For it is easy to criticize and break down the spirit of others, but to know yourself takes a lifetime
****
আখেন, ট্রিয়ার এবং সারব্রুকেন; জার্মানির রাইনল্যান্ডে অবস্থিত তিনটি শহরের নাম। জার্মানির রাইন নদী এই তিন শহর ঘেঁষে প্রবাহিত হয়েছে। জায়গার নাম রাইনল্যান্ড রাখা হয়েছে বিখ্যাত নদী রাইনের নামে। শহরে বসবাসকারী জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠই জার্মান। তাদের দেখলে মনে হয় যে তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করছে।
নীরবে শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করলেও এই তিনটি শহরসহ সমগ্র রাইনল্যান্ডবাসীর মনে একটি দুঃখ আছে। এই দুঃখ শুধুমাত্র রাইনল্যান্ডবাসীর একার দুঃখ নয়। বরঞ্চ তা সমগ্র জার্মানির দুঃখ।
তাদের দুঃখের কথা জানতে হলে আমাদের আরও কিছুটা অতীতে তথা ১ম বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে ফিরে যেতে হবে।
***
সময়টা ১৯১৮ সাল, নভেম্বর মাস।
সবেমাত্র "দ্য গ্রেট ওয়ার"(পরবর্তীতে একে ১ম বিশ্বযুদ্ধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়) শেষ হয়েছে। পুরো জার্মানিতে থমথমে অবস্থা। সমগ্র জার্মানির ভাগ্য ঝুলে আছে মিত্রশক্তির হাতে। তাদের করুণার উপর নির্ভর করছে জার্মানির ভবিষ্যৎ কল্যাণ, উন্নতি ও হারানো গৌরব ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা। কিন্তু মিত্ররা কোনো দয়া প্রদর্শন করল না।
তারা জার্মানিকে বাধ্য করল এক নির্দয় ভার্সাই চুক্তিতে সই করতে। ভার্সাই চুক্তি; এমন অপমানজনক চুক্তি জার্মানরা আগে কখনো দেখেনি। এ যেন জার্মানিকে পরাশক্তি হিসেবে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেওয়ার নীল নকশা।
চুক্তি অনুযায়ী, সমগ্র যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ জার্মানিকে দিতে হবে। অথচ জার্মানির কোষাগার প্রায় শূন্য।
মিত্রদের মাঝে একমাত্র আমেরিকা কিছুটা সহানুভূতিশীল ছিল। কিন্তু ব্রিটেন আর ফ্রান্স একেবারে নির্দয় আচরণ করা শুরু করল। অবশ্য ফ্রান্স-ব্রিটেন জোর গলায় বলতে লাগল যে, এই নির্দয়তা প্রদর্শন করা তাদের জন্যে জায়েজ। তাদের যুক্তি, আমেরিকাকে রক্ষা করার জন্যে মাঝখানে আটলান্টিক আছে। কিন্তু ব্রিটেন ও ফ্রান্সকে এই আমৃত্যু শ্রেষ্ঠত্ব সন্ধানী জাতির হাত থেকে রক্ষা করবে কোন প্রাকৃতিক বাঁধা? বিশেষ করে ফ্রান্স এবং জার্মানি প্রতিবেশী রাষ্ট্র।
এই কারণে জার্মানির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে বিটেনের তুলনায় ফ্রান্সের উদ্বেগটা একটু বেশী।
মিত্রশক্তির পরিকল্পনা হল, জার্মানির বিষ দাঁত শুধুমাত্র উপড়ে ফেললে চলবে না, সেই সাথে তাকে খাঁচায় বন্দি করে রাখতে হবে। এর ফলশ্রুতিতে জার্মানির নীতিনির্ধারকেরা(মিত্রশক্তি) সিদ্ধান্ত নিল যে, জার্মান-ফ্রান্স সীমান্তের একটি অঞ্চল সম্পূর্নরূপে জার্মান সেনাবাহিনীমুক্ত থাকবে। অর্থাৎ, ঐ অঞ্চলের ত্রি সীমানায় সেনাবাহিনীর ছায়াও থাকতে পারবে না। এতে সুবিধা হবে যে, ঐ অঞ্চলে সেনাবাহিনী প্রবেশ মাত্রই, ফরাসীরা নিজ মাতৃভূমিকে জার্মান আক্রমণ থেকে রক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্যে যথেষ্ট সময় পাবে।
সুযোগ পেলে ফ্রান্সে প্রবেশের আগেই জার্মানিকে জার্মান সেনাবাহিনীকে জার্মানিতেই থামিয়ে দেওয়া যাবে। জার্মানিকে নজরে রাখার জন্যে সেখানে মিত্রবাহিনীর সেনাবাহিনী অনির্দিষ্টকালের জন্যে অবস্থান করবে। অবশ্য, মিত্রবাহিনীর পক্ষ থেকে অঙ্গীকার করা হয় যে তারা উক্ত অঞ্চল থেকে ধীরে ধীরে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নিবে(১৯৩০ সালে শেষ ফরাসি সৈন্য রাইনল্যান্ড ত্যাগ করে)।
জার্মানির মানুষ এই সিদ্ধান্তটিকে কোনোদিনও মন থেকে মেনে নিতে পারেনি। এটি নিছক কোনো চুক্তি নয়।
এ যে রীতিমত তীব্র অপমান। নিজ দেশের ভিতরে নিজ দেশের সেনাবাহিনী স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবে না!!! তার উপর নজরদারি করার জন্যে সেখানে অন্য দেশের সেনাদল অবস্থান করবে!!! দেশের সার্বভৌমত্ব বলে আর কিছু থাকল না।
জার্মানরা আশায় থাকে, একদিন এই অপমানের পালটা জবাব দেওয়া হবে।
****
১৯৩৬ সাল, ৭ই মার্চ।
রাইনল্যান্ড, জার্মানি।
সকাল সাতটায় তিন ব্যাটালিয়ন জার্মান সৈন্য রাইনল্যান্ডে প্রবেশ করে। সৈন্যদের এস্কোর্ট করে নিয়ে যাচ্ছিল এক স্কোয়ার্ড্রন মেসার্স্মিট(Messerschmitt) ফাইটার বিমান। বিমানগুলো সামনে থেকে কড়া নজরদারি প্রদান করছিল, যাতে গন্তব্যে পৌছুবার আগে কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনার সম্মুখীন হতে না হয়। সকাল দশটার মধ্যেই সৈন্যদল কোনো ধরণের ঝামেলা ছাড়াই আখেন, ট্রিয়ার এবং সারব্রুকেন, এই তিন শহরের কাছাকাছি পৌছে যায়।
ব্রিজ পার হয়ে শহরে প্রবেশের সময় তারা এক অভাবনীয় দৃশ্য অবলোকন করে।
তাদের উপর কড়া নির্দেশ ছিল সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রেখে সম্মুখে অগ্রসর হবার। কিন্তু এমন দৃশ্য দেখে বিমোহিত না হয়ে পারা যায় না। সৈন্যদের চলার পথের দুধারে উৎসুক জনতার ভিড়। আগাম খবর পেয়ে তারা চলে এসেছে সৈন্যদের অভ্যর্থনা জানাতে। অনেকেই ফুল নিয়ে এসেছেন, সৈন্যদের উপহার হিসেবে দেওয়ার জন্যে।
অনেকে তাদের হাতের ফুলগুলো পথের উপর বিছিয়ে দিতে লাগলেন। জনগণ বিস্ময়ে ভাবতে লাগল, "আর কত খেল দেখাবেন ফিউরার! তার সাথে কেউই পেরে উঠছে না! এই যে রাইনল্যান্ডে দিনে দুপুরে কথা নেই বার্তা নেই, হুট করে সেনাবাহিনী নিয়ে ঢুকে পড়া, এমন সাহস প্রদর্শন করা শুধু তাকেই মানায়। "
সত্যিই, হের্ হিটলার এমন প্রশংসার প্রকৃত দাবিদার ছিলেন। এমন দুঃসাহসিক কর্মকান্ড শুধুমাত্র তার পক্ষেই সম্পাদন করা সম্ভব ছিল।
*****
১৯২৫ সাল।
ভার্সাই চুক্তি সাক্ষরের ছয় বছর পর।
বছরটি একটি বিশেষ কারণে ইউরোপীয় পরাশক্তিদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে গুরুত্বের কথা অবতারণা করবার আগে কয়েকটি কথা বলে নেওয়া জরুরি। ১ম বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত জার্মানিকে ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে বাগে আনা গেলেও, মিত্রপক্ষের মাথাব্যাথা এতে কোনো অংশে কমলো না। অনেকের কাছে একটা বদ্ধমূল ধারণা ছিল যে, জার্মানিকে জোড়পূর্বক ভার্সাই চুক্তিতে সাক্ষর করানো গেলেও, এই চুক্তি সাক্ষরের ব্যাপারে জার্মানির কখনো কোনো সম্মতি ছিল না।
তাদের এই ধারণা কিন্তু অমূলক নয়। ভার্সাই চুক্তির ফাঁদে পড়ে পুরো পৃথিবী জুড়ে জার্মানির সবগুলো কলোনি মিত্রপক্ষের কাছে হাতছাড়া হয়ে যায়। তার উপর তো আছে রাইনল্যান্ড বিষয়টি। অনেকেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেন এই ভেবে যে, জার্মানি ভার্সাই চুক্তির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আবার রুখে দাঁড়াবে। কেননা এই চুক্তিটি জার্মানি স্বেচ্ছায় সই করেনি।
জার্মানির উপর তা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আর এই আশঙ্কার উপর ভিত্তি করে, ভার্সাই চুক্তির সীমানা সংক্রান্ত বিষয়ের ব্যাপারে জার্মানির সম্মতি আদায়ের লক্ষ্যে, ১৯২৫ সালের ১ ডিসেম্বর, সুইটজারল্যান্ডের লোকার্নো শহরে জার্মানি, ফান্স, গ্রেট ব্রিটেন, ইতালি এবং বেলজিয়ামের মধ্যে একটি চুক্তি সাক্ষরিত হয়। এতে জার্মানি অঙ্গীকার করে যে, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও রাষ্ট্রগুলোর মাঝে ভ্রাতৃত্ব রক্ষার স্বার্থে, এবং অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোর যে কোনো ধরণের আক্রমণাত্মক পদক্ষেপের ঘটনা ব্যাতিরেকে, তারা ভার্সাই চুক্তি নির্ধারিত সীমান্ত চুক্তিগুলো যথাযতভাবে মেনে চলবে।
এখন কথা হল, কেনই বা জার্মানি এমন একটি চুক্তি স্বেচ্ছায় সাক্ষর করতে গেল? আসলে জার্মানি এবারো ছিল নিরুপায়। কেননা, ১৯২৫ সালে রাষ্ট্র হিসেবে জার্মানি প্রায় দেউলিয়া হয়ে যেতে বসেছিল।
মিত্রপক্ষের সাহায্য ছাড়া তার অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যেত। যার কারণে, এক প্রকার বাধ্য হয়ে মিত্রপক্ষকে খুশি করবার জন্যে জার্মানি লোকার্নো চুক্তিতে সই করে।
অন্য দিকে লোকার্নো চুক্তি সম্পন্ন করাটা ছিল মিত্রপক্ষের কাছে এক বিরাট সাফল্য। অনেকেই বিপদ কেটেছে ভেবে আত্মতুষ্টিতে ভুগতে শুরু করেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, লোকার্নো চুক্তি ছিল শাঁক দিয়ে মাছ ঢাকার এক অতি-আত্মবিশ্বাসী প্রচেষ্টা।
এতে জার্মানদের রাগ তো কমলই না, বরঞ্চ তাদের মনে প্রতিশোধের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল।
আর তখন থেকেই রাইনল্যান্ড হয়ে দাঁড়ালো প্রতিশোধ নেবার জন্যে জার্মানদের প্রথম টার্গেট।
***
২ই মে, ১৯৩৫ সাল।
নিজ অফিসরুমে খাতা কলম নিয়ে টেবিলের সামনে একা বসে আছেন জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভার্নার ভন ব্লমবার্গ(Werner Von Blomberg)। ইতিমধ্যে তিনি সকলকেই আদেশ দিয়ে দিয়েছেন যেন তাকে কোনোভাবেই বিরক্ত করা না হয়।
একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ তাকে আজকের মধ্যে অবশ্যই সম্পাদন করতে হবে।
ক্ষনিক পরে ব্লমাবার্গ কাগজে লিখলেন, "স্টাফদের সাথে সর্বশেষ আলোচনা সভায় আলোচিত অপারেশনটির জন্যে আমি বাছাই করলাম নিম্মোক্ত কোড নামঃ "অপারেশন শুলুং(operation schulung"
ব্লমবার্গ আরও লিখেন, "অপারেশন শুলুং(শুলুং শব্দের বাংলা অর্থ প্রশিক্ষণ) পরিচালনার সর্বময় ক্ষমতা বর্তাবে রাইখ প্রতিরক্ষামন্ত্রীর(ব্লমবার্গ স্বয়ং) উপর, কেননা এটি সেনাবাহিনীর তিন শাখা(পদাতিক, নৌ, বিমান) কর্তৃক পরিচালিত একটি সম্মিলিত অপারেশন। "
"নিম্মোক্ত নির্দেশনা অনুযায়ী, অনতিবিলম্বে অপারেশনের জন্যে প্রস্তুতি নিতে হবেঃ......"
এতটুকু লিখে ব্লমবার্গ একটু থামলেন। তার মনে পুরোনো স্মৃতিগুলো উঁকি মারতে শুরু করল। এই অপারেশনটি নতুন কোনো আনকোরা অপারেশন নয়।
এই অপারেশনের যে সাধারণ লক্ষ্য ছিল, তা অর্জনের জন্যে ১ম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই জার্মান সরকারের নির্দেশে জার্মান জেনারেলগণ একাধিক অপারেশন পরিকল্পনা করে এসেছেন। কিন্তু কোনো অপারেশনই আলোর মুখ দেখেনি। এই পর্যায়ে এসে ব্লমবার্গ একটু হতাশ হয়ে পড়লেন। তিনি ভাবলেন, "এই অপারেশনটি বাস্তবায়িত হবে তো? নাকি পূর্বের বহু অপারেশনের মত এটিও কাগজে কলমেই থেকে যাবে, কখনো আলোর মুখ দেখবে না। "
"কিন্তু এবার পরিস্থিতি তো ভিন্ন," ব্লমবার্গ ভাবলেন, "এবার গদিতে আছেন ব্রিলিয়ান্ট এডলফ হিটলার।
প্রকৃতপক্ষে তার নির্দেশেই এই অপারেশনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। হিটলার অত্যন্ত ধূর্ততার সাথে জার্মান সমরাস্ত্রীকরণ শুরু করে দিয়েছেন। জার্মানিকে নিয়ে তিনি অনেক স্বপ্ন দেখেন। আর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রথম ধাপই হলো অপারেশন শুলুং এর নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন। হাহ! অপারেশনটি সফলভাবে সম্পন্ন হবার অর্থই হলো ব্রিটেন ও ফ্রান্সের দুই গালে দুটো চড় মেরে আসা।
"
এমনটা ভেবে ব্লমবার্গ আবার পুলক অনুভব করলেন। বিলম্ব না করে তিনি আবার খাতায় লিখলেন,
"নিম্মোক্ত নির্দেশনা অনুযায়ী, অনতিবিলম্বে অপারেশনের জন্যে প্রস্তুতি নিতে হবেঃ
"অপারেশনটি, কোড ওয়ার্ড "Carry out schulung" ইস্যু করবার সাথে সাথে, বিদ্যুৎবেগে অতর্কিতে বাস্তবায়ন করতে হবে। অপারেশনের ব্যাপারে সর্বোচ্চ গোপনীয়তা বজায় রাখতে হবে। গোপনীয়তার স্বার্থে, অপারেশনের ব্যাপারে অবগত অফিসারের সংখ্যা হবে সর্বনিম্ম। "
"অপারেশনটির জন্যে নির্ধারিত সেনাবাহিনীকে যুদ্ধকালীন সরঞ্জামে প্রস্তুত করবার সময় নেই।
গোপনীয়তার স্বার্থে তা করাও হবে না। এই কারণে অপারেশনের জন্যে নির্ধারিত সৈন্যদল হবে শান্তিকালীন অস্ত্রসম্ভারে সজ্জিত। "
****
উল্লেখ্য, এই অপারাশনের কোনো জায়গাতেই রাইনল্যান্ডের নাম উল্লেখ করা হয়নি। গোপনীয়তার স্বার্থেই এমনটি করা হয়েছে হয়ত। কিন্তু যে কেউ সহজেই বুঝতে পারবে যে অপারেশন শুলুং এর টার্গেট রাইনল্যান্ড ছাড়া আর কিছু নয়।
অপারেশনের নির্দেশনা তো লেখা হল, এবার অপেক্ষার পালা। কবে নাগাদ মাননীয় ফুয়েরার অপারেশনের সবুজ সংকেত দিবেন?
****
কিন্তু ব্লমবার্গের ধারণাই সত্যি হল। হিটলার কিছুদিন পরেই পুরোপুরি মত পালটে ফেললেন। তার মতে, অপারেশন শুলুং বাস্তবায়ন করার মত উপযুক্ত কারণ জার্মানদের হাতে নেই। যথাযত অজুহাত বের করতে না পারলে, এই অপারেশনের কারণে, বর্তমান প্রোপাগান্ডা এবং মিডিয়ার যুগে, পুরো পৃথিবীর মানুষের কাছে সরাসরি শত্রুতে পরিণত হবেন তিনি।
এছাড়া, ১৯৩৫ সালে জার্মানরা সামরিক দিক থেকে কোনো অংশেই স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারেনি। এমতাবস্থায় যুদ্ধ করার অর্থ হল নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা। হিটলার সিদ্ধান্ত নিলেন যে তিনি সঠিক সময়ের জন্যে অপেক্ষা করবেন। তার আরও অনেক কাজ বাকি আছে।
****
১৭ই মার্চ ১৯৩৫ সাল, অর্থাৎ ব্লমবার্গ কর্তৃক "অপারেশন শুলুং" এর দিক নির্দেশনা রচনা করবার প্রায় ছয় সপ্তাহ আগে, হিটলার একটি দুঃসাহসিক কাজ করে ফেলেন।
সেদিন তিনি সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে ঘোষণা দেন যে জার্মানির একটি বিশাল আকারের সেনাবাহিনী আছে, এবং অবশ্যই তা ক্রমবর্ধনশীল। হিটলার এও স্বীকার করলেন যে ভার্সাই চুক্তি নির্ধারিত সীমা থেকে তা কয়েক গুণ বড়। হিটলার জানতেন ব্রিটেন এবং ফ্রান্স এই ব্যাপারে কিছুই করবে না কেননা তারা নিজেদেরই অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত ছিল।
জার্মান সমরাস্ত্রীকরণের ঘোষণার পাঁচদিন পর, ১৯৩৫ সালের ২১শে মার্চ, হিটলার তার সমরায়নকে বৈধ্যতা দেওয়ার জন্যে একটি শান্তিমূলক বক্তৃতা প্রদান করেন। সেখানে তিনি অঙ্গীকার করলেন বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে নিরলস কাজ করে যাবেন।
তিনি ও তার দেশের মানুষ সবপ্রকারের সংঘাতের তীব্র বিরোধী।
কিন্তু সেখানে হিটলার একটি বিষয়ে হুশিয়ার করে দিলেন। জার্মানির দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কেউ যদি বিশ্বশান্তি তথা জার্মানির পক্ষে ক্ষতিকর কোনো ধরণের কর্মকান্ডে নিয়োজিত হয়, তবে জার্মানি উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে উদ্বেগী হবে। এই কথা বলার সাথে সাথে হিটলার, ওই বছরেই(১৯৩৫ সাল) ফ্রান্স এবং সোভিয়েত রাশিয়ার মধ্যে সম্ভাব্য এক সামরিক চুক্তির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, আপাত দৃষ্টিতে চুক্তিটি নিরীহগোছের মনে হলেও, এই সামরিক চুক্তির কারণে জার্মানির নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার যথেষ্ট কারণ আছে। ভবিষ্যতে এই চুক্তিটি যদি বাস্তবায়িত হয় এবং তা যদি আরও কঠোর নিরাপত্তাহীনতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তবে জার্মানি আত্মরক্ষার খাতিরে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বাধিত থাকবে।
সারাটা বছর হিটলার অপেক্ষা করতে লাগলেন, উপযুক্ত অজুহাতের আশায়। কিন্তু ফ্রান্স আর সোভিয়েত রাশিয়ার মধ্যে চুক্তিটি আর বাস্তবায়িত হয় না। এরই মাঝে ১৯৩৫ সালের শেষভাগে আবিসিনিয়া নামক রাষ্ট্রটিকে ঘিরে ইতালির সাথে ফ্রান্স-ব্রিটেনের বিরোধ শুরু হয়ে যায়। এর ফলে ইতালি-ফ্রান্স-ব্রিটেনের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বে ভাঙ্গন দেখা দেয়। চতুর হিটলার দূর থেকে জার্মানিতে বসে সবকিছু দেখতে থাকেন।
তিনি জানেন তার সুযোগ আসবেই আসবে।
****
অবশেষে, ১৯৩৬ সালের প্রথমার্ধেই হিটলারের কাছে সুযোগ চলে আসল। ১৯৩৬ সালের ২৭ এ ফেব্রুয়ারী, ফ্রান্স এবং সোভিয়েত রাশিয়া পরস্পরের সাথে সেই বহুল প্রতীক্ষিত চুক্তি সাক্ষর করে ফেলে। এর পরের দিন থেকেই, চুক্তি অনুযায়ী চেকোস্লোভাকিয়ায়(জার্মানিকে আক্রমণ করার জন্যে ফ্রান্স এবং সোভিয়েত রাশিয়ার পক্ষে সুবিধাজনক স্থান) বেশ কয়েকটি সামরিক বিমানবন্দর স্থাপনের কাজ শুরু হয়ে যায়।
অন্যদিকে ২৭শে ফেব্রুয়ারিতেই হিটলার চুক্তি সাক্ষরের খবর পেয়ে যান।
তিনি বুঝতে পারলেন যে আর অপেক্ষা করাটা ঠিক হবে না। আঘাত করার এখনই সময়। এর দুদিন পরেই তিনি ব্লমবার্গকে তার সিদ্ধান্তের কথা জানালেন। অনতিবিলম্বে রাইনল্যান্ড তার চায়ই চাই।
****
১৯৩৬ সালের ১ই মার্চ।
হিটলার ব্লমবার্গকে জরুরি তলব করেন এবং অনতিবিলম্বে রাইনল্যান্ড পুনঃদখল করার নির্দেশ দেন। কিন্তু হিটলারের কথা শুনে ব্লমবার্গ উল্টো ভয়ে চুপসে যান। অপারেশনটি বাস্তবায়িত হবার সম্ভাবনা যে এবার অনেক বেশী তা বুঝতে পেরে ব্লমবার্গ জোড় গলায় প্রতিবাদ করলেন যে, জার্মান সৈন্যদল ফরাসি বাহিনীর সামনে দাড়াতেই পারবে না। ব্লমবার্গের ভয় অমূলক ছিল না। কেননা ফরাসি সেনাবাহিনী ছিল ততকালীন সময়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা।
তার কাছে ছিল ১৬০টি পদাতিক ডিভিশন। ফরাসি বাহিনীর সাথে সরাসরি সংঘাতের সময়, রাইনল্যান্ড আক্রমণের জন্যে নির্ধারিত খুদে জার্মান বাহিনী তাদের অস্তিত্ব রক্ষার সুযোগই পাবে না। কিন্তু হিটলার তাকে সাফ জানিয়ে দিলেন, অপারেশন এবার হবেই হবে। তিনি ব্লমবার্গকে তার উপর বিশ্বাস রাখতে বললেন। ব্লমবার্গকে তিনি এই বলে আশ্বস্ত করলেন যে কোনো ধরণের সংঘাত এবার হবে না।
হিটলারের কথায় নিমরাজি হয়ে ব্লমবার্গ এই অতিগোপনীয় অপারেশনের কাজ শুরু করে দেন। যদিও বা তিনি একপ্রকার নিশ্চিত ছিলেন যে ফরাসি বাহিনী জার্মানদের কাবাব বানিয়ে ছেড়ে দিবে। এই অপারেশনের সাথে জড়িত অন্যান্য জেনারেলগণও অপারেশনের ব্যাপারে ব্লমবার্গের মত একই মত প্রকাশ করতে লাগল। তারা জার্মানির আসন্ন পতনের ব্যাপারে ভীত হয়ে পড়ল। একমাত্র হিটলার অনড় ছিলেন।
তিনি দৃঢ় গলায় বললেন, কেউ কোনো বাঁধা দেওয়ার চেষ্টাটুকুও করবে না।
****
১৯৩৬ সালের ৭ই মার্চ।
শনিবার।
সকাল ৭টা।
অতিরিক্ত গোপনীয়তা বজায় রাখার মাধ্যমে রাইনল্যান্ড অপারেশন শুরু হয়।
প্রথমে এক স্কোয়ার্ড্রন মেসার্স্মিট(Messerschmitt) ফাইটার বিমান ধীরে ধীরে রাইনল্যান্ডে প্রবেশ করে। তারা তাদের পিছনে অনুসরণকারী ছোট সেনাদলটিকে পাহাড়া দিয়ে নিয়ে যেতে থাকে। সকাল দশটার মধ্যে সেনাদলগুলো আখেন, ট্রিয়ার এবং সারব্রুকেন, এই তিন শহর দিয়ে রাইন নদী পার হয়ে যায়। মোট ৩৫,০০০ সৈন্য সেদিন অপারেশনে অংশগ্রহণ করেছিল। তাদের উদ্দেশ্য হল, রাইনল্যান্ডের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ঘাঁটি গেঁড়ে বসা।
তবে তাদের কাছে সবচেয়ে চমকপ্রদ এবং কঠিন নির্দেশ ছিল এই যে, কোনো প্রকার ফরাসি আক্রমণের আভাস পাওয়ার সাথে সাথে, সাত পাঁচ না ভেবে, তড়ি-ঘড়ি করে লেজ তুলে পিছু হটতে। কোনো প্রকার সংঘাতের নির্দেশই তাদের দেওয়া হয় নি। কেননা কোনো প্রকারের আক্রমণ প্রতিহত করার মত শক্তি পারতপক্ষে তাদের ছিল না।
****
১৯৩৬স সালের ৭ই মার্চ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়,বার্লিন।
সকাল ১০টা।
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্সট্যানটিন ভন নিউরাথ(Konstantin Von Neurath) তার নিজ কক্ষে বসে আছেন। তাকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছিল। উদ্বেগটা অবশ্য তিনি ঢেকে রাখতে পারছিলেন না। কক্ষে তিনি একা নন, তার সাথে আরও আছেন ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং ইটালির রাষ্ট্রদূতেরা।
তারা এখনো জানেন না যে কেন তাদের তলব করা হয়েছে। নিউরাথ তাদের সাথে কোনো কথা বলছেন না। তিনি আসলে একটি টেলিফোন কলের জন্যে অপেক্ষা করছিলেন। যদি ভালো খবর থাকে তাহলে তিনি তার অতিথিদের যাবতীয় ঘটনাবলি খোলাসা করে বলবেন। খারাপ খবর হলে, কিছুক্ষণ অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে কথা বলে তাদের ভাগিয়ে দেওয়াটাই আপাতত তার পরিকল্পনা।
১০টা বাজার কিছুক্ষণ পরে টেলিফোন কলটি আসে। ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তিটির কথা শুনে নিউরাথের চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে। বাড়াবাড়ির মত খুশির খবর আছে।
নিউরাথ এরপর রাষ্ট্রদূতদের আহবান করে তাদের উদ্দেশ্যে বললেন যে, জার্মান সেনাবাহিনী রাইনল্যান্ডে প্রবেশ করেছে। এটা স্রেফ করা হয়েছে, ফ্রান্স ও রাশিয়ার মধ্যে সাক্ষরিত চুক্তির কারণে উদ্ভুত নিরাপত্তাহীনতার বিরুদ্ধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে।
তিনি এও বললেন যে, লোকার্নো চুক্তি থেকে জার্মানি বের হয়ে এসেছে, কেননা রাশিয়া আর ফ্রান্স ইতিমধ্যে আক্রমণাত্মক ব্যবস্থা নিয়ে লোকার্নো চুক্তির সার্বিক উদ্দেশ্যকেই ধ্বংস করে দিয়েছে। নিউরাথ অবশ্য এই বলে আশ্বস্ত করেন যে, বিশ্বশান্তির সম্ভাবনা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। নতুন করে আবার সবকিছু শুরু করা যেতে পারে।
ফরেন মিনিস্টার নিউরাথ।
****
১৯৩৬স সালের ৭ই মার্চ
ক্রল অপেরা হাউস, বার্লিন।
দুপুর ১২টা।
এক বিশাল জনসভার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন জার্মানির ফুয়েরার এডলফ হিটলার। তার চেহারা সপ্রতিভ। যেন এক বড় ধরণের জুয়ার আসরে বড় ধরণের বিজয় অর্জন করেছেন। জনসভায় উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ এখনো জানেন না কি কারণে মাননীয় ফুয়েরার স্বয়ং বক্তৃতা প্রদান করবেন।
লোকজন শান্ত হলে হিটলার বলতে শুরু করেন, "জার্মানি ভার্সাই চুক্তি এবং লোকার্নো চুক্তির শিকল দ্বারা আর আবদ্ধ নয়। নিজ দেশের অঞ্চলে সার্বভৌমত্ব বজায় রাখাটা একজনের রাষ্ট্রীয় অধিকার। এই অধিকার কেউ হরণ করতে পারবে না। আর সেই অধিকার অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে, জার্মান সৈন্যদল আজ রাইনল্যান্ডে জার্মান রাষ্ট্রের পুর্ণ সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। "
লোকজন হিটলারকে এর বেশী কিছু বলার সুযোগ দিল না।
সকলে দাঁড়িয়ে উঠে তাদের ডান হাত উঁচিয়ে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগলো, "হাইল, হাইল, হাইল!!!!" এরপর তুমুল করতালিতে পুরো সম্মেলন কক্ষ ফেটে পড়ল।
কিছুক্ষণ পর হিটলার বললেন, "হে জার্মান জনগণ! আজ এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে, যখন আমাদের দুর্দমনীয় সেনাবাহিনী জার্মানির পশ্চিম প্রান্তে দুর্বার গতিতে তাদের অবস্থান প্রতিষ্ঠা করছে, আসুন আমরা দুটো পবিত্র শপথে নিজেদের আবদ্ধ করি। প্রথমত, আমরা শপথ করছি, আমরা আর কোনোদিন কোনো শক্তির কাছে মাথা নত করব না। দ্বিতীয়ত, আজ থেকে জার্মানি, ইউরোপীয় দেশগুলোর সাথে, বিশেষ করে পশ্চিমের দেশগুলোর সাথে এক শান্তিপূর্ণ ও সমঝোতামূলক সমপর্কে আবদ্ধ হবে। অন্য দেশের সার্বভৌমত্ব নষ্ট করবার কোনো ইচ্ছাই আমাদের নেই।
কারণ আমরা এর মর্ম বুঝি। জার্মানি কোনোদিন বিশ্বশান্তি হরণ করবে না। "
এতটুকু বলে হিটলার তার বক্তৃতার ইতি ঘটালেন। তিনি তার জেনারেলদের সঙ্গে নিয়ে স্থান ত্যাগ করলেন। তার চোখ মুখ ছিল উজ্জ্বল, সপ্রতিভ এবং প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর।
কিন্তু অন্যদিকে তার পিছনে থাকা জেনারেলদের দিকে তাকিয়ে ঠিকই অস্বস্তি ও দুশ্চিন্তা টের পাওয়া যাচ্ছিল। বলা তো যায় না, যদি মিত্রপক্ষ আক্রমণ করে?
****
কিন্তু মিত্রপক্ষ আক্রমণ করল না। ফ্রান্স তার সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাবে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হল। ফরাসি সেনাবাহিনীর হর্তাকর্তাগণ, এক রাইনল্যান্ডের জন্যে এত বড় মাপের একটি পালটা আক্রমণ চালাতে নিরুৎসাহিত ছিলেন। তাছাড়া, এত বড় সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত করাটা ছিল প্রচুর অর্থের ব্যাপার।
রাইনল্যান্ড বিষয়ে তারা তা করতে রাজি ছিল না। অথচ ফরাসিরা খুব ভালো করে জানত, রাইনল্যান্ড জার্মানদের দখলে চলে যাওয়ার অর্থ হল, নিজের সীমান্ত সম্ভাব্য জার্মান আক্রমণের সামনে অরক্ষিত হয়ে পড়া।
অন্যদিকে দ্বীপরাষ্ট্র ব্রিটেন ছিল কিছুটা সহানুভুতিশীল। তারা বলতে লাগল, জার্মানরা তো অন্য দেশ দখল করে বসেনি। তারা তাদের দেশে যা ইচ্ছা তা করুক।
ক্ষতি কি? ওরকম একটা নিষেধাজ্ঞা প্রথমে জারি করে জার্মানিকে রাগিয়ে দেওয়াটাই ছিল একটি ভুল কাজ।
****
সেদিন যদি ফ্রান্স জার্মানিকে আক্রমণ করত অথবা আক্রমণের কিছুটা আভাস দেখাতো, তাহলে নিশ্চিতভাবে সেদিনই হিটলারের পতন ঘটতো। কেননা এই পরিকল্পনা ছিল সম্পূর্ণরূপে হিটলারের মস্তিস্কপ্রসূত। অপারেশনটি ব্যর্থ হলে তাকেই এর দায়ভার নিতে হত। অপারেশনের আগে, হিটলারের কাছে জেনারেলগণ অপারেশনটি এক বছর পিছিয়ে দেবার জন্যে হেন কোনো অনুরোধ নেই যা তারা করেননি।
কিন্তু হিটলার তার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। তার এক বজ্রকঠিন দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাসের কারণেই অপারেশনটি সফল হয়েছিল এবং এক বিরাট সাফল্য অর্জিত হয়েছিল।
প্রায় ছয় বছর পরে, তথা ১৯৪২ সালে, সেই দিনের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে হিটলার বলেন, "ফ্রান্সকে ভয় পেয়ে সেদিন যদি আমার সেনাবাহিনী রাইনল্যান্ড থেকে পিছু হটত, তবে তা হত আত্মঘাতী এক সিদ্ধান্ত। "
কিন্তু এরকম একটা সিদ্ধান্ত নেওয়াটা হিটলারের পক্ষে এত সহজ ছিল না। তার উপর অপারেশনের জন্যে তিনি যে সময়সীমা নির্ধারণ করেছিলেন, তাতে অপারেশনের সাফল্য ছিল অবধারিত।
হিটলার সঠিকভাবেই পালটা আক্রমণের ক্ষেত্রে ফরাসিদের উদাসীনতা এবং ব্রিটিশদের নমনীয়তার বিষয়টি ধরতে পেরেছিলেন। অন্য দিকে তার জেনারেলগণ পিছু হটবার জন্যে তাকে কম জ্বালাতন করেনি। কিন্তু তবুও হিটলার ছিলেন অনড়।
হিটলার পরবর্তীকালে বলেছিলেন, "রাইনল্যান্ডে প্রবেশের পরবর্তী ৪৮ ঘন্টা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে স্নায়ুক্ষয়ী এবং চাঞ্চল্যকর। সেদিন ফরাসিরা যদি আক্রমণ করত, তবে আমাদের লেজ তুলে পিছু হটতে হত, কেননা সেই সময় আমাদের কাছে যে সামরিক রসদ ছিল, তা দিয়ে দুর্বলতম ফরাসি আক্রমণ মোকাবেলা করার মত সামর্থ আমাদের ছিল না।
"
****
এই সিরিজের অন্যান্য পর্বগুলোঃ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসঃ স্বপ্নের থার্ড রাইখ(৯ম পর্ব) জার্মান সমরাস্ত্রীকরণ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসঃ স্বপ্নের থার্ড রাইখ(অষ্টম পর্ব) "যে সমাজে বই পুড়িয়ে ফেলা হয়, সে সমাজের মানুষগুলোর আগুনে পুড়ে মৃত্যু নিয়তি নির্ধারিত। "
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসঃ স্বপ্নের থার্ড রাইখ(সপ্তম পর্ব) গেস্টাপো(GeStaPo)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসঃ স্বপ্নের থার্ড রাইখ(ষষ্ঠ পর্ব) The Triumph of the Will(ছবি+মুভি ব্লগ)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসঃ স্বপ্নের থার্ড রাইখ(৫ম পর্ব) "হিটলার, জার্মানির ফুয়েরার"।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসঃ স্বপ্নের থার্ড রাইখ(৪র্থ পর্ব) operation hummingbird
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসঃ স্বপ্নের থার্ড রাইখ(৩য় পর্ব) the night of the long knives
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসঃ স্বপ্নের থার্ড রাইখ(২য় পর্ব) Hitler becomes Dictator
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসঃ স্বপ্নের থার্ড রাইখ(১ম পর্ব) রাইখস্টাগ অগ্নিকান্ড(The Reichstag on fire)
****
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে আমার আগের সব লেখার লিংক।
****
অনেক দিন পরে আজ আবার ফিরে এসে পোস্ট করলাম। এই সিরিজটা শেষ করে যেতে পারিনি।
বার বার ভাবছিলাম এই সিরিজ চালিয়ে যাব কিনা। পরে অবশ্য যা হবার হবে ভেবে পুরো পোস্টটি লিখে ফেলার কাজে লেগে পড়ি। যাদের সত্যিকার আগ্রহ আছে, তারা ভুলে গেলে আগের ঘটনাগুলো পুনরায় পড়ে নিতে পারেন। এতে সুবিধা হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।