কারাগারের উদ্ভব রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রবর্তনের কিংবা তারও আগে। অপরাধীদের কবল থেকে সমাজকে মুক্ত রাখার জন্য তাদের কারাগারে ভরা হয়। আমাদের দেশে কারাগারের অস্তিত্ব বজায় ছিল সেই ব্রিটিশ, মোগল পাঠান কিংবা তারও আগে দেশীয় রাজা-মহারাজাদের আমলেও। অপরাধীদের কারাগারে ভরা হয় কৃত অপরাধের শাস্তি হিসেবে। যারা তাদের দেখভালের দায়িত্বে থাকেন তাদের অপরাধী হিসেবে ভাবার অবকাশ নেই।
কিন্তু দেখেশুনে মনে হয় দেশের কারাগারগুলো অপরাধীদের তত্ত্বাবধানেই যেন পরিচালিত হচ্ছে। অপরাধীদের দেখভাল কিংবা প্রহরার সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের সিংহভাগ অপরাধীদের সংস্পর্শে আবির্ভূত হচ্ছে সাক্ষাৎ অপরাধী হিসেবে। যে কারণে প্রতিটি কারাগারে টাকা দিলেই পাওয়া যায় মাদকদ্রব্য। যেমন- মদ, গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন, ইয়াবাসহ এমন কোনো মাদকদ্রব্য নেই যা কারাগারগুলোতে পাওয়া যায় না। কারাগারে বন্দীদের ফোন ব্যবহারের কোনো সুযোগ না থাকলেও তাদের কেউ কেউ যে টাকার বিনিময়ে কারাগার থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে মোবাইল ফোনে কথা বলার সুযোগ পান এটি একটি ওপেন সিক্রেট।
বলা হয়, টাকা দিলে কারাগারে বন্দীরা নারীসঙ্গ লাভেরও সুযোগ পান। অভিযোগ রয়েছে, আটক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কেউ কেউ কারাগার থেকে চাঁদাবাজি করেন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। বাইরের সাগরেদদের নির্দেশ দেন কোথায় কোনো অপরাধ ঘটাতে হবে। তারা যে জেলে বসে চাঁদাবাজি করেন এটি ওপেন সিক্রেট। অতি সম্প্রতি ত্রিশালে প্রিজনভ্যান থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন শীর্ষ জঙ্গির অপহরণের পরিকল্পনা অাঁটা হয় জেল থেকে মোবাইল ফোনে কথা বলে।
প্রিজনভ্যানে থাকা অবস্থায় পলাতক জঙ্গিরা যে মোবাইল ফোনে কথা বলার সুযোগ পেয়েছিলেন এটিও প্রমাণিত ঘটনা। বাংলাদেশ প্রতিদিনে কাশিমপুর কারাগারের ভেতর থেকে মুঠোফোনের এসএমএসের মাধ্যমে আসামিকে নির্যাতনের ছবি স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে আরও নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের যে তথ্য প্রকাশ পেয়েছে তা উদ্বেগজনক। অপরাধীদের কারাগারে আটক রাখা হয় সমাজকে নিরাপদ রাখার জন্য। কিন্তু তাদের দেখভাল কিংবা প্রহরার দায়িত্বে যারা তারা যদি আরও বেশি অপরাধী হন এবং তারা যদি 'আসামি' নামধারীদের টাকার বিনিময়ে যা ইচ্ছা তাই করার সুযোগ দেন, তবে কারাগার ব্যবস্থার কোনো প্রয়োজন আছে কিনা ভাবতে হবে। জনগণের ট্যাক্সে টাকায় কারা বিভাগ টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেও ভেবে দেখা উচিত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।