একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদি জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
ফাঁসি কার্যকর করতে ছয়জন জল্লাদের নামও প্রাথমিক ভাবে চূড়ান্ত করা হয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি শাহজাহান ভূইয়া হচ্ছেন এই ছয়জনের মধ্যে প্রধান। তার সহকারী হিসেবে থাকবেন আরও পাঁচজন। তারাও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।
শাহজাহান দুটি খুনের মামলায় ৬০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি। তার গ্রামের বাড়ি নরসিংদী। ২০১১ সালের ২৭ জানুয়ারি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পাঁচ কয়েদি বজলুল হুদা, মুহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি) সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহারিয়ার রশীদ খান ও এ কে এম মহিউদ্দিনের (ল্যান্সার) ফাঁসির রায় কার্যকরে প্রধান জল্লাদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এই শাহজাহান। এ ছাড়া আলোচিত শারমিন রিমা হত্যা মামলার আসামি মনিরকে ফাঁসি দেওয়া জল্লাদ হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। কুখ্যাত খুনি খুলনার এরশাদ সিকদারের ফাঁসি কার্যকর করতে শাহজাহানকে ওই সময় কাশিমপুর কারাগার থেকে খুলনায় নেওয়া হয়েছিল।
২০০৭ সালের মার্চে কাশিমপুর কারাগারে জঙ্গী মামুনের ফাঁসির সময় জল্লাদের দায়িত্ব পালন করেন এই শাহজাহান। ওই সময় সহ জল্লাদের দায়িত্বে থাকা কালু মিয়াও জল্লাদের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন। হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি কালু ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার কয়েদিদের ফাঁসির রায় কার্যকরের সময়ও তিনি সহ জল্লাদের দায়িত্ব পালন করেন। কালু সাভারের জোড়া খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি।
তার বাসা রাজধানীর মোহাম্মদপুরে। তিনি এখন পর্যন্ত ১৩টি ফাঁসির রায় কার্যকর করেছেন। কারাগার সূত্রে জানা যায়, কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর করার সময় চারজন জল্লাদকে শাহজাহানের সহযোগী হিসেবে মঞ্চের পাশে ডাকা হবে। ফাঁসির মঞ্চের পাশে অনেকের সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকবেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক। তার হাতে থাকবে একটি লাল রুমাল।
হাত থেকে রুমালটি মাটিতে পড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জল্লাদ মঞ্চের লিভার (লোহার তৈরি বিশেষ হাতল) টেনে দেবেন, এতে পায়ের তলা থেকে কাঠ সরে ফাঁসি কার্যকর হবে। এরপর লাশটি আধা ঘণ্টা ধরে গলায় রশি দেওয়া অবস্থায় কুয়ার ওপর ঝুলতে থাকবে। সূত্র জানায়, কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে দিনক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে। তবে নিরাপত্তার কারণে কবে, কখন, কোথায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে তা বলছেন না কারা কর্মকর্তারা। কারা সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত আছে, কাদের মোল্লার ফাঁসি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কার্যকর হবে।
এ জন্য ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের দুটি ফাঁসির মঞ্চের মধ্যে একটি মঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কয়েকজন কারারক্ষী জানান, ফাঁসির মঞ্চ ধোয়ামোছা চলছে এবং ফাঁসির জন্য যে রশি ব্যবহার হবে, তা পিচ্ছিল করতে তেল দেওয়া হচ্ছে। সূত্র জানায়, ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট অনুযায়ী কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় যে কোনো দিন কার্যকর করা যেতে পারে। এখন শুধু সরকারের নির্দেশনার অপেক্ষা। নিশ্চিত কোনো দিনক্ষণ সম্পর্কে তথ্য না পাওয়া গেলেও দিন যে খুব বেশি নেই কারাগারের পরিবেশ দেখেই তা বোঝা যাচ্ছে।
বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় কোনো কর্মকর্তাই নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। গোপনে সব প্রস্তুতি চলছে। আসামির নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষাও চলছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।