আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসঃ স্বপ্নের থার্ড রাইখ(১ম পর্ব) রাইখস্টাগ অগ্নিকান্ড(The Reichstag on fire)

Youth cannot know how age thinks and feels. But old men are guilty if they forget what it was to be young. ২৭শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৩। সন্ধ্যা সাতটা। "হ্যালো, যোসেফ গোয়েবলস বলছি। " "হ্যালো, ডক্টর গোয়েবলস, আমি ডক্টর হাফেন্সস্টাগল। " "ও! কেমন আছেন হের্‌ ডক্টর?" "আছি কোনোরকম।

একটা ঘটনা ঘটেছে হের্‌ গোয়েবল্‌স। " "তবে দেরী না করে বলে ফেলুন ডক্টর। আজ আমার বাড়িতে হের হিটলার অতিথি হিসেবে এসেছেন। আমি চাই না তার রাতটা মন্দ কাটুক। " "এই মাত্র আমি খবর পেলাম যে আমাদের রাইখস্টাগে(পার্লামেন্ট ভবন) ভয়াবহ আগুন লেগেছে।

এরকম দুর্ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। পুরো ভবন পুড়ে ছাই হয়ে যাবে ডক্টর। " "আপনি কি বলছেন এসব!" "সত্যি বলছি। আর বিলম্ব না করে ফুয়েরারকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন ডক্টর। " "কিন্তু আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না আপনার কথা।

" "আপনার আর দেরি করা ঠিক হবে না হের গোয়েবলস। আমি এবার রাখছি। " এই বলে ডক্টর হাফেন্সস্টাগল ফোন রেখে দিলেন। অপর পাশে ডক্টর যোসেফ গোয়েবলস কিছুক্ষণ স্থির দাঁড়িয়ে থাকেন। ফুয়েরার আজ ছুটি কাটাতে তার বাড়িতে এসেছেন।

এরূপ উড়ো খবর বলে তার মাথা গরম করা ঠিক হবে না। পরদিন সকালে গোয়েবলস তার ডায়েরীতে লিখেন, "হাফেন্সস্টাগল থেকে ঘটনা সম্পর্কে প্রথম জানার পর , আমি কয়েকটা জায়গায় ফোন করি। কিন্তু তারাও একই কথা বলে। ফলে আমি তাড়াতাড়ি লিভিং রুমে গিয়ে ফুয়েরারকে বিস্তারিত জানাই। শুনে তিনি অস্থির হয়ে উঠেন।

আমরা এরপর আর দেরি করিনি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, আমি আর আমার ফুয়েরার গাড়িতে করে অপরাধস্থল পরিদর্শনে বেড়িয়ে পড়ি। " এখানে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, গোয়েবলস তার ডায়েরীতে "অপরাধস্থল(crime scene)" শব্দটি ব্যবহার করেছেন। অথচ টেলিফোনে ডক্টর হাফেন্সস্টাগল তাকে দুর্ঘটনার কথা বলেছিলেন। তবে কি যোসেফ গোয়েবলস এবং অ্যাডলফ হিটলার রাইখস্টাগ(জার্মানির পার্লামেন্ট) অগ্নিকান্ডের ঘটনার কথাটি আগে থেকে জানতেন? তা না হলে গোয়েবলস কিভাবে এত তাড়াতাড়ি নিশ্চিত হলেন যে এটি একটি অপরাধ? এ সম্পর্কে জানতে হলে আমাদেরকে কিছুটা পিছনে ফিরে তাকাতে হবে।

**** ৩০শে জানুয়ারী, ১৯৩৩ সাল। বার্লিনের প্রেসিডেন্ট হাউসে, অ্যাডলফ হিটলার জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে শপথ বাক্য পাঠ করেন। তিনি বলেন, "I will employ my strength for the welfare of the German people, protect the Constitution and laws of the German people, conscientiously discharge the duties imposed on me, and conduct my affairs of office impartially and with justice to everyone." হিটলার জার্মানদের সামগ্রিক কল্যাণের জন্যে নিজের সর্বশক্তি প্রয়োগের শপথ নেন। তিনি জার্মানির সংবিধান এবং আইন রক্ষার অঙ্গীকার নেন। তিনি অঙ্গীকার করেন ন্যায়বিচার এবং নিরপেক্ষতার।

এভাবে, অ্যাডলফ হিটলারকে জার্মানির গণতান্ত্রিক সরকারের চ্যান্সেলর হিসেবে গ্রহণ করা হয়। যে মানুষ তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই গণতন্ত্রকে ঘৃণা করে আসছিলেন, সেই মানুষই গণতান্ত্রিক সরকারের চ্যান্সেলর পদে নির্বাচিত হলেন! প্রকৃতির কি অদ্ভুত খেয়াল। হিটলার ছিলেন গণতান্ত্রিক সরকারের শেষ চ্যান্সেলর। তার আগে যারাই গণতান্ত্রিক সরকারের চ্যান্সেলর হিসেবে এসেছিলেন, তাদের প্রত্যেকেই, চ্যান্সেলর হিসেবে করা উপর্যুক্ত শপথ ভঙ্গ করেছিলেন। হিটলারও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না।

চ্যান্সেলর নির্বাচিত হবার কয়েক মাসের মধ্যে, তিনি নিজে জার্মানদের দুঃস্বপ্ন, তথা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দেন এবং সমস্ত ক্ষমতা নিজে এবং নিজের দলের কাছে কুক্ষিগত করেন। চ্যান্সেলর পদপ্রাপ্তির পর উৎফুল্ল হিটলার, ডানে গোয়েরিং। **** ১৯৩৩ সালের ৩০শে জানুয়ারি যে সরকার গঠন করা হয়, সে সরকারে নাৎসিদের একচেটিয়া দাপট ছিল না। কেননা এটি ছিল একটি কোয়ালিশন সরকার। নাৎসিদের সাথে যৌথভাবে সরকার গঠন করেছিল "ন্যাশনাল পার্টি"।

হিটলার ছিলেন এই সরকারের চ্যান্সেলর। ভাইস চ্যান্সেলরের পদে ছিলেন ফ্রাঞ্জ ভন পাপেন। তিনি ছিলেন ন্যাশনাল পার্টির। প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গ শুধুমাত্র পাপেনের অনুরোধেই হিটলারকে চ্যান্সেলর করতে রাজি হয়েছিলেন। হিন্ডেনবার্গ পাপেনকে ভাইস চ্যান্সেলর পদে রেখেছিলেন হিটলারকে নজরে রাখার জন্যে।

চ্যান্সেলর হিসেবে হিটলারের পদটি বাদে, এই জোট সরকারে নাৎসি মন্ত্রী ছিলেন মাত্র দুজন। হেরমান গোয়েরিং এবং উইলহেম ফ্রিক। হিটলারের লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে এটি ছিল একটি মারাত্মক বাঁধা। যে করেই হোক না কেন সরকারের মধ্যে নিজেদের দাপট বাড়াতে হবে। তা না হলে পরবর্তীতে একচ্ছত্র ক্ষমতা দখল করাটা কঠিন হয়ে যাবে।

**** হিটলার তার দলের এই সীমাবদ্ধতার কথা ভালো করেই জানতেন। কিন্তু তিনি দ্রুত এর সমাধান বের করে ফেলেছিলেন। চ্যান্সেলর হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের দিনেই, তিনি তার ক্যাবিনেটের সমস্ত মন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। এই জোট সরকার ক্ষমতায় বসেছে ঠিকই, কিন্তু পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠটা অর্জনের লক্ষ্যে হিটলার পুনরায় নির্বাচনের আহ্বান করেন।

কিন্তু তার ক্যাবিনেটের ন্যাশনালিস্ট পার্টির মন্ত্রীরা তার এই কথায় রাজি হলেন না। তারা হিটলারকে বিকল্প পন্থা অবলম্বন করতে বলেন। তারা জার্মানির অন্য একটি দল, তথা "সেন্ট্রাল পার্টিকে", এই জোটের আওতায় আনার প্রস্তাব দেন। তৎকালীন সময়ে পার্লামেন্টে সেন্ট্রাল পার্টির ৭০টি সীট ছিল। সেন্ট্রাল পার্টি জোটে আসলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।

এর ফলে নির্বাচনেরও আর প্রয়োজন পড়ে না। ন্যাশনালিস্ট পার্টির মন্ত্রীদের দেওয়া এই সমাধান বরাবরই যুৎসই ছিল। কিন্তু হিটলারের চাহিদা এতে পূর্ণ হয় না। সেন্ট্রাল পার্টি ক্ষমতায় আসলে, ক্ষমতা কুক্ষিগত করা তো দূরের কথা, উল্টো তাদের সাথে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে হবে। হিটলার সরাসরি এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন।

এই পদ্ধতি অবলম্বন করা যাবে না। কিন্তু ন্যাশনালিস্ট পার্টির মন্ত্রীদের মারাত্মক জোরাজুরিতে হিটলার সেন্ট্রাল পার্টির সাথে আলোচনায় বসতে রাজি হন। ন্যাশনালিস্ট পার্টির মন্ত্রীরা হিটলারকে কথা দেন যে, সেন্ট্রাল পার্টির সাথে আলোচনা ব্যর্থ হলে তবেই তারা নির্বাচনে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিবেন। একদিন হিটলার সেন্ট্রাল পার্টির সাথে আলোচনায় বসেন। আলোচনা শেষে, তিনি বিজয়ীর বেশে বেড়িয়ে আসেন।

কেননা আলোচনা ব্যর্থ করতে তিনি সক্ষম হয়েছিলেন। ফলে নতুন একটি নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে আর কোন বাঁধাই রইল না। **** ১৯৩৩ সালের ৫ই মার্চ নির্বাচনের তারিখ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। নির্বাচন নিয়ে নাৎসিরা মারাত্মক আত্মবিশ্বাসী ছিল। হিটলার চ্যান্সেলর হওয়ায় এতে সুবিধা হয়েছে।

নাৎসিদেরকে এবার আর্থিক দুশ্চিন্তা করতে হবে না। এছাড়া দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা নাৎসিদেরকে বরাবরের মতই সমর্থন দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু সমস্যা সৃষ্টি করছে দেশের মধ্যবিত্ত সমাজ। হিটলার যতই বেকারত্ব নির্মূল, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের হারের প্রতিশোধের অঙ্গীকার করুক না কেন, মধ্যবিত্তদের মধ্যে একটি বিরাট অংশ নাৎসিদের এড়িয়ে চলত। তাদের সমর্থন ছাড়া অবশ্য নির্বাচনে জেতা সম্ভব, কিন্তু পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা সম্ভব নয়।

এছাড়া রয়েছে কমিউনিস্ট পার্টি। পার্লামেন্টে তাদের ১০০টি সীট রয়েছে। এদের সাথে জোট গঠনের প্রশ্নই আসে না। নির্বাচনে জেতার জন্যে হিটলারের কাছে দুটো উপায় আছে। এক, যে করে হোক, মধ্যবিত্তদের সমর্থন অর্জন করা।

দুই, কমিউনিস্টদের ধ্বংস করে ফেলা। এতে ১০০টি সীট খালি হবে। হিটলার সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি এক ঢিলে দুই পাখি মারবেন। **** হিটলার কমিউনিস্ট পার্টিকে ধ্বংস করার মাধ্যমে, জার্মানির ত্রাণকর্তা হিসেবে, দেশের আপামর জনসাধারণের কাছে নাৎসি পার্টিকে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু কমিউনিস্টদের ধ্বংস করতে হলে, তাদের ধ্বংস করার পিছনে একটা কারণ দরকার।

হিটলার সিদ্ধান্ত নিলেন সব ধরণের কমিউনিস্ট নির্বাচনী প্রচারণা, পাবলিক মিটিংকে অবৈধ ঘোষণা করার। তিনি আশা করছিলেন যে, নির্বাচনের আগে আগে কমিউনিস্টদের উপর এরূপ নিষেধাজ্ঞা জারি করার কারণে কমিউনিস্টরা বিপ্লব করে বসবে। ফলে রাষ্ট্রে অশান্তি সৃষ্টির জন্যে তাদের দায়ী করা যাবে। ত্রাণকর্তা হিসেবে নিজেকে জাহির করাও যাবে। কিন্তু কমিউনিস্টরা হিটলারের এই ফাঁদে পা দিল না।

তারা নীরবে নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারটি মেনে নিল। অল্প কয়েকটি জায়গায় নির্বাচনী সভা যদিও বা হয়েছিল, কিন্তু নাৎসিরা তা পন্ড করে দেয়। **** কমিউনিস্টরা হিটলারের এই ফাঁদে পা না দেওয়াতে হিটলার বিপাকে পড়ে যান। কমিউনিস্টদের পুরোপুরি অবৈধ ঘোষণা করার জন্যে, তাদেরকে জার্মানি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্যে কোন কারণ খুজে পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেকে কারণের তোয়াক্কা না করে সরাসরি কাজ সম্পাদনের প্রস্তাব দেন।

কিন্তু হিটলার এতে সায় দিচ্ছিলেন না। তার মূল টার্গেট ছিল মধ্যবিত্ত জনগণ। কমিউনিস্টদের কোন কারণ ছাড়া ধ্বংস করলে, উল্টো নাৎসিরাই ভিলেনে পরিণত হবে। তবে কি কমিউনিস্টদের ধ্বংস করার পিছনে কোন যুতসই কারণ খুজে পাওয়া গেল না? যদি কোন কারণ কোথাও খুজে পাওয়া নাও যায়, তবে তো একটি কারণ বানিয়ে নিতে কোনো বাঁধা থাকে না !! **** ১৯৩৩ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারী। বার্লিন।

সন্ধ্যা ৭টা। রাইখস্টাগ তথা পার্লামেন্ট ভবন থেকে কিছু দূরে, ঐতিহ্যবাহী হেরেনক্লাব রেস্টুরেন্টে, জার্মানির অতি গুরুত্বপূর্ণ দুজন ব্যক্তি রাতের খাবার সেরে নিচ্ছিলেন। তারা হলেন, প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গ এবং ভাইস চ্যান্সেলর ফ্রাঞ্জ ভন পাপেন। হঠাৎ করে হেরেনক্লাবের উপস্থিত সকল অতিথিগণ, রাস্তায় অসংখ্য মানুষের শোরগোল শুনতে পেল। যারা জানালার পাশে ছিলেন, তারা সকলেই আকাশে রক্তিম আভা দেখতে পেলেন।

রাস্তায় মানুষ আগুন আগুন বলে চেঁচাতে লাগলো। পাপেন তার ডায়েরীতে লিখেন, "হঠাৎ করে আমি রাস্তায় অনেক মানুষের শোরগোল শুনি। বাহিরে জানালা দিয়ে রক্তিম আভা চোখে পড়ছিল। এটি রাইখস্টাগ থেকে আসছিল। লোকজন রাইখস্টাগ অভিমুখে ছুটছিল।

কিছুক্ষণ পরে আমি অবাক হয়ে দেখলাম, রাইখস্টাগের গম্বুজটিকে আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করেছে। এরই মাঝে একজন ওয়েটার আমাকে এসে বলল যে রাইখস্টাগে ভয়াবহ আগুন লেগেছে। আমি আর দেরি না করে প্রেসিডেন্টকে নিয়ে সরাসরি সেখানে উপস্থিত হলাম। " তিনি আরো লিখেন, "আমরা পৌঁছানোর সাথে সাথে হিটলার এবং গোয়েবলস এসে উপস্থিত হন। গোয়েবলস বলল যে, সে হাফেন্সস্টাগেলের কাছ থেকে খবর পেয়েছে।

আমাদের আগে, ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছিলেন নাৎসি মন্ত্রী হেরমান গোয়েরিং। আমরা নামার সঙ্গে সঙ্গে গোয়েরিং চিৎকার করে উদ্ভ্রান্তের মত বলে উঠলেন, "এটা স্পস্ট কমিউনিস্টদের কাজ!!! আমাদের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ আছে। আমরা অনেকদিন ধরে এরূপ কিছুর সন্দেহ করছিলাম। " পাপেন এরপর তার ডায়েরীতে লিখেন, "এরপর, ঘটনাস্থলে গেস্টাপো প্রধান রুডলফ ডাইলস্‌ এসে উপস্থিত হন। গোয়েরিং আমাদের সামনে তাকে বললেন, "কমিউনিস্ট বিপ্লব শুরু হয়ে গিয়েছে।

এটা তারই প্রমাণ। আমাদের আর দেরি করার অবকাশ নেই। আমরা কাউকে ক্ষমা করব না। সবগুলো কমিউনিস্টকে গুলি করে মারা হবে। সবগুলোকে ফাসি দেওয়া হবে।

" অবশেষে, কমিউনিস্টদের ধ্বংস করার জন্যে পরম আরাধ্য একটি কারণ খুজে পাওয়া গেল। **** রাইখস্টাগ অগ্নিকান্ডের কয়েকদিন আগে, হিটলারের প্যারামিলিটারি বাহিনী তথা S.A বাহিনী, জার্মানির একটি বারে, ম্যারিনাস ভ্যান ডার লুভ নামক একজন ব্যাক্তির সন্ধান পায়। ম্যারিনাস ছিল বিকৃত মস্তিষ্কের অধিকারী এবং একজন কমিউনিস্ট। বিভিন্ন বাড়িতে আগুন লাগিয়ে সে তীব্র সুখ পেত। মেডিকেল ভাষায় এসব ব্যক্তিদের পাইরোম্যানিয়াক বলে।

সেদিন বারে বসে লুভ তার বন্ধুদের বলছিল যে সে রাইখস্টাগে আগুন লাগানোর প্ল্যান করছে। কয়েকজন S.A সদস্য তার পাশে বসা ছিল। তারা লুভের কথা শুনে তাকে ধরে নিয়ে আসে। লুভের সন্ধান পাওয়ার কয়েক দিন আগে থেকেই নাৎসিরা কমিউনিস্টদের ফাঁদে ফেলানোর পায়তারা করছিল। রাইখস্টাগে আগুন ধরিয়ে দিয়ে কমিনিউস্টদের দায়ী করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

আর ভাগ্যদেবীর কি আশ্চর্য কেরামতি!!! তিনি একজন কমিউনিস্টের বেশে লুভকে হাজির করেছিলেন, যে কিনা উল্টো নিজে থেকেই রাইখস্টাগে আগুন লাগানোর ব্যাপারে আগ্রহী। ফলে সমস্ত দোষ তার উপর তথা পুরো কমিউনিস্ট পার্টির উপর চাপানো যায়। এরকম অবিশ্বাস্য মিরাকল খুব কমই ঘটে। লুভকে পেয়ে নাৎসিরা যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়ে যায়। তারা লুভকে রাইখস্টাগে আগুন লাগানোর ব্যাপারে পূর্ণ সহযোগিতা প্রদান করতে থাকে।

ম্যারিনাস ভ্যান ডার লুভ। **** রাখস্টাগে অগ্নিকান্ডের কয়েক মিনিটের মধ্যে পুলিশ লুভকে গ্রেপ্তার করে। তাকে অগ্নিকান্ডের জন্যে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। লুভকে অগ্নিকান্ডের জন্যে দায়ী করা হলেও, অগ্নিকান্ডের মূল ঘটনাটি ঘটিয়েছিল হিটলারের S.A বাহিনী। একজন মানুষের পক্ষে কোনভাবেই এত বড় একটা পার্লামেন্ট ভবনে আগুন লাগানো সম্ভব না।

ঘটনাস্থলে লুভ আসার অনেক আগেই, S.A বাহিনী ভবনের অনেকগুলো নাজুক স্থানে পেট্রল এবং অন্যান্য দাহ্য পদার্থ ঢেলে দিয়েছিল। লুভ ছিল এই ঘটনার বলির পাঠা মাত্র। এর আগে অনেকগুলো ছোটখাট বাড়িতে অগ্নিসংযোগের কারণে পুলিশ তাকে খুজছিল। এই ঘটনার পরে তার শিরঃচ্ছেদ করা হয়। বিচারের কাঠগড়ায় লুভ।

লুভের ব্যাপারে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হল, সে ছিল একজন কমিউনিস্ট। এটি পুরোপুরি অবিশ্বাস্য এবং অলৌকিক একটি ঘটনা। **** রাইখস্টাগ অগ্নিকান্ডের পরপরই, হিটলার প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গকে দিয়ে একটি নতুন ডিক্রি জারি করান। এতে নাৎসি সরকারকে যে কোনো রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে, অশান্তি সৃষ্টিকারী যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে পুরোপুরি নির্মূল করার অধিকার দেওয়া হয়। **** অতএব দেখা গেল যে, এক রাইখস্টাগ অগ্নিকান্ডের জোরে হিটলার শুধুমাত্র তার শত্রুদের নির্মূল করারই হাতিয়ার পাননি, বরঞ্চ কমিউনিস্ট অপশক্তির বিরুদ্ধে নাৎসিদের ত্রানকর্তা হিসেবে উপস্থান করে, অগণিত মানুষের সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হন।

**** রাইখস্টাগের এই অগ্নিকান্ড সম্পর্কে বিস্তারিত কখনোই জানা যাবে না। কেননা এই ঘটনার সাথে জড়িত অনেকেই পরবর্তিতে হিটলার কর্তৃক খুন হন। কিন্তু বলা হয়ে থাকে যে গোয়েবলস এবং গোয়েরিং ছিল এর মূল পরিকল্পনাকারী। ভ্যান ডার লুভ এসে ব্যাপারটিকে একদম সহজ করে দেয়। যদিও গোয়েবলস তার ডায়েরীতে এমনভাবে লিখেছেন যে তিনি কিছুই জানতেন না।

কিন্তু তাকে মূল পরিকল্পনাকারীদের একজন হিসেবে সন্দেহ করা হয়। হিটলার এই ঘটনার সঙ্গে খুব একটা সম্পৃক্ত ছিলেন না। গোয়েরিং তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, শীঘ্রই তিনি তার প্রিয় ফুয়েরারের কাছে, কমিউনিস্টদের ধ্বংস করার জন্যে অকাট্য কারণ এনে উপস্থিত করবেন। **** দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে আমার লেখাগুলোর লিঙ্কস  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.