আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দিল্লিতে এবার রাষ্ট্রপতি শাসন

দিলি্লর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছে ৩২ এবং আম আদমি পার্টি ২৮ আসন। অর্থাৎ নির্বাচনের ফলাফলে ফিনিশিং ট্যাপ থেকে দূরে রইল দুটি দলই। আর তার জেরে সম্ভাব্য কী পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে তা নিয়ে জল্পনায় সরগরম রাজধানী। সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে রাষ্ট্রপতি শাসনেরও।

বেশ কয়েকটি মতামত উঠে আসছে রাজনৈতিক শিবিরে।

সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়া বিজেপি মরিয়া হয়ে দিলি্ল সরকারের মসনদে বসতে চাইবে কি না তা নিয়ে দলের মধ্যেই রয়েছে ভিন্নমত। দিলি্লতে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হর্ষবর্ধন জানিয়েছেন, তিনি বিরোধী শিবিরেই বসতে আগ্রহী। কিন্তু লেফটেন্যান্ট গভর্নর সরকার গঠন করতে ডাকলে তিনি 'দিলি্লর মানুষের' স্বার্থে যা ভালো হয় তেমন পদক্ষেপ নেবেন। অন্যদিকে আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি কোনো রাজনৈতিক দলকে সরকার গড়তে সাহায্য করবেন না, নিজেও নেবেন না। ফলে বল এখন অনেকটাই লেফটেন্যান্ট গভর্নরের কোর্টে।

একটি সম্ভাবনা হলো, কোনো দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে তিনি রাষ্ট্রপতি শাসনের জন্য আবেদন করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে দিলি্লর ভোট হবে মে মাসে। লোকসভার সঙ্গে। কিন্তু রাজ্য বিজেপির একটা বড় অংশ চাইছে প্রয়োজনীয় সংখ্যা নির্দল এবং আম আদমির থেকে জোগাড় করে নিয়ে সরকার গড়ে নেওয়ার। দীর্ঘ দিন পর দিলি্ল বিধানসভায় সরকার গড়ার সুযোগ এসেছে, তাকে হাতছাড়া করা ঠিক হবে না।

কিন্তু এই তত্ত্বে বাগড়া দিচ্ছেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী স্বয়ং নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেছেন, স্বাভাবিকভাবে যদি সরকার গড়া যায় (অনেক সময় পরিস্থিতির তাগিদে সংকট কমাতে সংখ্যালঘু সরকারও কাজ চালাতে পারে যদি বাইরে থেকে প্রয়োজনীয় সমর্থন পাওয়া যায়) তাহলে গড়া হোক। কিন্তু অর্থ দিয়ে বিধায়ক ভাঙিয়ে যেন জোর করে বিজেপি সরকার না গড়ে। তাহলে রাজনৈতিক বদনাম তৈরি হবে এবং তার প্রভাব পড়তে পারে লোকসভা নির্বাচনে। বিজেপির গায়ে কোনোরকম কালি এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পড়ুক, এমনটা চাইছেন না তিনি।

কেজরিওয়াল প্রবল প্রত্যাশা জাগিয়ে কংগ্রেসকে পেছনে ফেলে একটি বড় আসন জিতে এসেছেন। কিন্তু প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা তার শূন্য। তিনি নিজেও বিরোধী শিবিরে বসতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন। কেননা সরকারে এলে প্রবল চাপ তার ঘাড়ে এসে পড়বে, যার জন্য এখনই তৈরি নয় তার দল। এই বাড়তি চাপের কারণ হলো সরকারে এলে প্রতিশ্রুতিমত এখনই দিলি্লকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে তাকে, বাস্তব বিশ্বে যা অসম্ভব।

সব মিলিয়ে অনিশ্চিত হয়ে রয়েছে পরিস্থিতি। তবে চার রাজ্যে ভরাডুবি হওয়ার পর ভারতের রাজনৈতিক শিবিরে একটি কথা স্পষ্ট হয়ে গেল। তা হলো গত ১০ বছরের ইউপিএ সরকারের ব্যর্থতার পরিণাম এবার ভোটের অঙ্কে স্পষ্ট হতে শুরু হয়েছে। রাজ্যগুলোর ভোটের ফলাফলে একটি কথা স্পষ্ট- শুধু রাজ্যের শাসকবিরোধী অবস্থানই নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ অথবা দিলি্লর মানুষ। একদিকে মূল্যবৃদ্ধি, অন্যদিকে প্রবল দুর্নীতির অভিযোগ।

এই সাঁড়াশি পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে নাভিশ্বাস উঠছে সোনিয়া গান্ধীর দলের। চূড়ান্ত অনাস্থা তৈরি হয়েছে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে, যা রাহুল গান্ধীকে সামনে রেখেও সামলানো সম্ভব হলো না। অথচ ২০০৪ সালে সোনিয়া গান্ধী দেশজোড়া প্রচার করেছিলেন গরিব মানুষের দল হিসেবে কংগ্রেসকে তুলে ধরে। ক্ষমতায় এসেও তিনি একাধিক সামাজিক প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন। কোষাগারের কথা না ভেবেই জোর দিয়েছিলেন সামাজিক সংস্কারের দিকে।

কিন্তু ইউপিএর দ্বিতীয় দফায় এসে এই ধারণাটি কার্যত ভেঙে পড়ে। শুধু যে আম জনতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তার দল এমনটাই নয়, একের পর এক আর্থিক কেলেঙ্কারির বিষয়গুলো সামনে আসতে থাকে। ঘটে কমনওয়েলথ, টু জি, কয়লা কেলেঙ্কারি। দিলি্লতে নারী ধর্ষণের ঘটনাও প্রবল জনরোষ তৈরি করে সাধারণ মানুষের মধ্যে। আম আদমি পার্টির সাফল্য এ কথা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে খোদ কংগ্রেসের ঘর শাহি দিলি্লতেও একটি বিরাট কংগ্রেসবিরোধী পরিসর তৈরি হয়েছিল।

নতুন প্রজন্ম তিতবিরক্ত হয়ে উঠেছিল কংগ্রেস নেতৃত্বের ওপর। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনেও এই কংগ্রেস-বিরোধিতার চিত্রটি যে কমবে না বই বাড়বে, সে কথাও মনে করছেন রাজধানীর রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.