার্থে এই দলটিকে এদেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে, স্রেফ দলীয় পতিতদের জেতানোর জন্য তামাশার নির্বাচনের দায় আম্লীগ নিবেনা-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
উৎসর্গঃ সাম্প্রতিক সহিংসতা ও গণতন্ত্রের গুলিতে নিহত নিরপরাধ মানুষ গুলোকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।